প্রাচীন ভারতের ইতিহাস থেকে জানা যায় যে ভারতবর্ষ একসময় পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী দেশ হিসেবে পরিচিত ছিলো। ঐতিহাসিক সময় থেকেই ভারত আধ্যাত্মিক দিক থেকে সমগ্র বিশ্বের মধ্যে অগ্রবর্তী। পৃথিবীর সর্বকালের সর্ব ধর্মের যত মন্দির বা প্রতিষ্ঠান আছে, তাদের মধ্যে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে ধনী বলে বিবেচিত হয়ে থাকে কেরলের পদ্মনাভ মন্দির

এই মন্দির’টি ভারতের কেরালা‘য় তিরুবন্তপুরমে অবস্থিত। প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ, স্কন্দপুরাণ, ব্রহ্মপুরাণ, মৎস্যপুরাণ, এমনকি মহাভারতেও এই মন্দিরের উল্লেখ আছে। এই মন্দিরের অপর একটি নাম “The Golden Temple”। আক্ষরিক অর্থে, বর্তমানে এই মন্দির’টি অকল্পনীয় ধনী।

পদ্মনাভ মন্দির

বিপুল রহস্যে ঘেরা কেরলের পদ্মনাভ স্বামী মন্দির। মোটামুটি ধারণা করা হয় যে, কলিযুগের শুরুতে’ই এই মন্দিরের নির্মাণকাজ শুরু হয়। ভারতের এই প্রাচীনতম মন্দিরে লুকিয়ে আছে নানা রহস্য, যেগুলি’র বিজ্ঞানসম্মত কারন আজও সাধারণ মানুষের অগোচরে। তিরুবন্তপুরমের এই তীর্থস্থান পাঁচ হাজার বছরেরও বেশি প্রাচীন। নানা যুগে বিভিন্ন রাজা’রা মন্দির’টির সংস্কার সাধন করেছেন।তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ষোড়শ শতকের চোল বংশীয় রাজা‘রা।

 

বর্তমানে কেরলের রাজ পরিবার এর রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে। কেবলমাত্র হিন্দু ধর্মের মানুষেরা’ই এই মন্দিরে প্রবেশ করতে পারেন। তবে এই মন্দিরে প্রবেশ করা অতটা সহজসাধ্য নয়।

 

বৈদিক দ্রাবিড় স্থাপত্যে নির্মিত এই মন্দির’টি যে এতো পরিমাণে বিত্তশালী, তা আগে কেও জানত না। এমনকি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা রাজপরিবারের সদস্যদেরও অগোচরে ছিলো বিষয়’টি। সম্প্রতি কোর্টের নির্দেশে মন্দির উন্মোচিত হবার পর আবিষ্কৃত হয় মন্দিরের নীচের পাতালঘর। পাতালঘরে সব মিলিয়ে টি প্রকোষ্ঠ আবিষ্কৃত হয়েছে। যার মধ্যেটি প্রকোষ্ঠ উন্মোচন করা হলেও দ্বিতীয় প্রকোষ্ঠ’টি এখনও উন্মোচন করা সম্ভব হয়নি।

 

প্রাচীন ভারতের ইতিহাস এর অন্তর্গত হিন্দুপুরাণ থেকে জানা যায় যে, ভগবান বিষ্ণুর নাভীপদ্মে অবস্থান করার কারনে ব্রহ্মা’র আরেক নাম পদ্মনাভ। আর তাই ভগবান বিষ্ণুর আরেক নাম পদ্মনাভ স্বামী। সুতরাং,এই মন্দিরের কুলদেবতা স্বয়ং বিষ্ণু‘ই।

 

কেরলের এই মন্দিরের যে পাতালঘর আবিষ্কৃত হয়েছে, ২০১১ সালে দ্বিতীয় কক্ষ বাদ দিয়ে সরকারি নির্দেশে বাকি টি প্রকোষ্ঠ খোলার পর দেখা যায় সেখানে শুধুমাত্র সোনা’ই রয়েছে, বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী যার মূল্য এক লক্ষ কোটি টাকার মতো। ঐতিহাসিক মূল্য না হয় বাদ’ই দেওয়া হলো। এছাড়া রয়েছে রাশি রাশি হীরের গয়না, সোনার বাসন, অজস্র মহামূল্যবান মণি, মুদ্রা ও পাথর। এছাড়া নানা দেশের বিভিন্ন আমলের অগনিত স্বর্ণমুদ্রা, যুগের পর যুগ ধরে সঞ্চিত চুনি, পান্না।

 

 

