মাইগ্রেন

 

সাধারণত ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সে মাইগ্রেন রোগ শুরু হয়। বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ১১ শতাংশ বয়স্ক মানুষ মাইগ্রেনজনিত মাথাব্যথায় ভোগেন। মাইগ্রেন এক বিশেষ ধরনের মাথাব্যথা। মাথার যেকোনো এক পাশ থেকে শুরু হয়ে অনেক সময় পুরো মাথায় ব্যথা করে। এতে মস্তিষ্কে স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হয়। তবে এটি বংশগত বা অজ্ঞাত কোনো কারণে হতে পারে। এটি সাধারণত পুরুষের চেয়ে নারীদের বেশি হয়। নারীদের ঋতুস্রাবের সময় মাথাব্যথা বাড়ে। চকলেট, পনির, কফি ইত্যাদি বেশি খাওয়া, জন্মবিরতিকরণ ওষুধ, দুশ্চিন্তা, অতিরিক্ত ভ্রমণ, ব্যায়াম, অনিদ্রা, অনেকক্ষণ টিভি দেখা, দীর্ঘসময় কম্পিউটারে কাজ করা, মোবাইলে কথা বলা ইত্যাদির কারণে এ রোগ হতে পারে। মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা, কোষ্ঠকাঠিন্য, অতি উজ্জ্বল আলো এই রোগকে বাড়িয়ে দেয়।

মাথার অস্বাভাবিক ব্যথা সাধারনত মাইগ্রেন নামে পরিচিত৷ মাইগ্রেনের ব্যথা অনেক সময় প্রবল আকার ধারণ করতে পারে এবং এ থেকে বমি ও অসুস্থতা বোধও হতে পারে৷ মনোযোগ নষ্ট হওয়া, বিরক্তিবোধ করা ইত্যাদি উপসর্গ মাথাব্যথা শুরুর আগেও হতে পারে। মাথার যেকোনো অংশ থেকে এ ব্যথা শুরু হয়। পরে পুরো মাথায় ছড়িয়ে পড়ে | চোখের পেছনে ব্যথার অনুভূতি তৈরি হতে পারে। শব্দ ও আলো ভালো লাগে না। কখনো কখনো অতিরিক্ত শব্দ ও আলোয় ব্যথা বেড়ে যেতে পারে| মাইগ্রেনের কারণ ও চিকিৎসা কিছু তথ্য রইল আপনাদের জন্য৷

মাইগ্রেনের মাথাব্যথার উপসর্গ:                                        

  • মাথার যেকোন একদিকে ব্যথা অনুভুত হওয়া৷
  • অল্প সময়ের জন্য বিষণ্ণতা, বিরক্তিভাব ও ক্ষুধামান্দ্য বোধ হতে পারে৷
  • প্রবল ব্যথা, বমি ভাব ও বমি৷
  • হাত বা পা অবশ হয়ে যাওয়া৷
  • অস্বস্হি, অলসভাব, ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া ইত্যাদি মাইগ্রেনের খুব সাধারন লক্ষণ৷
  • দুর্বলতা, মনঃসংযোগের অভাব৷

মাইগ্রেনের মাথাব্যথার কারণ:

  • মানসিক চিন্তা, অতিরিক্ত কাজের চাপ, ঘুমের ব্যঘাত, অবসাদ ইত্যাদি মাইগ্রেনের ব্যথার কারণ হতে হবে৷
  • মাইগ্রেনের ব্যথা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মহিলাদের মধ্যে দেখা যায়৷ মহিলাদের ক্ষেত্রে ইস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমাণ বেড়ে বা কমে গেলে ধতুস্রাবের সময় মহিলাদের এই ব্যথা অনুভূত হয়৷
  • অনেকের ক্ষেত্রে রক্তচাপ সঠিক পরিমাণে না হলে মাইগ্রেনের ব্যথা হতে পারে৷ যদিও অনেকের ক্ষেত্রে মাইগ্রেন জিন থেকেও এই ব্যথা হতে পারে৷

মাইগ্রেন প্রতিরোধের ঘরোয়া প্রতিকার:

