থমথমপুর – এন.কে.মণ্ডল (চতুর্থ পর্ব)
এন.কে.মণ্ডলের পরিচিতিঃ- কবি এন.কে.মণ্ডল একজন ভারতীয় বাঙ্গালী কবি ও লেখক। তিনি পশ্চিম্বঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার প্রতাপপুর গ্রামে ৫ ই মে ১৯৯৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন।তিনি রুকুনপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এইচ এস সি পাশ করেন। স্থানীয় হাজী এ.কে. খান কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন
গাড়ি থামিয়ে পাহাড়ের নানান দৃশ্য ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকে।সেখানকার মনোরম পরিবেশ দেখে বলে, আগামীকাল এখানে পিকনিক করতে আসছি। স্বপ্না ফাহিমকে দারুণ ভাবে ফলো করে আছে, কখন তাকে নিয়ে গভীর বনে যাবে।
রিয়া বলল স্বপ্নাকে, “কি ব্যাপার, কবি চলছে”।
স্বপ্না বলল, “তোমার কি কথা ছিল ? কথা কি ভুলে গেছো ?
-“না না আমি কেন ভুলব ? আমার ঠিক মনে আছে । তুমি আগে চেষ্টা চালাও, তারপর আমি তো আছিই” ।এই বলে রিয়া চলে গেলো নয়নাদের কাছে।
স্বপ্না ফাহিমের কাছে যায় এবং বলে,
– “আচ্ছা ফাহিম আমাকে তোমার কেমন লাগে” ।
– “কি যে বল, তোমাকে তো বলেছি ট্রেনেই, আবার কেন ?”
স্বপ্না আরও একটু ঘনিষ্ঠ হয়ে বলল, “তাহলে আমায় একটু ভালোবাসা দাও। আমি যেদিন থেকে তোমায় দেখেছি, কথা বলেছি, সেদিন থেকেই আমার শরীরে নানান জ্বলাপুড়া করে চলেছে। আমায় একটু শান্ত করে দাও” ।
ফাহিম-“শোনো বাজে কথা বল না। আমিও তোমাকে দেখার পর থেকে একটু মহুর্ত মাথা ঠান্ডা করতে রাখতে পারছি না। কখন তোমায় একটু জড়িয়ে ধরি ।বিশ্বাস কর, আমি কিংবা আমার কোনো বন্ধু প্রেমে পড়েনি। কিন্তু তোমাকে দেখার পর আমি কুল থাকতে পারছি না । তবে কি, এটাই ভালোবাসা ? না অন্যকিছু ? না, এটা ভালোবাসা হবে মনে হচ্ছে” ।
এমন সময় সন্তু ডাক দিয়ে বলে সবাইকে, “যে শুধু পাহাড় দেখলে হবে ? আরো জায়গায় যেতে তো হবে, নাকি ?”
-“ঠিক আছে, চল” বলল সুমন।
এবার গাড়ি ছাড়ল জমিদারের নায়েবের বাড়ির দিকে। যতই যায়, ততই মন মুগ্ধ হয়ে যায়। রাস্তার চারিদিকে সুন্দর সুন্দর গাছগাছালিতে ভরপুর । ফুলের গাছ দিয়ে সাজানো আছে চারিদিক, মনে হয় সুন্দর স্বর্গের রাজধানী । শেষমেশ নায়েবের প্রধান ফটকে চলে এল সবাই । অবশ্য প্রথমে দেখা গেল একটি ছোটো অফিস আর টিকিট কাউন্টার । টিকিট কেটে প্রবেশ করল । যত যায় ততই মুগ্ধ হয় চারিদিকে মনোরম পরিবেশ দেখে । সবাই প্রবেশ করল একেবারে নায়েবের স্মৃতি সৌধ্য ঘরে । চারিদিক ঘুরে ঘুরে দেখছে সবাই ।হিন্দি ও ইংরেজি ভাষায় লেখা আছে তাঁর নানা কৃতিকলাপ ও নানান চরিত্রের কথা । সবকিছু জানার পরে ঘৃনা হল নায়েবের প্রতি ।সকলে মুগ্ধ হল প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে । আরও মুগ্ধ হল নায়েবের স্ত্রীর ন্যায় পরায়ণ দেখে। নায়েব চরিত্রে খারাপ হলেও স্ত্রী ন্যায় ও ধর্মপরায়ণ ছিলেন। যাইহোক, সেখানে সবকিছু দেখে সবাই চলে এল থমথমপুরের পার্কের ঘাটে । ঘাটে এসেই জল দেখা গেল । জল দেখে তো মন মুগ্ধতায় ভরে গেলো ।
সুমন ও নয়না বলল, “ফাহিম এখানে আজ স্নান করতে হবে”।
রিয়াও বলে, “অবশ্যই, একটা ভালো কথা বলেছিস । আমিও স্নান করতে চাই”।
শেষমেশ সবার টানাটানিতে জলে নামতেই হল । স্বপ্না বলল, “নামব তো বলছে সবাই, সঙ্গে কি জামা কাপড় এনেছো ? না ওই পোষাকেই স্নান করবে ?”
