থমথমপুর
– এন.কে.মণ্ডল
এন.কে.মণ্ডলের পরিচিতিঃ- কবি এন.কে.মণ্ডল একজন ভারতীয় বাঙ্গালী কবি ও লেখক। তিনি পশ্চিম্বঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার প্রতাপপুর গ্রামে ৫ ই মে ১৯৯৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন।তিনি রুকুনপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এইচ এস সি পাশ করেন। স্থানীয় হাজী এ.কে. খান কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন
(দ্বিতীয় পর্ব)
(অবশ্য চোখে ন্যাবা হয় না) । আরে দূর ন্যাবা হবে কেন ? দেখার জিনিস তাই দেখছি”।
কিছুক্ষণ পরে রাত্রি সাতটা বাজবে সবাই ঘুমিয়ে যাচ্ছে । ফাহিমও ঘুমিয়ে গেলো আর কেউ এখন জেগে নেই । অনেক্ক্ষণ পরে হঠাৎ সাড়া পেল ফাহিম । যে মেয়েটি ফাহিমের ঘাড়ে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে ফাহিম তাকে ডেকে তুললো । “ম্যাডাম আপনি এটা কি করছেন?”
মেয়েটি দু একবার সরি বলল । ফাহিম বলল, “আই এয়াম ফাহিম, স্টুডেন্ট অফ এইচ এস সি” ।
মেয়েটি বলল, “আমি স্বপ্না সিকদার, আমি ইলেভেনের ছাত্রী”।
-“ওহ তাই নাকি আমিও ইলেভেনে পড়ি”।
-“ওহ তাই নাকি, একেবারে কাকতালীয় ব্যাপার । তো কোথায় যাবেন ? আমি একা নই, আমার চারজন বন্ধু মিলে মাসির বাড়ি থমথমপুর বেড়াতে যাচ্ছি”।
স্বপ্না একটু অবাক হয়ে বলল, “ওহ তাই নাকি ! ওখানে তো আমরাও যাচ্ছি”।
ফাহিম- “আপনিও বেড়াতে যাচ্ছেন?”
স্বপ্না- “না না ওখানে আমাদের বাড়ি”।
ফাহিম- “তাহলে ভালোই হলো, একসঙ্গে যাওয়া যাবে”।
ফাহিম মনে মনে খুব আনন্দিত । কারণ একসঙ্গে বসে যেতে পারবে। কিন্তু কলকাতায় যদি অন্যকিছুতে যায় তাহলে তো মুস্কিল হবে। যাই হোক কিসে যাবে জিজ্ঞেস করা যাক।
ফাহিম: “আচ্ছা আপনি কলকাতা থেকে কিসে যাবেন ?”
স্বপ্না: “আমরা বাসে যাব”।
-“যাক বাঁচা গেলো”।
স্বপ্না বলল, “কেন?”
-“ না, মানে একসঙ্গে যাওয়া যাবে তাই”।
-“ ওহ !তা যাওয়া যাবে”।
ফাহিম এবারেই বুকে সাহস রেখে বলেই ফেলল যে, “স”ত্যিই আপনি অনেক অনেক সুন্দর” ।
মেয়েটি বলল, “কি যে বলেন, আপনিও কিন্তু অনেক সুন্দর”।
ফাহিম বলল, “যদি আমাদের ওদিকে বাড়ি হত আপনার, আমি আপনাকে প্রেম অবশ্যই অবশ্য করতাম। আপনি প্রথম দেখাতেই আমার মন কেড়ে নিয়েছেন”।
স্বপ্না- “কি যে বলছেন, ওসব বাদ দেন”।
এমন সময় স্বপ্নার বাবা ঘুম থেকে জেগে উঠেবলল, “আরে মা স্বপ্না, তুই কার সঙ্গে কথা বলছিস ? ঘুমাচ্ছিস না?”