  • তাজা আঙুরের রস খেলে মাইগ্রেনের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়৷ তবে আঙুরের রসে জল মেশাবেন না৷
  • একটা ভেজা তোয়ালে ৫-৭ মিনিট ফ্রিজে রেখে তারপর ওই ঠান্ডা তোয়ালেকে মাথায় ও চোখের উপর কিছুক্ষণ রাখলে ব্যথা থেকে আরাম পাওয়া যায়৷
  • একটা অন্ধকার, শান্ত ঘরে শুয়ে যদি মাথায় মাসাজ করানো যায় তবেও মাইগ্রেনের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়৷
  • চন্দনকাঠের গুঁড়োর সঙ্গে সামান্য জল মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন৷ পেস্টটি কপালে মেখে নিন৷ শুকিয়ে গেলে তুলে ফেলুন৷ এতেও মাইগ্রেনের ব্যথা থেকে আরাম মিলবে৷

মাইগ্রেন

মাইগ্রেনের সমস্যা প্রতিরোধ করতে কিছু খাবার সয়তা করতে পারে-

* ম্যাগনেশিয়ামসমৃদ্ধ খাবার। যেমন ঢেঁকি ছাঁটা চালের ভাত, আলু ও বার্লি মাইগ্রেন প্রতিরোধক।
* বিভিন্ন ফল, বিশেষ করে খেজুর ও ডুমুর ব্যথা উপশম করে।
* সবুজ, হলুদ ও কমলা রঙের শাকসবজি নিয়মিত খেলে উপকার হয়।
* ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি মাইগ্রেন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। তিল, আটা ও বিট ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম রয়েছে।
* আদার টুকরো বা রস দিনে দুবার জিঞ্চার পাউডার পানিতে মিশিয়ে খেতে পারেন।

মাইগ্রেন রোগীরা কী ধরনের খাবার থেকে বিরত থাকবেন-
* চা, কফি ও কোমলপানীয়, চকলেট, আইসক্রিম, দই, দুধ, মাখন, টমেটো ও টক জাতীয় ফল খাবেন না
* গম জাতীয় খাবার, যেমন রুটি, পাস্তা, ব্রেড ইত্যাদি
* আপেল, কলা ও চিনাবাদাম
* পেঁয়াজ

 

মাইগ্রেন থেকে সাময়িক রেহাই পাওয়ার কিছু উপায়:
* মাইগ্রেন চিকিৎসায় তাৎক্ষণিক এবং প্রতিরোধক ওষুধের পাশাপাশি কিছু নিয়মকানুন মেনে চললে সমস্যা অনেকাংশে কমে যায়।
* প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে হবে এবং সেটা হতে হবে পরিমিত।
* অতিরিক্ত বা কম আলোতে কাজ না করা।
* কড়া রোদ বা তীব্র ঠান্ডা পরিহার করতে হবে।
* উচ্চশব্দ ও কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে বেশিক্ষণ না থাকা।
* বেশি সময় ধরে কম্পিউটারের মনিটর ও টিভির সামনে না থাকা।
* মাইগ্রেন শুরু হয়ে গেলে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা (বিশেষ করে বমি হয়ে থাকলে), বিশ্রাম করা, ঠান্ডা কাপড় মাথায় জড়িয়ে রাখা উচিত।

মাইগ্রেন

মাইগ্রেন সম্পর্কে কিছু ভুল ধারণা:

১) অনেকে মনে করেন মাইগ্রেন মানেই মাথা ব্যথা। এ ধারণা ঠিক নয়। মাইগ্রেনের অনেকগুলো লক্ষণের মধ্যে একটি হচ্ছে মাথা ব্যথা। বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেক সময় মাথা ব্যথা ছাড়াও মাইগ্রেন আক্রমণ করতে পারে।

২) অনেকের মধ্যে ভুল ধারণা আছে যে, মাইগ্রেন কেবল মেয়েদেরই হয়। আসলে এটি নারী-পুরুষ যে কারোরই হতে পারে। তবে পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৮ ভাগ পুরুষ ও ১৮ ভাগ নারী এই সমস্যায় ভোগেন। আবার, শুধু বড়দের নয়, হতে পারে শিশুদেরও।

৩) অনেকের ধারণা মানসিক চাপ থেকেই মাইগ্রেন হয়। এটি ঠিক নয়। প্রায় ৭০% মাইগ্রেনের কারণ দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ হলেও আরও বহু কারণে আক্রমণ করতে পারে মাইগ্রেন।

