মেছতা কমানোর উপায়

মেছতা কী :-

চক্ষু কর্ণ জিহ্বা নাসিকা এবং ত্বক এই পঞ্চ ইন্দ্রিয় নিয়ে (মেছতা কমানোর উপায়)  আমরা আমাদের শরীর গঠিত । তারমধ্যে ত্বক সবচেয়ে এবং একটি অতিপ্রয়োজনীয় অঙ্গ । তার কারণ ত্বক আমাদের বাইরের আবহাওয়া থেকে শরীরকে রক্ষা করে । এছাড়া কোন স্পর্শজনিত অনুভূতি পাওয়া যায় আমাদের ত্বকের মাধ্যমে । এছাড়া কথায় আছে  প্রথমে দর্শনধারী পরে গুণবিচারী । আমাদের সৌন্দর্যের মূল চাবিকাঠি বিশেষ করে ত্বক ।  ত্বকের উপরে কালো দাগ পড়লে কারোরই ভালো লাগে না । আর ত্বকের উপরে কালো দাগ এর কারণ হচ্ছে মেচেতা ।  ত্বকের যে সমস্যাগুলো নিয়ে সবচাইতে বেশি বিব্রতকর সমস্যার সৃষ্টি হয়, সেগুলোর মাঝে অন্যতম মেছতা। মেছতা যে কারোরই হতে পারে। তবে সাধারণত নারীরাই বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন। ত্বকে মেছতা হলে কালো ছোপ ছোপ দাগ পড়ে ।  আসলে এই মেছতা রোগটা কী? কিংবা কেন হয়? আর মেছতা প্রতিরোধ করতে কী কী করতে পারেন আপনি? আসুন, আজ জেনে নেয়া যাক বিস্তারিত।  মেচেদা সম্পর্কে আমাদের ধারণা কি আছে ?  কিভাবে মেছতা চিকিৎসা করা হয় ? আসুন জেনে নিই এই অতি প্রয়োজনীয় বিষয় গুলি ।

মেছতা কী ও কেন হয়?

মেছতা একটি বংশগত সমস্যা। ত্বকের নিচে মেলানিন জমলে তা মেছতার জন্ম দিতে পারে। প্রাথমিক অবস্থায় বিক্ষিপ্ত তিলের মতো দেখালেও এটি তিল নয়। গাল, নাক , পেট ,কাঁধ, হাত এরকম যেকোনো খোলা স্থানে এটি দেখা যায়। (মেছতা কমানোর উপায়)  পৃথক পৃথক ব্যাক্তির ক্ষেত্রে এর রং একেক রকমের হয় ।কারো কারো ক্ষেত্রে লালচে, কখনো বাদামী, কখনো আবার কালো এবং হলুদ রঙের মেছতাও দেখা যায়। গ্রীষ্মে দাগগুলি গাঢ় ভাবে দেখা দেয়, আবার শীতে দাগগুলি হালকা হয়ে যায়।

মেছতা কমানোর উপায়

সূর্যরশ্মির প্রভাবে ত্বকে অতিরিক্ত মেলানিন উৎপন্ন হয়। এতে ত্বকের কিছু কিছু জায়গায় গাঢ় কালো ছোপ ছোপ দাগ দেখা দেয় যা মেছতা বা মেলাজমা (melasma) নামে পরিচিত। গ্রীক শব্দ মেলাজ (melas) থেকে মেলাজমা শব্দের উৎপত্তি যার অর্থ কালো। মেছতা কী ?

ত্বকের যে সমস্ত জায়গায় সূর্যরশ্মি বেশি পড়ে সে সমস্ত জায়গা যেমন- উপরের গাল, নাক, ঠোঁট এবং কপালে মেছতা দেখা যায়। (সাধারণত ৩০-৪০ বছর বয়সের মধ্যে হয়)। তবে মাঝে মধ্যে ঘাড়ের পাশে, কাঁধ ও উপরের বাহুতে দেখা যায়। গায়ের রঙ ফর্সা যাদের তাদেরই মেছতায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। তবে বগলে একধরনের মেছতা হয়। সেটি বংশগত এক রোগের কারণে। যার নাম নিউরোফিবরোম্যাটেসিস

সাধারণ মেছতা মানুষের বাহ্যিক সৌন্দর্যকে নষ্ট করে বটে। তবে শরীরের অভ্যন্তরে কোনো ক্ষতি করে না। কিন্তু কিছু মেছতা আছে যেগুলোকে স্কিন ক্যান্সার হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। যেমন লেনটিগো ম্যালিগনা, মেলানোসা ও ব্যাসাল সেল কারসিনোমা। তবে আর্লি স্টেজে এগুলো ধরা পড়ালে নিরাময় করা সম্ভব। রোদে বের হলেই সবার মেছতা হবে এমন কোনো কথা নেই। এখানে বংশগত প্রবণতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

গবেষণায় দেখা গেছে জেনেটিক কারণে ও সূর্যরশ্মির কম্বিনেশনে মেছতা তৈরি হয়। কিছু কিছু মানুষের দেহে সূর্যের আলট্রা ভায়োলেট রশ্মি পড়ার সাথে সাথে উল্লেখযোগ্য হারে পিগমেন্ট সেল বা মেলানিন বেড়ে যায় ।  শুধু তাই নয় ত্বকের বাইরের স্তর হয়ে যায় আগের চেয়ে পুরু। যাদের গায়ের রঙ কালো তাদের সেভাবে মেছতা দেখা যায় না। কারণ কালো বর্ণের ত্বকে সূর্যরশ্মি বা আলট্রা ভায়োলেট রে সেভাবে প্রভাব ফেলতে পারে না।

