টক্সিন দূর করার উপায়

বং দুনিয়া ওয়েব ডেস্কঃ   টক্সিন হল এক ধরনের বিষ, যা মুলত মানবদেহে খাবারের মাধ্যমে এবং পরিবেশ দূষণের মাধ্যমে প্রবেশ করে। আসুন জেনে নিই সহজে টক্সিন দূর করার উপায় । টক্সিন সহজেই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে দূর্বল করে দেয় এর ফলে আপনি খুব সাধারণ রোগ নিয়েও অনেক দিন অসুখে ভোগেন। ডাক্তারের ভাষ্য মতে, ‘‘টক্সিন মানব শরীরে একটি ঘুমন্ত হত্যাকারী”।

যত দিন যাচ্ছে চারিদিকে দূষণ আরও বেড়ে চলেছে | আধুনিকতার পাশাপাশি পরিবেশ দূষণ হচ্ছে মারাত্মক হারে  | সাথে রয়েছে আমাদের অনিয়মিত খাদ্যাভাস । কৃত্রিম সার এবং কীটনাশক ব্যবহার করে চাষ করা ফল-শাক-সব্জি  খাওয়ার ফলে দেহে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে ।  এ ছাড়াও নেশায় আসক্ত হলে বা ওষুধ খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে । ধীরে ধীরে জমা হচ্ছে বিষাক্ত টক্সিন ।  বিশেষজ্ঞদের মতে, আমরা যদি নিয়মিত ভাবে শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বা টক্সিন বের করে না দিই, তা হলে আমাদের শরীর ঠিক থাকবে না | ( টক্সিন দূর করার উপায় )

দেখা গেছে টক্সিন ৩ ভাবে আমাদের শরীরে প্রবেশ করেঃ

১.শ্বাস প্রশ্বাস ও ত্বকের মাধ্যমে
২. প্রতিদিনকার খাবারের মাধ্যমে
৩. শরীরের ভিতরে কোন সমস্যার কারনে টক্সিন

১.শ্বাস প্রশ্বাস ও ত্বকের মাধ্যমেঃ- 

  • কারখানার দূষিত বাতাস
  • গাড়ির জ্বালানির ধোঁয়া
  • বিভিন্ন দ্রাবক (রং, পরিষ্কারক)
  •  ভারি ধাতু
  •  রেডিয়েশান (বিকিরণ)
  •  কীটনাশক, উদ্ভিদনাশক
  •  ধুমপান
  •  ধুমপায়ীর হতে নির্গত ধোয়া।

২. প্রতিদিনকার খাবারের মাধ্যমেঃ-   

  •  ফাষ্ট ফুড, ফ্রাইড ফুড
  •  নিকোটিন
  • অ্যালকোহল
  •  ক্যাফেইন
  •  বিনোধনমূলক ড্রাগস্
  •  ভেজাল বা কৃত্রিম খাবার (রং, প্রিজারভেটিভ)
  • অপরিশোধিত খাবার এবং চিনি

৩. শরীরের ভিতরে কোন সমস্যার কারনে টক্সিন তৈরি হয়ঃ  

  • ব্যাকটেরিয়া জনিত
  •  খাদ্য বিষক্রিয়া
  • অজীর্ণ খাদ্য

টক্সিন দূর করার উপায়

আমাদের শরীর কিন্তু বহু রকম আকার-ঈঙ্গিতে বোঝায় এই বার শরীরের খেয়াল রাখতে হবে, টক্সিন বের করে দেওয়ার সময় এসে গেছে |   একবার দেখে নিন,  নিচের  লক্ষনগুলি মিলছে কি না আপনার সাথে ?  যদি মিলে যায় তা হলে বুঝবেন সময় এসে গেছে আপনার শরীরকে টক্সিন মুক্ত করার –

১) পেটে অতিরিক্ত মেদ জমলে : শরীরে ক্ষতিকারক টক্সিন বেড়ে গেলে শরীর গ্লুকোজ লেভেল ঠিক রাখতে পারে না| একই সঙ্গে কোলেস্টেরলকে সঠিক ভাবে কাজে লাগাতে পারে না| ফলে পেটে মেদ জমা হয়|

