স্বাদে-আহ্লাদে বাঙালী। শুধু ভারতেই নয়, ভারতের বাইরেও বাঙালী থালির কদর সর্বজনবিদিত। বর্তমানে বাঙালী রান্নাঘরে বহু প্রবাসী রান্নার পদ যুক্ত হলেও বাঙালী কিন্তু সরষে ইলিশ, ভেটকি পাতুরি, পোলাও, পায়েস আর রসগোল্লাতেই অভ্যস্ত। Bengali Ranna Banna(Bengali Cooking Recipes)
রুই, কাতলা, ভেটকি, চিংরি, ইলিশ, পাবদা, চিতল, কই, শিঙি ইত্যাদি আরও কত না মাছের প্রকার; মাছ-ভাত বাঙালীর রক্তে মিশে গেছে। আর আছে পাঁঠার মাংস। অবশ্য পাঁঠা বললে এখন কেও আর বুঝবেনা, কারণ বর্তমানে ইংরেজি বিদ্যার জোড়ে পাঁঠার মাংস আমাদের কাছে ‘মটন’ হয়ে দাড়িয়েছে, তবে প্রাচীন বাংলায় কিন্তু এই নামটিই প্রচলিত ছিল।
মাছ, মাংস, মুড়িঘণ্ট ডালের পাশাপাশি বাঙালী কিন্তু মিষ্টান্ন তৈরিতেও সমান পারদর্শী। ঘরে তৈরি পুলি পিঠে, মালপোয়া, নলেন গুঁড়ের পায়েস দেখলে জিভে জল আসতে বাধ্য। আরও আছে মিহিদানা, সিতাভোগ, কালাকাঁদ, কাঁচাগোল্লা, কমলাভোগ, রসমালাই, চমচম আর রসগোল্লা।
আসুন শিখে নেওয়া যাক এমনই বেশ কিছু বাঙালী পদ।
আমিষ
বাঙালী রান্নাঘরে আমিষ পদের তালিকার মধ্যে পড়ে সরষে ইলিশ, ভাপা ইলিশ, পাঁঠার মাংস, ভেটকি পাতুরি ইত্যাদি। আসুন দেখে নেওয়া যাক,
সূচিপত্রঃ
- ভাপা ইলিশ
- মটন শাহী কোর্মা
- চিকেন শাহী কোর্মা
- ফিশ কবিরাজি
- ভেটকি পাতুরী
- ডিমের মশলাদার কোপ্তা কারী
- মাছের কচুরি
- পোস্ত চিকেন
ভাপা ইলিশ
[Bengali Ranna Banna (Bengali Cooking Recipes)]
ভাপা ইলিশইলিশ মাছ হল বাঙালীদের আইকন। সারা পৃথিবী জুড়ে যতো বাঙালী আছে তাদের মধ্যে ১০০ ভাগই ইলিশ মাছের ভক্ত। মুলত বর্ষাকালে এই মাছ পাওয়া গেলেও এখন সারা বছর মানুষের রসনার তৃপ্তির জন্য এই মাছ চাষ করা হচ্ছে। এই মাছের প্রচুর পুষ্টিগুণ আছে। এই মাছে আছে প্রচুর পরিমানে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড যা কোলেস্টেরল কমাতে এবং ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
উপকরনঃ
- ইলিশ মাছ(২৫০ গ্রাম)
- কালো ও হলুদ সর্ষে(৪০ গ্রাম)
- কাঁচা লঙ্কা (৪-৬ টা)
- নারকেল বাটা (৪০ গ্রাম)
- টক দই(২৫ গ্রাম)
- নুন
- চিনি
- হলুদ
- সর্ষের তেল(২০ গ্রাম)
পদ্ধতিঃ
প্রথমে মিক্সীতে ভালো করে ধুয়ে জল ঝরিয়ে রাখা কালো ও হলুদ সর্ষে ও ৪ টে কাঁচালঙ্কা দিয়ে ভালো করে বেঁটে নিতে হবে তারপর সেটা একটা পাত্রে রেখে তাতে ফেটানো টক দই, নুন, চিনি,হলুদ, নারকোল বাটা , সর্ষের তেল দিয়ে ভালো করে নাড়িয়ে মাছ গুলো দিয়ে ভালো করে মাখিয়ে তার ওপর দিয়ে ৩-৪ টে কাঁচা লঙ্কা দিয়ে ঢেকে ১৫ মিনিট ম্যারিনেট করে রাখতে হবে।তারপর কড়াইতে যেকোনো ঝাঝরি টাইপের ছোটো পাত্র উবুড় করে রেখে ম্যারিনেট করা মাছটা একটা টিফিন বক্সে রেখে সেটা সেই উবুড় করা পাত্রের ওপর রেখে ১০০ গ্রাম মতো গরম জল ঢেলে কড়াইটা একটা ঢাকণা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। তারপর আঁচ অল্প করে কিছুক্ষন রান্না করতে হবে। শেষে মাছটা নামিয়ে ৫ মিনিট রেখে ঢাকনা খুলে গরম গরম ভাতের সাথে পরিবেশন করতে হবে এই মুখোরোচক ভাপা ইলিশ পদটি।
তবে বাড়িতে খুব সহজেই বানিয়ে ফেলুন অতি সুস্বাদু এই ভাপা ইলিশ পদটি।
মটন শাহী কোর্মা
[Bengali Ranna Banna (Bengali Cooking Recipes)]
উপকরণঃ
- খাসীর মাংস ১ কিলোগ্রাম
- দই ১ কাপ
- রসুন বাটা ১ চা চামচ
- পিঁয়াজ বাটা ১/২ কাপ
- আদা বাটা ১ চা চামচ
- চিনি (পরিমাণ মতো)
- নুন (পরিমাণ মতো)
- পোস্ত বাটা ২ চা চামচ
- আস্ত গোলমরিচ(১০টি) গুঁড়ো
- কাঁচা মরিচ ৫-৬টি মতো
- দারুচিনি ৪-৫টি
- এলাচ ৪-৫টি
- দুধ ১ কাপ
- ঘি ১/২ কাপ
- গোলাপজল ২ চা চামচ
- কিসমিস বাটা ১.৫ চা চামচ
পদ্ধতিঃ
- প্রথমে মাংস’টাকে পরিষ্কার করে ধুয়ে দই দিয়ে ও সবরকম মশলা মাখিয়ে ১-২ ঘণ্টা রেখে দিন।
