—–লেখক পরিচিতি—–

এন কে মণ্ডল

এন.কে.মণ্ডল একজন ভারতীয় বাঙ্গালী লেখক। তিনি ৫ ই মে ১৯৯৬ সালে মুর্শিদাবাদ জেলার হরিহরপাড়া ব্লকের অধিনস্থ প্রতাপপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।তিনি পেশায় একজন গ্রামীণ চিকিৎসক ও লেখক। তিনি ২০১৯ সালের মার্চ মাসে বাংলার অন্যতম পুরস্কার “সাহিত্য রত্না” উপাধিতে ভূষিত হন।এছাড়া অনেক উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল আনন্দ পথ,ভালোবাসার পরশ ছোঁয়া,আকাশ ছোঁয়া মন,থমথমপুর,রহস্যময় প্রাচীণ বাড়ি ইত্যাদি।

পর্ব – ১

অসিম এবং নিলা দুজনে বি.এ ইংরেজিতে অনার্স নিয়ে ভালো রেজাল্ট করায় বিদেশে অর্থাৎ মালেশিয়ায় পড়তে যাবে। অসিম ও নিলা দুজনে খুব ভালো বন্ধু স্কুলজীবন থেকেই। একই গ্রামে বাড়ি তাই ছোট থেকে বড় হয়েছে। দুজনেরই উচ্চ পরিবার। টাকার কমতি নেই।অসিম একটু আলাদা ধরনের ছেলে উল্টা পাল্টা কাজ করে ফেলে,একটু আবেগ প্রবণও বটে, তাই নিলাকেই অনেক কিছু সামাল দিতে হয়।
দুই পরিবারের মিলও আছে। তাই ঠিক করেছে দুজন কে মালেশিয়ায় পড়তে পাঠাবে,এবং অসিম ও নিলাও রাজি।
বিদেশে গিয়ে বি.বি.এ করবে যেহেতু ওদের বড় বড় ব্যাবসা আছে।তবে ওখানে চাকরি পেলে করবে।

ফেব্রুয়ারি মাসে পনেরো তারিখে ফ্লাইট, লাগেজ পত্র রেডি করে ফেলেছে একদিন আগেই, যেহেতু আগামীকাল মালেশিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে।
ওখানে একটি ফ্লাটে দুজনের জন্য দুটো রুম নেওয়া হয়ে গেছে। অসিমের জন্য একটি কারও কিনে দিয়েছে ওর বাবা। অসিম রা নিলাদের থেকে অনেক ধনী পরিবার, তবে নিলারাও কম নয় কিন্তু। সে একটা স্কুটি কিনেছে অগ্রিম।কারণ ওখানে প্রতিদিন ভার্সিটি ও প্রাইভেট যেতে হবে, টাইমের ব্যাপার আছে। তাছাড়া আরো অনেক কাজ আছে।

চৌদ্দ তারিখের পর—————–

অসিম ও নিলা আজ বিকেলের ফ্লাইটে মালেশিয়া যাওয়ার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত, এবং বিকেলের ফ্লাইটে যাত্রা করল।

পাঁচ ঘণ্টা পরে————–

পাঁচ ঘণ্টা পরে এসে নামলো মালেশিয়ার মাটিতে। কিছুক্ষণ অপেক্ষায় ছিলো একজনের। অবশেষে ভদ্রলোক এসে পৌঁছালো। দুজন কে নিয়ে আসলো ফ্লাটে। তাঁদের রুমগুলি দেখিয়ে দিলো,কিছুক্ষণ পরে তাঁরা রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়া করে ফ্লাটের চারিপাশ তাকিয়ে দেখলো। ওয়াও কি মজাদার দৃশ্য ও মনোরম পরিবেশ।নিজ নিজ রুম সাজিয়ে ঠিকঠাক করে নিয়েছে।
সঁন্ধায় অসিম ও নিশা দুজনে অসিমের নতুন কারে করে ওখানকার একজন (ফ্লাটের) কর্মচারী নিয়ে একটি নদীর কাছে উপস্থিত হল।এবং বহমান সুন্দর নদীর দৃশ্য ও পাশেই রোমাঞ্চকর পার্ক দেখে মন উৎফুল্ল বা আনন্দদায়ক হয়ে গেলো।
এইভাবেই হেসে খেলে দিন যায়,ক্লাস করে ভালো বন্ধু বান্ধবী হয়েছে। এখন দুজনের অনেক পরিচিতি, সঙ্গে দেশের মানুষও আছে। আরো মনটা ভালো লাগে। মাঝে মাঝে ছোট খাটো ব্যাপার নিয়ে দুজনের মধ্যে ঝামেলাও হয়ে থাকে।

