বং দুনিয়া ওয়েব ডেস্কঃ বাংলাদেশের প্রথিত যশা চিত্র শিল্পী জয়নুল আবেদিন (১৯১৪-১৯৭৬) । আজকের দিনটিতে জয়নুল আবেদিন ১৯১৪ সালে ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বেড়ে উঠেছেন ব্রহ্মপুত্রের লালিত্যে গড়ে ওঠা সবুজ শ্যামলিমায়। জয়নুল তাঁর প্রথম জীবনেই নদী ও অবারিত প্রকৃতির মাঝে রোমান্টিকতার অনুপ্রেরণা পান। তিনি ১৯৩৩ সালে কলকাতা সরকারি আর্ট স্কুলে ভর্তি হন এবং পাঁচ বছর সেখানে ব্রিটিশ / ইউরোপীয় স্টাইলের ওপর পড়াশুনা করেন। ১৯৩৮ সালে তিনি আর্ট স্কুল অনুষদে যোগ দেন এবং তিনি তাঁর চিত্রাঙ্কন চালিয়ে যেতে থাকেন। ১৯৩৮ সালে সর্ব ভারতীয় চিত্রকলা প্রদর্শনীতে তাঁর অঙ্কিত জলরঙের ছবির জন্য তিনি স্বর্ণপদক প্রাপ্ত হন। তাঁর অঙ্কনের মূল বিষয়বস্ত্ত ছিল ব্রহ্মপুত্র নদ, যা ছিল তাঁর আশৈশব প্রেরণার বিষয়। এ স্বীকৃতিই তাঁকে প্রথমবারের মতো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসে। তিনি নিজস্ব একটি ধারা সৃষ্টির আত্মবিশ্বাস লাভ করেন।

শিল্পের মধ্যে বিদ্রোহ, যদি বাংলা ইতিহাসে খুঁজতে যাই বেশিদূর যেতে হবে না। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা গান ও কবিতার মধ্যেই দেখতে পাওয়া যায়। ব্রিটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে অনেক কবিতা ও গান লিখেছেন। তেমনি ১৯৪৩ সালে বাংলার দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের সকরুণ চিত্র এঁকে বিশ্ববাসীর বিবেককে নাড়িয়ে দেওয়া এক বিদ্রোহী শিল্পী জয়নুল আবেদিনকেও দেখতে পাওয়া যায়। সে সময় তিনি মূলত দুটি চরিত্রকে উপজীব্য করে সৃষ্টি করেছেন কালজয়ী চিত্রকর্ম ‘দুর্ভিক্ষ-চিত্রমালা’। বিষয়বস্তু ছিল মা ও শিশু। এছাড়াও তার বিখ্যাত চিত্রকর্মের মধ্যে রয়েছে সংগ্রাম, সাঁওতাল রমণী, ঝড়, কাক, বিদ্রোহী ইত্যাদি। আজ বাংলার এই প্রখ্যাত চিত্রশিল্পীর ১০৫তম জন্মদিন। বাংলার এই প্রখ্যাত চিত্রশিল্পীকে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।

জয়নুল আবেদিন ভারতীয় উপমহাদেশের একজন অনন্য শিল্প-প্রতিভা। পূর্ববঙ্গে তথা বাংলাদেশে চিত্রশিল্প বিষয়ক শিক্ষার প্রসারে ভূমিকার জন্য তাকে ‘শিল্পাচার্য’ বলা হয়। তার বিখ্যাত চিত্রকর্মের মধ্যে রয়েছে- দুর্ভিক্ষ চিত্রমালা, নবান্ন, ফসল মাড়াই, সংগ্রাম, সাঁওতাল রমণী, ঝড়, কাক ও বিদ্রোহী ইত্যাদি।

আজ আমরা তার জীবনের কয়েকটা মজার কাহিনী শুনবো-

১৯৫৩ সালে শিল্পী জয়নুল আবেদিন ইউরোপ ভ্রমণে বের হয়েছিলেন। স্পেনে এসে তিনি বেশ বিপদে পড়লেন কারণ স্প্যানিশ ভাষা তিনি জানতেন না, ইংরেজি জানা লোকও সেখানে কম ছিল। তাই শিল্পী খাবার সময় রেস্তোরাঁয় ঢুকে তার স্কেচ খাতার সাদা কাগজে একপাশে একটি সিদ্ধ করার কড়াই এবং একটি ভাজি করার কড়াই আঁকলেন। তারপর একটি বড় গরু, পাশে গরুর পেছনের রান এঁকে তীর চিহ্ন দিয়ে সিদ্ধ করা কড়াইয়ের দিকে দেখালেন। অর্থাৎ, রানের মাংস রান্না খেতে চান।

