বং দুনিয়া ওয়েব ডেস্কঃবাংলাদেশের টাকার ইতিহাস জানতে হলে প্রথমেই বলতে হবে, ১৯৪৭ সালের বঙ্গভঙ্গের পর, পূর্ব বাংলায় (পাকিস্তান অধিরাজ্যের অংশ) এবং ১৯৫৬ সালে পূর্ব বাংলার পুনঃনামকরণ করা হল পূর্ব পাকিস্তান; যেখানে পাকিস্তানি রুপিতেও “টাকা” শব্দটি মুদ্রিত ছিল। মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে মুদ্রা হিসেবে এই ভূখণ্ডে পাকিস্তানি রুপি প্রচলিত ছিল। ৪ঠা মার্চ ১৯৭২ সালে সরকারী মুদ্রা হিসেবে- “টাকা” -কে ঘোষণা করা হয়। সর্বত্র এর প্রচলন না হওয়া পর্যন্ত স্বাধীনতার বেশ কয়েক মাস পরেও পাকিস্তানি রুপির ব্যবহার ছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতীয়তাবাদীদের দ্বারা একটি বেসরকারী রীতি প্রচলিত ছিল, পাকিস্তানি রুপির নোটগুলিতে বাংলাতে “বাংলাদেশ” এবং ইংরেজিতে “Bangla Desh” রবার স্ট্যাম্প দিয়ে মুদ্রাঙ্কন করা। ৮ জুন ১৯৭১-এ পাকিস্তানি সরকার সমস্ত রবার স্ট্যাম্প-সহ নোটগুলিকে বেআইনি, অবৈধ এবং মূল্যহীন ঘোষণা করে
বাংলাদেশের টাকার ইতিহাস (History of Bangladeshi Taka)
কথায় কথায় অনেকেই বলেন- ‘টাকা ছাড়া দুনিয়া চলে না’। আসলেই তাই, এ একটা জিনিস না থাকলে রাস্তা-ঘাটে চলাফেরাও যেন মুশকিল। সংস্কৃত ‘টঙ্ক’ শব্দটিই বহু যুগ আগে মুদ্রা অর্থে বাংলার মানুষের কাছে হয়ে গেছে—টাকা। অনেকে তো এর অর্থও জানেন না; রৌপ্যমুদ্রা। দেশে টাকার বেশ কয়েক ধরনের নোট রয়েছে। ২, ৫, দশ, বিশ, পঞ্চাশ, একশ, পাঁচশ ও হাজার টাকার নোট। কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর প্রথম কাগজের নোটের প্রচলন করে । এই কাগজের নোটের ইতিহাস রয়েছে ।
বাংলাদেশ স্বাধীন হয় ১৯৭১ সালে ।স্বাধীন হবার পর ১৯৭২ সালের ৪ মার্চ প্রথম কাগজের টাকার প্রচলন হয় । বাংলাদেশের প্রথম নোট ছিল ১ টাকার । আর সেই নোট প্রচলনের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম নিজস্ব কাগুজে মুদ্রা চালু হয়। উল্লেখ্য, প্রথম বাংলাদেশের কাগজের নোটে স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্র আঁকা ছিল । যেদিন এই এক টাকার কাগজের নোট দেশের বাজারে ছাড়া হয় সেদিনই বাংলাদেশি কারেন্সিকে ‘টাকা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয় । বাংলাদেশের টাকার ইতিহাস (History of Bangladeshi Taka)
এই এক টাকার নোট নিয়ে গল্প রয়েছে । জানা যায়, এক টাকার ওই নোট ছাপা হয় ইন্ডিয়ান সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেসে। তবে দ্বিতীয় সিরিজে নোট মুদ্রণ করা হয় যুক্তরাজ্য থেকে। যার ডিজাইন অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য ছিলেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, পটুয়া কামরুল হাসান, কে জি মুস্তফা, শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী ও শিক্ষাবিদ নীলিমা ইব্রাহিম। জয়নুল আবেদিন ও কামরুল হাসানের পরামর্শে মুস্তফা হাত দিলেন ১ টাকার নোট নকশায়। প্রথমে তিনি এক টাকার দুটি নকশা করলেন। নকশা দুটি খুবই সুন্দর হল । নকশা দেখে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ তো প্রশংসায় পঞ্চমুখ।বাংলাদেশের টাকার ইতিহাস (History of Bangladeshi Taka)
আরও পড়ুনঃ আজ ২৯শে ডিসেম্বর শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের জন্মদিন; তাঁকে স্মরণ করে কিছু মজার কাহিনী
অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ অনুমোদন দেবার পর সেই নকশা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো। নকশা দেখে বঙ্গবন্ধুও আপ্লুত হলেন । তিনি তখন নিজস্ব ঢঙে জানতে চাইলেন, ‘এগুলা কি বিলেত থেকে নকশা কইরা আনা হইছে?’ এরপর যখন বঙ্গবন্ধু শুনলেন বিলেত থেকে নয়, নকশা করেছেন বাংলাদেশেরই শিল্পী, তখন তিনি মহাখুশি হয়ে বললেন, ‘ওকে আমার কাছে নিয়া আসলা না ক্যান?’
বাংলাদেশের টাকার ইতিহাস (History of Bangladeshi Taka)
প্রথম সিরিজের পর স্বাধীন বাংলাদেশের দ্বিতীয় সিরিজে এক টাকার নোট ইস্যু করা হয় ১৯৭৩ সালের ২ মার্চ। এরপর পাঁচ টাকা ১৯৭২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর এবং ১০ ও ১০০ টাকার নোট যথাক্রমে ১৯৭২ সালের ২ জুন ও ১৯৭২ সালের ১ সেপ্টেম্বর ইস্যু করা হয় । তবে বাংলা সিরিয়ালযুক্ত নোট প্রথম চালু হয় ১৯৭৩ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি । সেসময় বাংলা সিরিয়ালযুক্ত ১০ টাকার নোট ছাপা হয়।
স্বাধীন বাংলাদেশে কাগজের নোট ১৯৭২ সালে চালু হলেও তা দেশে ছাপা হত না । সুইজ্যারল্যান্ড, কোরিয়া, জার্মানি ও অস্ট্রেলিয়া থেকে বাংলাদেশের নোট ছাপা হতো ।বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো নোট ছাপা হয় ১৯৮৮ সালে টাকশাল স্থাপিত হওয়ার পর। তারপর থেকে দেশের টাকশালেই সব ধরনের কাগুজে মুদ্রা ছাপা হচ্ছে। তবে ধাতব মুদ্রা এখনও বিদেশ থেকেই আনা হয়।
তবে স্বাধীন বাংলাদেশে ২ টাকার নোট চালু হয় একটু দেরিতে । ১৯৮৮ সালের ২৯ শে ডিসেম্বর প্রথম ২ টাকার নোট চালু হয় । এছাড়া ১৯৭৬ সালের ১ মার্চ ৫০ টাকার নোট চালু করা হয়। আর একই বছর ১৫ ডিসেম্বর বাজারে ছাড়া হয় ৫০০ টাকার নোট। ২০ টাকার নোট প্রথম বাজারে আসে ১৯৭৯ সালের ২০ আগস্ট। ২০০৯ সালের ১৭ জুলাই বাজারে আসে এক হাজার টাকার নোট।