দুই বছর পাঁচ মাস পর———

দুই বছর পর পরিক্ষায় পাশ করার পর একদিন মালেশিয়ার একটি পার্কের নদীর পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গল্পে মেতে আছে দুজনে এমন সময় অসিম বলে উঠে। নিলা একটা জিনিস দিতে চাই এবং কিছু কথা শেয়ার করতে চাই। তুই কিছু মনে করবি না তো।

—নিলা: না বল,এমন কি কথা যে মনে করতে হবে।

–অসিম: না সেরকম কথা নয়, তবু্ও বলছি।

—নিলা: বলে ফ্যাল।

—অসিম: তাঁর জন্য তোকে চোখ বুজতে হবে। নইলে হবে না।

—নিলা: ঠিক আছে, এই চোখ বুজলাম, এবার তো বল কি বলবি।

অসিম নিজের ব্যাগ থেকে একটি গোলাপের তোড়া নিয়ে হাটু গেরে বসে পড়লো নিলার সামনে। এবং অসিম বুকে শাহস রেখে বলল “আই লাভ ইউ “।
নিলা অসিমের মুখের উচ্চারিত ধ্বনি শুনেই চোখ খুলে ফেললো,এবং দেখে যে নিলার সামনে চাতক পাখির মত হাতে গোলাপ নিয়ে চেয়ে আছে নিলার দিকে,কখন ভালোবাসার হাত থেকে গোলাপগুচ্ছ গুলি নেবে। এবং বলবে আই লাভ ইউ টু। কিন্তু নিলা চোখ খুলে গোলাপগুচ্ছ গুলি নিয়ে গোলাপ কে আদর করে বললো।
—নিলাঃ হ্যাঁ রে অসিম,তুই কবে থেকে আমাকে ভালোবাসিস জানতাম না তো।

অসিম উঠেই বলে ফেললো কয়েকদিন আগে থেকেই ভালোবেসে ফেলেছি।

—নিলা: তো আমাকে ভালোবাসা ও সময় দিতে পারবি, তুই তো আমার সঙ্গে সারাক্ষণ ঝামেলায় ডুবে থাকিস।

—অসিম: না আমি নিজেকে মানিয়ে নেব, এবং তুই তো আছিস আমাকে মানিয়ে নেওয়ার জন্য।

—নিলাঃ ঠিক আছে, আমি কোথাও কিছু করে ফেললে আমায় আটকাবি।

এমন সময় নিলাকে নদীর পাড়ে সিমেন্টের তৈরি আফ ফুট উচ্চ রাস্তা থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় এবং সঙ্গে আবার পা দিয়ে আটকে দেয় অসিম।

—নিলা: এটা কি হল?