২) ত্বকের সমস্যা : শরীরে অতিরিক্ত টক্সিন জমা হলে ত্বকের সমস্যা দেখা দেয়| ত্বকের চুলকানি, ইনফ্ল্যামেশন এবং খসখসে হয়ে যাওয়া ইত্যাদি ত্বকের সমস্যা দেখা দিতে পারে|

৩) মাথা ব্যথা : শরীরে যে টক্সিন জমা হচ্ছে তা আমাদের সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম কে ঠিক মতো কাজ করতে দেয় না | ফলে মাঝে মাঝেই মাথা ব্যথা হবে |

৪) শরীর থেকে অতিরিক্ত তাপ বেরোবে : শরীরে অনেক রকমের টক্সিন জমা হওয়ার ফলে লিভার বা যকৃতকে বেশি পরিমাণে কাজ করতে হয়| এর ফলে শরীরে উচ্চ তাপ তৈরি হয়|

৫) লো এনার্জি লেভেল : টক্সিন জমা হওয়ার ফলে আপনার মনে হবে শরীরে কোন এনার্জি নেই| সব সময়ই ক্লান্ত লাগতে থাকবে।

৬) সাইনাসের সমস্যা বেড়ে যাবে : শরীরে বেশি মাত্রায় টক্সিন জমনে ঘন ঘন সাইনাসের সমস্যা দেখা দেবে|

৭) ইনসোমনিয়া : শরীরে টক্সিন বেড়ে গেলে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে, ঘুম আসে না| এটা হয় কারণ টক্সিন শরীরের টিস্যুতে গিয়ে জমা হয় আর ঠিক মত রক্ত চলাচল হতে দেয় না |

৮) গলব্লাডারে অসুবিধা দেখা দেয় : যকৃতে টক্সিন জমা হওয়ার ফলে গলব্লাডারের মুখ বুজিয়ে দেয় |

৯) জিভের ওপর সাদা বা হলুদ পরত : যদি দেখেন জিভের ওপর সাদা বা হলুদ পরত পরেছে তা হলে বুঝবেন আপনার রক্তে টক্সিন বেড়ে গেছে ।

টক্সিন দূর করার উপায়

টক্সিন মানব দেহের জন্য একটা হুমকি স্বরূপ । একজন মানুষকে নিশব্দে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয় টক্সিন । টক্সিনের প্রভাবে মনুষ্য শরীরে বাসা বাঁধতে পারে নানা রোগ ব্যাধি । উপরোক্ত ল ক্ষণ গুলি ছাড়াও  টক্সিনের প্রভাবে নিম্নলিখিত উপসর্গ দেখা দেয় –

  •  জয়েন্ট ও মাংস পেশীতে ব্যাথা
  • ঘামে প্রচণ্ড দুর্গন্ধ হওয়া।
  • বয়স বেশি না হয়েও বার্ধক্যজনিত রোগেপড়া।
  • দৃষ্টি শক্তি হ্রাস
  • স্মৃতি শক্তিহ্রাস
  • খাদ্য বিপাকে সমস্যা
  • ব্রেষ্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়
  • ব্যাক পেইন
  •  বিরক্তিকর পেটের সমস্যা
  •  অনিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য 
  •  বিভিন্ন চর্ম সমস্যা ও চর্মরোগ, ব্রন, মেসতা 
  •  হরমোনে অসামঞ্জস্যতা
  •  রক্তকে দূষিত করে
  •  দেহের মধ্যে স্বাভাবিক রক্ত চলাচল করতে পারে না 

টক্সিন দূর করার উপায়

টক্সিন এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে নিজেকে রক্ষা করবেন কিভাবেঃ

টক্সিন এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাচার একমাত্র উপায় হলো শরীর থেকে টক্সিন বের করে আনা। মানব শরীর থেকে টক্সিন বের করে আনার সবচেয়ে আধুনিক ও সহজ উপায় হলো ” টক্সিন ক্লিঞ্জার” সঠিক ভাবে ব্যাবহার করা । টক্সিন ক্লিঞ্জার  হল প্রাকৃতিক  উপায়ে আপনার শরীর থেকে টক্সিন পরিশোধন করার সবচেয়ে আধুনিক একটি ন্যাচারাল পণ্য। যার মাধ্যমে কোন প্রকার পার্শ্ব  প্রতিক্রিয়া ছাড়া আমাদের শরীরের ক্ষতিকর টক্সিন পরিশোধন বা মুক্ত করা যায় । পরিশোধিত ওক গাছের গুড়া, পরিশোধিত বাঁশ গাছের গুড়া,  টারমলিন খনিজ পদার্থ,  হৌটানিয়া করডাটা,  ইউক্লিপটাস করডাটা,  সিটোসেন, আরজিকাস মাশরুম, সৌরাস সাইনিসিস্ ও অন্যান্য ন্যাচারাল উপাদান।

