থমথমপুর – এন.কে.মণ্ডল (তৃতীয় পর্ব)
এন.কে.মণ্ডলের পরিচিতিঃ- কবি এন.কে.মণ্ডল একজন ভারতীয় বাঙ্গালী কবি ও লেখক। তিনি পশ্চিম্বঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার প্রতাপপুর গ্রামে ৫ ই মে ১৯৯৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন।তিনি রুকুনপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এইচ এস সি পাশ করেন। স্থানীয় হাজী এ.কে. খান কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন
তখন স্বপ্না বলে, “রিয়া তুমি ফাহিমের সঙ্গে আমার সম্পর্ক করাতে পারলে, তুমি যা চাইবে তাই পাবে”।
-“ঠিক আছে আমরা আগে পৌছাই, তারপর হবে। কিন্তু জানো স্বপ্না, তোমাকে প্রথম দেখাতেই ফাহিম ফিদা হয়ে গেছে”।
– “ঠিক আছে পরে হবে, এখন ঘুমানো যাক”।
– “তাহলে ঘুমানো যাক”।
পরের দিন সকালে রিয়া কে ডাকতে আসছে ফাহিম স্বপ্নার রুমে । আর সেই সময়েই স্বপ্না ওয়াসরুমে যাবে। আর সামনে ব্যাক আছে না দেখেই দুজন দুজনে বড়সড় ধাক্কা লাগল। কিন্তু কারো কোনো কিছুই হয় নি। একটু চোখে চোখে কথা হল। ফাহিম কিছু না বলেই ফাহিমের ঘরে চলে গেলো মনে মনে হাসতে হাসতে । সবাই নাস্তার টেবিলে এসে নাস্তা খেতে খেতে স্বপ্না পা দিয়ে ফাহিমের পায়ে চিমটি কেটে দিচ্ছে আর চোখে চোখে কথা হচ্ছে। খাওয়া দাওয়া শেষে বাসে উঠে গিয়ে বসল সবাই। স্বপ্না ফাহিমের একেবারে পাশে বসল পিছনের সিটের দিকে। কিছুটা যেতে না যেতেই হাতখানা চেপে ধরল স্বপ্না। আর ফাহিমের শরীর গরমের বদলে ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
একটু ঘাবড়ে গিয়ে স্বপ্না বলল, “হাত ছাড়ো ছাড়ো, একদিনের পরিচয়ে এতো বাড়াবাড়ি না করাই ভালো”। এভাবে তারা নানা ধরনের গল্প করতে করতে অবশেষে তারা পৌছালো থমথমপুর। বাস স্টান্ডে নামতেই সুমন বলে উঠল, “সত্যিই তো। মাসির বাড়ির এলাকাটা সুন্দর মনে হচ্ছে”।
-“ওহ তাই নাকি। হ্যাঁ তোমাদের এলাকাটি খুব সুন্দর মনে হচ্ছে। এলাকার কিছুই দেখনি, বিকেলে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাব। এখন চলো”।
মাসি কে অগ্রিম বলা ছিল, তাই ফাহিমদের নিতে এসেছে তার মেসো । মেসো এসে দেখে তো অবাক কান্ড ।ভাইয়া আর ভাতিজার সঙ্গে দারুণ খোশমেজাজে আছে। ফাহিম বলল আসসালামু আলাইকুম মেসো। মেসো সালামের উত্তর দিয়ে বলল, কি ব্যপার দাদা ! তুমি ওদের সঙ্গে ?
– “হ্যাঁ রে আলাপ হয়েছে রেলে”।
– “ওহ ঠিক আছে, তোমার কি গাড়ি আসবে ? না একগাড়িতেই যাবে ?”