- এরপর কড়াই’তে তেল গরম করে নিয়ে পেয়াজবাটা দিয়ে ভাজুন। তারপর তার মধ্যে মশলা মাখানো সম্পূর্ণ মাংস’টাকে ঢেলে ভালো করে কষিয়ে ঢেকে দিন ও আগুনের তাপ মাঝারি আঁচে রাখুন।
- মাংস সিদ্ধ হয়ে তেল উপরে উঠে এলে পোস্ত বাটা, কিসমিস, গোলাপজল, কাঁচা মরিচ ও চিনি দিয়ে মিনিট পাঁচেক মতো নেড়ে কিছুক্ষন রেখে দিন।
- পরিবেশনের আগে কিছুটা পেঁয়াজকুচি ছড়িয়ে নিতে পারেন।
চিকেন শাহী কোর্মা
[Bengali Ranna Banna (Bengali Cooking Recipes)]
চিকেন ছোটো-বড়ো সবারি খুব প্রিয় খাবার। আমরা সহজেই চিকেন দিয়ে বানিয়ে নিতে পারি সুস্বাদু অনেক রকম খাবার। আজ এমনি একটি জিভে জল আনা চিকেন এর রেসিপি ভাগ করে নিতে চলেছি আপনাদের সাথে।
উপকরণঃ
- ১০০ গ্রাম চিকেন
- ১ চামচ কাঁচা লঙ্কা বাটা
- ২ টি কাঁচা পেয়াজ
- ১ চামচ রসুন বাটা
- ৪ চামচ টক দই
- ১/২ চামচ জুলি করে কাটা আদা
- ১/২ চামচ ধনেপাতা কুচি
- ৪ চা চামচ ধনে গুড়ো
- ২ চামচ নুন
- ১ চামচ চিনি
- ২ চামচ কাশ্মীরি লাল লঙ্কা গুড়ো
- ২ চামচ লঙ্কা গুড়ো
- ২ চামচ গরম মশলা
- ২ চামচ বেসন
- ৩ ফোটা কেওড়া জল
- ৪ টে ছোটো এলাচ
- গুড়ো মশলা( ১টা জয়িত্রী, ১টা জায়ফল, ১টা বোড়ো এলাচ, ১টা ছোটো এলাচ, কড়াই’তে শুকনো খোলায় নাড়িয়ে গুড়ো করা)
পদ্ধতিঃ
প্রথমে কড়াই’তে কাঁচা পেঁয়াজ কেটে সাদা তেলে ভেজে বেরেস্তা বানিয়ে রাখতে হবে। তারপর কড়াই’তে তেল ফেলে গরম করে গোটা এলাচ দিয়ে একটু নাড়াচাড়া করে তাতে আগে থেকে ভালো কোরে ধুয়ে রাখা মুরগি’র মাংস দিয়ে একটু ভেজে নিতে হবে। তারপর তাতে নুন, চিনি, বেসন, ধনে গুড়ো, গরম মশলা গুড়ো, কাশ্মীরি ও লাল লঙ্কা গূড়ো দিয়ে একটু নাড়িয়ে নিয়ে তাতে টক দই, কাঁচা লঙ্কা ও রসূন বাটা দিয়ে ভালো করে কষিয়ে নিয়ে ঢেকে অল্প আঁচে কিছুক্ষণ রান্না করতে হবে। ১৫ মিনিট বাদে ঢাকনা খুলে তাতে বেরেস্তা, আদা কুঁচি, গুড়ো মশলা(উপকরণে দেওয়া আছে) দিয়ে আবার ভালো করে কষিয়ে নিতে হবে। তারপর কড়াই থেকে তেল ছাড়লে তাতে কেওরা জল ও ধনেপাতা কুচি দিয়ে শেষবারের মতো নাড়িয়ে গরম গরম রুটি বা পোরটা দিয়ে পরিবেশন করুন জিভে জল আনা এই রেসিপি’টি।
ফিশ কবিরাজি
[Bengali Ranna Banna (Bengali Cooking Recipes)]
উপকরনঃ
- ভেটকি মাছের ফিলেট ৪০০ গ্রাম
- পেঁয়াজ ২০০ গ্রাম
- আদা ( পরিমান মতো)
- রসুন ৩ চামচ
- পুরের জন্য রুই মাছ ২০০ গ্রাম
- ধনে পাতা
- পুদিনা পাতা ১ আঁটি
- তেল ( পরিমান মতো)
- বিস্কুটের গুঁড়ো ৩০০ গ্রাম
- এরারুট ১০০ গ্রাম
পদ্ধতিঃ
- প্রথমে ভেটকি মাছের ফিলেট গুলিকে লেবুর জলে ধুয়ে জল ফেলে দিয়ে আদা, রসুন, পেঁয়াজ বাটা দিয়ে ভিজিয়ে রাখুন। এরপর রুইমাছ গুলিকে সেদ্ধ করে জলে ফেলে দিয়ে পেঁয়াজ ভাজুন, পেঁয়াজ লাল হয়ে গেলে আদা ও রসুন বাটা দিয়ে নাড়তে থাকুন।
- মশলা ভাজা হলে মাছ দিয়ে নাড়তে থাকুন।
- এরপর নুন, মিষ্টি, ধনেপাতা, পুদিনা পাতা দিয়ে নেড়ে নামিয়ে রাখুন। পুর তৈরি।
- এবার ওই ফিলেটের ভিতর পুর ভরে বিস্কুট গুঁড়ো মাখিয়ে ডিমের গোলার মধ্যে ডুবিয়ে সাবধানে তুলে আবার বিস্কুট গুঁড়ো মাখিয়ে তেলে ভাজুন।
- এবার গরম গরম টম্যাটো সসের সাথে পরিবেশন করুন।
ভেটকি পাতুরী
[Bengali Ranna Banna (Bengali Cooking Recipes)]
উপকরণঃ
- ভেটকি মাছ ৩০০ গ্রাম
- হলদে সরষে দানা ২ টেবিল চামচ
- কালো সরষে দানা ২ টেবিল চামচ
- হলুদ ১/২ চা চামচ
- লবণ প্রয়োজন মতো
- পাতি লেবুর রস
- কাঁচা লঙ্কা ৭-৮ টি
- জিরে গুড়ো (প্রয়োজন হলে সামান্য মরিচ গুড়ো)
- সরিষা তেল ৪/৫ টেবিল চামচ
- মাছ মুড়ানোর জন্য কলাপাতা ও সুতো
পদ্ধতিঃ
