Swami Vivekananda bani in Bengali – স্বামী বিবেকানন্দের বানী বাংলায়
স্বামী বিবেকানন্দের দশটি খুব মূল্যবান নীতি বা বাণী (Swami Vivekananda bani in Bengali) যা আমাদের জীবনে চলার পথে, প্রতিটি বাধা মোকাবেলা করতে সাহায্য করবে । সাফল্যের সঠিক পথে নিয়ে যাবে, যদি এই বাণী গুলি একবার মন থেকে অনুধাবন করা যায় এবং নিজের জীবনে ব্যবহার করতে পারা যায় । তাহলে নিশ্চিত আপনাকে কেউ হারাতে পারবে না । সমস্ত স্বপ্ন ইচ্ছা পূরণ করতে পারবেন । স্বামী বিবেকানন্দ প্রথম ব্যক্তি যিনি ভারতীয় সংস্কৃতির সাথে পশ্চিমী দেশের প্রথম পরিচয় করান । তিনি চাইতেন, ভারতীয় যুব সমাজ যেন তাদের লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে, তারা যেন দেশের জন্য কিছু করে দেখাতে পারে । তারা যেন তাদের জীবনে সফল হয় । আজও স্বামী বিবেকানন্দ ভারতীয় উপমহাদেশের অর্থাৎ ভারত, বাংলাদেশ, নেপালসহ বিভিন্ন দেশের যুব শক্তির কাছে অনুপ্রেরণা । তিনি বিশ্বাস করতেন, সমস্ত ধর্মের মূল কথা এক এবং এই বিশ্বাসে তিনি রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন । তার জন্ম দিন অর্থাৎ ১২ই জানুয়ারি ভারতের জাতীয় যুব দিবস হিসেবে পালিত হয় । স্বামীজি দেশের যুব সমাজের জন্য অনেক কিছুই বলে গেছেন, যা বর্তমান সময়ের জন্য খুব উপযোগী । স্বামীজীর কিছু নীতি বাণী যা আজকের যুব সমাজকে সঠিক পথে চালিত করবে ।
(১) Swami Vivekananda bani in Bengali – স্বামী বিবেকানন্দের বানী বাংলায়
(১) স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন, মনের শক্তি সূর্য কিরণের মতো । যখন এটি এক জায়গায় কেন্দ্রীভূত হয়, তখনই এটি চকচক করে ওঠে । স্বামীজি আমেরিকায় যখন বিশ্বধর্ম সম্মেলনে গিয়েছিলেন, তখন একদিন রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছিলেন । রাস্তার পাশে তিনি দেখলেন, কিছু ছেলের দল একটি লক্ষ্য স্থির করে শুটিং প্র্যাকটিস করছে । কিন্তু কেউ নিশানায় সঠিকভাবে লাগাতে পারছিল না । বেশ কিছুক্ষণ মনোযোগ সহকারে তিনি সব লক্ষ্য করলেন । অবশেষে, তাদের কাছে গিয়ে বললেন যে, তিনি চেষ্টা করতে চান । ছেলের দল ভাবলো, তারা এত কঠিন লক্ষ্যে তীর লাগাতে পারছে না, আর এই সন্ন্যাসী কিভাবে পারবে ? তবে যাই হোক, তারা স্বামীজীকে চেষ্টা করতে বলল । আর স্বামীজি এক এক করে ১৭তি তীর সঠিক নিশানায় লাগালেন । ছেলেরা এটা দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল এটা কিভাবে সম্ভব ?
স্বামীজি তাদেরকে বললেন, আমি লক্ষ্য করলাম তোমরা যখন নিশানা লাগাচ্ছিলে, তখন কেউই মনোযোগ দিয়ে সেটা করছিলে না । যখন কোন কাজ করবে, তখন শুধুমাত্র সেই কাজের উপর সমস্ত মনোযোগ রাখতে হবে । অন্য কিছু ভাবলে তোমারা সেই কাজে সফল হবে না । তোমাদের সমস্ত চিন্তা, মনোযোগ, ধ্যান শুধুমাত্র যা করছ, তাতে লাগাও । অনেকেই অভিযোগ করে, পড়তে মন বসে না, আমি কিছু মনে রাখতে পারিনা , পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাচ্ছি না ইত্যাদি । এর সমাধান স্বামীজীর এই কথাটা । পড়তে বসে যদি নানান কথা বা চিন্তা মনে উঁকি দেয়, তাহলে কিভাবে মন বসবে ?
