বং দুনিয়া ওয়েব ডেস্কঃ অনেকেই ধারনা করেন অধিক গরমে করোনা ভাইরাস কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে । আবার অনেকেই ধারনা করেন ঠাণ্ডার মধ্যে করোনা ভাইরাস বেশি দিন টিকতে পারে ! সেই হিসাবে ঘরে যে ফ্রিজ আপনি ব্যবহার করছেন, সেখানে করোনা ভাইরাস থাকতে পারে কি ? ফ্রিজের ঠাণ্ডা করোনা ভাইরাসের নিরাপদ আশ্রয়স্থল নয় তো ? আসুন জেনে নিই এই বিষয়ে ঠিক কি বলছেন বিশেষজ্ঞরা ।
গত বছর শেসের দিকে চীনের উহান প্রদেশে প্রথম করোনা ভাইরাসের সাথে পরিচয় ঘটে মানুষের । এরপর খুব দ্রুত গোটা বিশ্বে ভয়ানকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এই মারন ভাইরাস । এখনও পর্যন্ত করোনা ভাইরাস নিজের প্রকৃতি বা চরিত্র প্রয়োজনমত বদলে নিতে পারছে । তবে এই ভাইরাসের উৎস, চরিত্রগত বৈশিষ্ট্য, গতিপ্রকৃতি বা বিবর্তনের ধরণ সম্পর্কে এখনো পর্যন্ত নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারেনি বিজ্ঞানীরা। এই ভাইরাস কোন ধরণের সমতলে কতক্ষণ বেঁচে থাকে, হাঁচি-কাশির মাধ্যমে কত দ্রুত ছড়ায়, কোন ধরণের আবহাওয়া বা তাপমাত্রায় এর প্রকোপের কতটা তারতম্য হয় – এই বিষয়গুলো সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা একেকবার একেক মত দিয়েছেন, আবার নতুন গবেষণা প্রকাশিত হওয়ার প্রেক্ষিতে দফায় দফায় বিশেষজ্ঞদের মত পরিবর্তন করার ঘটনাও ঘটেছে।
একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, শুরুতে একসময় মানুষের ধারণা ছিল যে উচ্চ তাপমাত্রায় এই ভাইরাস বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারে না, তবে এই দাবির কোনো প্রমাণ বৈজ্ঞানিক ভিত্তি পাওয়া যায়নি শেষ পর্যন্ত। সেরকম আরেকটি ধারণা হলো, ফ্রিজের ভেতরে অন্যান্য স্থানের তুলনায় অপেক্ষাকৃত বেশি সময় ভাইরাসটি বেঁচে থাকতে পারে। তবে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত অন্যান্য মতবাদের মত এই বিষয়টি নিয়েও শতভাগ নিশ্চিত হতে পারেনি বিজ্ঞানীরা।
এবার প্রশ্ন হল ঘরের ফ্রিজে করোনাভাইরাসের টিকে থাকার ক্ষমতা কতখানি ? দেখা গেছে এর আগে যেসব করোনাভাইরাস পরিবেশে ছিল, সেগুলোর কয়েকটি প্রজাতি হিমাঙ্কের নীচে তাপমাত্রায় পুরোপুরি কার্যকরভাবে বেঁচে না থাকলেও স্থিতিশীল অবস্থায় টিকে থাকে বলে প্রমাণ পেয়েছিল বিজ্ঞানীরা। ২০১০ সালে আমেরিকান সোসাইটি অব মাইক্রোবায়োলোজি’র এক গবেষণায় উঠে আসে যে সার্স করোনাভাইরাস (যেটি অনেকটা কোভিড-১৯ ভাইরাসের মত) ৪০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় (প্রায় ৪.৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস) যেরকম আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা সাধারণত গৃহস্থালিতে যেসব রেফ্রিজারেটরে থাকে , তাতে টিকে থাকতে পারে।
