চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায়, উচ্চ রক্তচাপেরই আরেক নাম হাইপারটেনশন। যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা এনএইচএস হাইপারটেনশনকেই হাই ব্লাড প্রেশার বা উচ্চ রক্তচাপ বলে বর্ণনা করছে।

আমাদের মধ্যে হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে নানা ধরনের ভুল ধারণা আছে। কেউ মনে করেন কারও উচ্চ রক্তচাপ থাকলে হয়ত উদ্বেগ উৎকণ্ঠার সময় যে বুক ধড়ফড় করে সেটাই হাইপারটেনশন। বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৫০ কোটি মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, উচ্চ রক্তচাপের কারণে প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় ৯৪ লাখ মানুষ মারা যান, এবং এটি পৃথিবীতে অসুখে ভুগে মারা যাওয়ার প্রধান কারণ।

চলুন হাইপারটেনশন নিয়ে মৌলিক কিছু বিষয়াবলী জেনে নিই –

চিকিৎসকেরা বলছেন, আগে বয়স্ক মানুষ বিশেষ করে ৪০ বছরের বেশি হলেই কারও উচ্চ রক্তচাপের আশঙ্কা তৈরি হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অল্পবয়সীদের মধ্যেও এ রোগ দেখা যাচ্ছে।

সবচেয়ে বড় শঙ্কার ব্যাপার হচ্ছে, বেশিরভাগ মানুষ জানেই না যে তারা হাইপারটেনশনে ভুগছেন। “এর ফলে হার্ট অ্যাটাক বা হার্ট ফেইলিওরের মত বড় ধরনের কোনও অসুস্থতায় আক্রান্ত হলে পরিণতিতে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। কিন্তু নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চললে এ নীরব ঘাতকের হাত থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।”     সেজন্য বিপদ থেকে বাঁচতে হলে সবার আগে প্রয়োজন শনাক্ত করা যে আপনার রক্তচাপ বিপৎসীমার নিচে আছে কি না, আর না থাকলে কী করতে হবে।

 

কিভাবে বোঝা যাবে একজন মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন কি-না?

উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ কী?

হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ  নিয়ন্ত্রণে না থাকলে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি অঙ্গে জটিলতা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। উচ্চ রক্তচাপ থেকে হৃদযন্ত্রের পেশি দুর্বল হয়ে যেতে পারে এবং দুর্বল হৃদযন্ত্র রক্ত পাম্প করতে না পেরে ব্যক্তির হৃতপিণ্ড কাজ বন্ধ করতে পারে ফলে হার্ট ফেল করতে পারে।

# ঘাড় ব্যথা করা।

# প্রচণ্ড মাথা ব্যথা করা, মাথা গরম হয়ে যাওয়া এবং মাথা ঘোরানো।

# বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।

# মাঝে মাঝে কানে শব্দ হওয়া।

# অল্পতেই রেগে যাওয়া বা অস্থির হয়ে শরীর কাঁপতে থাকা।

# রাতে ভালো ঘুম না হওয়া।

# অনেক সময় জ্ঞান হারিয়ে ফেলা।

এসব লক্ষণ দেখা দিলে যত দ্রত সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ খেতে হবে।

উচ্চ রক্তচাপের কারণ

উচ্চ রক্তচাপের অনেক কারন আছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলঃ

# নিয়মিত ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম না করলে।

# পরিবারে কারও উচ্চ রক্তচাপ থাকলে।

# শারীরিক ও মানসিক চাপ থাকলে।

# সাধারণত মানুষের ৪০ বছরের পর থেকে উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে থাকে।

# অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা।

# ধূমপান, মদ্যপান বা অতিরিক্ত ক্যাফেইন জাতীয় খাদ্য/পানীয় খেলে।

# পরিবারে কারও উচ্চ রক্তচাপ থাকলে।

# প্রতিদিন ছয় গ্রাম অথবা এক চা চামচের বেশি লবণ খেলে।

# দীর্ঘদিন ধরে ঘুমের সমস্যা হলে।

 

কারা বেশি উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকিতে থাকেন

বিশেষ করে যারা অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাবন করেন তারা বেশি উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকিতে থাকেন। তবে যারা নিয়মিত ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম করেন না, তারাও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকিতে থাকেন।

সাধারণত ৪৫ বছরের ওপরের নারী ও পুরষের উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি থাকে। অনেক নারীর ৬৫ বছরে গিয়ে উচ্চ রক্তচাপ হয়। যদি পরিবারে কারো উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিস থাকে তাহলে সেই ব্যক্তির উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি থাকে। ৬০ ভাগ ডায়াবেটিস রোগীর উচ্চ রক্তচাপ থাকে।

দীর্ঘদিন  উচ্চ রক্তচাপ থাকলেও অনেক সময় এটি বোঝা যায় না। ফলেএটি ধীরে ধীরে হৃদপিণ্ড, ফুসফুস, রক্তনালি, মস্তিষ্ক ও কিডনির ক্ষতি করে।

Leave A Reply