মনে রাখতে হবে পড়ার সময় শুধু শুধুমাত্র সেই জিনিসটার উপর মনঃসংযোগ করা উচিৎ । অন্য কিছুর উপর মন দিলে স্বয়ং স্বামীজী সমাধান করতে পারবেন না । একটি সময় একটি কাজ করা উচিৎ এবং সেটা করার সময় নিজের সবকিছুই তার মধ্যে প্রয়োগ করতে হবে । এটাও স্বামীজীর বাণী । তাই নিজের মনোযোগ বাড়াতে হবে । এর জন্য মেডিটেশন বা ধ্যান করা উচিৎ পড়তে বসার আগে বা কোন কাজ করার আগে ।
(২) Swami Vivekananda bani in Bengali – স্বামী বিবেকানন্দের বানী বাংলায়
(২) স্বামীজি বলেছেন ওঠ এবং ততক্ষণ অব্দি থেমো না যতক্ষণ না তুমি সফল হচ্ছ । এখানে স্বামীজি, আমাদের এই শিক্ষা দিয়েছেন যে, আমাদের হাল ছেড়ে দেওয়ার মানসিকতাকে ত্যাগ করতে হবে । আমাদের বাঙালিদের সব থেকে বড় দোষ হলো, আমরা স্বপ্ন দেখে ফেলি এবং সেই স্বপ্ন যখন পুরন করার জন্য কাজ শুরু করি, তখন অল্প বাধায় ভেঙে পড়ি এবং ক্লান্ত হয়ে পড়ি । তারপর ধৈর্য হারিয়ে সমস্ত আশা ছেড়ে দেওয়া শুরু থেকে করি । অবশেষে কাজটা ঠিকঠিক ভাবে শেষ করতে পারি না । এই জায়গাতেই আমরা ভুল করি । আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে নিজের প্রতি, নিজের ক্ষমতার প্রতি । আমাদের বুঝতে হবে, আমরা যে স্বপ্ন টা শেষ করতে চলেছি, তা পূরণ করতে হলে, আমাদের হাল ছাড়লে চলবে না । লেগে থাকতে হবে শেষ পর্যন্ত ।
(৩) Swami Vivekananda bani in Bengali – স্বামী বিবেকানন্দের বানী বাংলায়
(৩) স্বামীজি বলেছেন, অন্য কারো জন্য অপেক্ষা করো না । তুমি যা করতে পারো সেটা করো । কিন্তু অন্যের উপর ভরসা করোনা । এখানে স্বামীজি বলতে চেয়েছেন, আমাদের নিজের উপর সব সময় ভরসা বা বিশ্বাস রাখা উচিত । আমরা যা করতে চলেছি, তা আমরা করতে পারবো । কিন্তু বাস্তবে অনেক সময় আমরা ভয় পাই অথবা কাজের জন্য অপরের উপর ভরসা করি । ফলে কোন কাজে অন্যের উপর নির্ভর হয়ে পড়ি । ফলে পরবর্তীকালে ধীরে ধীরে অন্যের উপর নির্ভরশীলতা বাড়তেই থাকে । এটা খুব বড় ভুল । আমাদের উচিত আমরা যা পাড়ব বলে বিশ্বাস করি, সেটা আমাদের নিজেদের করা উচিত । অন্যের উপর অতি নির্ভরশীলতা একদিন বিপদ ডেকে নিয়ে আসতে পারে । স্বামীজির কথা অনুসারে স্বাবলম্বী হও । অন্যের উপর আশা করোনা ।
(৪) Swami Vivekananda bani in Bengali – স্বামী বিবেকানন্দের বানী বাংলায়
(৪) স্বামীজির পরবর্তী বাণী- দুনিয়া তোমার সম্বন্ধে কী ভাবছে সেটা তাদের ভাবতে দাও, তুমি তোমার লক্ষ্য গুলি স্থির রাখো । দেখবে দুনিয়া একদিন তোমার পায়ের নিচে থাকবে । মানুষ যখন একটা লক্ষ্য স্থির করে ভালো কিছু করতে চাইবে, তখন
আশেপাশের অনেকে সমালোচনা করবে । হতোদ্যম করার চেষ্টা করবে হাল ছেড়ে ডেবাড় জন্য । আর যদি তখন হাল ছেড়ে দেওয়া হয় তাহলে তারা তাদের কাছে সফল হবে । তাই যতই কেউ লক্ষ্য থেকে দূরে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করুক না কেন, লক্ষ্যকে ঠিক ততটাই কাছে টেনে নিতে হবে । যে বা যারা হতোদ্যম কড়াড় চেষ্টা করছে বরং তাদের দূরে ঠেলে দিতে হবে । একটা গল্প আছে ।