দ্বিতীয় প্রকোষ্ঠ নিয়ে যে রহস্য আছে, তা আজও অজ্ঞাত। দরজা’টি নাগপাশ দ্বারা বন্ধ। কান পাতলে ভিতর থেকে রহস্যময় বৈদিক মন্ত্রোচ্চারণ ভেসে আসে। অনেকের ধারণা ওই নাগের মূর্তি দরজা না খোলার ব্যাপারে স্পষ্টতই সাবধান করছে, এটি বিপদের সংকেত। তাদের মতে এই কক্ষ খোলা অশুভ হবে। এই মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা ত্রাবণকোর শাহী খানদানের লোকজনদের বিশ্বাস এতে ভয়ংকর বিপদ ঘনিয়ে আসতে পারে। আবার রাজপরিবারের এক সদস্যের মতে এমনও বলা হয়েছে যে, এই প্রকোষ্ঠের মধ্যে এক সুড়ঙ্গ পথ আছে যার অন্য প্রান্তটি সোজা ওখানকার রাজার মহল হয়ে সমুদ্রের সাথে মিশেছে, তাই দরজা’টির কোথাও কোনও ছিদ্র নেই। আবার কেউ কেউ বলছে ওই কক্ষে আছে বিশালকার একটা কিংকোবরা, যার অনেকগুলো মাথা ও জিভ। সেই কিংকোবরাই নাকি এই দ্বিতীয় প্রকোষ্ঠের রক্ষক। তাই এই গুপ্ত কক্ষ খোলা হলে ওই কিংকোবরা বিদ্যুতের গতিতে জল থেকে বেরিয়ে এসে সব কিছু লন্ডভন্ড করে ছাড়বে। তাই যতো দিন যাচ্ছে সর্বশেষ এই গুহাকক্ষ নিয়ে রহস্য ততোই ঘনীভূত হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত কি হবে বা এই গুহাকক্ষের ভবিষ্যৎ কি তা এখন আদালতের নির্দেশের ওপরই নির্ভর করছে।

দ্বিতীয় গুহাকক্ষের দ্বার

মন্দিরের টি প্রকোষ্ঠ থেকে যা যা পাওয়া গেছে তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নরূপ

 

 

  • সোনারপাত ও রত্নখচিত গহনায় ভর্তি বস্তা ৭০টি এবং বিশাল বাক্স টি।
  • ১০০০ কিলো সোনার দানা (চালের আকারের দানা)।
  • ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সময়ের ১৭ কিলো সোনার মুদ্রা।
  • ত্রাবণকোর টাকশালের ১৪ কিলো সোনার মুদ্রা।
  • নেপোলিয়ন বোনাপার্টের সময়ের ১০০টি সোনার মুদ্রা।
  • এক হাজারেরও বেশি সোনার হার, যা প্রতিটি ১৮ ফুট করে লম্বা।
  • স্বর্ণ ও হীরক খচিত তিনটি মুকুট।
  • ১০ কিলো ওজনের একটি সোনার নেকলেস।
  • চারটি সোনার হার, প্রতিটির ওজন ২ কিলো করে।
  • হাজার কোটি টাকা মূল্যের সোনা-রূপার বাসন, মুকুট, সোনার ছাতা, মশাল, ছুড়ি বা রড, বাজদন্ডিকা ও বাজদন্ড (ছোট লাঠি)।
  • সোনার শেকল ১০০০ পিস।
  • সোনা ও হীরক কয়েকশ’ মুদ্রার যার এক একটির মূল্য পাঁচ কোটি টাকা।
  • এক কুইন্টালেরও বেশি সোনার হার।
  • এক লাখ সোনা-রূপার মুদ্রা, মনিবন্ধ এবং লকেট।
  • প্রতিটি দু’কিলো ওজনের অসংখ্য সোনা ও রূপার ছড়ি।

 

সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে সরকারীভাবে যে দল মন্দিরের পাতাল ঘরের প্রকোষ্ঠগুলি’র উন্মোচন করেছিলো, তাদের মধ্যে কেউ বর্তমানে বেঁচে নেই। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, সেই দলের কোনও সদস্যের মৃত্যু স্বাভাবিক কারনে হয়নি। এই কারনে সকলের ধারণা, মন্দিরের পাতালঘরের থেকে যে বিপুল পরিমাণ ধনরাশি আবিষ্কৃত হয়েছে, সেটি দেবতার সম্পদ এবং সেই সম্পদে সাধারণ মানুষের কোনও অধিকার নেই।

 

মন্দিরের নিরাপত্তা নিয়ে ইতিমধ্যে পুলিশ ও রাজ্য পুলিশ বেশ চিন্তিত। নিরাপত্তার ব্যাপার’টি পুলিশ এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছে। এই মর্মে তারা একটি রিপোর্ট তৈরি করে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছে। তাতে তারা স্পষ্ট জানিয়েছে, নিরাপত্তার কারণে মন্দিরের ৫০০ মিটারের মধ্যে এলাকাকে ‘টেম্পরল জোন’ বলে ঘোষণা করতে হবে, ওই এলাকার মধ্যে কোনো দোকান বা ওই ধরনের স্ট্রাকচার থাকবে না।প্রাচীন ভারতের ইতিহাস

 

Atanu Chakraborty is a content and news writer at BongDunia. He has completed his Bachelor Degree on Mass Communication from Rabindra Bharati University. He has worked with mainstream media, in the capacity of a reporter and copywriter.

Leave A Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.