বং দুনিয়া ওয়েব ডেস্কঃ ইলিশ এমন একটি মাছ যা পৃথিবীর যে প্রান্তেই কোন বাঙ্গালী বাস করুক না কেন, তার জিভে জল আসবেই আসবে । শুধু বাঙ্গালী কেন, মৎস্যপ্রেমীদের কাছে ইলিশ অন্যন্ত প্রিয় এবং পছন্দের একটি মাছ । জলের রুপালী শস্য, আহ্লাদের এই মীনসন্তান নানা দেশে নানা নামে পরিচিত। তাই এক ইলিশের হরেক নাম।

জেনে অবাক হবেন, বিভিন্ন প্রজাতির মাছের নামের ডেটাবেইস সংরক্ষণকারী বিশ্বের সবচেয়ে বড় ওয়েব সংস্থা ফিশবেইসে ২৫টি ভাষায় ইলিশের ১১০টি স্থানীয় নাম দেওয়া হয়েছে।ইলিশ সম্পর্কে সবচেয়ে চমকপ্রদ তথ্য হল, পৃথিবীর ৬৫ শতাংশ ইলিশের উৎপাদন হয় বাংলাদেশে।আর সেই ইলিশ স্বাদে-গন্ধে-বর্ণে অন্য সব দেশকে অনায়াসে কয়েক গোল দিয়ে দেবে ।

চন্দনা- অনেকেই একে ইলিশ ভেবে ভুল করে

বাংলাদেশের ইলিশের কদর শুধু বাংলাদেশেই সীমাবদ্ধ থাকেনি । ভৌগলিক সীমানা পেরিয়ে বিশ্বব্যাপী এই রুপালী ইলিশের জনপ্রিয়তা সীমাহীন ।  জামদানির পর ১৯১৭ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশের ইলিশ মাছ ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই (জিওগ্রাফিক্যাল ইনডিকেশন প্রোডাক্ট) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়।ওয়ার্ল্ড ফিশের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, বিশ্বের মোট ইলিশের ৬৫ শতাংশ উৎপাদিত হয় বাংলাদেশে। ভারতে ১৫ শতাংশ, মিয়ানমারে ১০ শতাংশ, আরব সাগর তীরবর্তী দেশগুলো এবং প্রশান্ত ও আটলান্টিক মহাসাগর তীরবর্তী দেশগুলোতে বাকি ইলিশ ধরা পড়ে।

সার্ডিন মাছ দেখেতে অনেকটাই ইলিশের মত

বিশ্বে ইলিশের নাম হিলসা শ্যাড এবং আলোস হিলসা (ফিশবেইস অনুযায়ী) । বাংলাদেশেই ইলিশ বেশ কয়েক নামে পরিচিত । বাংলাদেশে বলা হয়, ইলিশ মাছ, ইলিশ, পদ্মা ইলিশ, জাটকা—দেশের কোনো কোনো এলাকায় ইলিশকে ইলশাও বলে।এদিকে মায়ানমারে যে ইলিশ পাওয়া যায় সেখানকার স্থানীয় ভাষায়  বলা হয় না-থা-লোক, না-থালাংক। ভারতে বাংলা ভাষাভাষীরা বলেন ইলিশ এবং ছোট ইলিশকে বলেন খোকা ইলিশ।

একসাথে কাছ থেকে দেখলে পার্থক্য ধরা যায়

আসামে অসমিয়া ভাষায় ইলিশকে বলা হয় ‘ইলিহি’। তেলেগু ভাষায় বলা হয় পালাসা, পালাসাহ, পালিয়া, পোলাসা। গুজরাটি ভাষায় বলা হয় চাকশি, চাকসি, চাসকি, পাল্লা। হিন্দিতে বলা হয় হিলসা, পালা। কানাড়া ভাষায় বলা হয় মুল্লাসু, পালাসা, পালিয়া, পোলাসা। মালয়ালাম ভাষায় বলা হয় পালিয়াহ, পালুভা, ভালাভা। মারাঠি ভাষায় বলা হয় পালা, পাল্লা, পালভা। উড়ে ভাষায় বলা হয় ইলিশ, ইলিশা, জোড়ি। তামিল ভাষায় বলা হয় উল্লাম, ভেনগান্নাই, সেভা। শ্রীলঙ্কায় তামিল ভাষায় ইলিশকে বলা হয় সেভ্ভা, উল্লাম।

স্বাদে-গন্ধে-রূপে অতুলনীয় পদ্মার ইলিশ

আবার পাকিস্তানে দেখা গেছে পাঞ্জাবি ভাষায় ইলিশকে পাল্লা এবং উর্দুতে পালো ও পুল্লা বলা হয়। ভিয়েতনামে ইলিশের নাম বেশ অদ্ভুত-  ক্যা কে । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইলিশকে আন্তর্জাতিক নামে অর্থাৎ হিলসা বলেই ডাকা হয় ইলিশকে। যুক্তরাজ্যে বলা হয় হিলসা হেরিং। পোলান্ডে পলিশ ভাষায় বলা হয় হিলজা ইনডিজস্কা। পর্তুগালে পর্তুগিজ ভাষায় ইলিশকে বলা হয় পালা। চেক ভাষায় ইলিশের নাম প্লাককা ইলিশা, স্লেড পালাসাহ।

ডেনমার্কে ইলিশের নাম হিলসা-স্টামস্লিড। স্প্যানিশ ভাষায় ইলিশের নাম সাবালো হিলসা। সুইডিশ ভাষায় বলা হয় হিনডিস্ক স্টাকসিল। এস্তোনিয়ান ভাষায় ইলিশকে বলা হয় ইন্ডিয়া সালিলুসা। রাশিয়ায় রুশ ভাষায় এই ইলিশকেই ডাকা হয় তেনুয়ালোসা নামে। ইরাকে আরবি ভাষায় ইলিশের নাম শোর। ইরানে ফারসি ভাষায় ইলিশকে বার্ক, মাহি খোর কুচিকু, সবোর, সবুর, জাবুর, জমুর প্রভৃতি নামে ডাকা হয়। ওমানে ইলিশকে ডাকা হয় চাকোরি নামে। ম্যান্ডারিয়ান চায়নিজ ভাষায় চীনে ইলিশের নাম ইচাচা।

সব মিলিয়ে দেখা গেছে,  ২৫টি ভাষায় ইলিশের ১১০টি স্থানীয় নাম রয়েছে। এ থেকেই বোঝা যায়, রাজনৈতিক সীমানা পেরিয়ে ইলিশের জনপ্রিয়তা কতখানি। টেনুয়ালোসা ও হিলসা এই দুই গণের মোট ছয় প্রজাতির ইলিশ মাছের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এর মধ্যে বাংলাদেশে তিন প্রজাতির ইলিশ পাওয়া যায়। সেগুলো হচ্ছে হিলসা শ্যাড (টেনুয়ালোসা ইলিশা), কেলি শ্যাড (হিলসা কেলি) এবং টোলি শ্যাড (টেনুয়ালোসা টোলি)। পদ্মার ইলিশ হিসাবে টেনুয়ালোসা ইলিশাকে মানুষ বেশী পছন্দ করে । টেনুয়ালোসা ইলিশা প্রজাতির ইলিশকে সমুদ্র ও স্বাদু পানিতে দেখা যায়। বাকি দুই প্রজাতির ইলিশ লোনা পানিতেই থাকে।

Kajal Paul is one of the Co-Founder and writer at BongDunia. He has previously worked with some publishers and also with some organizations. He has completed Graduation on Political Science from Calcutta University and also has experience in News Media Industry.

Leave A Reply