এই বার জেনে নিন কী করে শরীর থেকে টক্সিন মুক্ত  করবেন – টক্সিন দূর করার উপায়

১) টক্সিন ক্লিঞ্জারঃ টক্সিন ক্লিঞ্জার  ব্যাবহার করতে গেলে মাথায় রাখতে হবে যাতে এটি সঠিকভাবে ব্যাবহার করা হয় । রাতে ঘুমানোর পূর্বে পায়ের তালুতে ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজনে পায়ে মোজা ব্যবহার করতে হবে, যার ফলে টক্সিন ক্লিঞ্জার  বিছানার সাথে লেগে না যায় । এর পর সকালে ঘুম থেকে উঠে খুলে ফেলতে হবে। মনে রাখতে হবে,  স্বাভাবিক ভাবে এর কার্যকারিতা ৮-১০ ঘন্টা কার্যকর থাকে। ব্যবহারের পর টক্সিন ক্লিঞ্জার এর ফলাফল আপনি সাথে সাথে দেখতে পাবেন।সকালে এটা পা থেকে খুলে ফেলার সময়ে আপনি অবাক হয়ে যাবেন, দেখবেন প্রচুর পরিমাণ টক্সিন আপনার পায়ের তালু দিয়ে শরীর থেকে বের হয়েছে। এভাবে ৪/৫ বার ব্যাবহার এর পর দেখবেন আপনার শরীর থেকে আর টক্সিন বের হচ্ছে না, আপনি অনেক হলকা ও প্রফুল্লতা অনুভব করবেন এবং টক্সিন এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে আপনি রক্ষা পাবেন ।

২) এপসম সল্ট বাথ : শরীরকে ডিটক্সিফাই করতে এপসম সল্টের জুড়ি নেই | এটা দিয়ে স্নান করার ফলে ম্যাগনেসিয়ামের লেভেল বেড়ে যায় | যার সাহায্যে শরীর থেকে ক্ষতিকারক টক্সিন বেরিয়ে যায় | এ ছাড়াও শরীর থেকে ব্যাথা-বেদনা কমাতে সাহায্য করে এপসম সল্ট বাথ | তবে যাদের উচ্চ রক্ত চাপ বা হার্ট প্রবলেম আছে তারা এটা করবেন না |

২) গ্রিন টি : গ্রিন টি -তে বহু রকমের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে যা টক্সিন কমাতে সাহায্য করে | এ ছাড়াও এতে Epigallocatechin-3-gallate (EGCG) আছে যা লিভারকে টক্সিনের হাত থেকে বাঁচায় | দিনে ২ থেকে ৩ বার গ্রিন টি খান | টক্সিন থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন ।

৩) লেবুর রস :  লেবুতে ক্ষারের মাত্রা বেশি থাকে, তাই অম্লকে ভারসাম্যে রাখে এবং টক্সিন মুক্তিতে সাহায্য করে | এ ছাড়াও লেবুর রস লিভারের বা যকৃতের পিত্ত উত্‍পাদনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় । ফলে আরও ভাল করে খনিজ পদার্থ শোষণ করতে পারে | লেবুতে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আছে,  যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় | লেবুর খোসায় এক ধরনের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আছে যার নাম d-limonene যা যকৃতে উপস্থিত এনজাইমের কার্য ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় । ফলে শরীর থেকে টক্সিন কমে যায় ।(  টক্সিন দূর করার উপায় )

Kajal Paul is one of the Co-Founder and writer at BongDunia. He has previously worked with some publishers and also with some organizations. He has completed Graduation on Political Science from Calcutta University and also has experience in News Media Industry.

Leave A Reply