Chanakya niti Bengali – চাণক্য নীতি বাংলায়
আমরা কেউই বোকা নই । আমরা প্রত্যেকেই, নিজেদের কে খুব বুদ্ধিমান বলে মনে করে থাকি । কিন্তু মহামতি চাণক্য চারটে নীতির কথা বলে গেছেন । এই চারটে নীতি একবার পড়ে দেখুন, তারপর নিজেই নিজের বিচার করে দেখুন, আপনি সত্যি বুদ্ধিমান না বোকা ?
চাণক্য-এর প্রথম নীতি হলো, ‘বলুন কম আর শুনুন বেশী’ । বেশি বুদ্ধিমান মানুষেরা সব সময় কথা কম বলেন আর অপরের কথা শোনেন বেশী । অপর দিকে বোকারা কি করে ? ওরা প্রথমেই অন্যের কথা থামিয়ে দিয়ে, নিজেরাই সব সময় কথা বলতে থাকে এবং অপরকে বেশী কথা বলার সুযোগ দেয় না । ‘আমি সব জানি, সব বুঝি, আর তুমি কিছু জানো না’ এই কথাগুলো যারা বলে তারাই হল প্রকৃত বোকা ও মূর্খ মানুষ । অন্যদিকে, বুদ্ধিমান মানুষেরা প্রথমে মন দিয়ে পুরো কথাটা শোনে । পুরো কথা শোনার পর, সে যুক্তি দিয়ে নিজের বক্তব্যটুকু অপরকে বলে । এছাড়া বুদ্ধিমানরা কখনো অন্যের বুদ্ধি নিয়ে ঠাট্টা করে না ।
চাণক্য-এর দ্বিতীয় নীতি হল, ‘ আগেই ফলের আশা না করে কোন কাজ করা’ ।আমরা প্রত্যেকটি মানুষ লাভের আশা করি । কোন কাজ করার আগে চিন্তা করি, কি কাজ করলে আমাদের লাভ হবে ? এই হিসেব-নিকেশ আমরা কাজ করার আগে প্রত্যেকেই করে নেই । অথচ, বুদ্ধিমান লোকেরা কিন্তু শুধু নিজের লাভের জন্য কাজ করে না । তারা প্রথমে অন্যের উপকার করার কথা ভাবে । অন্যের উপকার করার জন্য কাজ করেন । একবার মনে মনে চিন্তা করে দেখুন, আপনি যদি ব্যবসায়ী হন, তাহলে আপনার ক্রেতা থাকবেই । একজন ক্রেতা কখন একজন ব্যবসায়ীর কাছে আসে ? যখন সে বুঝতে পারে, উক্ত ব্যবসায়ীর কাছে গেলে সে লাভবান হবে, তখনি সে যাবে । আর আপনি যখন আপনার কোন ক্রেতাকে তার কি লাভ হচ্ছে সেটা একবার দেখাতে পারেন তাহলে সেই ক্রেতা আপনার কাছে আসবে । আপনি যখন ভোক্তা বা ক্রেতার লাভের জন্য ব্যবসা করবেন, তখন দেখবেন ক্রেতা বা খরিদ্দার আপনার কাছে এসে দ্বিগুণ-তিনগুণ বেশী করে লাভ দিয়ে যাচ্ছে । কারণ জীবনে, আপনি যখন অন্যদেরকে কোন ভাল বা বেশী সুযোগ বা লাভ দিতে পারবেন, তখন তার পরিবর্তে আপনিও তাদের কাছ থেকে অনেক বেশী ফেরত পাবেন । এবং সেটাই পরবর্তী কালে আপনাকে অনেক বড় ও সফল করে তুলবে । তাই বুদ্ধিমান ব্যক্তি নিজের জন্য নয়, সবার জন্য কাজ করেন ।
চাণক্যর তৃতীয় নীতি হল, বুদ্ধিমানরা অন্যের নিন্দা করেন না । মূর্খ লোকেরা কোন সময় অন্যের উপকার করে না । কারণ অন্যের উপকার করতে গেলে তাদের তো সময় নষ্ট হবে । কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় বেশীরভাগ ক্ষেত্রে তারা অন্যের নিন্দা করতেই দিনের বেশিরভাগ সময়টা কাটিয়ে দেয় । অথচ বুদ্ধিমান লোকেরা কখনোই কারো নিন্দা করে সময় নষ্ট করে না । প্রকৃত পক্ষে পরনিন্দা-পরচর্চা করা যতটা খারাপ, সেটা শোনাটাও ততটাই খারাপ । কারণ, সেই সময়টাতে আপনি অন্য কোন ভাল কাজ করতে পারতেন বা নতুন কোন কাজ করা বিষয়ে ভাল ভাল চিন্তা করতে পারতেন । তাতে আপনারই লাভ হতো ।
চাণক্যর চতুর্থ এবং শেষ নীতি হল, কেবল মাত্র, বুদ্ধিমান মানুষেরা সবকিছু খুব তাড়াতাড়ি এবং খুব ভালোভাবে বুঝতে পারেন । কারণ তাদের মন দিয়ে শোনার ধৈর্য এবং সময় আছে । একজন বুদ্ধিমান মানুষের কাছে কখনই শোনা যায় না যে, তারা বলছেন, ‘আমি সব জানি, সব বুঝি, সব পারি’ । কারণ, তিনি জানেন, তিনি বুদ্ধিমান ঠিকই, কিন্তু তিনিই পৃথিবীর একমাত্র বুদ্ধিমান নন ।
চাণক্য-এর এই নীতি সম্পকিত লেখাটি পড়ে অবশ্যই বুঝতে পারছেন, আমরা কি কি ভুল করি, আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে চলার পথে ।
তাই যে ব্যাক্তি, নিজেকে চালাক আর অন্যদের বোকা ভাবে, তার থেকে বোকা পৃথিবীতে আর কেউ নেই ।