অরুনিমা সিনহার নামের এই মেয়েটির গল্প বা কাহিনী শুনলে বোঝা যাবে, শ্রীরাম কৃষ্ণ-এর বাণী কতটা সত্যি । অরুনিমা নামের মেয়েটি একদিন ইন্টারভিউয়ের জন্য ট্রেনে করে যাচ্ছিলেন । কিন্তু কিছু দুষ্ট দুষ্কৃতীরা তার সোনার চেন চুরি করে তাকে ট্রেন থেকে ফেলে দেয় । এর পর তার পায়ের উপর দিয়ে ট্রেন চলে যায় এবং তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন । এইভাবে অনেকগুলি ট্রেন চলে যায় । সারাদিন ঐ ভাবে লাইনের ধারে পড়ে থাকার পর পরদিন সকালে সবার নজরে আসে । এরপর তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় । মিডিয়াতে হইচই পড়ে যায় । নেতা, মন্ত্রিরা সান্ত্বনা দেয় তাকে । কিন্তু অবাক করার মত বিষয় হল, কিছুদিনের মধ্যে তার সম্পর্কে সাংবাদিক বা মিডিয়া নেগেটিভ খবর বলতে শুরু করে । তারা বলতে থাকে, এই মেয়েটির টিকিট না কেটে ট্রেনে উঠেছিল এবং টিকিট চেকারের হাত থেকে বাঁচতে, সে ট্রেন থেকে ঝাঁপ দেয় । কেউ কেউ তো বলতে শুরু করে আত্মহত্যা করার জন্য ঝাঁপ দেয় সে । সবাই যখন তাকে দোষ দিতে থাকে তখন সে এটা শুনে অনেক দুঃখ পায় । মেয়েটি ঠিক করে সবাই এখন তার সম্পর্কে যে কথা গুলি বলছে, একদিন এই সমস্ত লোকের মুখ বন্ধ করতে হবে । তিনি ঠিক করেন, এমন কাজ করে দেখাবেন, যাতে আজকে যারা তাকে অপমান করছে, একদিন তারা বুঝতে পারবে তারা ভুল ছিল । তিনি আত্মহত্যার জন্য ঝাঁপ দেন নি । হাসপাতালের বেডে শুয়ে সে মেয়েটি ঠিক করেন, তিনি পৃথিবীর সবথেকে উঁচু পর্বত চূড়া মাউন্ট এভারেস্ট জয় করবেন । সবাই তার কথা শুনে হাসাহাসি করতে থাকল । কেউ তাকে পাগল বলল । কিন্তু সেই মেয়েটির সুস্থ হওয়ার পর দিনরাত এক করে তার লক্ষ্যের জন্য প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করলো । অনেকের কথা তিনি কানে শুনলেন কিন্তু তিনি তাদের কথায় পাত্তা দেননি । অসম্ভবকে সম্ভব করার স্বপ্ন যার চোখে রয়েছে, তাকে কেউ কি আটকাতে পারে ? এবং হলোও ঠিক তাই । তিনি পৃথিবীর প্রথম মহিলা, যিনি আর্টিফিশিয়াল পায়ের সাহায্যে মাউন্ট এভারেস্টের শিখরে পৌঁছানোর রেকর্ড করেছিলেন ।
(৫) Swami Vivekananda bani in Bengali – স্বামী বিবেকানন্দের বানী বাংলায়
(৫) স্বামীজি বলেছেন, নিজেকে যেরকম ভাববে, ঠিক সেইরকমই হয়ে যাবে তুমি । যদি নিজেকে দুর্বল হিসেবে বিবেচনা করো, তাহলে তুমি দুর্বল হয়ে যাবে । আর যদি নিজেকে শক্তিশালী মনে করো, তাহলে শক্তিশালী হয়ে উঠবে । আমাদের কখনোই নিজেদের দুর্বল ভাবা উচিত নয় । আমরা যদি নিজেদের দুর্বল ভাবি, তাহলে আমাদের দুর্বলতার সুযোগ নিতে চাইবে সবাই । আমাদের ছোট করার চেষ্টা করবে তারা । আমাদের কথায় কেউ গুরুত্ব দেবে না বরং অপমান করবে । তাই নিজেদের দুর্বলতা কখনোই কাউকে দেখানো উচিত না । আর সব থেকে বড় কথা, নিজেকে কখনো ছোট এবং দুর্বল ভাবা উচিৎ নয় ।
