গরমে নাজেহাল অবস্থা । মাঝে মাঝে ঝড়ো হাওয়ার পাশাপাশি হালকা-পাতলা বৃষ্টির ছোঁয়া লাগছে বটে, কিন্তু বেশ কয়েক ঘন্টা কাটার পরেই আবার যে কে সেই গরম । পাশাপাশি সাগর থেকে জলীয় বাস্প মেশানো হাওয়া এবং তার ফলে বায়ুমণ্ডলের আপেক্ষিক আদ্রতার হেরফেরে ঘাম ঝরছে । বৈশাখের প্রচণ্ড তাপে সব থেকে বেশি সমস্যায় পড়ছে ছোট ছোট স্কুল পড়ুয়া শিশু । বেশিরভাগ স্কুলে এখনো গরমের ছুটি ঘোষণা করা হয়নি, স্কুল চালু আছে । ফলে যতই গরম পড়ুক না কেন, আবহাওয়া যাই হোক না কেন, বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে হবে । ঘরের তাপমাত্রার সাথে বাইরে তাপমাত্রার একটা পার্থক্য সবসময় থাকবেই । এছাড়া ছোট বাচ্চাদের দুরন্তপনার অন্ত নেই । তারা সব সময় দুষ্টুমিতে ব্যস্ত । অভিভাবকদের একটু বেখেয়ালের সুযোগ নিয়ে যা করা উচিত নয়, তাই করে বেড়াচ্ছে । আবার অনেক সময় অভিভাবকদের একটু সচেতনতার অভাবে, তারা ঠান্ডা গরমে আক্রান্ত হচ্ছে এবং পাশাপাশি সহজেই আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে । তবে এই গরমে শিশুদের, বিশেষ করে যে সমস্ত ছোট ছোট শিশুরা এখনো বাইরে বেরিয়ে স্কুলে যাচ্ছে, তাদের শরীরের যত্ন নেয়ার জন্য কিছু কিছু টিপস মাথায় রেখে মেনে চলতে পারলে বেশ কিছু সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব ।

নিচে একটা স্কুল পড়ুয়া শিশুর জন্য কি কি করা উচিত এবং কি কি করা উচিত নয় তা আলোচনা করা হলো ।

১) জল খাওয়ান:-  বাচ্চারা সাধারণত জল খেতে চায় না । কিন্তু গরমে বাচ্চাদের ঘাম বেরিয়ে গিয়ে শরীরে বেশি করে জলের অভাব দেখা যায় । বেশি ঠান্ডা বা বেশি গরম জল বাচ্চাকে দেওয়া একদম উচিত নয় । স্কুলে যাওয়ার সময় আপনার বাচ্চার স্কুলব্যাগে জলের বোতল রাখার কথা একদমই ভুলবেন না । বাইরে বেরিয়ে একবারে বেশি জল না খেয়ে বারবার অল্প অল্প করে জল খেতে দিন । লক্ষ্য রাখুন, এ ছাড়া যেদিন স্কুলে স্পোর্টস ডে থাকবে, সেদিন একটু বড় জলের বোতল দেওয়া ভালো ।

২) ভাজাভুজি বা জাঙ্ক ফুড:- এ কথা স্বীকার করতে হবে, প্রায় প্রতিটি বাচ্চা ভাজাভুজি পছন্দ করে । এই গরমে বাচ্চার স্বাস্থ্যের পক্ষে সেটি ক্ষতিকর । প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মতো বাচ্চাদের বেশী হজম শক্তি থাকে না । তাছাড়া গরমে বাচ্চা সহ প্রায় সকলেরই হজম শক্তি কমে যায় এবং হজমের গোলমাল দেখা দেয় । একটু খেয়াল রাখুন, আপনার বাচ্চার স্কুলের খাবার সময় টিফিন বক্স এর মেনুতে ভাজাভুজি টা যেন না থাকে । আর থাকলেও, সেটা যেন খুব কম থাকে । এর পরিবর্তে ফলের জুস বা সহজপাচ্য খাবার দিন ।

৩) হালকা খাবার:-  বাচ্চাদের হজম শক্তি কম থাকায়, সব ধরনের খাবার ভালোভাবে হজম করতে পারে না তারা । গরম কালে তো আরো খারাপ অবস্থা । স্কুল থেকে বাড়িতে ফিরলে তাকে বাড়ির খাবার, সেটা যতটা সম্ভব তেল-মসলা কম দিয়ে রান্না করা, দেওয়া ভালো । খাবারের তালিকায় সিদ্ধ করা খাবার এবং সবুজ শাকসবজি বেশি করে রাখবেন ।

৪) ফলের রস:- ফল রোগী, বাচ্চা সবার পক্ষে একটা বেশ উপকারী খাদ্য উপাদান । ফলে বিভিন্ন উপকারী ভিটামিনের পাশাপাশি নানান ধরনের খনিজ উপাদান থাকে । বেশি গরমে বাচ্চার জন্য ফলের জুস খুবই ভালো একটা খাদ্য উপাদান । ফলে বা ফলের রসে একদিকে যেমন শরীরের পুষ্টির ঘাটতি মিটবে, পাশাপাশি শরীরে জলের অভাব পূরণ করবে ।

