চিঠি গল্প
এসকেএইচ সৌরভ হালদার
(প্রথম পর্ব)
কলেজ পাশ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় যখন ভর্তি হই ,তখন আমি ব্যাচেলার । আমি সকালে নাস্তা তৈরি করে নাস্তা খাচ্ছি । দুই তলা বাড়ি, বাড়িটা ছিল পুরনো বাড়ি। শহরের উপর থাকতে আমি ঠিক ততটা স্বাচ্ছন্দ বোধ করছি না । তার পরেও আমার পিতামাতা জোরপূর্বক ভাবে এখানে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে ।
তবে বাড়িতে আমি একা থাকি না । সাথে আমার বন্ধু রুপায়ন থাকে । আর রূপায়ন বসে আছে উপরের তলায় । মাঝখানের ঘরে বসে টেলিভিশন দেখছে। আমি যখনকার কথা বলছি, তখন যোগাযোগ ব্যবস্থা এত উন্নত ছিল না । তাৎক্ষণিকভাবে বাড়িতে কেউ যেন এসে কলিংবেলটা বাজাল ।পুরাতন কলিং বলে বাজনাটা বেশিদূর শোনা যায় না । তাই আমি খেয়াল করতে পারলাম না প্রথমবার যখন বাজালো ।দ্বিতীয় বার ক লিং বেল বাজার পর, আমার খেয়াল হল, আমি দরজাটি খুললাম । তারপর দেখি পোস্টম্যান। আমার বাড়িতে একখানা চিঠি এলো। চিঠিটা হাতে নিয়ে দেখি এটা আমার চিঠি নয়, আমার বন্ধু রূপায়নের।
চিঠিটা আমি গুরুত্বসহকারে না দেখে টেবিলের উপর রেখে দিলাম এবং রুপায়নকে দেখিয়ে বললাম চিঠি এসেছে।
চিঠিটা পড়ে রুপায়ন একটু বিস্মিত হলো এবং অন্যরকম হয়ে গেল। আমি একটু অবাক হলাম।তারপর দেখলাম যে ও দ্রুত বাসা থেকে বের হয়ে গেল।
ওর সাথে কোন কথা না বলে আমি টেলিভিশনটা চালু করে পাশ থেকে কিছু চিপস নিয়ে খেতে খেতে টি ভি দেখছি, টিভিতে দেখাচ্ছে আপনজন অথবা কোন বন্ধু শত্রু হতে পারে। আরো দেখাচ্ছে এই সময় নাকি এক দেশ হতে অন্য দেশে নারী পাচার ও বিভিন্ন ধরনের নেশা জাতীয় ওষুধ ও পানীয় বিক্রি করা হচ্ছে। আমি দেখে একটু ভয় পেলাম । রুপায়ন কে আমি যতটা বিশ্বাস করি, ভাবলাম ও তা করতে পারবে না । তার পরেও সন্দেহটা কমলো না। সেদিন একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটল । যা আগে কোনদিন ঘটেনি । চিঠি নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পর মধ্যরাতে বাড়ি ফিরল। টেলিভিশনের ঘটনা তখন মনে পড়ে গেল এবং আমার সন্দেহটা একটু বেড়ে গেল।
তারপর ভাবলাম, না এরকম হতেই পারে না, মানুষটা হয়ত কোন একটা বিপদে আছে ।যেহেতু মধ্যরাতে বাড়ি ফিরেছে, সে জন্য প্রশ্ন করলাম না। পরের দিন সকালে নাস্তার টেবিলে আমি ওকে প্রশ্ন করায় ও দায়সারাভাবে বলল, ওর গ্রাম থেকে চিঠি এসেছিল তাই আরকি।
কথাটা শুনে আমি একটু ভাবলাম । গ্রাম থেকেও যদি ওর চিঠি আসে, তাহলে রুপায়ন বিস্মৃত হল কেন চিঠিটা পড়ে সেদিন ? অতটা ভাবলাম না কারণ রুপায়ন একজন গ্রামের ছেলে ও সহজ সরল। তারপর নাস্তা করে যখন উঠেছে, তখন আবার দেখি দরজায় কে যেন ক্যালিং বেল বাজাচ্ছে। সেদিন আমি না, দরজা খোলে রুপায়ন । একটু লক্ষ্য করে দেখলাম আবার ওইদিনও চিঠি এসেছে ।চেষ্টা করেও এক মুহূর্তের জন্যও বাড়ি দাঁড়ালো না । দ্রুত সহকারে চলে গেল কোন একটা জায়গায় । কোথায় যাচ্ছে সে ? সেই প্রশ্ন করার আমি সুযোগ পেলাম না। একবার ভাবলাম আমি ওর পিছু নেব কি না ? কিন্তু ভাবলাম, ও একজন সহজ সরল ছেলে । হয়তো কোন একটা কাজে যাচ্ছে । পিছু নিয়ে কি হবে ? হাজার হোক, বন্ধু তো।
কিন্তু তারপর থেকে এইভাবে প্রতিদিন চিঠি আসে । আর চিঠি আসামাত্রই ও চলে যায় । কাজটা একটু অদ্ভুত মনে হল আমার কাছে।তারপর আমি সেদিন পিছু নিলাম । পিছু নিয়ে দেখলাম, বাড়ির পাশে মেইন রোডের উপর একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে, ও সেই গাড়িতে উঠে কোথায় যেন চলে গেল। আমি তাড়াতাড়ি একটি ট্যাক্সি নিয়ে ওর পিছু করলাম । তারপর আমি যা দেখলাম দেখে হতবাক হয়ে গেলাম।