জঙ্গলমহল যারা ভালবাসেন, তাদের জন্যই এই প্রতিবেদন।Sundarban Tour (Sunderban Tourism)
বনবিবি, দক্ষিণ রায়, ম্যানগ্রোভ, সুন্দরী, গরান,হেতাল বা লবণাক্ত খাড়ি ইত্যাদির যেকোনো একটি নাম মনের কোণে উঁকি দিলে যে নামটি মনের ক্যানভাসে ভেসে ওঠে, সেটি হলো সুন্দরবন।
সুন্দরবন বর্তমানে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ স্থান’গুলির মধ্যে পড়ে। পৃথিবীর সবথেকে বড়ো ব-দ্বীপ এই সুন্দরবন’কে UNESCO ১৯৮৭ সালে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে।
সুন্দরবনের বেশিরভাগ অংশ আকমাদের প্রতিবেশী বাংলাদেশের মধ্যে পড়ে। ভারতের ভূখণ্ডে প্রায় ৫,০০০ বর্গ কিলোমিটার অঞ্চল জুড়ে রয়েছে ম্যানগ্রোভ অরণ্যের এই সুবিশাল বাদাবন।
এখানে আপনি ভ্রমণের সময় পাবেন হরেক রকমের ম্যানগ্রোভ গাছের হাতছানি। একটু নজর তীক্ষ্ণ করলে চোখে পড়বে গাছে গাছে বিচিত্র পাখির আনাগোনা। আছে বক, শালিক, নানা প্রজাতির মাছরাঙা, নীলকণ্ঠ, শামুকখোল বা মোহনচূড়ার অপরূপ মিশেল।
আপনার আগ্রহ যদি একটু বেশী হয়ে ওঠে, তাহলে নেমে পড়ুন ‘দুলাকি’ গ্রামে। বিচিত্র পাখি দেখার নতুন ঠিকানা’র পাশাপাশি চারিদিকে সুদূর প্রসারিত সবুজ ধানক্ষেত আপনার মনে ছবি হয়ে উঠবে। তবে মনে রাখা ভালো, এখানে কিন্তু থাকার তেমন সুব্যবস্থা নেই, থাকতে হলে যেতে হবে ‘পাখিরালা’-তে।
ভ্রমণপদ্ধতি এবং দ্রষ্টব্য স্থান
সুন্দরবনে প্রবেশ করতে গেলে অনুমতি লাগে। বনভ্রমণের অনুমতি পাওয়া যায় সজনেখালি‘র বনদপ্তর অফিস থেকে। এখান থেকে অনুমতি নিয়ে পরদিন একটু ভোরবেলায় একজন গাইডকে নিয়ে ভেসে পড়ুন লক্ষ্যে।
নদীর দু’পাশে পাবেন উঁচু উঁচু অনেক বাঁধ। নদীবাঁধের ওপারে ছোট ছোট গ্রামের জনজীবনের টুকরো ছবি। নদীর বাঁকে বাঁকে জঙ্গলে ঢুকে গিয়েছে অজস্র ছোট-বড়ো খাড়ি। এই সমস্ত খাড়ি’গুলিই এখানকার মৎস্যজীবী’দের জীবিকা’র উৎস। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এখানেই মাছ ধরতে আসেন পুরুষ ও মহিলা’রা।
কপাল যদি খুব ভালো থাকে তাহলে দর্শন পেতে পারেন বাদাবনের সম্রাট দক্ষিণ রায়ের।Sundarban Tour (Sunderban Tourism)
জালের মতো বিস্তৃত নদীপথে চলতে চলতে আপনি দেখা পাবেন নদী চরে সুনঘনা হরিণদল, বুনো শুয়োর, ব্রিশ্রামরত কুমির, কিংবা গোসাপের।
এখানে দ্রষ্টব্য স্থানগুলি’র নাম উল্লেখ করতে গেলে বলতে হয় সুধন্যখালি, নজর মিনার, নেতি ধোপানী, ঝিঙেখালি, কলসদ্বীপ, মরিচঝাঁপ, ভগবৎপুর কুমির প্রকল্প। নিরাপত্তার কারণে অধিকাংশ দ্বীপ তারের জাল দিয়ে ঘেরা। জঙ্গলের মধ্য দিয়ে খরস্রোতা নদীভ্রমণ এককথায় অনবদ্য অনুভূতি।
১) জামতলা সৈকত
জামতলা সৈকতে গেলে আপনার চোখে পড়তে পারে নদীর চরে ভ্রাম্যমান সুবর্ণ হরিণের দল, এমনকি কপাল ভালো থাকলে মাঝে মাঝে বাঘের দেখা ও মেলে এখানে। এছাড়া এখানে রয়েছে একটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, এই টাওয়ার থেকে সুন্দরবনের সৌন্দর্য্যের কিছুটা অংশে একসাথে চোখ বুলিয়ে নিলে মুগ্ধ হয়ে যেতে হবে।
২) মান্দারবাড়িয়া সৈকত
মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতে দাড়িয়ে আপনি দেখতে পারেন সূর্যোদয় বা সূর্যাস্তের মতো অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্য। এর কিছুটা অংশ আজও সাধারণের কাছে অনাবিষ্কৃত বলে মনে করা হয়।