—অসিম: কি আবার,আটকে দিলাম।

–নিলা: তো এইভাবে, কেউ আটকায় নাকি।

—অসিম: হ্যাঁ, এটা আমার স্টাইল।

—নিলা: ওহ তুই এইভাবে আটকালে আমি যদি কোথাও চলে যায় তখন সামলাতে পারবি তো।

—অসিম: হ্যাঁ হ্যাঁ তা পারব, শুধুমাত্র আটকানোর ব্যাপার তো, ও হয়ে যাবে। এখন চল সুন্দর মহুর্তে কোনো রেস্টুরেন্টে গিয়ে মজা করা যাক।
রেস্টুরেন্টে গিয়ে নানান খোশ মেজাজের সহিত নানান সুন্দর সুন্দর খাবার খেলো এবং কিছুক্ষন আনন্দ করে বাড়ি ফিরলো।
আজ নিলা অসিমের বাড়িতেই রাত্রিযাপন করল । আজ খুব ভালো ঘুম হয়েছে নিলার। এবং অসিমের ঘুম আরো বেশি। খুব সকালে উঠেই যেতে হবে ইন্টারভিউ দিতে অসিম ও নিলার দুজনেরই ইন্টারভিউ আছে।

ভোররাত্রি অর্থাৎ চারটে কি সাড়ে চারটের সময় ভোর ভোর নিলা উঠে ফ্রেশ হয়ে অসিমকে ডাকে।

—নিলা: এই ওঠ ওঠ সকাল ছয়টায় ইন্টারভিউ আছে।

—অসিম: ওহ না , এখন আমার ঘুম পাচ্ছে, এখন আমি উঠতে পারব না।

—নিলা: আরে আজ ইন্টারভিউ, হুশ আছে তোর।

—অসিম: সে থাক, এখন উঠতে পারব না, তুই যা।

–নিলা: ঠিক আছে উঠবি না, এবার আমি দেখছি।

এই বলে নিলা কিচেন রুম থেকে একটা সব্জীকাটা ছুরি নিয়ে এসে অসিমের গলায় পেঁচিয়ে ধরে এবং বলে এবার উঠবি।

একটু ভয় দেখানোর ফলে তাড়াতাড়ি করে থতমত খেয়ে ফ্রেশ হয়ে অসিমের গাড়িতে করে যাচ্ছে এমন সময় অনেকটা যাওয়ার পর নিলা বলে উঠে তোর লাইফে ফিউচার বলে কিছু নেই।

–অসিম ঃ ফিউচারের তুই কি বুঝিস রে।

—নিলাঃ ফিউচারের আমি কিছু বুঝি না তুই বুঝিস তাই না, যে নিজেকে চাকরির ইন্টারভিউয়ের জন্য প্রস্তুত হতে পারে না তাঁর আবার ফিউচারের জ্ঞান দেওয়া লাগে।

—অসিম: তুই যে আমায় ছুরি দিয়ে টেনে নিয়ে আসলি, আমায় যদি লেগে যেত।

—নিলাঃ লেগে যেত যেত, তো আমি কি করব।

—অসিমঃ তোর মত ডাইনির সঙ্গে আমার প্রেম করতে বয়ে গেছে। তুই আমার গাড়ি থেকে নেমে যা।

—-নিলা: নেমে যাব মানে, তুই কি বলতেছিস।

—অসিমঃ হ্যাঁ আমি ঠিকই বলছি।তুই নেমে যা গাড়ি থেকে আমি তোরে ভালোবাসি না। নাম বলছি।

—নিলা: এই তুই কি বলছিস, কিছু বুঝতে পারছিস।মাথা খারাপ হয়ে গেলো না কি।

—অসিম: আমি কি বলছি আমার ভাল করে জানা আছে, যে আমায় ঘুম থেকে ছুরি দিয়ে উঠিয়ে তুলে নিয়ে আসে সে সবকিছু করতে পারে।

—নিলা : ওহ আমি তোর ভালমন্দ বুঝব না।

—অসিম: না তোরে আমার ভালোমন্দ বুঝতে হবে না। তুই এক্ষুনি গাড়ি থেকে নেমে যা।

নিলা গাড়ি থেকে নেমে আসলো এবং রেগে বলল তুই জীবনে আমার সঙ্গে কথা বলবি না আর তোর মুখও দেখতে চাই না।

