কোষ্টকাঠিন্য থেকে মুক্তির উপায়
কোষ্ঠকাঠিন্য শরীরের একটি অস্বাভাবিক অবস্থা। যখন কোন ব্যক্তি সহজে মলত্যাগ করতে পারেন না। আবার দুই একদিন পর পর পরপর মলত্যাগের বেগ হওয়া এবং শুষ্ক ও কঠিন মল নিষ্কাশন কোষ্ঠকাঠিন্য বলে পরিচিত।
মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, হাইপোথাইরয়েডিজম, অন্ত্রের কোনো গুরুতর সমস্যা, যেমন: টিউমার বা বাধার কারণে এমন হয়। বিষণ্নতা ও মাদকসেবনের কারণেও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
কোষ্টকাঠিন্য এমন একটি সমস্যা যে সমস্যায় সকলের বয়সের অধিকাংশ মানুষই ভূগে থাকে। অনিয়ন্ত্রিত খাদ্য গ্রহণ, অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন, ধূমপান, অনিদ্রা, কায়িক শ্রমের অভাব, হজমের সমস্যার কারনে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় কোষ্ঠকাঠিন্য তেমন ভয়ানক সমস্যা নয় তবে বড় শারীরিক সমস্যা হতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্য হলে কৃত্রিম ঔষধের থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রকৃতিক ব্যবস্থায় কোষ্টকাঠিন্য দূর করার চেষ্টা করা ভালো-
কোষ্টকাঠিন্য থেকে মুক্তির উপায় এর জন্য যেসকল খাবার গ্রহণ করা যেতে পারে-
নিয়মিত আপেল খাওয়া- প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার এক ঘণ্টা আগে একটি খোসাসহ পুরো আপেল খাওয়া উচিত। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক কাপ কুসুম গরম জল পান করতে হবে। এটা হজমে সহায়তা করবে এবং কোষ্ঠবদ্ধতা দূর করবে।
এলাচ খাওয়া- বড় একটি সাদা এলাচ এক কাপ গরম দুধে ভিজিয়ে রাখতে হবে সারা রাত। সকালবেলা এই এলাচটি থেঁতো করে দুধসহ খেয়ে ফল মিলবে। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাটি যদি ভয়াবহ রকমের বেশি হয় তাহলে সকাল ও রাতে একইভাবে দুধসহ এলাচ খেয়ে ফল মিলবে হাতেগরম। এলাচ খাওয়া হল কোষ্টকাঠিন্য থেকে মুক্তির উপায় এর অন্যতম টোটকা ।
মধু ও লেবুর রস- এই নিয়মটি সহজ আবার একটু কষ্টসাধ্যও বটে! রাতের শোবার আগে এক গ্লাস গরম জলে এক চা চামচ মধু ও ১ চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে পান করা যেতে পারে৷ ঘুমতে হবে বাঁ-কাত হয়ে৷সকালে ঘুম থেকে উঠে চিত হয়ে শুতে হবে৷
আশযুক্ত খাবার গ্রহণ- নিয়মিত আশযুক্ত খাবার বিশেষ করে শাক-সবজি খেতে হবে তাহলে কোষ্টকাঠিন্য থেকে মুক্তির উপায় এর দিকে তাড়াতাড়ি অগ্রসর হওয়া যাবে।
ইসবগুল বা ভূসি- ইসবগুল বা ভূসি ১ গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে চিনি বা গুড়সহ নিয়মিত খালি পেটে সেবন করলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার পদ্ধতি গ্রামে-গঞ্জে দীর্ঘকাল যাবৎ চালু আাছে।
মিষ্টি বা পাকা বরই- মিষ্টি পাকা বরই চটকে খোসা ও বীজ ফেলে অথবা ছেঁকে অল্প পানি মিশিয়ে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের উপশম হয়।
বেলের সরবত- বেলের সরবতও উপকারী। ৩০-৩৫ গ্রাম পাকা বেলের শাঁস প্রতিবারে ১ গ্লাস পানিতে শরবত তৈরী করে দিনে ২ বার সেবন করতে হয়। এভাবে কমপক্ষে ৫-১০ দিন বেলের সরবাত পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
বুচকি দানা– বুচকি দানাও উপকারী। ২ গ্রাম পাতা চূর্ণ রাতে ঘুমানোর সময় গরম পানি অথবা দুধসহ সেবন করতে হবে। এটাও একটা কোষ্টকাঠিন্য থেকে মুক্তির উপায় এর পক্ষে খুবই উপযোগী।
কোষ্ঠকাঠিন্যয় যেসব খাবার এড়িয়ে চলতে হবে:
ব্যাথানাশক ওষুধ: যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য রয়েছে তারা ব্যথানাশক ওষধ এড়িয়ে চলতে হবে।
দুগ্ধজাত খাবার: দুধের তৈরি খাবার বিশেষ করে গরুর দুধ থেকে তৈরি ঘি, দধি এড়িয়ে যাওয়া ভালো। দুধে উচ্চ ল্যাকটোজ থাকে, যা কোষ্ঠকাঠিন্য তৈরি করে।
প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া: প্রক্রিয়াজাত জাত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।
কফি পান করা: কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় কফি খাওয়া উচিত নয়। ক্যাফেইন অন্ত্রের জন্য ক্ষতিকারক।
এছাড়া লাল মাংস, চিপস, ভাজাপোড়া খাবার, কফি, চকলেট, কেক, পেস্ট্রি ইত্যাদি এড়িয়ে চলা ভালো। যেসব খাবার তৈরিতে প্রচুর চিনি ব্যবহৃত হয়, সেসব খাবারেও কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। কাঁচকলায়ও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। এছাড়া আয়রন ট্যাবলেট খেলেও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে বাঁচার জন্য ব্যায়াম একটি বড় কৌশল। নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে রেহাই লাভের উদ্দেশ্যে অনেকে মল নরম করার ঔষুধ ব্যবহার করেন যেমন ল্যাক্সেটিভ। এছাড়া মলদ্বারের ভেতরে দেওয়ার ঔষুধ আছে। এসব ঔষধের দীর্ঘস্থায়ী ব্যবহারে স্বাভাবিকবাবে মলত্যাগের অভ্যাস নষ্ট হয়ে যেতে পারে। (কোষ্টকাঠিন্য থেকে মুক্তির উপায়)