যদি খেলা শুরুর আগেই হার মেনে নিলে আগেই হেরে বসতে হবে । নিজেকে শক্তিশালী মনে করতে হবে । কি বলা যায়, যে খেলা হারতে বসেছে সে হারা খেলাটা জিতেও যেতে পারে ।
(৬) Swami Vivekananda bani in Bengali – স্বামী বিবেকানন্দের বানী বাংলায়
(৬) স্বামীজি বলেছেন, কখনো না বোলো না । কক্ষনো বোলো না আমি করতে পারবোনা । তুমি অনন্ত এবং সব শক্তি তোমার ভিতরে আছে । তুমি সব কিছুই করতে পারো । আমরা যখনই কঠিন কিছু করতে চাই, সে যেমন কঠিন কাজ হোক না কেন, মনে বিশ্বাস রাখতে হবে । কোন ভয় অথবা ‘আগের থেকেই আমার দ্বারা সম্ভব নয়’ ভেবে আগেই হার স্বীকার কড়ে নেওয়া উচিৎ নয় । এরকম হলে কিন্তু একদমই চলবে না ।
(৭) Swami Vivekananda bani in Bengali – স্বামী বিবেকানন্দের বানী বাংলায়
(৭) স্বামীজি বলেছেন, যা কিছু তোমাকে শারীরিক এবং আর্থিকভাবে দুর্বল করে তোলে, সেটা প্রত্যাখ্যান কর । জীবনে সফল হতে হলে, আমাদের শারীরিক মানসিক দিক থেকে সুস্থ থাকতে হবে । আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর, যেমন নেশা জাতীয় জিনিস কোন কিছুর প্রতি আসক্তি বা কোন প্রসঙ্গ নিয়ে বাজে কথা বলা, গালিগালাজ করা শব সময়ের জন্য ত্যাগ করা উচিত । যদি আমরা শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে পারি তাহলে শুধুমাত্র নিজের লক্ষ্যের দিকে সমস্ত ফোকাস নিয়ে এগোন যাবে । সফলতা থেকে তখন কেউ আটকাতে পারবেনা ।
(৮) Swami Vivekananda bani in Bengali – স্বামী বিবেকানন্দের বানী বাংলায়
(৮) স্বামীজি বলেছেন, কোন পরিকল্পনা করে আগে থেকে হিসাব করবে না । ধীরে ধীরে আগে শুরু করো । প্রথমে তোমার ভূমি নির্মাণ কর এবং তারপর ধীরে ধীরে এটিকে প্রসার করো । এই বাণীটি, যারা ব্যবসা করে, তাদের জন্য খুব কাজের । অনেক বড় লাভ অথবা খুব বড় কিছুর জন্য ছোটা উচিৎ নয় । প্রথমে, ধীরে ধীরে কম লাভে নিজের ব্যবসা প্রসারিত করে ব্যবসা আগে দাঁড় করাতে হবে ।
(৯) Swami Vivekananda bani in Bengali – স্বামী বিবেকানন্দের বানী বাংলায়
(৯) স্বামীজি বলেছেন, যদি কোন দিন তোমার জীবনের চলার পথে সামান্য কোন সমস্যা না আসে, তুমি নিশ্চিত হতে পারো যে, তুমি ভুল পথে হাঁটছে । আমাদের চলার পথে অনেক বাধা সমস্যা আসবে । কারন, আমরা একা নই আরো হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ লোক রয়েছেন একই স্বপ্নের পেছনে ছুটছে । আমাদের যদি চলার পথে বাধা না আসে, আমরা যদি অসফল না হই, তাহলে কিভাবে শিখবো ? লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে, কিভাবে নিজেদের মেলে ধরতে হবে ? পরিশ্রম করতে হবে ? তা ভাবা উচিৎ। ব্যর্থতা আসুক ক্ষতি নেই । শুধু লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়া চলবে না ।