অসিম বলল তুই আমার সঙ্গে কোনো কথা ও মুখ দেখাবি না। খ্যাত কোথাকার।

নিলা– এই খ্যাত বলবি না নিজে কি।

অসিম — আমি তোর থেকে অনেক ভালো আর দেখবি তোর থেকে সুন্দরী বিদেশি মেয়ে নিয়ে ঘুরব, দেখে নিস ।

—নিলা আরে যা যা দেখা আছে।

এই বলে দুজনে চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিতে গেলো ভিন্নপথে কিন্তু দুজনেই বিফল হয়ে বাড়ি ফিরলো।

অসিম এদিকে একটি বিদেশি সুন্দর কোটিপতি মেয়ে নিয়ে একটি হোটেলে উঠেছে এবং সেখান দিয়ে যাচ্ছিলো নিলা এবং নিলা কে দেখে অসিম সুন্দরী মেয়ে তথা ইলিনা কে জোরে জোরে কিস করছে আর ইলিনাকে কে সোফায় বসিয়ে তাঁর জাঙ্গের ওপর মাথা রেখে আদর করছে আর কালো আঙ্গুর খাওয়াচ্ছে এই দেখে নিলা ঘৃনা করে ছি ছি বলে চলে আসে। এবং সেও একজন দেশীয় ছেলে দেখে প্রেম করতে লাগলো ফলে দুজন দুজনে রেষারেষি চলছে প্রেম নিয়ে। এবং একটি বড় চ্যালেঞ্জ থাকল ওদের মধ্য।

কয়েকদিন পরে বিকেলের শেষে নিলা ও নিলার বর্তমান প্রেমিক আসিফ একটি পার্কে বসে গল্প করছে কিন্তু তাঁরা কোনো বাজে ব্যাবহার বা এমন কি নিলা টাচ করতেও দেয় নি আসিফ কে।
ঠিক তখনই যাচ্ছিলো হেটেই অসিম। তখন দেখতে পায় দুজনকে সে একটা গাছের আড়াল হয়। কয়েক মিনিট পরে নিলা আসিফ কে বাই বলে চলে যায় বাড়ি। আর নিলা চলে যাওয়ার পরে অসিম আসে আসিফের কাছে এবং বলে ভাইয়া তুমি কি বাংলাদেশি।

আসিফ– হ্যাঁ, কেন।

অসিম— না মানে এমনি বলতেছি, যে মেয়েটা গেলো সে কে হয়।

আসিফ — গার্লফ্রেন্ড।

অসিম– ওহ, তো কতদিন হলো সম্পর্ক করা।

আসিফ— প্রায় দশদিন।

অসিম— ওহ, তো ওকে ভালো করে চেনো।

আসিফ– কেনো, চেনার কি দরকার।

অসিম —চেনার দরকার আছে তো, আছে নাই। তুমি যার সঙ্গে প্রেম করছো কিছুদিন পরে বিয়ে করবে তাহলে তো চেনা দরকার তাই না।

আসিফ— আপনি কি বলতে চাচ্ছেন বলেন তো।

অসিম— এমন কিছু নয়, মেয়েটার চরিত্র ভালো না ভাইয়া। ,আমার সঙ্গে প্রেম করত এবং আরো তিন চারজনের সঙ্গে প্রেম করে টাকা কামাই করে, আমি বুঝতে পেরে ব্রেকাপ করেছি। আমি চাই না আমার মত আরো কারো কপাল পুড়ুক। গুড বাই ভালো থেকো। চলি।

এরপর আসিফ নিলাকে ফোনের মাধ্যমে সবকিছু বলে দেয় এবং রাগারাগি হয়। নিলাও ইলিনাকে ফোন করে অসিমের নামে উল্টা পাল্টা বলে ভেঙচি দেয় ফলে ইলিনা নিলার কথা বিশ্বাস করে না এবং অসিম কে মোবাইলের মাধ্যমে জানায় এবং সে বলে ও আমাকে ভালোবাসতে চাই জোর করে তাই সে তোমাকে বানিয়ে বানিয়ে বলেছে।