৪) মাইগ্রেনের ব্যথা বেশিদিন থাকে না বলে ভুল ধারণা প্রচলিত আছে অনেকের মধ্যে। তবে মাইগ্রেন অনেকদিন পর্যন্ত থাকতে পারে। অনেক সময় মাইগ্রেন একমাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়।

৫) অনেকে মনে করেন মাইগ্রেন থেকে রক্ষা পাওয়ার কোনো উপায় নেই। এটি ঠিক নয়। যদিও মাইগ্রেনের কোনো স্থায়ী চিকিৎসা নেই, তবে লক্ষণসমূহ বিচার করে অনেকটাই রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

আরও পড়ুনঃ হার্নিয়া : হার্নিয়ার কারণ, হার্নিয়ার লক্ষন , হার্নিয়ার চিকিৎসা সম্মন্ধে জানুন

মাইগ্রেনের চিকিৎসায় নতুন কার্যকরী ওষুধ:

গবেষকরা বলছেন, মাইগ্রেন বা দীর্ঘ সময়ের মাথা ব্যথা সারাতে অন্য সব ঔষধ বা চিকিৎসা যখন ব্যর্থ হবে, তখন এই নতুন ঔষধ কাজ করবে। নতুন এই ঔষধটি হচ্ছে ইনজেকশন। মাসে একবার এই ইনজেকশন নেয়া যাবে। এর নাম দেয়া হয়েছে ‘এরেনুম্যাব’।

মাইগ্রেন নামের এই ভয়ানক যন্ত্রণাকে স্বাভাবিক মাথাব্যথা ভেবে দিনের পর দিন সহ্য করে যাওয়ার কোনো মানে হয় না। প্রত্যেকের উচিত মাইগ্রেন সম্পর্কে জানা ও সচেতন হওয়া। সেইসাথে প্রতিরোধমূলক নির্দেশনাসমূহ মেনে চলা। কারণ যেকোনো রোগের ক্ষেত্রেই, “Prevention is better than cure”!

মাইগ্রেন

দ্রততার সাথে মাইগ্রেনের ব্যাথা কমাতে:

মাইগ্রেনের ব্যাথা থেকে মুক্তি পেতে ঘরোয়া পদ্ধতি হলো অর্ধেকটা লেবুর রস সাথে হিমালয় সল্ট বা বিট লবণ মিশিয়ে পান করা।

যেভাবে তৈরি করবেন:- প্রথমে অর্ধেকটা লেবুর রস করে নিন।স এর সাথে এক টেবিল চামচ বিট লবন মিশিয়ে নিন। মাইগ্রেনের সময় এই পানীয়টি খেলে উপকার পেতে পারেন। বিট লবনে ৮৪টির মত মিনারেল ইলেট্রোলাইট উপাদান আছে। বিট লবনের কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। বমি বমি ভাবও দূর হবে। তবে যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে বা অন্য কোন কারণে অতিরিক্ত লবন খাওয়া নিষেধ তাদের ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

নিয়মিত যৌন মিলন মাইগ্রেন থেকে রক্ষা করতে পারে-

স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ স্ট্রেইশার জানান নিয়মিত যৌন মিলনে মাথাব্যাথা থেকে মুক্তি দিতে পারে। যৌন মিলনের সময় পুরুষ-নারী উভয়ের শরীর থেকে এন্ড্রোফিন নিঃসৃত হয়। শরীর থেকে বেশি মাত্রায় এন্ড্রোফিন বেরিয়ে যাওয়ার কারণেই, দ্রুত মাথাব্যাথা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। শুধু মাথাই নয় শরীরের বিভিন্ন অংশের ব্যথাও যৌন মিলনে দূর হয় বলে দাবি করেন তিনি। এই বিশেষজ্ঞের মতে পেইন কিলার না খেয়ে নিয়মিত যৌন মিলনের অভ্যাস গড়ে তোলাই শ্রেয়। লরেনের বলেন, যৌনতার উত্তেজনায়, সাময়িক হলেও মনোযোগ বিক্ষিপ্ত হয়। এই কারণে, ব্যথার বোধ খানিকটা দূর হয়। তবে প্রচণ্ড মাথা ব্যথার ক্ষেত্রে এই মতবাদ কার্যকরী নয় বলেও জানান এই বিশেষজ্ঞ।

Mr. Shuva is a News and Content Writer at BongDunia. He has worked with various news agencies all over the world and currently, he is having an important role in our content writing team.

Leave A Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.