-“ না, বাবা ঘুম আসছে না। আর এটা আমার নতুন বন্ধু, খুব কিউট”।
স্বপ্নার বাবা- “তো বাবা কোথায় যাবে?” (স্বপ্নার বাবা কিন্তু কিছু মনে করে নি মেয়ের সঙ্গে কথা বলার জন্য বরং ফাহিম কে বাবা বলে সম্মোধন করেছেন।)
ফাহিন- “আজ্ঞে, আঙ্কেল আমি আর আমার বন্ধুরা মিলে থমথমপুর বেড়াতে যাব”।
স্বপ্নার বাবা- “তো কোথায় থাকবে ? হোটেলে ? না কেউ আছে ওখানে?”
ফাহিম- না আঙ্কেল, ওখানে আমার মেসোর বাড়ি। আমার মেসোকে সবাই চেনে থমথমপুরের ওসি ইদ্রিশ আলি”।
স্বপ্নার বাবা- “আরে কি অদ্ভূত ! ইদ্রিস তো আমার চাচাতো ভাই”।
ফাহিম- “বাহ !কাকতালীয় ব্যাপার তো বারবার ঘটছে”।
স্বপ্নার বাবা- “তো তোমার বাবা আই পি এস, তাই না? তোমাদের বাড়িতে তো গিয়েছিলাম ইদ্রিসের বিয়েতে” ।
ফাহিম- “তাই না কি ? (আমি তখন ছোট্ট ছিলাম)
স্বপ্না-“বিশাল সু খবর বাবা”।
স্বপ্নার বাবা- “হ্যাঁ মা, এইভাবেই পরিচিত হয়ে থাকে। ঠিক আছে, তোমরা কিছুক্ষণ গল্প করে ঘুমিয়ে পড়ো, কেমন ?”
স্বপ্না-“ ঠিক আছে বাবা” ।
স্বপ্না তো বিশাল খুশি ।কারণ ফাহিমকে তার ভীষণ পছন্দ। প্রথম প্রেম মনে হচ্ছে ফাহিমের সঙ্গেই হবে মনে হয় । কিছুক্ষণ গল্প করার পর দুজনেই ঘুমিয়ে গেলো ।আর ফাহিমের বন্ধুরা তো ঘুমিয়েই কাদা । তারা তাদের ঘটনা কিছুই জানে না। অবশেষে ট্রেন পৌছাল শিয়ালদহ । সবাই তখন নেমে পরিচয় করাল ফাহিম তার বন্ধুদের সঙ্গে ।
-“খুব ভালো হলো সবার সঙ্গে আলাপ করে । এককাজ কর হোটেলে চল খাওয়া দাওয়া করতে হবে, তাহলে পরেরদিন সকালে রওনা দেওয়া যাবে” স্বপ্নার বাবা বলল ।
-“ঠিক আছে আঙ্কেল”
রিয়া ফাহিমের কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলল, “কি ব্যাপার রে?”
-“ উল্টো পাল্টা বকিস না”।
কিছুক্ষণ পরে স্বপ্নাকে রিয়া বলল, “কি ব্যাপার ? ফাহিম তো তোমাকে দেখেই মন গলে জল হয়ে গেছে । তোমাকেও দেখে মনে হচ্ছে যে কিছু একটা হচ্ছে”।
-“ রিয়া তুমি কি বকছো ? ও কি আমায় ভালোবাসবে, বল?”
-“ ওহ, তার মানে তুমি ডুবে ডুবে জল খেতে চাইছো”।
-“ কি যে বল ? খেতে চাইলেই সব পাওয়া যায় নাকি ?”
-“ আমি ওসব জানি না স্বপ্না, আমাকে যদি মিষ্টি খাওয়া্ তাহলে আমি চেষ্টা করে দেখতে পারি”।
-“ ঠিক আছে, খাওয়াব, খাওয়াব”।
– “ওহ! একঘন্টার মধ্যেই প্রেমে পড়ে গেলে তুমি?”
এমন সময় স্বপ্নার বাবা ডাকল, “তোমরা তাড়াতাড়ি এসো । খাওয়ার জন্য সবাই ওয়েট করছে” ।
খাওয়া দাওয়ার পর রিয়া আর স্বপ্না এক ঘরেই ঘুমাতে যায়।