প্রথমে মাছের পিস গুলিকে পরিষ্কার করে নিয়ে মাছের উপর লবণ দিয়ে ভালোভাবে মেখে নিন, এরপর পাতিলেবুর রস দিয়ে ভালোভাবে মাছগুলিকে মাখিয়ে আধ’ঘণ্টার জন্য আলাদা পাত্রে রেখে দিন। কালো সরষে ২ চামচ, হলুদ সরষে ২ চামচ, ৮-১০টি কাঁচালঙ্কা, পরিমাণমতো সামান্য লবণ নিয়ে মিক্সি’তে ভালোভাবে পেস্ট তৈরি করে নিয়ে তাতে ১/২ চামচ জিরে গুড়ো (প্রয়োজন হলে কিছুটা মরিচগুড়ো মেশাতে পারেন)। এরপর, ৪ চামচ সরষের তেল দিয়ে মশলা’টি ভালোভাবে মেশাতে হবে। এরপর সমস্ত মাছ’গুলো মশলার মধ্যে দিয়ে ভালো করে মাখিয়ে ঘণ্টা’খাণেক এভাবে রেখে দিতে হবে।
এবার আগুন জালাবার পালা। মাপ অনুযায়ী কাটা কলাপাতা’গুলি একটি তাওয়াই ছেঁকে নিন(এর ফলে কলাপাতাগুলি নরম থাকবে, মাছগুলি পাতা দিয়ে মোড়াবার সময় ফেটে যাবেনা)। এবার মেরিনেট করা মাছগুলো থেকে কিছুটা মশলার পেস্ট কলাপাতার ওপর রেখে তার ওপর মাছ রেখে মাছের ওপরে আরও কিছুটা মশলা দিন। এবার সাবধানে কলাপাতা’টি মুড়ে সুতো দিয়ে বেঁধে দিন।
এবার ফ্রাইপ্যান’এ তেল গরম করে কলাপাতা মোড়ানো মাছগুলো রেখে আঁচ কমিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিন। কিছু সময় পরে একইভাবে মাছ’টি উল্টিয়ে অপর পাশ’টিও ভেজে নিন।
ডিমের মশলাদার কোপ্তা কারী
[Bengali Ranna Banna (Bengali Cooking Recipes)]
উপকরণঃ
- কিমা ৫০০ গ্রাম
- দই ১ কাপ
- এলাচ বাটা ২ টো
- জয়িত্রী বাটা আধ চা চামচ
- জিরে গুঁড়ো ২ চা চামচ
- কাঁচা লঙ্কা বাটা ৪ টে
- রসুন বাটা ৫ কোয়া
- আদা বাটা ১ টুকরো
- দুধ আধ কাপ
- ২ টি ডিম
- বিস্কুট গুঁড়ো ২০০ গ্রাম
- নুন এবং তেল প্রয়োজন মতো
পদ্ধতিঃ
প্রথমে কিমা ধুয়ে নিন তারপর ডিম ফেটিয়ে সমস্ত মশলা ও দই কিমায় মাখিয়ে ১ ঘণ্টা রেখে দিন । এরপর প্রেশার কুকারে ২ কাপ জল দিয়ে কিমা কষান । কিমা সেদ্ধ হলে বেটে নিন । আধ কাপ দুধ মেশান , এরপর ঐ কিমা দিয়ে গোল গোল বল বানিয়ে ফেটানো ডিমে ডুবিয়ে বিস্কুটের গুঁড়ো মাখিয়ে লালচে করে ভেজে তুলুন। ব্যাস ডিমের মশলাদার কোপ্তা কারী তৈরি ।
মাছের কচুরি
[Bengali Ranna Banna (Bengali Cooking Recipes)]
কচুরি আবার মাছের, ভাবতেও অবাক লাগে। মাছে ভাতে বাঙ্গালীর পাতে রোজ একটু মাছ না হলে হয়না। নানারকম সুস্বাদু মাছ দিয়ে যদি কচুরি বানানো হয় তবে তো কথাই নেই। আজ একটি মাছের কচুরির রেসিপি নিয়ে লিখছি।
উপকরণঃ
- পোনামাছের পেটি ২৫০ গ্রাম
- ময়দা ৩০০ গ্রাম
- জিরে ১/২ চামচ
- গোলমরিচ ১/২ চামচ
- শুকনো লঙ্কা ৪ টি
- মৌরি ১ চামচ
- গরম মশলা ২ টি করে
- ধনে ১ চামচ
- চিনি ১/২ চামচ
- তেল (পরিমাণ মতো)
- নুন (পরিমাণ মতো)
- ঘি (পরিমাণ মতো)
পদ্ধতিঃ
প্রথমে ময়দা , ৪/৫ চামচ ঘি ও নুন দিয়ে জল মিশিয়ে ভালো করে ঠেসে ঠেসে নরম করে মেখে রাখুন। এরপর মৌরি, জিরে,লঙ্কা, গোলমরিচ, গরম মশলা ও ধনে শুকনো অবস্থায় খোলায় অল্প ভেজে মিহি করে গুঁড়িয়ে নিন। এরপর মাছ সেদ্ধ করে কাঁটা বেছে চটকে নিন। এবার এর সাথে সব গুঁড়ো মশলা ,চিনি, নুন, আদাবাটা ও পেঁয়াজ বাটা মিশিয়ে ফেটিয়ে নিন। এই পুরে যতগুলি ময়দার লেচি হবে, ততগুলি সমান ভাগে ভাগ করে নিয়ে ময়দার লেচি তৈরি করুন। গোল করে পাকিয়ে গর্ত করে পুরগুলি দিয়ে ভালকরে চারিধার বন্ধ করে ময়দা দিয়ে লুচির মত গোল করে বেলে নিন, খেয়াল রাখবেন যেন ফেটে না যায়।
এরপর আঁচে কড়াই বসিয়ে ঘি ঢালুন, ঘি গরম হলে ছাঁকা ঘি তে কচুরি ছেড়ে খুন্তি দিয়ে চেপে ধরবেন। তাতে কচুরি সমানভাবে ফুলে উঠবে। এরপর গরম গরম কচুরি পরিবেশন করুন।
পোস্ত চিকেন
[Bengali Ranna Banna (Bengali Cooking Recipes)]
বাঙালির রান্নাঘরে পোস্তর আসা যাওয়া বহুকাল ধরে। আজ পোস্ত দিয়ে এমন একটি পদ বানাতে চলেছি যা খুবই সুস্বাদু ও সহজসাধ্য। আসুন দেখে নিই পোস্ত চিকেন তৈরির পদ্ধতি।
উপকরণঃ
- মুরগির মাংস ৭৫০ গ্রাম
- পোস্ত দানা ৬ চামচ
- রসুন ৬ কোয়া
- আদা ১ ইঞ্চি
- কাঁচা লঙ্কা ৪ টে
- টম্যাটো ১ টা
- লঙ্কা গুঁড়ো ১ চামচ