গবেষণায় বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং আর্দ্রতা ২০ শতাংশের নীচে হলে সার্স করোনাভাইরাস প্রায় ২৮ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকে, যেখানে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর আর্দ্রতা ৮০ শতাংশ হলে ভাইরাসটির স্থায়িত্বকাল থাকে ৬ ঘণ্টার মত। এই মতের উপর নির্ভর করে অনেক বিশেষজ্ঞ পরবর্তী গবেষষণার জন্য অপেক্ষা না করে ফ্রিজ ব্যবহারে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন। তারা বলছেন কাছাকাছি প্রজাতির একটি করোনাভাইরাস যেহেতু ফ্রিজে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে পারে, কাজেই নভেল করোনাভাইরাসেরও একই বৈশিষ্ট্য থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
করোনা ভাইরাস প্রসঙ্গে স্যান ফ্র্যান্সিসকোর গ্ল্যাডস্টোন ইনস্টিটিউটের রিসার্চ সাইন্টিস্ট ও ভাইরোলজিস্ট ড. ওয়ার্নার গ্রিন গত এপ্রিলে মার্কিন সংবাদ সংস্থা এনবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন করোনাভাইরাস চরিত্রগতভাবে একটি ‘আঠালো’ ভাইরাস। বক্তব্য রাখার সময় ড. গ্রিন বলেছিলেন, “এই ভাইরাস (সার্স) বিভিন্ন সমতলে আশ্চর্জজনকভাবে লম্বা সময় টিকে থাকে।” তবে একথা এখনও পর্যন্ত ঠিক করোনা ভাইরাস যে ধরণের ভাইরাস, তা সাধারণত ফ্রিজের পরিবেশে বেশি সময় বাঁচতে পারার কথা। কিন্তু সেখানে ঠিক কতদিন বাঁচতে পারবে, এ ধরণের কোনো গবেষণা এখনো নেই।
গত এপ্রিলে অস্ট্রেলিয়ার এবিসি রেডিওকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে অস্ট্রেলিয়ার ডেপুটি চিফ মেডিক্যাল অফিসার মাইকেল কিড বলেন নভেল করোনাভাইরাস ফ্রিজে টিকে থাকতে পারে কিনা আর থাকলেও কতক্ষণ টিকে থাকতে পারে, তা গবেষণার আগে বলা সম্ভব না। তার মত ছিল সার্স করোনাভাইরাস নিয়ে গবেষণা হলেও নভেল করোনাভাইরাস সম্পর্কে তেমন কোনো গবেষণা হয়নি। কাজেই আমরা নিশ্চিতভাবে জানি না যে এই ভাইরাসটির বৈশিষ্ট্য সার্স করোনাভাইরাসের মত কি না।তবে তিনি ফ্রিজ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সাধারণ সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেন।
এবার আসা যাক সাধারন ফ্রিজে করোনা ভাইরাস টিকে থাকতে পারুক বা না পারুক, কি কি সাবধানতা মেনে চলার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা ! এবিসি রেডিওকে দেয়া সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক মাইকেল কিড মন্তব্য করেছিলেন যে, ফ্রিজে রাখার পরে তো বটেই, ফ্রিজে রাখার আগেও সব খাদ্যপণ্য অথবা পণ্যের প্যাকেট অন্তত একবার জীবাণুমুক্ত করে নেয়া জরুরি।এছাড়া বাইরে থেকে বাজার ঘরে এনে ফ্রিজে রাখার আগে জীবাণুমুক্ত করার পাশাপাশি বারবার হাত ধোয়ার বিষয়টিও মনে রাখতে হবে সবাইকে । সার্স করোনাভাইরাসের মত, ফ্রিজে রাখা খাদ্যপণ্যের গায়ে বা প্যাকেটে নভেল করোনাভাইরাস লেগে থাকলে তা সপ্তাহ চারেক বেঁচে থাকতে পারে বলে মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ।
বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ ফ্রিজ ব্যবহার সম্পর্কে জানিয়েছেন, ফ্রিজে রাখা খাবারের প্যাকেট বের করার পর প্যাকেটটি জীবাণুনাশক মেশানো কাপড় দিয়ে ভালো করে মুছে নেয়া প্রয়োজন।এছাড়া ফ্রিজে রাখা শাকসবজি রান্না করার আগে কিছুক্ষণ সাবান মিশ্রিত জলে রেখে ধুয়ে নেয়ার কথা বলা হয়েছে । তবে মাছ বা মাংসের ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয় বলে মাছ-মাংস যেই প্যাকেটে বা পাত্রে রাখা হবে, সেটিকে জীবাণুমুক্ত করে নেয়া জরুরি ।