ইলিনা— হ্যাঁ আমিও জানি তাঁর জন্য ওর কথা বিশ্বাস করি নি।

—অসিম — ওহ আমার বেবি, তুমি কি সুন্দর কিউট। আই এম লাকি। ঠিক আছে সন্ধায় তোমার বাসায় আসছি ফুর্তি করব ওকে। রাখছি।
ইলিনাও আনন্দের সহিত ফোন রাখে।

সেদিনই বিকেল বেলায় দুজনে দুজনের রাস্তার মধ্য দেখা হয়ে যায়। আর অসিম নিলাকে দেখতে পেয়ে ঘাড় বাকা করে অন্যদিকে মুখ করে চলে যাচ্ছে এমন সময় নিলা ডাক দেয়।

এই এই শোন। অসিম নিলার ডাকে আসে এবং অন্যদিকে তাকিয়ে বলে তাড়াতাড়ি বল, কি বলবি । আমি ভুলভাল লোকের সঙ্গে বেশিক্ষণ কথা বলতে পারি না। আর সময়ও কম ব্যাস্ত মানুষ।

নিলা— আমি ভুলভাল মানুষ না।আর খুব ব্যাস্ত মানুষ দেখাচ্ছিস নিজেকে।

—নিলা: তুই আসিফ কে গতকাল কি বলেছিস।

অসিম— আসিফ কে, আমি আসিফ না ফাকিব কাউকে চিনি না।

নিলা— দ্যাখ বেশি বাড়াবাড়ি করিস না, তুই ভালো করে আমায় চিনিস আমি কি করতে পারিস।তুই আসিফকে ভুলভাল বলিস নি।

অসিম— আমি কোনো আসিফ কে চিনি না। বরং তুই আমার প্রেমের বারোটা বাজাতে চেয়েছিস কিন্তু পারিস নি। আমার জান আমার বেবি ইলিনা তোর মত খ্যাত নয় বুঝেছিস।কোথাকার সব পাগল ছাগল পিছু নিতে আসে লজ্জা করে না সব।

নিলা অনেকটা দুঃখ পেলো অসিমের কথায় কিন্তু অসিম কে আর কিছুই বলল না।এমন কি চোখে জল চলে এসেছিলো নিলার ।

কয়েকদিন পরে আবার জাতীয় সড়ক দিয়ে হেটে যাচ্ছে এমন সময় অসিম একহাতে সিগারেট ও কোল্ডড্রিংস খাচ্ছে। ঠিক ওইসময়েই নিলা যাচ্ছিলো স্কুটিতে এবং সে দেখতে পেলো। এবং মনে মনে ভাবলো যে ছেলে সিগারেটের ধোঁয়া দেখতে পারত না আজ সে সিগারেট ও মদও খায়। আমার জন্যই তাঁর এই অবস্থা হয়েছে। সে অনেকটা কাঁদো কাঁদো ভাবে বলছে আমায় সারাক্ষণ ধরে জ্বালাতন করত,একটু আমি কাছে না থাকলে টেনশন করত, খেতো না আর আজ আমাকে ছাড়া সে কেমন আছে। আমি জানি না।

একদিন হঠাৎই শপিংমলে দেখা হয়ে গেলো নিলা পোশাক কিনতেছিলো এমন সময় অসিম প্রবেশ করল কিন্তু নিলা কে দেখায় সে কোনো কিছু না কিনেই চলে আসলো। সঙ্গে সঙ্গে নিলাও চলে আসলো এবং অসিম কে ফলো করলো এবং অবশেষে অসিম একটি হোটেলে পৌঁছালো। সেখানে গিয়ে এক বোতল মদ নিয়ে ঢেলে ঢেলে খাচ্ছে এমন সময় একজন নর্তকি এসে মদের গ্লাস নিয়ে ঢেলে দিতে গেলো তখন অসিম বলল সরে যাও এখান থেকে। তুমি কি আমার নিলা নাকি তাই তোমার কাছ থেকে আমি নেব। যাও এখান থেকে আমি একা আর একাই থাকতে চাই। নর্তকি টা চলে যায়।
এবং নিলা সেখান থেকে চলে আসে।

