বাংলাদেশের জাতিয় মাছ ইলিশ। এটি সামুদ্রিক মাছ হলেও ডিম পাড়ার জন্য নদীতে আসে। বাঙ্গালীদের কাছে ইলিশ খুব জনপ্রিয়। বাংলাদেশ, ভারতের বিভিন্ন এলাকায় পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা, ত্রিপুরা, আসামে একটি জনপ্রিয় মাছ। ইলিশ মূলত লবণাক্ত জলের মাছ। ইলিশ মাছ চাষ করা যায় না। বিশ্বের অন্তত: ২৫ টি ভাষায় ইলিশের বিভিন্ন নাম পাওয়া যায়। ইলিশ, ইলশা আমাদের পরিচিত নাম। বাঙ্গালীরা অনেক সময় ছোট ইলিশকে খোকা ইলিশ বলে থাকে। চাইনিজরা বলে থাকে ইচাচা। যে নামেই ডাকা হোক না ইলিশ ইলিশই। গোলাপের মত নামে কি আসে যায়। কোন ব্যাক্তি ইলিশ কিনে যদি বাজার থেকে যেতে থাকে তার দাম বলতে বলতে যেতে হয়। বাঙ্গালীর ইলিশ নিয়ে এ রসিকতার খোজ গোপাল ভাড়ের গল্পেও পাওয়া যায়। বাংলাদেশের ইলিশের আবার বিভিন্ন এলাকার উপর নির্ভর করে স্বাধ আর গুণাগুণ। চাঁদপুরের ইলিশ, বলেশ্বরের ইলিশ, পদ্মার ইলিশ। আবার অপ্রাপ্ত বয়স্ক ইলিশকে জাটকা নামেও ডাকা হয়। সব মাছের মধ্যে ইলিশের মতো বাঙালিকে পাগল করে তুলতে পারেনি আর কোনোটি। ইলিশ মাছকে নিয়ে এই উন্মাদনা আজকের নয়। প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ এই মাছকে সম্মান করে আসছে। ইলিশাহ জিতাপিয়ায়ুসাহ- এই সংস্কৃত নামটি দেয়া হয়েছিল আজকের ইলিশকে। এর অর্থ হচ্ছে, ইলিশ মাছের স্বাদ অমৃতের মত।

কেবল বাংলাদেশ ও ভারতীয় উপমহাদেশেই নয়, পৃথিবীর অনেক দেশে শখ করে ইলিশ মাছ খাওয়া হয়ে থাকে। ইলিশ বাংলাদেশের জাতীয় মাছ হলেও এ পর্যস্ত প্রাপ্ত সবচেয়ে বড় ইলিশটি কোন স্থানের নদীর জালে ধরা পড়েছিল জানা আছে কি? বাংলার কোথাও নয়। এটি ধরা হয়েছিল গুজরাটে। ওজন ছিল প্রায় ৪৩২০ গ্রাম। সিন্ধু অঞ্চলের মানুষ মনে করেন যে ইলিশ মাছ শান্তির প্রতীক। প্রাচীন পৌরাণিক অনেক গল্প গাঁথায় ইলিশ মাছকে অবতার, শান্তির দূত, ঐশ্বরিক শক্তির বাহক হিসেবে তুলনা করা হয়েছে।

ইলিশ স্বাস্থ্যের জন্য উপকারিতা

১০০ গ্রাম ইলিশে প্রায় ২১ দশমিক ৮ গ্রাম প্রোটিনের পাশাপাশি রয়েছে উচ্চ পরিমাণ ওমেগা তিন ফ্যাটি এসিড, নায়সিন, ট্রিপ্টোফ্যান, ভিটামিন, বি ১২, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামসহ অন্যান্য ভিটামিন ও মিনারেলস। ইলিশ মাছ স্বাস্থ্যের অনেক উপকার করে।

১. সামুদ্রিক মাছ হিসেবে ইলিশে সম্পৃক্ত চর্বি কম থাকে। এটি হার্টের জন্য উপকারী। সপ্তাহে একবার ইলিশ খাওয়া হার্টের জন্য ভালো।

২. ইলিশ মাছ রক্তনালির স্বাস্থ্য রক্ষায় ভালো। এটি হাড়ের জন্য উপকারী।

৩. ইলিশের ভিটামিন এ চোখের সুস্থতা রক্ষায় সাহায্য করে।

৪. ইলিশ মাছের মাথা ও মাছের অংশে রয়েছে পর্যাপ্ত মিনারেল। এটি শিশু স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। শ্বাসনালি ও থাইরয়েড গ্রন্থির সুরক্ষায় এই পুষ্টি উপাদান কাজ করে।

৫. ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষায় ও রোদ থেকে ত্বকের ক্ষতি হওয়া প্রতিরোধে ইলিশ মাছের ওমেগা তিন সাহায্য করে।

৬. নিয়মিত ইলিশ মাছ খাওয়ায় নারী পুরুষ নির্বিশেষে যৌনাঙ্গের স্বাস্থ্যের বিকাশ হয়। সঙ্গী বা সঙ্গিনীর প্রতি যৌন আকর্ষণ বাড়ে ও সজ্জা সম্পর্ক হয়ে ওঠে আরও উষ্ণ। শুধু অল্পবয়সিদের জন্যই নয়, পঞ্চাশোর্ধ্বের যৌন মিলনকে উপভোগ্য করার পাশাপাশি নিরাপত্তা জোগায় ইলিশ

