বং দুনিয়া ওয়েব ডেস্কঃ যে কোন দেশের বাজেট সে দেশের চলতি বছরের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ । কেননা বাজেটের উপরে নির্ভর করে আগামী দিনে দেশের অর্থনীতির গতিপথ । বিনিয়োগকারী আর্থিক বছরের পেশকৃত বাজেটের দিকে তাকিয়ে বিনিয়োগ করে, অপর দিকে করদাতারাও আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে থাকে । এছাড়া জিনিসপত্রের দাম বাড়বে না কমবে সেটিও নির্ভর করে বাজেটের উপর । ফলে সাধারন মানুষের আগ্রহও কম থাকে না । তবে বাজেট পেশ করার সময় দেখতে হবে ঠিক কিধরণের বাজেট হয়েছে । এক নজরে দেখে নিই কি কি বাজেট হতে পারে –
প্রথমেই আলোচনা করা যাক সুষম বাজেটের । আমরা সকলেই জানি আয় এবং ব্যয় কি ! সাধারন মানুষের জীবনে আয় ব্যয়ের মধ্যে একটা সুষম বণ্টন থাকে । কথায় বলে “যেমন আয়, তেমন ব্যয়” । অর্থাৎ যেমন রোজগার হবে তেমন খরচ করতে হবে । ঠিক একইভাবে কোনও বাজেটের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য ওই অর্থবর্ষের প্রত্যাশিত আয় ও ব্যয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য থাকা প্রয়োজন। অর্থনীতিবিদদের মতে, সরকারের ব্যয় কখনোই তার রাজস্ব থেকে বেশি হওয়া উচিত নয়। যদিও বেশিরভাগ অর্থনীতিবিদ বিশ্বাস করেন যে বাস্তবিক প্রয়োগের ক্ষেত্রে আনুমানিক ব্যয় এবং প্রত্যাশিত রাজস্বের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা অত্যন্ত কঠিন। তবে এই ধরণের বাজেটের সবচেয়ে বড় সুবিধা হ’ল এটি অতিরিক্ত অপচয় হ্রাস করে। তবে সুষম বাজেটের ক্ষেত্রেও কিছু অসুবিধা থাকে । সুষম বাজেটের ক্ষেত্রে অন্যতম অসুবিধা হলো যে সরকারের আয় এবং ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে গিয়ে বিভিন্ন জনকল্যানমূলক প্রকল্পের বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে ।
এরপর আলোচনা করা যাক ঘাটতি বাজেট নিয়ে । ঘাটতি সম্পর্কিত বাজেটের অর্থ হল, বিভিন্ন খাত থেকে সরকার যে রাজস্ব আদায় করে, সেই অর্থের চাইতে বাজেটে বেশী খরচ ধরা হলে সরকারের ঘাটতি দেখা যায় । একে সাধারন ভাষায় ঘাটতি বাজেট বলে । এক্ষেত্রে চলতি বছরে সরকার বিভিন্ন খাত থেকে একটা আনুমানিক আয়ের হিসাব করে । কিন্তু সরকারের আনুমানিক আয়ের তুলনায় যখন ব্যয় বেশি হয়ে যায় তখন ঘাটতি কথাটি এসে যায় । তবে ঘাটতি হলেই যে সব সময় খারাপ হবে সে কথা ঠিক নয় । অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে এই ধরণের বাজেট ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতির পক্ষে এবং মন্দার সময়ে বিশেষ কার্যকরী। এই ধরণের বাজেট অতিরিক্ত চাহিদা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সাহায্য করে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ জন মেইনার্ড কেইন এর মতে, “ঘাটতি বাজেটের মাধ্যমে কর্মসংস্থান এবং বেকারত্বের সমস্যাগুলি সমাধান করা যেতে পারে সহজেই”।
বাজেটের অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল উদ্বৃত্ত বাজেট । কোনও আর্থিক বছরে ব্যয়ের তুলনায় সরকারের যদি আয় বেশি হয়, সেই বাজেটকে উদবৃত্ত বাজেট বলে। এই ধরণের বাজেট থেকে অনুমান করা যায় যে সরকার অতিরিক্ত কর আদায়ে সক্ষম হয়েছে এবং এর ফলে সরকার বিভিন্ন জনকল্যাণ মূলক প্রকল্পে আরও বেশি টাকা খরচ করতে পারবে। মুদ্রাস্ফীতির সময়ে সামগ্রিক চাহিদা কমাতে এই ধরণের বাজেট কার্যকর করা যেতে পারে। কিন্তু দেশে যদি অর্থনৈতিকভাবে মন্দাভাব চলে তাহলে এই বাজেট কখনই কার্যকর হয় না । কারন এই ধরনের বাজেট হলে একটাই ইঙ্গিত থাকে যে, চলতি আর্থিক বছরে সরকারের অতিরিক্ত আয় হয়েছে এবং যা দিয়ে বকেয়া মেটানো হবে।
এবার বাজেট ২০২০ পেশ হতে চলেছে ১ লা ফেব্রুয়ারি । সকলের নজর থাকছে সেই দিকেই । চলতি বছরের বাজেট কি প্রকৃতির হতে চলেছে সেটি দেখার জন্য আর মাত্র একটা দিন অপেক্ষা করতে হবে ।