- পেঁয়াজ ২ টো
- সরষের তেল ৪ চামচ
- নুন প্রয়োজন মতো
- তেজ পাতা ১ টা
- লবঙ্গ ৪ টে
- এলাচ ৪ টে
- মৌরি ১ চামচ
- দারচিনি ১ ইঞ্চি
ম্যারিনেশানের জন্য দরকারঃ
- লেবুর রস ১ চামচ
- হলুদ গুঁড়ো ১/২ চামচ
- সরষের তেল ১ চামচ
- আদার পেস্ট ২ চামচ
- রসুনের পেস্ট ২ চামচ
- নুন প্রয়োজন মতো
পদ্ধতিঃ
- প্রথমে মাংসটি ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। তারপর একটি পাত্রে মাংসের টুকরো গুলি নিয়ে ম্যারিনেট করার জন্য সব উপকরন গুলি মেশান । মাংস গুলিতে মশলা মাখিয়ে নিতে হবে। এরপর পাত্রটি ঢাকা দিয়ে ঘণ্টা খানেক রেখে দিতে হবে।
- পোস্ত দানা গুলিকে কিছুক্ষণ জলে ভিজিয়ে বেটে নিয়ে এর সাথে লবঙ্গ, আদা, কাঁচা লঙ্কা মিশিয়ে নিন। এরপর কড়াইতে পরিমান মতো সরষের তেল নিয়ে গরম করুন। তেল গরম হয়ে গেলে তেজপাতা, লবঙ্গ, দারচিনি, এলাচ ও মৌরি দিয়ে নারুন। কিছু সময় পর পেঁয়াজ মেশান ।এরপর এগুলি কে কড়া করে ভাজুন ।
- এরপর টম্যাটো কেটে সেটাকে মেশান। কিছু সময় এটিকে নাড়ুন তারপর পোস্তর পেস্ট , গরম মশলা ও লঙ্কার গুঁড়ো মেশান। এই মশলা গুলিকে কিছুসময় ভাজতে হবে, তারপর ম্যারিনেট করা মাংসের টুকরো গুলিকে কড়াইতে ঢেলে দিন। একই সাথে প্রয়োজন মতো নুন ও জল মেশান।
- এরপর কড়াই চাপা দিয়ে দিন। যখন মাংস টা ভালো করে রান্না হয়ে যাবে তখন আঁচ টা বন্ধ করে দিন।পোস্ত চিকেন তৈরি। এরপর এটিকে ভাত অথবা লুচির সাথে পরিবেশন করতে পারেন।
নিরামিষ
আমিষের পাশপাশি নিরামিষ খাবারেও তাক লাগিয়ে দেয় বাঙালী। আসুন দেখে নেওয়া যাক,
সূচিপত্রঃ
- শাহী মটর পনির
- চাল পটল
- কাশ্মীরি পোলাও
- শশার রায়তা
- বিট বাটা রেসিপি
- শাহী পনির
শাহী মটর পনির
[Bengali Ranna Banna (Bengali Cooking Recipes)]
শাহী মটর পনির একটি অসাধারন সুস্বাদু খাবার। যারা এখনো এই খাবার টি খাননি তারা একবার খেলেই বারবার খেতে চাইবেন এমনই স্বাদ এই খাবারটির। ঘরে বসে খুব সহজেই তৈরি করতে পারেন এই লোভনীয় খাবারটি। আসুন দেখে নিই কীভাবে বানাবো এই সুস্বাদু শাহী মটর পনির
উপকরনঃ
- পনির – ২৫০ গ্রাম
- আদা বাটা – ১ চামচ
- মাখন – ১ টেবিল চামচ
- পেঁয়াজ কুচি – ১ টা পেঁয়াজ
- কাঁচা লঙ্কা – ৩-৪ টে
- শাহী গরম মশলা – ১ চামচ
- সাদা তেল – ৪ বা ৫ টেবিল চামচ
- পোস্ত – ২ টেবিল চামচ
- মটরশুঁটি – ১/২ কাপ
- টক দই – ২ টেবিল চামচ
- নুন – পরিমাণ মতন
- কাজুবাদাম – ১০ টি
পদ্ধতিঃ
প্রথমে পনির টুকরো করে নিন, এরপর ওই পনিরের টুকরো গুলিতে লঙ্কা, নুন, চিনি মাখান। এরপর একটি প্যানে মাখন নিয়ে গরম করে তাতে পনিরের টুকরোগুলি ঢেলে নিয়ে ভাজুন। ভাজা হয়ে গেলে সেটিকে একটি পাত্রে রেখে দিন। এবার প্যানে সাদা টেল নিয়ে গরম করুন। তারপর তাতে পেঁয়াজ কুচি ছাড়ুন সাথে কাজুবাদাম, জিরে গুঁড়ো, কাঁচা লঙ্কা কুচি, হলুদ গুঁড়ো মেশান। এরপর সেটিকে কষান। কষানোর পর ঠাণ্ডা করে নিয়ে মিক্সার গ্রাইন্ডারে পেষাই করে নিন।
এরপর প্যানে আবার সাদা তেল নিয়ে গরম মশলা ফোঁড়ন দিতে হবে। তার পর ওই পেষাই করা মশলাটা ঢেলে কষিয়ে নিতে হবে। এরপর টকদই ফেটিয়ে নিয়ে প্যানে ঢেলে নিয়ে সাথে নুন, চিনি ও মটর শুঁটি দিতে হবে। এরপর ১ কাপ জল ফুটিয়ে নিয়ে পনির গুলি তাতে ছেড়ে দিতে হবে। এরপর ঘন হয়ে গেলে একটু সময় রেখে শাহী গরম মশলা ওপরে ছড়িয়ে দিলেই শাহী মটর পনির তৈরি।
চাল পটল
[Bengali Ranna Banna (Bengali Cooking Recipes)]
উপকরণঃ
- পটল (৬-৭ টা)
- আলু (৩-৪ টা)
- গোবিন্দভোগ চাল (এক মুঠ)
- কাঁচা লঙ্কা (৪ টি)
- টম্যাটো (২ টি)
- আদা বাটা (২ চামচ)
- শুকনো লঙ্কা
- তেজ পাতা
- গোটা গরম মশলা (২ টো এলাচ, লবঙ্গ, দারচিনি)
- গোটা জিরে
- নুন
- হলুদ
- চিনি
- জিরে গুড়ো
- লঙ্কা গুড়ো
- ঘি
- সাদা ও সর্ষের তেল
