আয়ুর্বেদশাস্ত্র মতে চিকিৎসা
বং দুনিয়া ওয়েব ডেস্কঃ আয়ুর্বেদশাস্ত্র মতে চিকিৎসা পুরাণ কাল থেকে চলে আসছে। আয়ু’ শব্দের অর্থ ‘জীবন’ এবং ‘বের্দ’ শব্দের অর্থ ‘জ্ঞান’ বা ‘বিদ্যা’। ‘আয়ুর্বেদ’ শব্দের অর্থ জীবনজ্ঞান বা জীববিদ্যা। অর্থাত্ যে জ্ঞানের মাধ্যমে জীবের কল্যাণ সাধন হয় তাকে আয়ুর্বেদ বা জীববিদ্যা বলা হয়। আয়ুর্বেদ চিকিত্সা বলতে ভেষজ বা উদ্ভিদের মাধ্যমে যে চিকিত্সা দেয়া হয় তাকে বুঝানো হয়। এই চিকিত্সা ৫০০০ বছরের পুরাতন। পবিত্র বেদ এর একটি ভাগ – অথর্ববেদ এর যে অংশে চিকিৎসা বিদ্যা বর্ণিত আছে তা-ই আয়ুর্বেদ। আদি যুগে গাছপালার মাধ্যমেই মানুষের রোগের চিকিৎসা করা হতো। এই চিকিত্সা বর্তমানে ‘হারবাল চিকিত্সা’ তথা ‘অলটারনেটিভ ট্রিটমেন্ট’ নামে পরিচিতি লাভ করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানে এই চিকিত্সা বেশী প্রচলিত। পাশাপাশি উন্নত বিশ্বেও এই চিকিত্সা ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
একটু ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, প্রাচীনকালে ভারতীয় উপমহাদেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানের সুনাম ছিল সারা পৃথিবী জুড়ে । সেই সময় ভারতের চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পূর্ণভাবে আয়ুর্বেদিক ছিল । কিন্তু আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় দেখা গেছে, মর্ডান এলোপ্যাথি অনেক ঔষধেরই সাইড এফেক্ট বা পার্শ প্রতিক্রিয়া রয়েছে। যেমনঃ ঔষধ সিপ্রোফ্লক্রাসিন, ফ্লুক্লক্রাসিলিন, মেট্রোনিডাজল, ক্লক্রাসিলিন প্রভৃতি ঔষধ রোগ সারানোর পাশাপাশি মানব শরীরকে দুবর্ল করে ফেলে এবং দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে স্মৃতিশক্তি, যৌনশক্তি, কর্মক্ষমতা কমে যাওয়ার ইতিহাস পাওয়া যায়। কিন্তু তবুও দ্রুত আরোগ্য লাভের জন্য মানুষ এগুলো ব্যবহার করে চলেছে। পক্ষান্তরে ডাক্তারও ঔষধ ব্যবসায়ীগণ এসকল পার্শ প্রতিক্রিয়া পরোয়া না করে সুনামের জন্য অনবরত দেদারছে রোগীদেরকে এসকল ঔষধ দিয়ে যাচ্ছেন। তাই এখন এ ঔষধের বিকল্প ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মুক্ত হিসেবে বিশ্বে এখন ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
আয়ুর্বেদশাস্ত্র মতে চিকিৎসা
ভারতীয় উপমহাদেশে চিকিৎসা ও খাদ্যের প্রাচীন বিজ্ঞান হলো ‘আয়ুর্বেদ শাস্ত্র’। এই চিকিৎসা বিজ্ঞানের আমরা বেঁচে থাকার জন্য যে খাদ্য গ্রহণ করি সেই খাদ্য আমাদের স্বাস্থ্যের যাবতীয় বিষয়ের দেখাশোনা করে। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের মূল বিষয় হল, আমরা যে খাদ্য গ্রহণ করি সেই বিভিন্ন খাদ্য ও জীবনযাত্রার মাধ্যমে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করাই আয়ুর্বেদের উদ্দেশ্য । এই কারনে, আয়ুর্বেদ কেবল একটা কার্যক্রম নয়, এটা একটা পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। এটা এমন এক পদ্ধতি, যার আবেদন সেই প্রাচীনকাল থেকে আজও টিকে রয়েছে । আয়ুর্বেদের মতে মানব দেহের চারটি মূল উপাদান হোল দোষ, ধাতু, মল এবং অগ্নি। আয়ুর্বেদে এগুলি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, তাই এগুলিকে ‘মূল সিদ্ধান্ত’ বা ‘আয়ুর্বেদ চিকিৎসার মূল তত্ত্ব’ বলা হয়।
তবে আয়ুর্বেদ কি বিজ্ঞান মেনে চলে ? আধুনিক বিজ্ঞান কি বলছে আয়ুর্বেদ শাস্ত্র সম্পর্কে । দেখা গেছে, আয়ুর্বেদ ও আধুনিক বিজ্ঞানের যৌথ সমন্বয় জীবনযাপনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।আর সেই সাথে একটু পর্যালোচনা করলেই দেখা যাবে, প্রকৃত পক্ষে আমরা প্রতিদিন যে খাবার খাই, সেটি দেহ ও মনে কতটুকু ভূমিকা রাখে, খাবারের স্বাস্থ্যকর দিক ও পুষ্টিগুণ ইত্যাদি জানা যায় সহজেই ।
একটা সামান্য উদাহরণ দিলেই বোঝা যাবে, আয়ুর্বেদ শাস্ত্র বা আয়ুর্বেদ চিকিৎসা পদ্ধতি এবং আধুনিক বিজ্ঞান একে অপরের বিরুদ্ধে যাচ্ছে না । আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে ইমিউন সিস্টেমকে জোরদার করার জন্য হলুদ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় । এবার আধুনিক বিজ্ঞান হলুদ সম্পর্কে কি জানাচ্ছে ? আধুনিক বিজ্ঞান এটা ব্যাখ্যা করে দেখায় কেন হলুদ খেলে ইমিউন সিস্টেম ভালো হয়। কীভাবে হলুদ শরীরে কাজ করে, সেটা যেন মানুষ জানতে পারে ও সেটা গ্রহণ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। অর্থাৎ আয়ুর্বেদ শাস্ত্র থেকে আমরা জানতে পারছি কি খাদ্য গ্রহণ করলে আমরা সুস্থ থাকতে পারব, এবং নিজেদের শরীরের মধ্য নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারব । পাশাপাশি আধুনিক বিজ্ঞান আমাদের বলে দেবে, কি এমন আছে সেই খাদ্যাপদানে, যার ফলে সেই খাদ্য গ্রহণ করলে আমাদের শরীরের পক্ষে কেন ভাল হবে ।
ফলে সুস্থ থাকার জন্য আমাদের আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে যেমন খাদ্যাভাস রাখতে হবে, পাশাপাশি জেনে রাখতে হবে সেই খাদ্যের বিজ্ঞানসম্মত কারন । ফলে এটা আশা করা যায়, আয়ুর্বেদ ও বিজ্ঞানের যৌথ সমন্বয় ব্যক্তির সমস্যা নিরাময় করতে পারবে। সেই সঙ্গে ক্ষতিকর দিকগুলো এড়িয়ে চলতেও ব্যক্তিকে সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করতে পারবে।