৫) জামা কাপড়:-  গরমের দিনে খাবারের পাশাপাশি বাচ্চাদের স্কুলের পোশাকের দিকে খেয়াল রাখা অতীব জরুরী । সাধারণত, গরমে ঘাম ঝরে এবং ঘামটা শরীরে বসে গেলে ঠান্ডা লেগে সর্দি কাশির পাশাপাশি জ্বর পর্যন্ত আসতে পারে । সুতির জামা না থাকলে ঘাম বসার সম্ভাবনা থাকে বেশি । তাই গরমের দিনে পরিষ্কার জামা কাপড়ের পাশাপাশি নরম এবং হালকা জামা কাপড় দিন । স্কুল ড্রেস এক দিনের বেশি পরাবেন না । পাশাপাশি দুই থেকে তিন সেট স্কুল ড্রেস ব্যবহার করুন এই
গরমের দিনে ।

৬) ছাতার ব্যবহার:- গরমে আপনার বাচ্চাকে তাপপ্রবাহ এবং বাইরের সূর্যকিরণ থেকে রক্ষা করার জন্য ছাতা ব্যবহার করুন । ছাতা থাকলে সূর্যের তাপ সরাসরি গায়ে লাগবে না । ফলে শরীরটা একটু ঠান্ডা থাকবে ।

৭) ঘাম:- আপনাকে আপনার বাচ্চার ঘামের বিষয়টা নিয়ে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে । স্কুল বা বাইরে থেকে ঘরে ঢুকলে আগে বাচ্চার জামা কাপড় পাল্টে দিন এবং শুখনো কাপড় দিয়ে বাচ্চা শরীরটা ভালো ভাবে মুছে দিন । খেয়াল রাখতে হবে, ঘামে ভিজে ঘরে ঢুকে সরাসরি ফ্যানের নিচে বা এসি তে যেন না আসে ।

৮) চুলের যত্ন:- আপনার বাচ্চার খাওয়া দাওয়া এবং জামা কাপড় ছাড়াও চুলের দিকে একটু নজর দিতে হবে । স্কুল পড়ুয়া বাচ্চা যদি মেয়ে হয়, তাহলে তার চুল সুন্দর করে গুছিয়ে শক্ত করে বেঁধে দিন । আবার আপনার স্কুল পড়ুয়া বাচ্চা যদি ছেলে হয়, তাহলে চুল গরমের সময় ছোট করে ছেটে দিন । এতে বাচ্চা গরমে আরাম পাবে ।

৯) স্নান:- স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পর প্রতিটি বাচ্চা গরমে স্নান করতে চাইবে । তাছাড়া বাচ্চাদের একটা স্বাভাবিক স্বভাব জল ঘাঁটা । তারা গরমে বারবার স্নান করতে চাইবে । না করলে তো শরীর ঠান্ডা হবে না । কিন্তু বাড়ি ফেরার সাথে সাথে স্নান করাবেন না । আগে ঘরের পরিবেশে শরীরটাকে একটু ঠাণ্ডা হতে দিন, তারপর স্নান করান । স্নানের সময় হালকা ডেটল জল বা সুদল মিশিয়ে নিতে পারলে ভালো হয় ।

১০) অসুখ-বিসুখ:- ঋতু পরিবর্তনের সময় অসুখটা একটু বেশি দেখা দেয় । তবে এই সময় ঠাণ্ডা-গরমের তারতম্যে অসুখ বিসুখটা একটু বেশি হয় । সাধারণভাবে সর্দি কাশি, গলাব্যথা, সারা শরীরে র্যাুস বের হওয়া ইত্যাদি দেখা দেয় । একটু সচেতন হয়ে, উপরে নিয়মগুলো মেনে চললে দেখবেন, এই সমস্ত অসুস্থ হওয়া থেকে অনেকটাই মুক্তি পাবে আপনার বাচ্চা ।

এই নিয়মগুলো মেনে চলার পাশাপাশি একটু খেয়াল রাখবেন ঠান্ডা আইসক্রিম, বরফ মেশান শরবত বা জল, বাইরের জল, কিম্বা কোল্ড ড্রিঙ্কস জাতীয় পানীয় না খায় । পরিবর্তে আপনি তাকে দিন সেলাইন জল, বা কচি ডাবের জল, কিম্বা নুন-চিনি-লেবুর শরবত । এগুলি শরীরে লবণের ঘাটতি মেটাবে ।

Kajal Paul is one of the Co-Founder and writer at BongDunia. He has previously worked with some publishers and also with some organizations. He has completed Graduation on Political Science from Calcutta University and also has experience in News Media Industry.

Leave A Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.