– “না আমার গাড়ি চলে এসেছে, মিনিট খানেক লাগবে বলেছে ড্রাইভার”।
– “ঠিক আছে, তাহলে একসঙ্গেই যাওয়া যাবে”।
কিছুক্ষণ পরে গাড়ি এসে পৌছায় এবং তারা বাড়ি এসে নামে। স্বপ্নাদেরও বাড়ি কাছেই, একটি বাড়ির পরের বাড়ি। যেতে না যেতেই মাসি কি আদর যত্ন অগ্রিম। সব আপন আপন ফেশ হয়ে আসল ডাইনিং টেবিলে। মাসি সাজিয়েছে নানা ধরনের খাবার । দেখেই মাথা ঘুরে যাবে এতো আয়োজন। সবাই তো বিশাল আনন্দ । নতুন জায়গা নতুন পরিবেশ, তার সঙ্গে মাসি মেসোর সুন্দর ব্যাবহার দেখেই মুগ্ধ। ফাহিম সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল । মাসি বলল, “যাও বাবারা তোমরা অনেকদূর থেকে এসেছো বিশ্রাম নাও”। সন্তু, ফাহিম, সুমন একঘরে চলে গেলো। আর মাসি রিয়া, নয়নাকে আরেকটি ঘর দেখিয়ে দিলো । “তোমরা বিশ্রাম করো, আর কিছু দরকার পড়লে আমাকে জানাতে ভুলবে না কিন্তু”।
-“ ঠিক আছে মাসি”।
মাসি চলে যাওয়ার পর। রিয়া নয়না কে বলে, “সত্যি মাসি আর মেসো কত ভালো ! সবদিক খেয়াল করছে”।
বিকেল গড়াতে না করাতেই স্বপ্না হাজির ছোটো কাকিমা তথা ফাহিমের মাসির বাড়ি। এসেই বলল, “কাকিমা কাকিমা কেমন আছো?”
-“আমি ভালো আছি, তুই কেমন আছিস মা? বেঙ্গল থেকে কখন ফিরলি?”
– “এই তো দশটার সময়”।
স্বপ্নার কাকি বলে, “স্বপ্না তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে চল দেখাই” ।
ফাহিম, রিয়া, নয়না, সন্তুকে ডাক দেয় এবং পরিচয় করিয়ে দেয়। পরে রিয়া বলে, “মাসি ওর সঙ্গে অনেক আগেই পরিচয় হয়েছে। আর স্বপ্না তো কিসের জন্য এসেছে জানো মাসি?”
– “কিসের জন্য রে মা?”
স্বপ্না বলল, “এই উল্টো পাল্টা কথা বললে মারামারি হয়ে যাবে কিন্তু”।
– “তোদের ঝামেলা তোরা সামলা । আমি চললুম” বলে মাসি চলে গেলো।
স্বপ্না বলে, “রিয়া তুমি কিন্তু বড্ড বাড়াবাড়ি করছ”।
– “ঠিক আছে, বাড়াবাড়ি করব না । আমাদের রুমে চল”।
– “না না একদম সময় নেই । তোমাদেরকে ঘুরে ঘুরে দেখানোর কথা আছে না । চল চল এক্ষুনি । বিকেল তো হয়ে এসেছে”।
সন্তু বলে, “ঠিকই তো, আমাদের আসল কাজ হল বেড়ানো । তাই দেরি না করে চল”।
নয়না বলে, “এক্ষুনি নয়, বিকেলের পরে যাব । আর তাছাড়া আমরা তো এখানে কয়েকদিন থাকছি তাই না। দেখার জন্যই অনেক সময় আছে”।
– “ঠিক আছে আমি চলে যাচ্ছি । আমি আর আসব না তোমাদের কাছে। আমার কথায় যখন গুরুত্ব নেই” ।
নয়না বলল, “ঠিক আছে, ঠিক আছে চল”।
এই বলে সবাই বেরিয়ে পড়ে মেসোর ব্যাক্তিগত গাড়ি নিয়ে। স্বপ্না বলল, “তোমাদের প্রথমে নিয়ে যাব থমথমপুরের নায়েবের বাড়ি। ওখানে যেতে হলে একটু সমস্যা আছে । অনেক বন এবং একটি পাহাড় পার হতে হবে। অবশ্য ওখানে গাড়িতেই যাওয়া যাবে। হাটার কোনো দরকার নেই”।
প্রথমে বন পেরিয়ে পাহাড় পড়ল। পাহাড় দেখে সবাই গাড়ি থামাতে বলল।