বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কতই না ইতিহাস । কেউ কেউ এখনও তাদের অতীত নিয়ে কানাকানি করে, আবার কেউ কেউ কালের বিবর্তনে সংস্কারের অভাবে হারিয়ে যায় সকলের অগোচরে । বাংলাদেশের এমনই একটা
ইতিহাস ও ঐতিহ্যের শহর বাগেরহাট । ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায় এই শহরটির পূরাতন নাম ছিল খলিফাবাদ ।
বাংলাদেশের বহু জায়গার মত বাগেরহাটেও রয়েছে নানা জানা-অজানা ইতিহাস । তেমনই একটা ঐতিহাসিক স্থাপত্য খান জাহানের বসত ভিটা ।
১৪৫৯ খ্রি: খানজাহান (রহ:) মারা যান। খানজাহান তাঁর জীবদ্দশায় বাগেরহাটে বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করেন । এর মধ্যে অন্যতম খানজাহানের বসত ভিটা । বাগেরহাটের বিখ্যাত ষাট গম্বুজ মসজিদের উত্তরে ৯ দশমিক ৬৭ একর জায়গা জুড়ে খানজাহানের বসত ভিটা । খান জাহানের বসত ভিটা নিয়ে অনেক গল্প লোক মুখে প্রচলিত আছে । তবে বসত ভিটা নিয়ে স্থানীয় ভাবে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য যে গল্প প্রচলিত আছে সেটি অনেকটা এরকম । খানজাহানের জীবিতকালে তাঁর দুই জন স্ত্রী ছিল । তাদের একজনের নাম ছিল সোনা বিবি ও অপরজনের রুপা বিবি । কথিত আছে খান জাহানের দুই স্ত্রী –র মধ্যে সবসময় ঝগড়াঝাঁটি লেগেই থাকত । একজন অপরজনকে কোনভাবেই সহ্য করতে পারত না । একদিন এদের মধ্যে বিরোধ এমন একটা পর্যায় আসে যে, একজন আরেকজনকে বিষ দিয়ে মেরে ফেলে । মারা যাবার পর সেই মৃত দেহ সকলের অগোচরে বাড়ির পাশের পুকুরে ফেলে দেয় । লোকগাথা অনুযায়ী খানজাহানের বসত ভিটার বাইরের দিকের পুকুরটির নাম বিষ বা বিচ পুকুরিয়া । এমন একটা সময় ছিল, তখন এই বসত ভিটা থেকে একটি রাস্তা চট্টগ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল ।
বাগেরহাটে অনেক স্থাপনা থাকলেও বেশীর ভাগ স্থাপনা হযতর খান জাহান আলীর নির্মিত । হযতর খান জাহান আলীর স্থাপনা ইসলামী স্থাপত্য রীতি মেনে তৈরি করা হয়েছে । সুন্দর কারুকাজ করা সেই সমস্ত মসজিদগুলোর জন্যই ১৯৮৫ সালে বাগেরহাটকে ঐতিহাসিক মসজিদের শহর হিসেবে ঘোষণা করে, ৩’শ ২১তম বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভূক্ত করে ইউনেস্কো । বর্তমানে ইউনেস্কো ষাটগম্বুজ মসজিদ, খান জাহান আলী (রহ.) মাজার ও সিংগাইর মসজিদসহ আরো ১৭টি স্থাপনাকে তালিকাভুক্ত করেছে ।
বর্তমানে বাংলাদেশের প্রত্নতত্ব অধিদপ্তর এই রাস্তার সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিলেও খান জাহানের বসত বাড়ির তেমন কোন সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেয়নি । গত কয়েক বৎসর যাবত বসত ভিটার বিভিন্ন অংশের খনন কাজ চলছে । কিন্তু অতীব পরিতাপের বিষয় এই ঐতিহাসিক এবং বাঙ্গালীর গর্ব খান জাহানের বসত ভিটার যথাযথ সংরক্ষণ করা হচ্ছে না । বছরের পর বছর খনন কাজ চলছে । কিন্তু প্রত্যেক বৎসর খননের পর তা মাটি দিয়ে ঢেকে রাখা হচ্ছে । এছাড়া সরকারী ভাবে যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ায় স্থানীয় অধিবাসীরা দিনের পর দিন এ সকল মূল্যবান প্রত্নতাত্বিক দ্রব্যাদি নষ্ট করছে ।
খান জাহানের বসত ভিটার এই স্থাপনা সংরক্ষণের অভাবে বিশ্ব ঐতিহ্য থেকে হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় প্রহর গুনছে স্থানীয়রা ।