বং দুনিয়া ওয়েব ডেস্কঃ  আজ আধুনিক জীবন যাত্রায় মানুষের একটা অতি কমন সমস্যার নাম উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেশার । আগেরকার দিনে বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের শরীরে থাবা বসাত রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেশার  । বর্তমান সময়ে বেশ পরিচিত এই সমস্যা, কারন  এখন অনেক কম বয়সী মানুষও উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন । সমীক্ষা করে দেখা গেছে,  আমেরিকায় প্রতি তিন জনের মধ্যে একজন উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভোগেন । শুধুমাত্র উচ্চ রক্তচাপের কারণে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক থেকে শুরু করে কিডনি ড্যামেজের মত ঘটনা ঘটে । কর্মব্যস্ততা, অতিরিক্ত উদ্বেগ, খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ না করা প্রভৃতি কারণে অল্প বয়সেই উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দেয় অনেকের শরীরেই । নানা বয়সের বহু মানুষ এই সমস্যার শিকার। আজকাল এই সমস্যা ধীরে ধীরে বেড়েই চলেছে একটা নির্দিষ্ট গতিতে ।

উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেশার (High Blood Pressure)  আসলে কি ? 

আমরা সকলে জানি মানুষের শরীরে রক্তের কাজ কি সে বিষয়ে ।অসংখ্য রক্তনালী রয়েছে আমাদের সমস্ত শরীরে । এই রক্তবাহী নালী দিয়ে রক্ত সারা শরীরে চলাচল করে । রক্তকে শরীরের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছানোর জন্য হৃৎপিণ্ড প্রতিনিয়ত সংকুচিত ও প্রসারিত হয় । সংকোচন ও প্রসারণের সময় রক্তনালির মধ্য দিয়ে রক্ত যাওয়ার সময় শিরার ভেতরে এক প্রকার চাপ প্রয়োগ করে, যাকে আমরা রক্তচাপ বলি। যখন এই রক্তচাপ ১৪০/৯০-এর বেশী  হয় তখন তাকে উচ্চ রক্তচাপ হিসেবে ধরা হয় । সাধারণত উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বেশীরভাগ মানুষ ওষুধ খান।কিন্তু জেনে রাখা ভাল ওষুধ ছাড়াও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কিছু প্রাকৃতিক প্রতিকার আছে । এই সমস্ত প্রতিকারের মধ্যে একটা উপাদান  রসুন  ।আজ এখানে আলোচনা করব রসুনে কি এমন আছে যাতে উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেশার (High Blood Pressure) কমাতে সাহায্য করে এবং ঘরোয়া ভাবে রসুন কীভাবে ব্যাবহার করলে সবচেয়ে বেশী উপকার পাওয়া যাবে ।

‘ইউরোপিয়ান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন’-এর মতে, রসুনই পালন করতে পারে উচ্চ রক্ত চাপ কমাতে মুল্যবান ভূমিকা । রসুনের অন্যতম উপাদান হল সালফারে পূর্ণ অ্যালিসিন ও ডায়ালিল ডিসালফাইড। এই দুই উপাদানই উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ করে।এছাড়া  রসুনে অ্যালিসিন নামক উপাদান রয়েছে যা রক্তচাপ হ্রাস করতে সাহায্য করে । রসুনের উপস্থিত সালফার রক্তনালিতে নাইট্রিক অক্সাইড উৎপন্ন করে, এতে রক্তনালির স্থিতিস্থাপকতা বাড়ে ও রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। উচ্চরক্ত চাপ নিয়ে ভীষণ দুঃশ্চিন্তায় থাকতে থাকতে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে যাচ্ছে। কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না? ওষুধের বাইরে সহজ সমাধান রসুন। নিয়মিত রসুন খেলেই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে । কার্ডিওভাস্কুলার ডিজঅর্ডারের ক্ষেত্রেও এই রসুন অত্যন্ত উপকারী। এর অ্যালিসিন উচ্চ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ করে তা স্বাভাবিক করে।
রসুন বিষয়ে ‘অ্যানালস অব ফার্মাকোলোথেরাপি’-র এক সমীক্ষায় উঠে এসেছিল এর উপকারী দিকের কথা। সেখানেও দেখা যায়, উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে এমন মানুষদের ডায়েটে রসুন যোগ করায় হাতেনাতে সুফল মেলে। তবে রান্নায় দেয়া রসুনের চেয়ে কাঁচা রসুনে উপকার বেশি বলেই মত গবেষকদের। ‘ইউরোপিয়ান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন’ তাদের সমীক্ষায় দেখেছে, যারা প্রতি দিন ৪৫০ থেকে ৯৫০ মিলিগ্রাম রসুন খাচ্ছেন, তাদের রক্তচাপ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই যাদের উচ্চ রক্তচাপ নেই, অথচ জীবনযাপনে প্রচুর স্ট্রেস, তাঁরাও এই অসুখ ঠেকাতে প্রতিদিন খাবার তালিকায় রাখতেই পারেন   কয়েক কোয়া রসুন। তবে এটা মাথায় রাখতে হবে, বিশেষ কোনও অ্যালার্জি বা কোনও ক্রনিক অসুখ থাকলে এবং সেজন্য ওষুধ খেলে রসুন খাওয়ার আগে একবার চিকিৎসকের পরামর্শ  নিয়ে নেওয়া ভাল ।

