বর্তমান সময়ে শরীর ঠিক রাখার জন্য আমরা প্রতিনিয়ত ব্যায়াম বা প্রাণায়াম করি। প্রতিদিনই আমাদেরকে কাজের তাগিদে ঘরের বাইরে বের হতে হয়। দেখনদারি করতে গিয়ে দিনের পর দিন মেক-আপ করে করে প্রতিনিয়ত আমরা আমাদের ত্বকের ক্ষতি করে চলেছি। এরপর রয়েছে বাইরের আবহাওয়ার প্রকোপ। তাছাড়া, সারাদিন কাজ-কর্মের পর শ্রান্ত দেহে কতখানিই বা সময় হাতে থাকে ত্বকের পরিচর্যার জন্য?(How To Achieve Clear Skin – Skin Care Guide)

অথচ কয়েক’টি ঘরোয়া পদ্ধতি বা টিপস জানা থাকলে এবং সেগুলি সঠিকভাবে অনুসরণ করতে পারলে আপনার ত্বকের পরিচর্যা তো হবেই, পাশাপাশি ত্বক হয়ে উঠবে স্বাস্থ্যকর, কোমল এবং সুন্দর। কীভাবে খুব সহজেই ত্বকের ক্ষতি আটকানো যায়, তেমনই কয়েক’টি পদ্ধতির সন্ধান আজ আমাদের প্রতিবেদনে দিতে চলেছি।

 

আমরা মেক-আপ করি ত্বকের দুর্বল দিক’গুলি লোকানোর জন্য। দিনের শেষে ঘরে ফিরি, কিন্তু সারাদিনের রোদের তাপ, জলীয় ভাব, কিংবা বাইরের ধূলো-বালি ত্বকের রোমকূপের গোড়ায় আটকে যায়। ত্বকের রোমকূপে ধূলো-বালি আটকে গেলে শরীরের দূষিত পদার্থ দেহের বাইরে বের হতে পারেনা। সেগুলি ধীরে ধীরে ত্বকের নীচে জমা হতে থাকে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা নষ্ট হতে থাকে। এছাড়া ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন র‍্যাশ হওয়া, ব্রণ, ফোঁড়া বা কালো ছোপ হয়ে থাকে। সাধারণত নর্মাল মেক-আপ করে বাইরে বের হই আমরা। কিন্তু পার্টি বা অনুষ্ঠানের দিন মেক-আপের পরিমাণ’টা অনেকাংশে বেশী হয়ে যায়।

 

মেক-আপ, ধূলো-বালি বা দূষিত পদার্থ ভালোভাবে পরিস্কার করার জন্য হালকা গরম জল ব্যবহার করুন। প্রথমে একটি নরম কাপড় হালকা গরম জলে ভিজিয়ে নিয়ে সেটি দিয়ে আপনার ত্বক পরিস্কার করুন। কোনও কারণে যেদিন অতিরিক্ত মেক-আপ করা পড়ে যায়, সেদিন রাতে এবং সকালে দু’বার এই একই পদ্ধতিতে ত্বক পরিস্কার করুন। এছাড়া যদি মনে করেন তাহলে ক্লিনজিং অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। ক্লিনজিং অয়েল আরও বেশী ভালো করে রোমকূপের গোড়া পরিস্কার করতে সাহায্য করবে।

বাইরে বেশী সময় থাকলে বা ত্বকের সঠিক পরিচর্যা না করলে ত্বকের আর্দ্রতা কমে যায়। ত্বকের আর্দ্রতা কমে গেলে ত্বকের নীচে টক্সিন জমতে থাকে। ত্বকের টক্সিন দূর করতে হলে দিনে ও রাতে হালকা ময়শ্চারাইজার ক্রিম ত্বকে লাগাবার সময় হালকাভাবে ক্লক ওয়াইজ এবং তারপর অ্যান্টি ক্লক ওয়াইজ ভাবে ম্যাসাজ করুন। এর ফলে ত্বকের আর্দ্রতা ফিরে আসবে এবং ম্যাসাজ করার ফলে রক্ত চলাচল বেড়ে গিয়ে ত্বকের নীচে জমে থাকা টক্সিনের পরিমাণ কমতে থাকবে।

 

ত্বকের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করে টক্সিন এবং আর্দ্রতা হ্রাস। শরীরে জলের পরিমাণ কমে গেলে শরীরের পাশাপাশি ত্বক’ও শুষ্ক হয়ে যায়। সুতরাং, শরীর ও ত্বক সুস্থ্য ও স্বাস্থ্যকর রাখার অন্যতম উপায় হলো বেশী পরিমাণে জল পান করা।

 

