আমরা ছোট বেলা থেকে একটি ভাবসম্প্রসারণ করতে শিখি “অন্যায় যে করে অন্যায় যে সহে; তব ঘৃণা যেন তারে তৃণ সম দহে”। কবিগুরু রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর এর নৈবদ্য কাব্যগ্রন্থে ন্যায়দন্ড কবিতার লাইন দুটো পড়তে পড়তে আমরা বড় হই। ছোট থাকতে আমাদের অভিভাবকরা শেখান মেনে নেওয়ার কথা একসময় মন থেকে মেনে নিতে না চাইলেও মেনে নিই। আমাদের চারিপাশে অন্যায় আর আমরা মেনে চলেছি চলব।
চিনের একটি ঘটনার কথা না বললে চলে না। সালটা ২০১০ একজন কলেজ ছাত্রী বাসে করে কলেজে যাচ্ছে। তার পাশেই তার প্রেমিক বসা। মেয়েটি বাদে ঐ বাসে কোন মহিলা ছিল না, সবাই ছিল পুরুষ। কিছুদূর বাস চলার কয়েকজন অস্ত্রধারী যুবক ঐ মেয়েটি অস্ত্রের মুখে ধর্ষণ করে। তার পাশে বসে থাকা প্রেমিক কোন প্রতিবাদ করে না। বাসে অনেক যাত্রী থাকলেও একজন বয়স্ক লোকই প্রতিবাদ করে। অস্ত্রধারী যুবকেরা তাকে মেরে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। ধর্ষণ করে মেয়েটিকে পোশাক পড়িয়ে প্রেমিকের কাছে বসিয়ে রাখে। গাড়ি চলতে থাকে যেন কোন কিছুই গাড়িতে ঘটেনি। কিছুদূর গাড়িতে চলার পর ড্রাইভারের পাশে বসা একজন ধর্ষকের কোলে গিয়ে মেয়েটি বসে এবং বলে ঐ প্রতিবাদকারীকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিতে। সবাই মিলে মেয়েটির কথা রাখে প্রতিবাদকারীকে রাস্তায় নামিয়ে দেওয়া হয়। কিছুক্ষণ পর মেয়েটি ড্রাইভারের গাড়ি চালান হুইল থেকে ড্রাইভারের হাত সরিয়ে দেয়। গাড়িটি সকলকে নিয়ে দূর্ঘটনায় পরে। বেশীরভাগ লোকই মারা যায়। অন্যায় করা আর অন্যায় দেখে প্রতিবাদ করার না ফলাফল মেয়েটি হাতেনাতে সবাইকে শিখিয়ে দেয়।
আমাদের চারিপাশে অন্যায় দেখতে দেখতে আমরা প্রতিবন্ধী হয়ে গেছি। চারিপাশে চলছে সার্কাস। কখনো ডেঙ্গুর নাম করে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এক ঝাটা নিয়ে ছবি তুলছেন। আবার কখনো ধানের দাম না থাকায় প্রশাসনের লোক চাষির ধান কাটছেন। কখনো পুলিশ ধর্ষন করছে আবার কখনো পুলিশ ধর্ষনের ভিডিও ফাস করছে। কখনো জেলার টাকা সহ ধরা পড়ছে। কখনো শিক্ষা কর্মকর্তা তার লেখার ভুলে জর্জরিত হচ্ছে। এত কিছুর মধ্যে আমরা কি শিখছি।
বিদ্যালয় গুলিতে কোমলমতিরা শিখছে বানরের পিঠে ভাগ করা। অথবা সুদ কষা। বাংলাদেশের গ্রাম গুলোতে একটি প্রবাদ শুরু হয়েছে রাত পোহালে কিস্তি। শোনা যায় কোন এক বাড়িতে রাতে অনেক শব্দ হচ্ছে। পাশের লোকেরা জিজ্ঞেস করলে বাড়ির মহিলা উত্তর দেয় রাত পোহালে কিস্তি। মাইক্রোকেডিটের জ্বালায় মানুষ বাড়ি ছাড়া হচ্ছে। তারই সাথে লোন দেওয়ার সময় নিরীহ মানুষের ফাকা চেক জমা রাখে। জামিনদারও কিছুদিন পর লোন গ্রহীতার সাথে পালায় অথবা জেলের অন্ধকারে যায়। তারই পাশে আছে উন্নয়ন কর্মকান্ডের ঝলকানি রাস্তা মাসের পর মাস খুচে রেখে কন্ট্রাকটার উধাও কেউ বলতে পারবে না এরাস্তা আসলেই হবে কি না। প্রশাসন সাইনবোর্ড টানিয়ে দু:খ প্রকাশ করে। এত সব ফাড়ার পরে আবার ঘা ডেঙ্গু।
এতদিন শুনেছি ডেঙ্গু বড় লোকের রোগ। প্রথমদিকে ডেঙ্গুর কথা শুনলে ভালই লাগত আমাদের মত গরিবের এসিও নাই ফুলের টবও নাই। কিন্তু বড়লোক ক্ষতি করবে মরব তো আমরা। আমেরিকান, ইউরোপীয়রা আবাহাওয়ার পরিবর্তনের প্রধান ক্ষতিকারক আর আমাদের বর্ষা নেই। বর্ষা নেই ধান নেই, মাছ নেই। বর্ষা নেই কবিতা নেই, গান নেই। আমরা প্রতিবাদ করব না। অন্যায় দেখব আর সয়ে যাব। রবিঠাকুর পারলে আপনার কবিতার লাইনগুলো পরিবর্তন করেন। আপনার মৃত্যুদিবস এর আগের দিনে একটাই চাওয়া। [অন্যায় যে করে অন্যায় যে সহে, তব ঘৃণা যেন তারে তৃণ সম দহে]