পরেরদিন রাত্রে নিলা অসিম কে ফোন দিলো। এবং কয়েকবার ফোন দেওয়ার পর ফোন রিসিভ করল।

নিলা— হ্যালো আমি নিলা বলছি, কালকে তুই পার্কে নদীর পাড়ে চলে আসিস কিছু কথা আছে।

–অসিমঃ আমি নিলা ফিলা কাউকে চিনি না, ফোন রাখেন।

—নিলা: আমি তোকে একবার দেখতে চাই ও কিছু কথা বলতে চাই।

কিছুক্ষণ কথা বলার পর অসিম রাজি হয় দেখা করতে।

পরেরদিন বিকেল বেলায় পার্কের ধারে নদীর তীরে একটি বেঞ্চে বসে আছে নিলা। এমন সময় অসিম আসলো, দিয়ে বলল কি বলবি বল আমার কাজ আছে।

নিলা: একটি সুখবর আছে তোকে দেওয়ার জন্য। আমি মনে করলাম যে তোকে জানানো দরকার। আমি আগামী তিন তারিখে আমি দেশে যাচ্ছি সেখানে আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছি আসিফের সঙ্গে। তোর নিমন্ত্রন থাকলো অবশ্যই আসিস হবে।

অসিম মনে মনে দু: খ পেলো এবং সেও বলল আরে আমার তো আগামি পরশু বিয়ে ইলিনার সঙ্গে আমি ভাবছিলাম যে তোকে নিমন্ত্রন করব না, কিন্তু তুই যেহেতু নিমন্ত্রন করছিস তাই তোকে বলে গেলাম যাস হ্যাঁ। আমি তো কার্ড নিয়ে আসি নাই মুখেই বললাম। নিলাও খুব দু: খ পেলো সংবাদ পাওয়ার পর।

—নিলা: আমি তোর বিয়েতে থাকতে পারব না রে, আমি তো দেশে যাচ্ছি।

—অসিম, আরে তুই তো যাচ্ছিস দশ তারিখে আর আমার বিয়ে তিন তারিখে। বিয়ে তে আসতেই হবে নাহলে আমি মাইন্ড করব।
ঠিক আছে চলি, ভালো থাকিস কেমন। এই বলে চোখে একটা কালো চশমা দিয়ে হেটে চলে গেলো।এবং ফুপিয়ে ফুপিয়ে নিলা কাঁদতে থাকলো।

দুই তারিখে নিলা সঁন্ধার দিকে অসিমের বাড়িতে গিয়ে গেটের মুখে বসে আছে। একঘণ্টা বসে থাকার পরে অসিম ফিরছে বাড়ির দিকে সিগারেট খেতে খেতে। বাড়ির সামনে এসেই দেখে নিলা।

—অসিম, কি রে এখানে কি করছিস,
—নিলা, আগামীকাল না তোর বিয়ে, তো কই কোনো লোকজন নেই লাইট নেই কিছুই তো দেখতে পাচ্ছি না।

—অসিম, কার বিয়ে

—নিলা, মানে কি। তুই না সেদিন পার্কে নিমন্ত্রন করে আসলি।

—অসিম, বিয়ে হ্যাঁ বিয়ে বলে হাসতে থাকে আর বলে আমার বিয়ে এখানে হবে।আমার বিয়ে বড় হোটেলে হবে মহা ধুমধাম করে হবে, আমি কি তোর মত ভিকিরি নাকি রে।