- কাজু ও কিসমিস
- গরম মশলা গুড়ো
পদ্ধতিঃ
প্রথমে গোবিন্দভোগ চাল ধুয়ে জল ঝড়িয়ে নিতে হবে। এবার কড়াইয়ে সাদা তেল দিয়ে কাজু কিসমিস দিয়ে নেড়েচেড়ে রঙটা একটু বদলালে তাতে চালটা দিয়ে নাড়তে হবে চালটা একটু ভাজা ভাজা হলে আলাদা করে তুলে নিয়ে, কড়াতে আবার সর্ষের তেল দিয়ে তাতে ডুমো করে কেটে রাখা আলু ,পটোল দিয়ে ভালো করে ভেজে নিতে হবে।সেগুলকে আলাদা করে সরিয়ে রেখে সেই তেলে গোটা জিরে, ২ টো তেজ পাতা, ২ টো শুকনো লঙ্কা গোটা গরম মশলা দিয়ে ভেজে নিয়ে তাতে আদা বাটা, নুন, হলুদ, জিরে গুড়ো, লঙ্কা গুড়ো, দিয়ে ভালো করে কষিয়ে অল্প জল দিয়ে তাতে ভাজা পটোল,আলু, চাল,কাজু কিসমিস দিয়ে নাড়িয়ে নিয়ে টম্যাটো কুচি ও দুটো কাঁচা লঙ্কা দিয়ে ও চিনি দিয়ে ভালো করে নাড়িয়ে অল্প জল দিয়ে ঢেকে ভাপে রান্না করতে হবে। এবার চালটা সেদ্ধ হলে এবং কড়াই থেকে তেল ছাড়লে ভালো করে নেড়ে ১ চামচ ঘী ও গরম মশলা গুড়ো দিয়ে শেষ পর্যায় নেড়ে গরম গরম পরিবেশন করুন চাল পটোল।
কাশ্মীরি পোলাও
[Bengali Ranna Banna (Bengali Cooking Recipes)]
পোলাও তো আমরা সবাই কমবেশি খেয়েই থাকি। কিন্তু কাশ্মীরি পোলাও খাবারের একটি অন্যরকম স্বাদ আনে। এটি একটি অত্যন্ত সুস্বাদু খাবার। বাড়ির যে কোনও অনুষ্ঠানে বা পুজো উপলক্ষ্যে এই রান্নাটি অনায়াসেই করে নেওয়া যেতে পারে।আসুন জেনে নেওয়া যাক কীভাবে বানাতে হয় এই কাশ্মীরি পোলাও।
উপকরণঃ
- বাসমতী চাল- ২ কাপ মতো
- সরু করে কাটা পেঁয়াজ- ১ টা বড় পেঁয়াজ
- আদা বাটা- ১/২ চামচ
- পাঁচফোড়ন- ১ চা চামচ
- জাফরান- ১ চিমটে
- আমন্ড- ১০-১২ টা
- দারচিনি- ১ টা
- কাজুবাদাম- ৮-১০টা
- এলাচ- ২ টো
- ঘি- ২ চামচ
- জিরা গুঁড়ো- ১/৪ চা চামচ
- আখরোট- ১০-১২ টা
- কিশমিশ- ৫-১০ টা
- লবঙ্গ- ২-১ টা
পদ্ধতিঃ
প্রথমে বাসমতী চালগুলিকে ৩০ মিনিট জলে ভিজিয়ে রাখুন। তারপর সেগুলিকে জল দিয়ে ধুয়ে একটি পাত্রে রেখে দিন। এরপর একটি প্যানে ঘি গরম করুন এরপর তাতে দারচিনি, জিরা গুঁড়ো, লবঙ্গ, এলাচ দিয়ে ভাজুন। ভাজা হয়ে গেলে অল্প আঁচে আদা বাটা, পাঁচফোড়ন গুঁড়ো মিশিয়ে দিয়ে মিশ্রণটিকে নাড়ুন। এরপর পাত্রে রাখা বাসমতী চাল গুলিকে ওই প্যানে ঢেলে দিন। চাল ভালোকরে ভাজা হয়ে গেলে এতে পরিমাণ মতো জল দিন চাল সেদ্ধ করার জন্য। এরপর এতে পরিমাণ মতো নুন মেশান। চালের জল শুকিয়ে গেলে তাতে জাফরান মিশিয়ে অল্প আঁচে রেখে প্যানটিকে ঢেকে দিন।
চাল পুরো সেদ্ধ হয়ে এলে অন্য একটি প্যানে ২ চামচ ঘি গরম করে তাতে পেঁয়াজ, আমন্ড, আখরোট, কাজুবাদামের সাথে লবন মিশিয়ে ভেজে নিন। এরপর রান্না করা চালের ওপর এগুলো ছড়িয়ে দিন ও সাথে কিশমিশও ছড়িয়ে দিন এবং পরিবেশন করুন।
শশার রায়তা
[Bengali Ranna Banna (Bengali Cooking Recipes)]
আজ কিভাবে শশার রায়তা বানাতে হয় সেটা নিয়ে আলোচনা করব। যারা ডায়েট করেন তাদের জন্য এটি খুবই উপকারি।
উপকরণঃ
- মাঝারি শশার কুচি ১/৪ কাপ
- টক দই ১ কাপ
- ভাজা জিরে গুঁড়ো ৩/৪ চা চামচ
- নুন প্রয়োজন মতো
- লেবুর রস ১ চা চামচ
- কালো গোলমরিচ গুঁড়ো ১/২ চা চামচ
- পুদিনা পাতা কুচি ২ টেবিল চামচ
পদ্ধতিঃ
প্রথমে শশা ধুয়ে ভেতরের বীজ বের করে নিতে হবে। এরপর গ্রেটার দিয়ে গ্রেট করে শশার জল ঝেরে নিন। টক দই একটা পাতলা কাপড়ে কিছুক্ষণ ঝুলিয়ে রেখে জল ঝরিয়ে নিন। এবার শশা ও দই এর সাথে সব উপকরন গুলি মিশিয়ে নিন। ব্যাস শশার রায়তা তৈরি। পরিবেশনের আগে ১-২ ঘণ্টা ফ্রিজে রেখে দিন। এরপর যেকোনো ভাজার সাথে এটিকে পরিবেশন করুন।
বিট বাটা রেসিপি
[Bengali Ranna Banna (Bengali Cooking Recipes)]
আসুন আজ আমরা দেখে নিই কোলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ির এমন একটি অনবদ্য বাংলা রেসিপি।
উপকরনঃ
- বিট – দুটো