শিল্পীর স্কেচ বই থেকে নেওয়া

একে একে মুরগির ডিম, কপি, আলু যা যা খাবার প্রয়োজন সব এঁকে ফেললেন। স্প্যানিশ ওয়েটারের আর বুঝতে অসুবিধা হলো না যে শিল্পী কী খেতে চান। তারপর থেকে এভাবেই চলতে লাগলো ছবি এঁকে খাবার অর্ডার দেওয়ার তার এক নতুন পদ্ধতি ।

জয়নুল আবেদিন এরপর বিদেশে পথ চলতে আর খুব একটা অসুবিধেয় পড়েননি। কারণ সঙ্গে থাকতো তার স্কেচ খাতা আর পেন্সিল। যে কোন ভাষাভাষীর সঙ্গে ছবি এঁকে ভাবের আদান-প্রদান করে নিতেন, ছবির ভাষা দিয়ে কাজ চালিয়ে যেতেন।

একবার শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন গেছেন কিশোরগঞ্জে তার গ্রামের বাড়িতে। গ্রামের এক মুরুব্বি দেখা করতে এসে জয়নুলকে বললেন, ‘কিরে তুই নাকি বিখ্যাত শিল্পী হইছস? দে তো ছাতিটায় আমার নাম লেইখ্যা!’ জয়নুল আবেদিন খুব যত্ন করে ও সময় নিয়ে ছাতাটায় ওই লোকের নাম লিখে দিলেন। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে এ ঘটনা ছড়িয়ে পড়লো গ্রামে। গ্রামে ঝড়-বৃষ্টি-রোদে ছাতা একটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। আর একবার ছাতা হারিয়ে গেলে ওটা যে কার ছাতা বুঝা মুশকিল। আর তাই গ্রামের প্রায় সবাই যার যার ছাতা নিয়ে হাজির, জয়নুলকে দিয়ে ছাতার গায়ে তাদের নাম লিখিয়ে নেবে। শিল্পাচার্য আর কী করবেন, অনেক যত্ন করে সবার ছাতাতেই নাম লিখে দিলেন।

জয়নুল আবেদিন ছেলেবেলায় বাঁশ ও বেতের কাজ, নকশিকাঁথা, জামদানি শাড়ির নকশা, কুমারপাড়া ইত্যাদি দেখতে পছন্দ করতেন। এসব দেখে নিজে নিজেই ছবি আঁকতেন। তখনকার সময় ক্লাস নাইন-টেনে র‌্যাপিড বই ছিল। পড়াশোনার ফাঁকে র‌্যাপিড বইয়ের পাতার চারপাশে তিনি ছবি আঁকতেন।

স্কুলের পড়াশোনা তার ভালো লাগত না। ক্লাসে বসে জানালার ফাঁক দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতেন। কখনো প্রকৃতি দেখতেন। একদিন জয়নুল আবেদিন নিবিষ্ট মনে বইতে ছবি আঁকছেন দেখে হেড মাস্টার তার বইটি চেয়ে নিলেন। তার বই এক নজর বুলিয়ে বললেন- ‘বইটি আমার কাছে থাকুক।’

এদিকে জয়নুল বেশ বিব্রত হলেন। ভয়ে স্কুল পালালেন। কদিন যেতেই হেড মাস্টার বাড়িতে খবর নিয়ে জানতে পারলেন- জয়নুল স্কুলের উদ্দেশে বের হয় এবং যথাসময়ে বাড়ি ফিরে আসে। পরে হেড মাস্টার নিজেই তাদের বাড়িতে এলেন। তার বাবাকে বললেন- ‘আপনার ছেলে তো স্কুলে যায় না। তার কি কোনো অসুখ করেছে?’

জয়নুলকে ডাকা হলো। তিনি শিক্ষকের সামনে এসে বললেন- ‘ভয়ে স্কুলে যাই না।’

‘কীসের ভয়?’

আবেদিন বললেন- ‘বইতে ছবি এঁকেছি এই ভয়ে।’

তখন হেড মাস্টার হো হো করে হাসলেন। তিনি বললেন- ‘তুমি ছবি এঁকে পালাচ্ছ, আর আমি ওই ছবি দেখে তোমাকে খুঁজছি। আমি তোমার বাবার সামনে বলে যাচ্ছি, তুমি চমৎকার ছবি আঁকো। তুমি যদি ছবি আঁকার জগতে যাও তাহলে খুব ভালো করবে।’

তখন জয়নুল আবেদিনের ভেতর একটি স্বপ্ন তৈরি হয়।

তথ্যসূত্র:

১.bangla.bdnews24.com

২.শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, হাশেম খান

৩ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন জীবন ও কর্ম, জাহাঙ্গীর হোসেন, মাওলা ব্রাদার্স

৪ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন স্মারকগ্রন্থ, মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, বিশ্বসাহিত্য ভবন

৫. google.com

Kajal Paul is one of the Co-Founder and writer at BongDunia. He has previously worked with some publishers and also with some organizations. He has completed Graduation on Political Science from Calcutta University and also has experience in News Media Industry.

Leave A Reply