৭. মাঝারি সাইজের ইলিশ মাছই কিন্ত্ত আসলে সবচেয়ে পুষ্টিকর৷ মোটামুটি সাতশো থেকে এক কেজির ওজনের ইলিশ মাছের মধ্যেই একমাত্র পলি ও মনো আন-স্যাচুরেটেড ফ্যাট পাওয়া যায়৷

৮. মাঝারি সাইজের ইলিশ মাছ খান৷ কারণ এই মাছে রয়েছে প্রচুর প্রোটিন, এবং জিঙ্ক, ক্রোমিয়াম, সেলেনিয়ামের মতো খনিজ৷  জিঙ্ক ডায়াবেটিস রোগীদের পক্ষে খুব ভালো৷ সেলেনিয়াম আবার অ্যান্টি অক্সিডেন্টের কাজ করে৷ এছাড়াও রয়েছে ক্যালসিয়াম আর আয়রনের পুষ্টিগুণও৷

৯. ইলিশ মাছে রয়েছে ভিটামিন এ, ডি এবং ই৷ বিশেষ করে ভিটামিন ডি কিন্ত্ত খুব কম খাবারেই পাওয়া যায়৷ অস্টিওপোরোসিসের জন্যও ইলিশ মাছ খুব ভালো৷ ইলিশ মাছে আরজিনিন থাকায় তা ডিপ্রেশনের জন্যও তাদের জন্য ভালো৷ ১০. ইলিশ মাছ ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসাবে কাজ করে।

১১. হাঁপানি-র উপশমেও ইলিশ মাছ উপকারী৷

১২. ইলিশ মাছ সর্দি কাশির জন্যও ভালো৷

সুস্বাধু ইলিশ চেনার উপায়

পদ্মা-মেঘনা যাই হোক নদীর ইলিশ মানেই সুস্বাদু। নদীর না সাগরে তা হলো মাছের আকৃতি দেখে। মনে রাখবেন নদীর ইলিশের হবে বেশ মোটা আর সাগরের ইলিশের আকৃতি হবে সরু। আরেকটি দিক খেয়াল করতে হবে, সেটি হচ্ছে নদীর ইলিশের আশের রং হবে উজ্জ্বল ও চকচকে রূপালী এবং মাছের মাঝ বরাবর রূপালী রঙ এ একটু সোনালী আভা আসবে।

মাছের রাজার রাজকীয় স্বাদ পেতে হলে আপনাকে কিনতে হবে ৮শ’ থেকে ১২শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশ।

সুস্বাদু ইলিশ চেনার ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় বিবেচনায় নিতে পারেন। সেটি হচ্ছে মাছটি পুরুষ না স্ত্রী। প্রশ্ন হচ্ছে এই স্ত্রী ইলিশ এবং পুরুষ ইলিশ চিনবেন কীভাবে? এ ক্ষেত্রে মাছের নাভীর দিকে একটু নজর দিন। স্ত্রী ইলিশের নাভী থাকবে একটু ফোলা এবং সুনির্দিষ্ট এবং স্ত্রী ইলিশের আকৃতি হবে মোটা।

ইলিশ চিনলেন তার সাথে স্বাস্থ্যগুণ জানলেন কিন্তু সঠিক ভাবে রান্না হলে ইলিশ কি ভালো লাগবে। ইলিশ অনেক ভাবে রান্না করা যায়।  ভাঁপা ইলিশ, মিষ্টিকুমড়ায় ইলিশ, ইলিশ দিয়ে কাঁচা আমড়া বা টমেটো, কম তেলে রান্না ইলিশ ইত্যাদি অনেক উপকারী মেন্যু। কড়া তেলে ভাজা ইলিশ, ঝলসানো ইলিশ তেমন একটা স্বাস্থ্যকর হয় না। তাই ইলিশের স্বাদ ও পুষ্টি পেতে হলে সঠিক উপায়ে রান্না করা অনেক জরুরি।

ইলিশ ইলিশের মরশুমেই খেতে হবে৷ যদি রোজ ইলিশ খেতে চান, তাহলে হালকা ইলিশের ঝোল খান৷ খুব কড়া করে ভাজা ইলিশ মাছ না খাওয়াই ভালো৷ তাছাড়া রোজ যদি সর্ষে বাটা দিয়ে কষে ইলিশ রান্না খান, তা হলে তা শরীরের পক্ষে খারাপ তো বটেই৷ জেনে রাখুন ইলিশ ডিম দেয়ার আগেই কিন্ত্ত ভালো খেতে৷

ইলিশ মাছের অপকারিতা

সামুদ্রিক সকল মাছে কমবেশি হিস্টিডিন থাকে। সমস্যা হলো, ডিকার্বোস্কিলেজ নামে একটি উৎসেচকের প্রভাবে এই হিস্টিডিন থেকে হিস্টামিন তৈরি হয়। সেটিই আসলে ক্ষতিকারক। কিছু বিশেষ ব্যাকটিরিয়া এই উৎসেচকটিকে সংশ্লেষন করতে বা বানাতে সাহায্য করে। সমুদ্র থেকে যখন নদীতে মাছ আসে তখন তাদের শরীরে হিস্টিডিনের পরিমাণ বেড়ে যায়। জলের ভিতর হিস্টিডিন থেকে হিস্টামিন তৈরির বিক্রিয়াটি হয় না, কিন্তু ডাঙায় তোলার পরে ১৫ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রায় মাছ থাকলেই ওই ব্যাকটিরিয়া সক্রিয় হয়ে ওঠে। এজন্য ইলিশ প্রক্রিয়ার চেন অনিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রার হলে তা ক্ষতিকারক হয়।

Mr. Shuva is a News and Content Writer at BongDunia. He has worked with various news agencies all over the world and currently, he is having an important role in our content writing team.

Leave A Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.