- কালো সরষে
- পোস্ত
- কাচা লঙ্কা
- নুন
- সরিষার তেল
পদ্ধতিঃ
প্রথমে , বিট দুটোর খোসা ছাড়িয়ে টুকরো টুকরো করে কেটে সেদ্ধ করে নিতে হবে । তারপর মিক্সীতে সেদ্ধ বিটের টুকরো গুলো নিয়ে তাতে স্বাদ মতো নুন (প্রথমে অল্প পরিমান ),কালো সরষে , পস্তো , দুটো কাঁচা লাঙ্কা দিয়ে এবং অল্প সরষের তেল দিয়ে ভালো করে বেটে নিতে হবে। তারপর ভালভাবে বাটা হয়ে গেলে কড়াই তে দুচামচ সরসের তেল দিয়ে তাতে অল্প কালো সর্ষে ও একটা শুকনো লঙ্কা দিয়ে একটু নেড়ে বাটা তা দিতে হবে । এরপর অল্প নুন স্বাদ মতো যোগ করতে হবে ।এরপর বাটাটা নেড়েচেড়ে পাস থেকে তেল ছারলে অন্য পাত্রে ঢেলে ওপর থেকে অল্প সর্ষের তেল ঢেলে ও একটা কাঁচা লঙ্কা দিয়ে সাজিয়ে গরম গরম ভাতের সাথে পরিবেশন করতে হবে।
শাহী পনির
[Bengali Ranna Banna (Bengali Cooking Recipes)]
শাহী পনির হল একটি সহজ খাবার তৈরির প্রনালি। কিছু সহজলভ্য উপাদান যেমন পনির, টম্যাটো ভরতা , কাটা পেয়াজ, আদা, কাঁচা লঙ্কা প্রভৃতি দ্বারা তৈরি করা যায়।এই উত্তর ভারতীয় সুস্বাদু খাবারটি আমরা যে কোনও বিশেষ অনুস্ঠান উপলক্ষে বানাতে পারি। এই সাধারন অথচ আকর্ষণীয় খাবারটি খুব সহজেই বানানো যায়। পনির কে ছোটো ছোটো ফালি করে কেটে তারপর ভেজে নিয়ে একটি জল পূর্ণ পাত্রে রেখে দিলে এর থেকে অতিরিক্ত তেল বেরিয়ে যায় , এর ফলে পনির গুলি খুব নরম হয়ে যায়।খাবারটিকে নরম বানাতে এতে মাখন ও বাদামের পেস্ট যোগ করতে পারেন।
উপকরণঃ
- ৫০০ গ্রাম পনির
- ১ ইঞ্চি আদা
- ৬ টি মাঝারি সাইজের টম্যাটো
- ১ চা চামচ লাল লঙ্কা
- ১ চা চামচ গরম মশলা গুড়ো
- ২ চিমটা লবন
- ২ টি পেঁয়াজ
- ৩ টি কাঁচা লঙ্কা
- ৩ টি এলাচ
- ৬ টেবিল চামচ ঘি
- ৪ টেবিল চামচ টম্যাটো সস
- ১ কাপ জল
সাজানোর জন্যঃ
- এক মুঠো ধনে পাতা
- ২ টেবিল চামচ ক্রিম
এছাড়াও খাবারটির জন্য ১/২ কাপ দই, ১ কাপ দুধ প্রয়োজন।
পদ্ধতিঃ
- প্রথমে পেয়াজ, কাচা লঙ্কা, টম্যাটো সাথে আদা এবং ধনে পাতাও কেটে নিতে হবে। এরপর একটা পাত্রে দই নিয়ে সেটিকে নাড়াতে হবে। এরপর টম্যাটো যোগ করতে হবে। খাবারটিকে আরও সুস্বাদু করতে মশলা গুলিকে শুকনো ভাবে ভাজতে পারেন। এরপর এটাকে ওই দই এর মিশ্রণের সাথে যোগ করতে হবে। যার ফলে খাবার টি সুগন্ধ পূর্ণ হয়ে ওঠে।
- এরপর অল্প আঁঁচে একটি প্যান এ ঘি ঢালতে হবে, এবং কাটা পেঁয়াজ , আদা, কাচা লঙ্কা, ধনে পাতা মিশিয়ে ৪-৫ মিনিট রাখতে হবে। এরপর কাটা টম্যাটো যোগ করে প্যানটিকে ঢেকে রাখতে হবে ও ৮-১০ মিনিট এটিকে রাখতে হবে। এরপর ব্যবহৃত দইয়ের মিশ্রণ টি মিশিয়ে ৫ মিনিট এর জন্য রেখে দিতে হবে, এরপর প্যান এ ১ কাপ জল ঢেলে মিনিট খানেক রেখে দিতে হবে। যখন ঝোলটি রান্না হয়ে যাবে তখন এটিকে ঠাণ্ডা করার জন্য ঘরের উষ্ণতায় রেখে দিতে হবে। ঠাণ্ডা হয়ে গেলে এটিকে মিক্সার মেশিনে দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে রেখে দিতে হবে।
- এরপর ঘি গরম করে অন্য পাত্রে রেখে ঝোল টিকে যোগ করতে হবে, এর সাথে লাল লঙ্কার গুড়ো , গরম মশলা গুঁড়ো,টমেটো সস, চিনি মিশিয়ে দিতে হবে। ঝোলটি গাঢ় হওয়া পর্যন্ত এটি কে সিদ্ধ করতে হবে এবং পনিরের টুকরো ও দুধ মেশাতে হবে। এরপর ৩-৫ মিনিট এটিকে রান্না করতে হবে। যখন ঝোলটি গাঢ় হয়ে আসবে তখন ২ টুকরো পনির ভালকরে পিষে নিয়ে তারপর প্রণালী টিকে ধনে পাতার সাথে মিশিয়ে পিষতে হবে। যদি এটাকে নরম করতে চান তবে এটার সাথে মাখন যোগ করতে পারেন যার ফলে খাবার টির স্বাদ হবে দারুন । এটাকে রুমালি রুটির বা নান এর সাথে পরিবেশন করতে পারেন।
এগুলি ছাড়াও লাও চিংড়ি, ধোকার ডালনা, কলার কোপ্তা কারী এবং আরও কত না জানি পদ রয়েছে বাংলা’য়।
মিষ্টান্ন