জাঙ্ক ফুড বা ভারি খাবার খেলে অনেক সময় আমাদের হজমের গণ্ডগোল হয়। শরীর এবং ত্বক ভালো রাখার আরেক’টি ভালো উপায় হলো হালকা এবং সহজপাচ্য খাবার খাওয়া। খাবারের সাথে একটু বেশী পরিমাণে স্যালাড ব্যবহার করুন, এটি হজমের ক্ষেত্রে উৎসেচকের কাজ করে।

 

ভিটামিন B ও ভিটামিন C রক্তের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী। সম্ভব হলে আপনার খাদ্যতালিকায় প্রতিদিন কিছু পরিমাণ ফল রাখার চেষ্টা করুন।(How To Achieve Clear Skin – Skin Care Guide)

 

ত্বক তৈলাক্ত হলেও সমস্যা হয়। তৈলাক্ত ত্বকে রোমকূপের গোড়া বন্ধ হয়ে যায়। মেক-আপ করলে তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষেত্রে পরিষ্কার করা একটু সমস্যা হয়ে যায়। ঘরোয়া পদ্ধতিতে খাঁটি নারকেল তেল ব্যবহার করুন। নারকেল তেল দিয়ে ত্বকে ম্যাসাজ করলে ত্বক নরম হয়ে ত্বকের গোড়া থেকে ময়লা গলে যায়। এরপর একটা নরম কাপড় বা টিস্যু পেপার দিয়ে মুছে নিলে রোমকূপের গোড়ার ময়লা উঠে আসে।

 

অনেক সময় মুখে কালো দাগ, ব্রণ হওয়ার ফলে ত্বক অমসৃণ হয়ে যায় এবং মাঝে মাঝে ফুসকুড়ি’ও দেখা যায়। এগুলি নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার না করার পরিণাম। ঘরোয়াভাবে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।

উপাদান বলতে যা প্রয়োজন তা আপনার হাতের নাগালেই পাবেন। দরকার শসা, লেবু, টম্যাটো, মধু এবং চালের গুড়ো।

 

বলা হয়ে থাকে শসা এবং টম্যাটো সবচেয়ে ভালো প্রাকৃতিক ক্লিনজিং। বাড়িতে প্রথমে শসা এবং টম্যাটো আলাদাভাবে থেতো করে নিন, এবং একটি লেবু কাটুন। এবার এক চামচ করে টম্যাটোর রস, লেবুর রস এবং শসার রস একটি পাত্রে ভালোভাবে মেশান। লেবুর রসে অ্যালার্জি থাকলে এর পরিবর্তে এক চামচ গোলাপ জল মেশাতে পারেন। ভালোভাবে মেশানো হয়ে গেলে একটুখানি তুলো নিয়ে মিশ্রনটি’তে ভিজিয়ে আস্তে আস্তে মুখের ত্বকে ভালোভাবে লাগান। মুখে ভালোভাবে মিশ্রনটি লাগিয়ে ৫ থেকে ১০ মিনিট ওভাবেই রাখুন। তারপর পরিষ্কার জলে আপনার মুখটি ভালোভাবে ধুয়ে নিন।

 

এরপর ঘরোয়াভাবে একটি ফেস প্যাক তৈরি করুন।

 

কীভাবে করবেন?(How To Achieve Clear Skin – Skin Care Guide)

সত্যি কথা বলতে, ঘরোয়া সরঞ্জাম দিয়ে বাড়ি বসে ফেস প্যাক বানানো খুবই সহজ। দু’চামচ চালের গুড়োর সাথে এক চামচ করে লেবুর রস, টম্যাটোর রস, শসার রস এবং মধু ভালো করে মিশিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে আপনার ফেস প্যাক।এবার হালকা ম্যাসাজ করতে করতে সাড়া মুখে এটি ব্যবহার করুন।

চালের গুড়ো’তে হালকা দানাভাব থাকার কারণে ত্বকের মৃত কোশ’গুলি দূর হবে, লোমকূপের গোড়া ভালোভাবে পরিষ্কার হবে। এছাড়া চালের গুড়ো ত্বকের কালো দাগ দূর করার পাশাপাশি ত্বক’কে উজ্জ্বল করতে অনস্বীকার্য ভূমিকা নেয়। এভাবে প্যাক’টি ১০-১৫ মিনিট লাগিয়ে রেখে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে বেশ কয়েকদিন নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বকের মৃত কোশ, ব্রণ, ফুসকুড়ি এবং ব্ল্যাক হেডস দূর হয়। ফলে সপ্তাহের মধ্যে ত্বক হয়ে উঠবে মোহনীয়।

 

Atanu Chakraborty is a content and news writer at BongDunia. He has completed his Bachelor Degree on Mass Communication from Rabindra Bharati University. He has worked with mainstream media, in the capacity of a reporter and copywriter.

Leave A Reply