বং দুনিয়া ওয়েব ডেস্কঃ চলতি বছরের বাজেট মোদী সরকারের কাছে বেশ বড় চ্যালেঞ্জ । ক্ষমতায় আসার পর একের পর এক চমক দেখিয়েছে গেরুয়া শিবির – কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা অবলুপ্তি, রাম মন্দির নির্মাণ, নাগরিকত্ব বিল, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি, তিন তালাক, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল, কি নেই তালিকায় ! কিন্তু ‘সব ভাল তার, শেষ ভাল যার’ । কারন সবার শেষে কিন্তু সেই চিরন্তন সত্য – এবারের বাজেটে সাধারন মানুষের পেট ভরবে তো !
বর্তমানে ভারতের জি ডি পি অনেক নিচে রয়েছে । অর্থনৈতিক দিক থেকে বিচার করলে দেখা যাবে, ভারত এক চূড়ান্ত আর্থিক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে চলেছে। এরই মধ্যে আগামীকাল ১লা ফেব্রুয়ারি অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ পেশ করতে চলেছেন চলতি বছরের বাজেট ২০২০ । এই বাজেট দেশের আর্থিক সংকট মোচন করতে কতখানি সক্ষম হবে ? ১৯৯১ সালের মনমোহন সিং-এর মত যুগান্তকারী বাজেট হবে ? দেশের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন এর আর্থিক উপদেষ্টা সঞ্জীব সান্যাল। তিনি নিজেই লিখেছেন যে ৯১ সালের এই আর্থিক সংস্কার যেন ১৯৪৭ সালের পর দেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা সংগ্রাম। নাকি সস্তা চমক দেখিয়েই মাত করতে চাইবে ? সেই সব প্রশ্ন একদিকে যেমন মনের মধ্যে উঁকি মারছে তেমনি জানতে ইচ্ছা করে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ দ্বিতীয়বারের মত যে বাজেট ২০২০ পেশ করতে চলেছেন তার প্রধান কারিগর কে কে ?
অস্বীকার করা যায় না, শুধু ভারতে নয় গোটা দুনিয়াতেই চলছে এক চূড়ান্ত আর্থিক লোকসান। এমতাবস্থায় বাজারের চাহিদা নেই। লোকে জিনিসপত্র কিনছে না। সরকারি খরচও কিভাবে বাড়ানো হবে তা স্পষ্ট নয়। কিন্তু বাজারে সচলতা দরকার বিশেষভাবে। অর্থনীতির সঙ্গে কৃষির সম্পর্ক হল গভীর।গত দুমাস ধরে কৃষিক্ষেত্রে এই সংকট চলছে। প্রান্তিক চাষিরা এদেশে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত। ভারতে রিয়েল এস্টেট বা গৃহনির্মাণের ক্ষেত্রে শ্রমিক যোগানের সঙ্গে কৃষি ক্ষেত্রের পতন একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। গৃহনির্মাণ ক্ষেত্র গত দুবছর ধরেই খুব খারাপ আর্থিক অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই ক্ষেত্রটিতে আর্থিক উন্নতি হলে গ্রামীণ জীবনেরও আর্থিক বিকাশ হয়।
আর্থিক মন্দার আবহে চলতি বছরের বাজেটের দিকে তাকিয়ে রয়েছে আমজনতা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক মহল, বিনিয়োগকারী, করদাতাসহ সকলে । অনেক অর্থনীতিবিদ, শিল্পপতি, কৃষক সংগঠন ও আরও অন্যান্যদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন সীতারামন। এবারর বাজেট ২০২০ নির্মাণে শীর্ষে রয়েছেন অর্থসচিব রাজীব কুমার ।
নতুন অর্থসচিব হিসেবে রাজীব কুমারকে নিযুক্ত করেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। রাজীব ২০১৭-র সেপ্টেম্বর থেকে অর্থ মন্ত্রকের ব্যাঙ্ক পরিষেবা দফতরের দায়িত্বে ছিলেন । তিনিই প্রধানমন্ত্রীর ‘জন ধন যোজনা’, ছোট-মাঝারি শিল্পের জন্য ৫৯ মিনিটে ঋণ, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের অনাদায়ী ঋণের সমস্যা সমাধানের কাজকর্ম দেখাশোনা করেছেন । সাধারণত অর্থ মন্ত্রকের পাঁচটি দফতরের সচিবদের মধ্যে প্রবীণতম অফিসারকে অর্থসচিবের পদে বসানো হয়। রাজীব ও রাজস্ব সচিব অজয়ভূষণ পাণ্ডে দু’জনেই একই ব্যাচের। দু’জনের মধ্যে রাজীবকেই বেছে নিয়েছে কেন্দ্র। শিল্পমন্ত্রকের শীর্ষ আমলা রাজীব কুমার ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে ঢেকে সাজাতে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ করেছেন। অনাদায়ী ঋণের ভারে ধুঁকতে থাকা ব্যাংকগুলির জন্য বেশ কিছু ব্যবস্থা নেন তিনি। ব্যাঙ্কিং সেক্টরের উন্নয়নে তিনি বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছেন ইকনমিক অ্যাফেয়ার সেক্রেটারি অতনু চক্রবর্তী ।গত জুলাই মাসে এই দফতরে এসেছেন অতনু চক্রবর্তী। তিনি সরকারি সম্পত্তি বিক্রির বিশেষজ্ঞ। আর্থিক মন্দা সামাল দিতে পরিকাঠামো বিনিয়োগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরামর্শ দেন তিনি। আর্থিক মন্দা সামলাতে এক ট্রিলিয়ন ডলার পরিকাঠামোর বিনিয়োগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরামর্শ দেন তিনি। বাজেট ঘাটতি মেটাতে অতনু চক্রবর্তীর পরামর্শ অত্যন্ত মূল্যবান।
রাজীব কুমার এবং বাঙালি অতনু চক্রবর্তী ছাড়াও রয়েছেন এক্সপেনডিচার সেক্রেটারি টি ভি সোমনাথন । সরকারি খরচকে একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্যে বাঁধার কাজে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। এর আগেও প্রধানমন্ত্রীর দফতরে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর । তাই মোদী কী ধরনের বাজেট চান, তার একটা ধারণা রয়েছে সোমনাথনের।
এছাড়াও নির্মলা সীতারমণের পেশ করা বাজেট ২০২০ তৈরিতে রয়েছেন অজয় ভূষণ পাণ্ডে । বর্তমানে তিনি রেভিনিউ সেক্রেটারির দায়িত্বে রয়েছেন । বাজেট তৈরিতে তাঁর যথেষ্ট উল্লেখযোগ্য ভুমিকা থাকছে । এর আগে রিসোর্স বাড়ানোর কাজে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন অজয় ভূষণ পাণ্ডে। কর আদায় কমায় তিনিই সম্ভবত এই বাজেটের আগে সবচেয়ে চাপে আছেন।
উপরের চারজন ছাড়াও অপর উল্লেখযোগ্য ব্যাক্তি ডিসইনভেস্টমেন্ট সেক্রেটারি তুহিনকান্ত পাণ্ডের নাম রয়েছে তালিকায় । এর আগে কেন্দ্রীয় সরকারের এয়ার ইন্ডিয়ার বিক্রির সিদ্ধান্তের পেছনে হাত রয়েছে তুহিনকান্ত পাণ্ডের। সরকারের আয় বাড়াতে কোথায় কোথায় বিনিয়োগ কমানো যায়, সেই বিষয়ে উল্লেখযোগ্য পরামর্শ দেন তিনি। ফলে চলতি বাজেটে তাঁর ভুমিকাও একেবারে কম নয় ।