বাঙালী খাদ্যতালিকায় সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হল নানা স্বাদের বিভিন্ন প্রকার মিষ্টি। পিঠে, পায়েস থেকে শুরু করে রসমালাই, কাঁচাগোল্লা, রসগোল্লা প্রভৃতি বিভিন্ন প্রকার মিষ্টি বাংলার প্রতিটি কোণে বিরাজমান।
সূচিপত্রঃ
- নারকেলের বরফি
- রসকদম
- নরম ও স্পঞ্জের রসগোল্লা
- রাবড়ি
- মালপোয়া
নারকেলের বরফি
[Bengali Ranna Banna (Bengali Cooking Recipes)]
বরফি আমাদের বাঙালীদের অতি পরিচিত প্রিয় মিষ্টির মধ্যে একটি এবং এটি একটি লোভনীয় খাবারও বটে। কিন্তু নারকেলের বরফি এমন একটি মিষ্টি যার স্বাদ সাধারণ বরফির চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। মুখে স্বাদ এনে দেয় এই মিষ্টি। খুব কম সময়েই এই রেসিপিটি বানানো যায়। হঠাৎ কোনও অতিথি বাড়িতে এলে তার আপ্যায়নে এই মিষ্টি পরিবেশন করাই যায়। আসুন জেনে নিই কীভাবে তৈরি করব নারকেলের বরফি।
উপকরণঃ
- নারকেল কোরানো – ৪-৫ কাপ
- দুধ – ৩/৪ কাপ
- চিনি – ৩ কাপ
- গুঁড়ো দুধ – ৬ চা চামচ
- প্যাকেট দুধ – ৩ কাপ
- ঘি – ২ টেবিল চামচ
- এলাচ গুঁড়ো – ২ টো এলাচ গুঁড়ো করা
- জাফরান রং – অল্প কিছুটা
- পরিবেশনের জন্যঃ
- কিশমিশ
- বাদাম
পদ্ধতিঃ
প্রথমে একটি পাত্রে দুধ নিয়ে তাতে চিনি ভালোকরে মেশান। চিনি দুধের সাথে ভালোকরে মিশে গেলে তাতে নারকেল কোরানো মিশিয়ে মিশ্রণটিকে ভালোকরে নাড়ুন এবার ওই মিশ্রণটিকে একটি প্যানে ঢেলে অল্প আঁচে রান্না করুন। একটু পরে এতে এলাচ গুঁড়ো এবং অল্প কিছু জাফরান মেশান। যতক্ষণ পর্যন্ত মিশ্রণটি না শুকিয়ে যাচ্ছে রান্না করুন।
এরপর মিশ্রণটি শুকিয়ে এলে অন্য একটি প্যানে ঘি গরম করে তাতে ঢেলে দিয়ে রেখে দিন। কিছুক্ষণ পর সেটি ঠাণ্ডা হয়ে এলে ইচ্ছেমত আকারে কেটে নিন। তারপর এর ওপর বাদাম, কিশমিশ ছড়িয়ে দিয়ে পরিবেশন করুন নারকেলের বরফি।
রসকদম
[Bengali Ranna Banna (Bengali Cooking Recipes)]
যে কোনও অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে বাঙালীর পাতে খাবার শেষে মিষ্টি অনিবার্য। আর সেই মিষ্টি যদি ঘরে বসে বানানো যায় তাহলে তো কথাই নেই। বিভিন্ন রকমের মিষ্টির মধ্যে রসকদম একটি অতি পরিচিত ও লোভনীয় মিষ্টি। আজ ঘরোয়া পদ্ধতিতে কীভাবে রসকদম বানানো যায় তা নিয়ে আলোচনা করব। এটির চেহারা যেমন লোভনীয় খেতেও তেমনি সুস্বাদু। আসুন জেনে নিই কীভাবে তৈরি করব এই রসকদম।
উপকরনঃ
- প্যাকেট দুধ – ২ লিটার
- ভিনিগার – ৩ টেবিল চামচ
- চিনি – ১ কাপ
- ময়দা – ১/২ চা চামচ
- এলাচ – ২ টি
- মাওয়া – ১/২ কাপ
- কন্ডেন্সড মিল্ক – ১/২ কাপ
- ঘি – পরিমাণ মতো
- গোল চিনির দানা – প্রয়োজন মতো
- ছোটো মিষ্টির দানা – প্রয়োজন মতো
পদ্ধতিঃ
প্রথমে কড়াই তে ২ লিটার দুধ ঢালুন। এরপর এর সাথে ভিনিগার ও জল মিশিয়ে সমস্ত দুধ থেকে ছানা তৈরি করে নিন। এরপর ওই ছানা থেকে ভালোকরে জল ঝরিয়ে শুকনো ঝুরঝুরে করে নিন। এরপর ওই ছানা থেকে রসগোল্লা বানানোর জন্য এক তৃতীয়াংশ ছানা তুলে নিন।বাকি ছানা ক্ষীর তৈরি করে নিন (গুঁড়ো দুধ এর সাথে ঘি মিশিয়ে মাইক্রোওয়েভে ২-৩ মিনিট রান্না করলেই ক্ষীর তৈরি)। রসগোল্লা বানানোর জন্য হাফ চা চামচ ময়দা ও হাফ চা চামচ চিনি ভালো করে মিশান ও রসগোল্লার বল বানিয়ে ফেলুন। এরপর ১ কাপ চিনির সাথে ৩ কাপ জল ও ২ টি এলাচ দিয়ে বলগুলি তুলে মিস্টি গুলো ছেড়ে দিয়ে প্রায় মিনিট ১৫-২০ মাঝারি তাপে রান্নার জন্য রেখে দিলেই রসগোল্লা তৈরি হয়ে যাবে।
এবার ওই রসগোল্লার রস কিছুটা চেপে ফেলে নিন। ছানা, মাওয়া ও কন্ডেন্সড মিল্ক একসাথে মিশিয়ে কড়াইতে নাড়ুন। এরপর ক্ষীর গুলিকে রসগোল্লার মতো সমান ভাগে ভাগ করুন। এরপর একভাগ ক্ষীর নিয়ে বাটির আকারে ভেতরে রসগোল্লা ঢুকিয়ে ভাল ভাবে ক্ষীরের বাটি দিয়ে মুরিয়ে দিন। এরপর চিনির দানা এর মধ্যে ছড়িয়ে দিন তারপর ফ্রিজে রেখে ঠাণ্ডা করে পেপার কাপে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