নয়না বলল, “ঠিকই তো ! আমরা আগেভাগে জলে নামতে চলেছি, কিন্তু মাথায় জামা কাপড়ের কথা একবারেও আসেনি । তাহলে কি হবে ?”
রিয়া বলল, “তাইতো এখন কি হবে ?”
সুমন বলল, “আজ না হয়, আগামীকাল হবে । অতো চিন্তার কিছু নেই, চল”।
এবার মিউজিয়ামের দিকে হাটতে হাটতে শেষমেশ মিউজিয়ামে চলে আসলো । সবাই দেখতে থাকল থমথমপুরের নানান পুরনো সরঞ্জাম ও জমিদার বাড়ির নানা ধরনের জিনিস। মিউজিয়ামে কেবলমাত্র থমথমপুরের ঐতিহাসিক জিনিস ছাড়া কিছুই দেখা যাবে না। মজার মজার জিনিস দেখে ফেরার পালা । সঁন্ধা হয়ে গেছে । রাত্রি হয়ে গেলে মাসি বকা দিবে।তাই দেরি না করেই বাড়ির দিকে রওনা দিতে চাইছে ফাহিম।কিন্তু রিয়া,নয়না,সন্তু,সুমন কেউ বাড়ি যেতে ইচ্ছুক নয়।তবুও বাড়ি ফেরার পথে এগোতে থাকল।
হঠাৎ স্বপ্না বলল, “নাও, নাও । আবার আগামীকাল হবে । আর তাছাড়া থমথমপুর পুরো দেখতে হলে কমপক্ষে দশদিন সময় লাগবে।এখনো কিছুই দেখতে পারোনি । দশভাগের একভাগ দেখতে পারোনি। যাইহোক এখন চল”।
যেতে যেতে নানান গল্পে কেটে গেল সময়।বাড়ি ফিরতেই মেসো ও মাসি কিছুটা ঝাড়ি দিল তা হজম করে খাওয়ার টেবিলে এসে নাওয়া খাওয়া শেষ করে আপন আপন রুমে চলে গেলো । এই প্রথম রাত্রি করে বাড়ি ফেরা হচ্ছে। নিজের বাড়ি হলে কবেই মার খেতে হত।যাই হোক স্বপ্না ফোন দিয়েছে রাত্রি নয়টা কি সাড়ে নয়টায় । অবশ্য ফোন নাম্বার নেওয়া দেওয়া হয়েছে নায়েবের বাড়ি যাওয়ার সময় । ফোনটা বেজেই যাচ্ছে অনেক্ক্ষণ । পরে ফোনটা রিসিভ করল।
-“হেলো, কে, কোথায় থেকে করছেন?”
-“কে মানে ? আমি স্বপ্না”।
-“ওহ তাই বল। ফোনটা ধরতে এতক্ষন লাগে” ।
-“না, মানে অপরিচিত নাম্বার তো, তাই”।
-“ও, তুমি কি অপরিচিতদের ফোন রিসিভ করতে হয় তা জানো ন্ নাকি?”
-“হ্যাঁ জানি। যাইহোক তোমার কাছে কি, কেউ আছে?”