৩) হীরন পয়েন্ট
হীরন পয়েন্ট সুন্দরবনের আরেকটি রোমাঞ্চপূর্ণ দর্শনীয় স্থান। কাঠের তৈরি সুন্দর রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে আপনার চোখে পড়বে হরিণ, বানর, গোসাপ ইত্যাদি। ভাগ্যে থাকলে, জঙ্গলের রাজা রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের দেখাও মিলতে পারে।
৪) দুবলার চর
সুন্দরবন ব-দ্বীপ এর মধ্যে বিরাজমান ছোট্ট একটি চর হচ্ছে দুবলার চর। এই চরের মধ্য দিয়ে আঁকা-বাঁকা পথে নদী গিয়ে মিশেছে বঙ্গোপসাগরে।
৫) কটকা বিচ
কটকা বিচ-এ বেলাভূমি জুড়ে লাল কাঁকড়ার বিপুল সমারোহ আপনাকে মুগ্ধ করে দেবে।
৬) সুধন্যখালী ওয়াচ টাওয়ার
সুন্দরবনস্থিত এই টাওয়ার থেকেই সাধারণত আজ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশী বাঘের দেখা মিলেছে। এছাড়াও আরও কিছু বন্য প্রাণী, যেমন চিতল হিরণ, কুমির প্রভৃতি জীবেরও দেখা পাওয়া যায়।
৭) সজেনখালী ওয়াচ টাওয়ার
বাদাবনের আরেকটি পর্যবেক্ষন বা পরিদর্শন টাওয়ার হলো সজনেখালী ওয়াচ টাওয়ার। এখানে রয়েছে প্রাগৈতিহাসিক একটি মিউজিয়াম। এছাড়া এখানকার আরও কিছু দর্শনীয় স্থান হলো বনবিবির মন্দির, কুমির উদ্যান প্রভৃতি।
কীভাবে যাওয়া যায়? Sundarban Tour (Sunderban Tourism)
কলকাতা থেকে :
মূল কলকাতা শহর থেকে সুন্দরবনের প্রবেশদ্বার ক্যানিং এর দূরত্ব মাত্র ৪৭ কি.মি.। যোগাযোগ ব্যবস্থা যথেষ্ট ভালো।
কলকাতা থেকে সুন্দরবন যাওয়া যায় ক্যানিং, ধামাখালি, সোনাখালি, রায়দিঘি, জামতলা, নামখানা বা হাসনাবাদ হয়ে। ধর্মতলা থেকে বাসে গোসাবা হয়েও চলে আসা যায়।
ঢাকা থেকে :
বাংলাদেশ থেকে সুন্দরবন প্রবেশের সবথেকে সহজ মাধ্যম হলো খুলনা।
ঢাকা থেকে সরাসরি বাস, ট্রেন অথবা লঞ্চের মাধ্যমে খুলনা যাওয়া যায়। সোহাগ, হানিফ ও ঈগল প্রভৃতি বিভিন্ন কোম্পানি থেকে নিয়মিত পরিবহন বাস’গুলি ভোর ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত খুলনা পর্যন্ত যাত্রা করে।
এছাড়া, ঢাকা থেকে সড়ক পথেও খুব সহজেই খুলনা পৌঁছানো সম্ভব। ঢাকা থেকে খুলনা যেতে সড়কপথে প্রায় ৮ ঘন্টা সময় লাগে।
খুলনা থেকে প্রাইভেট গাড়ি বা বাসে করে ৫০ কি.মি. দূরে মংলা‘য় গিয়ে সেখান থেকে প্রবেশ করতে হয় ম্যানগ্রোভ অরণ্যে ঘেরা সুন্দরবনে। মংলা ঘাট থেকে ট্রলার কিংবা লঞ্চ ভাড়া নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন, ২ ঘন্টার মধ্যে পৌঁছে যাবেন করমজল, এখান থেকেই শুরু সুন্দরবনের বাদাবন অঞ্চল। এমনকি, পর্যটকেরা ইচ্ছা করলে সকাল বেলা খুলনা থেকে মংলা হয়ে সুন্দরবন দেখে সন্ধ্যার মধ্যে আবার খুলনায় ফিরে আসতে পারেন।
কোথায় থাকবেন?
থাকার জায়গা বলতে, সাধারণত পর্যটকেরা এখানে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে লঞ্চ ভাড়া করে নিয়ে তাতেই রাত্রিযাপনের সুবিধা করে নেন।
তাছাড়াও, স্থানীয় কিছু গেস্ট হাউস এবং হলিডে হোমের সুবন্দবস্থ এখানে আছে। আপনি চাইলে সেখানেও থাকতে পারেন। আগে থেকে অনলাইনে বুকিং করার’ও সুবিধা আছে।Sundarban Tour (Sunderban Tourism)