নরম ও স্পঞ্জের রসগোল্লা
[Bengali Ranna Banna (Bengali Cooking Recipes)]
বাংলার মিষ্টির নাম শুনলেই সর্বপ্রথম মাথায় আসে রসগোল্লা’র নাম। আসুন আজ আমরা শিখে নিই, কিভাবে ঘরে বসে খুব সহজেই রসগোল্লা তৈরি করা যায়।
উপকরনঃ
- গরুর দুধ ১ লিটার(ছানা বানানোর জন্য)
- ভিনিগার ১ টেবিল চামচ
- ময়দা ১ টেবিল চামচ
- এলাচ গুঁড়ো ১ চা চামচ
- চিনি ২-৩ কাপ
- জল পাঁচ কাপ
- গোলাপ জল ১ চা চামচ
পদ্ধতিঃ
- প্রথমে ১ লিটার দুধ একটি পাত্রে নিয়ে জ্বাল দিন। দুধ ফুটে ঘন হলে এর মধ্যে ভিনিগার দিয়ে আঁচ কমিয়ে দিন। দুধ যখন জমে গিয়ে ছানা আলাদা হতে থাকবে তখন আঁচ বন্ধ করবেন। এবার জল ঝরিয়ে ৪-৫ ঘণ্টা রেখে দিন।
- এবার একটি পাত্রে ৫ কাপ জল নিয়ে তাতে চিনি ঢালুন, এবার এটিকে জ্বাল দিন। মিশ্রণটি গাড় হয়ে এলে আঁচ কমিয়ে দিন। ব্যাস সিরা তৈরি।
- এরপর ছানার সাথে ময়দা ও এলাচের গুঁড়ো মিশিয়ে ভালো করে মেখে নিন যাতে দানা ভাব না থাকে। এবার ছানা থেকে ছোটো করে লেচি কেটে গোল করুন। এবার এগুলিকে গরম চিনির জল বা সিরার মধ্যে ভিজিয়ে নিয়ে সেটিকে ঢেকে মিনিট দশেক জ্বাল দিন। এরপর ঠান্ডা হয়া অব্দি রাখুন। রসগোল্লা তৈরির জন্য সিরায় ৫-৬ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। ব্যাস, এবার রসগোল্লা পরিবেশন করুন।
রাবড়ি
[Bengali Ranna Banna (Bengali Cooking Recipes)]
উপকরনঃ
- দুধ ৩ কাপ
- ঘন দুধ ১/২ কাপ
- পাউরুটির গুঁড়ো ১.৫ কাপ
- চিনি ১ টেবিল চামচ
- সবুজ এলাচ গুঁড়ো (ইচ্ছে মতো)
- বাদাম কুচি (ইচ্ছে মতো)
- কিশমিশ (ইচ্ছে মতো)
পদ্ধতিঃ
- প্রথমে একটি পাত্রে দুধ ঢেলে দুধ জাল দিয়ে নেবেন(এটি পরেও করতে পারেন)। এরপর দুটো সতেজ পাউরুটি নিয়ে সেগুলির ধার এর শক্ত দিক গুলি কেটে নিয়ে মাঝের অংশ গুলি আলাদা করে নিন।
- এরপর মিক্সার গ্রাইন্ডারে পাউরুটিগুলিকে গুঁড়ো করে নিন।এরপর জাল দেয়া দুধে ওই পাউরুটির গুঁড়ো মিশিয়ে ভালোকরে নেড়ে নিন। এবার পরিমান মতো চিনি মিশিয়ে ঘন দুধটা এই দুধের সাথে মিশিয়ে দিন।ভালোকরে মিশ্রণটা নাড়তে থাকুন, খেয়াল করবেন যেন পুরে না যায়।
- এবার কিছুক্ষণ সেটিকে সেদ্ধ হতে দিন, বাটির ধার থেকে মালাইটা চেঁছে নিয়ে আবার দুধে মিশিয়ে দিন, এটা বারবার করবেন এবং যখন দেখবেন দুধ ঘন হয়ে আসছে তখন এলাচ গুঁড়ো , কিশমিশ, বাদাম কুচি দিয়ে দিন। ব্যাস রাবড়ি তৈরি। এবার ঠাণ্ডা করে পরিবেশন করুন।
মালপোয়া
[Bengali Ranna Banna (Bengali Cooking Recipes)]
পিঠে-পুলি’তে বাংলা সবার চেয়ে এগিয়ে। আসুন আজ দেখে নিই মালপোয়া বানানোর রেসিপি।
উপকরনঃ
- ময়দা- ১ কেজি
- আজয়িন- ১/২ চামচ
- সুজি- ৪০০ গ্রাম
- দুধ- ২ কাপ
- চিনি- ১ কাপ
- জল- ১ কাপ
- জাফরান- ইচ্ছে মতো
- রাবড়ি
- হলুদ রং
পদ্ধতিঃ
- প্রথমে একটি পাত্রে দুধ জ্বাল দিয়ে নিন। এরপর ময়দা, সুজি, দুধ, আ জয়িন, হলুদ রং মিশিয়ে ভালকরে ফেটান যতক্ষণ না পর্যন্ত সেটি ক্রিমের মতন হয়।
- অন্য একটি পাত্রে চিনি ও জল দিয়ে সিরাপ তৈরি করে নিন। খুব ঘন বা পাতলা যাতে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন।
- এবার একটা কড়াই নিয়ে তাতে পরিমান মতো তেল দিয়ে গরম করুন। যখন তেল গরম হয়ে আসবে তখন ওই মিশ্রণ টিকে কড়াইতে দিয়ে দিন এবং ভাজতে থাকুন। এরপর ওগুলো সোনালি রং এর হয়ে গেলে ওগুলো তুলে নিয়ে রসে চোবান।
- এবার মালপোয়া গুলিকে রসের পাত্র থেকে তুলে একটা প্লেটে রাখুন, অল্প করে রাবড়ি নিয়ে প্রতিটি মালপোয়া গায়ে লাগিয়ে দিন।এরকম করলে মালপোয়া গুলি সুস্বাদু হয়ে উঠবে।
এছাড়াও কমলাভোগ, কালাকাঁদ, কড়া পাকের সন্দেশ প্রভৃতি বিভিন্ন মিষ্টান্ন ব্যপক জনপ্রিয়।