—নিলা, আচ্ছা তুই এত সিগারেট খাচ্ছিস কেনো, আগে তো খেতিস না।

—অসিম, সেটা আমার ব্যাপার, আমি কি খাব না খাব।

—নিলা, সে অবশ্য ঠিক। সত্যি কালকে তুই বিয়ে করছিস তো।

—অসিম, তোর কি মনে হয়।

—নিলা, আমার মনে হচ্ছে তুই মিথ্যা বলচ্ছিস।

—অসিম, মিথ্যা, মিথ্যা তো ভালো কথা।

—নিলা, আচ্ছা তুই বলতো আমায় ছাড়া কখনো ভালো আছিস।

—অসিম: সেটা তুই জানিস না। আমি ভালোবাসি কি — না বাসি।

—নিলা : তুই তো আমায় উল্টা পাল্টা কথা বলে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে ভালোবাসার অস্তিত্ব শেষ করে দিলি।

আবার আমি একজন কে যখন ভালোবাসছি তখন তাকে ভুল বুঝিয়েছিস। কোনোদিন কি আমায় আটকেছিস।

—অসিম: হ্যাঁ আটকাতাম যদি তুই আমাকে ছাড়া কাউকে না ভালোবাসতিস।

—নিলা: তো এখন আমি কি করব।

—অসিম: সেটা তো তোর ব্যাপার তাই না।

—নিলা: তাহলে আমি বিয়ে করছি না। ফোন করে জানিয়ে দেব আর ওই ভালোবাসার মানুষটিকে গিয়ে বলব যে খমা করে দিতে, কারণ আমারও ভালোবাসা তাকে দিতে পারি নাই কোনোদিনই। আমি যে তোকেই ভালবাসি।

—অসিম: হ্যাঁ তুই বললেই হবে,

— নিলা: আমি বিয়ে না করলেই তো হল।
—অসিম: ঠিক আছে।

—নিলা: আর তোর বিয়ের কি হবে।

—অসিম: আমার ইলিনার সঙ্গে কোনো ব্যাপারই হবে না এখানে ফ্রী মাইন্ডের ব্যাপার। ওকে বুঝিয়ে দেব।

—নিলা: তোর তো আগামীকাল বিয়ে তাই না।

—অসিম: না রে না রে, তোর বিয়ের খবর শুনেই আমার মনে হয়েছিলো যে কোথাও ব্যাথা অনুভব করছি। আর তাই ব্যাথা সারাতেই এই দাওয়াই দিয়েছি।

—নিলা: আমারও মনে হয়েছিল তোর মত, কিন্তু কিছুই করার ছিল না আমার। কারণ আমি হেরে যাব তোর কাছে।

—অসিম: সামান্য হেরে যাওয়ার জন্য আমাদের ছোটকালের ভালোবাসা হারিয়ে ফেলছিলাম। কিন্তু তুই বিশ্বাস কর আমি প্রতি মহুর্তে তোর কথা মনে পড়ে, তোকে হারিয়ে আমি অনেক কষ্টে ছিলাম।

—নিলা: আমি জানি, তুই আমায় কতটা ভালোবাসিস। এমন কি আমার জন্য তোর জীবন কে মদের বোতলে আটক করতে চেয়েছিলি তাই না।

—অসিম: হ্যাঁ, শুধুই তোর জন্য।

নিলা— আচ্ছা এতক্ষন ধরে বকবক করছি বাড়ির ভিতরে আমায় নিবি না।

—অসিম: হ্যাঁ, সিয়র সিয়র।

নিলা তখন উঠতে যাবে এমন সময় অসিম পা দিয়ে ফেলে দেয়। তখন নিলা বলে এটা কি করলি।

—অসিম: আটকে দিলাম তোকে।

—নিলা: এভাবে কেউ আটকায়।

—অসিম: হ্যাঁ, এটা আমার স্টাইল আমি এভাবেই তোকে আটকে রাখব।

এই বলে নিলা ও অসিম গলা জড়াজড়ি করে অসিমের বাড়ির ভিতরে চলে গেলো।

চলবে

Kajal Paul is one of the Co-Founder and writer at BongDunia. He has previously worked with some publishers and also with some organizations. He has completed Graduation on Political Science from Calcutta University and also has experience in News Media Industry.

Leave A Reply