কীভাবে রসুন নিজেদের খাবারের তালিকায় ব্যাবহার করতে হবে সে বিষয়ে একটু জেনে নিই ।

মোটামুটিভাবে  ছয় প্রকার উপায়ে আমরা রসুন খেতে পারি ।

কাঁচা রসুন (Raw garlic): 

কাঁচা রসুনে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন থাকে । প্রতিদিন কাঁচা রসুন খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন করা যায় । সমীক্ষায় দেখা গেছে, কাঁচা রসুন চিবিয়ে খেলে ১-২ ঘণ্টার মধ্যে তা রক্তে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয় । কিন্তু কতটা পরিমাণে খাওয়া উচিৎ ?  প্রতিদিন ১-১.৫ গ্রাম রসুন খেলে রক্তচাপ অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব ।সুতরাং ২/৩ কোয়া রসুন গরম ভাতে বা কাঁচা চিবিয়ে খেতে পারেন ।

রসুনের গুঁড়া(Garlic powder):

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রসুনের গুঁড়া একটি প্রাকৃতিক ওষুধ বলা যেতে পারে । রসুন শুকিয়ে গুঁড়ো করে রাখতে পারেন । একটু জলে গুলে নিয়ে খেলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে ।

রান্না করা রসুন(Cooked garlic): 

রান্নায় রসুন একটা আলাদা স্বাদের মাত্রা এনে দেয় । তবে রান্না করার সময় একটু খেয়াল রাখতে হবে,  রসুন রান্না করার পূর্বে পিষে নিয়ে একটা খোলা জায়গায় ১০ মিনিট রেখে দিলে এর ভেতর বিদ্যমান উপাদানগুলো রক্তে ছড়াতে সহায়তা করে । না হলে সরাসরি রান্নায় এরা কর্মক্ষমতা  অনেকটাই কমে যায় ।

রসুন কুচি(Garlic Clove):

আমরা সালাদ খাই । এবার সালাদ তৈরি করার সময় সালাদে রসুন কুচি কুচি করে কেটে দিন । কুচি কুচি করে কাটা রসুন সালাদের সাথে মিশিয়ে খেলে দারুন উপকার পাওয়া যায় । সালাদের সাথে রসুন আপনার প্রতিদিনের রকমারি খাবারের একটি উপাদান হতে পারে।

রসুনের তেল (Garlic Oil):

কাঁচা রসুন বা রান্না করে রসুন খাওয়ার কথা তো শুনলেন । এবার রসুন তেল কীভাবে ব্যাবহার করবেন ?  ভাজা রসুনের কয়েকটি টুকরা সামান্য গরম অলিভ অয়েলে ৩-৫ মিনিট ভেজে তা পাউরুটি দিয়ে খেলে খুব ভালো উপকার পাওয়া যায় ।

রসুনের চা (Garlic Tea):

চা তো আমরা অনেক ভাবেই খাই । কিন্তু রসুন দিয়ে চা ? হ্যাঁ অবাক হলেও সত্যি রসুন দিয়ে চা খাওয়া যায় । কীভাবে ?  চায়ের সাথে মধু মিশিয়ে তার সাথে সামান্য রসুন দিয়ে প্রতিদিন খেলে উচ্চ রক্তচাপ থেকে দূরে থাকা যায় ।

নিত্যদিনের খাদ্যাভাসে আমরা রসুনের মোটামুটি ব্যবহার তো জানলাম । কিন্তু সত্যি কথা বলতে কি, রসুন খেলে অনেক সময় কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে । সাধারণত কাঁচা রসুনে একটা তীব্র ঝাঁঝাল গন্ধ থাকে । কাঁচা রসুন খেলে মুখে সেই গন্ধ অনেক সময় থাকবে । এছাড়া  কাঁচা রসুন হজমে বাধা সৃষ্টি করতে পারে এবং খালি পেটে খেলে পেট ফাঁপা ও এসিডিটি হতে পারে ।  অনেকের রসুনে এলার্জি থাকে । সে ক্ষেত্রে একটা এলার্জি টেস্ট করিয়ে নেওয়া ভাল ।  যদি রসুনে এলার্জি থেকে থাকে তাহলে বমি বমি ভাব, বমি, মাথা ব্যাথা, এক্সিমা এবং নাক ডাকার মতো সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে ।

Kajal Paul is one of the Co-Founder and writer at BongDunia. He has previously worked with some publishers and also with some organizations. He has completed Graduation on Political Science from Calcutta University and also has experience in News Media Industry.

Leave A Reply