বং দুনিয়া ওয়েব ডেস্কঃ একের পর এক বৈঠকেও সমাধানের রাস্তা দেখা যাচ্ছে না ভারত-চিন সীমান্ত নিয়ে । ফলে সীমান্ত এলাকায় আরও ভারতীয় জওয়ান মোতায়েন করা হবে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই । অথচ সামনেই আসছে শীতকাল । আর প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় লাদাখ সীমান্ত কিম্বা প্যাংগং হয়ে ওঠে পৃথিবীর ভয়ঙ্কর দুর্গম জায়গাগুলির মধ্যে অন্যতম । সেই বিরূপ প্রতিকুল পরিবেশ ভারতীয় জওয়ানদের বেশ কঠিন পরীক্ষার সামনে ফেলবে ।

লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় ভারতীয় সেনা জওয়ানদের সাথে চীনা সেনাদের মুখোমুখি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ঘটার পর দুই দেশের কূটনৈতিক পরিস্থিতি একেবারে তলানিতে । তারপর থেকেই চীনকে চাপে ফেলার জন্য যেমন একের পর এক পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার, তেমনি সীমান্তে শান্তি বজায় রাখার জন্য দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি একের পর এক বৈঠক করে চলেছেন । কিন্তু সমাধান এখনও ‘বিশ বাও জলে’ । ফলে সীমান্তে দুই দেশই অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন এবং সমরসজ্জা প্রস্তুত করে রাখছে । অথচ সামনেই আসছে শীতকাল ।

প্রচণ্ড ঠাণ্ডা পড়তে শুরু করেছে প্যাংগং সীমান্তে

ভারত-চিনের মধ্যে আপাতত পূর্ব লাদাখ সীমান্ত সমস্যা সমাধানের কোনও সম্ভাবনা নেই। মস্কোতে ভারত চিনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা শেষ বৈঠক করেছেন দীর্ঘ সময় ধরে । কিন্তু নিজেদের দাবী থেকে পিছু সরতে একেবারেই নারাজ বেজিং । ফলে আসন্ন শীতকালেই লাদাখ সীমান্তের বিস্তীর্ণ এলাকায় সেনা মোতায়েন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। কিন্তু অগাস্ট মাসের মাঝামাঝি থেকেই পূর্ব লাদাখ সীমান্তের আবহাওয়া খারাপ হতে শুরু করে। আর সেম্পেম্বরের মাঝামাঝি থেকেই প্যাংগং, হটস্প্রিংসহ বেশ কয়েকটি এলাকা প্রায় ২০ ফুটের বেশি বরফে ঢেকে যায়।

প্রচণ্ড ঠাণ্ডার অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রাক্তন কর্নেল সন্দীপ কুমার। যিনি ৩৭ বছর ধরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্য ছিলেন। ২০১১ সালে অবসর গ্রহণের আগে এক বছর তাঁর শেষ পোস্টিং ছিল লাদাখে।প্রাক্তন কর্নেল সন্দীপ কুমারের কথায়, লাদাখে ১৬,০০০ ফুট উচ্চতায় প্রতিপক্ষের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনাদের অনেকগুণ বেশি শারীরিক দক্ষতা প্রয়োজন। কারণ অতি উচ্চতায় একদিকে থাকবে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা অন্য দিকে বাতাসে অক্সিজেন কম । এদিকে কেউ আহত বা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে  ১০ হাজার ফুট নিচে লে-র সেনা হাসপাতালে নিয়ে আসাও কিছুটা সমস্যার। কারণ প্রবল ঠান্ডায় তুষারপাতের কারণে দৃশ্যমানতা কম থাকায় হেলিকপ্টারের চালানো রীতিমত কঠিন।

জওয়ানদের কঠিন থেকে কঠিনতর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় এই সিয়াচেনে

আবার সংবাদের শিরোনামে থাকা প্যাংগং লেক সংলগ্ন এলাকায় লড়াই করাও বেশ কষ্টসাধ্য। কারণ এলাকাটি একদম ফাঁকা। কোনও গাছ বা ঝোপঝাড় নেই। প্রতি বছর সেপ্টেম্বর থেকেই এই হ্রদের জল বরফ হয়ে যায়। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত একই অবস্থা থাকে। শীতকালে বেলা বারোটা নাগাদ এখনও তাপমাত্রা থাকে মাইনাস ৫ ডিগ্রির নিচে। আর সন্ধ্যার দিকে মাইনাস ২৫। রাত ৮টার পর থেকে তাপমাত্রার পারদ আরও নামতে থাকে। কখনও কখন পারদ নেমে যায় মাইনাস ৪০ ডিগ্রির নিচে। এখানের সবথেকে বড় সমস্যা হল উইন্ড চিল্ড বাতাস। ঠান্ডা ঝোড়ো হাওয়ায় কখনও কখনও পায়ে হাঁটাও রীতিমত কষ্টকর হয়। ফলে সেখানে যুদ্ধ করা অনেক দুরের ব্যাপার, এলাকায় টহল দেওয়াও রীতিমত চ্যালেঞ্জিং হবে ভারতীয় সেনা জওয়ানদের জন্য ।

এরপর আছে সিয়াচেন, যা বিশ্বের সবচেয়ে খতরনক প্রতিকুল পরিবেশের মধ্যে অন্যতম । শীতে সেখানে তাপমাত্রা মাইনাস ৪৫ থকে ৫৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসেও নেমে যায় । তবে বর্তমানে  সেনা বাহিনীর চিকিত্‍সা পরিষেবা ও থার্মাল গিয়ার খুবই উন্নতমানের হওয়া সেনাদের পক্ষে লড়াই করা অনেকটাই সহজ হয়েছে। কারণ ওই পরিবেশে দায়িত্বপ্রাপ্ত জওয়ানরা যে অন্তর্বাসটি ব্যবহার করেন সেটিও ফিনল্যান্ড বা সুইডেন থেকে আসে। সিয়াচেনে ভারতীয় জওয়ানরা ২০ হাজার ফুট উঁচুতে উঠে লড়াই করে।

Kajal Paul is one of the Co-Founder and writer at BongDunia. He has previously worked with some publishers and also with some organizations. He has completed Graduation on Political Science from Calcutta University and also has experience in News Media Industry.

Leave A Reply