মেছতা প্রধানত দুইপ্রকারের হতে পারে।
১) সাধারণ মেছতা
২)  রোদেপোড়া মেছতা

১) সাধারণ মেছতা

সাধারণ মেছতা মূলত ফর্সা ত্বকে বেশি দেখা যায়। এইধরনের মেছতা তামাটে কিংবা লালচে রঙের হয় । যাদের চুল লালচে চোখের রং হালকা তাদের এইপ্রকার মেছতা বেশি দেখা যায়। নিয়মিত সানস্ক্রিন মাখলে এই রোগ ছড়ানোর আগেই প্রতিকার সম্ভব।

২)  রোদেপোড়া মেছতা

রোদেপোড়া মেছতা আবার এই ধরনের মেছতার থেকে একেবারে আলাদা। এটি অপেক্ষাকৃত গাঢ়, এবং শীতকালেও এর রং হালকা হয় না।
মেছতা বয়ঃসন্ধি কালে বেশি দেখা যায়। দুই বছরের বেশি কোনো কোনো বাচ্চাদের মুখেও মেছতার প্রকোপ লক্ষণীয় । আসলে ত্বকের বয়স বৃদ্ধির একটি লক্ষণ হল মেছতা।

মেছতা কমানোর উপায়

মেছতা প্রতিরোধের উপায় :

বাইরে বের হওয়ার আগে পর্যাপ্ত পরিমাণ সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। এক্ষেত্রে এস.পি.এফের মাত্রা যেন আমাদের দেশের আবহাওয়া অনুযায়ী সঠিক হয়য়। সেটা ১৫-৩০ যেকোনোটা হতে পারে।

বাইরে বের হওয়ার সময় স্কার্ফ, ওড়না বা আঁচল মাথায় জড়িয়ে নিন। সম্ভব হলে চওড়া ঘেরের টুপি পরুন। ঘাড়-পিঠ ঢাকা, ফুলহাতা জামা পরুন।

ব্লিচিং ফেসিয়াল শতভাগ এড়িয়ে চলুন। এমন ফেসিয়াল ট্রিটমেন্ট নিন যার মাধ্যমে ভিটামিন ‘এ’ অ্যাসিড, ঢাজোরাক ও ডিফেরিন জাতীয় উপাদানগুলো প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায়।

(মেছতা কমানোর উপায়)

সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যবর্তী সময়ে রোদের মধ্যে কম বের হতে চেষ্টা করুন।

জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল গ্রহণ এবং হরমোন থেরাপি বন্ধ করতে হবে। বাইরে বের হলে সবসময় ছায়ায় থাকুন। সম্ভব হলে সবসময় ছাতা ব্যবহার করুন। রোদ থেকে বাঁচার জন্য সানস্ক্রিন ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তুলুন।

মেছতা কমানোর উপায়

প্রচুর পরিমাণে জল, ফলমূল ও শাকসবজি খাবেন, সেইসঙ্গে ত্বক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখবেন। চা, কফি, অ্যালকোহল জাতীয় খাবার খাবেন না। এসব খাবার খেলে মেছতা বেড়ে যায়।

মেছতা দূর করতে কিছু ঘরোয়া উপায়ঃ-

. সপ্তাহে দুই দিন চালের গুঁড়া ও ডিম একসঙ্গে পেস্ট করে ত্বকে লাগিয়ে ২মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এতে মেছতা দূর হবে ও একইসঙ্গে ত্বক নরম ও কোমল হবে।

Food Chart For Sugar Patient In Bengali, ডায়াবেটিস দূরারোগ্য ব্যধি হলেও পরিমিত জীবন যাপনে সুস্থ থাকতে পারেন ডায়াবেটিক রোগী

টকদই মেছতা দূরীকরণে খুবই কার্যকরী। সপ্তাহে তিনদিন ত্বকে টক দই লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। টক দই মেছতা দূর করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দেবে বহুগুণ।

(মেছতা কমানোর উপায়)

ভিনেগার ও সমপরিমাণ পানি মিশিয়ে ত্বকে লাগালে মেছতা দূর হয়, সেইসঙ্গে ত্বক উজ্জ্বল ও মসৃন হয়।

লেবুর রসে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে। যা সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ত্বককে রক্ষা করে। নিয়মিত লেবুর রস সামান্য পানির সঙ্গে মিশিয়ে ত্বকে ১০ থেকে ১৫ মিনিট লাগিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

মেছতার উপর আঙ্গুলের সাহায্যে ধিরে ধিরে ঘৃতকুমারীর পাতার রস সারা রাত লাগিয়ে রেখে সকালে পরিস্কার ঠাণ্ডা পানি দিয়ে পরিস্কার করে নিতে হবে । এভাবে কিছুদিন করলে মেছতা দূর হবে।

দারুচিনির পানি সেবনের সঙ্গে দারুচিনি চূর্ন দুধের সরের সাথে মেছতায় লাগালে মেছতা সেরে যায়।

ঘরোয়া পদ্ধতি ছাড়া মেছতা প্রতিরোধের উপায়ঃ-

 

১)  ব্লিচিং বা ফেডিং ক্রিম:  বাংলায় মেছতা প্রতিরোধের উপায়

বাজারে নানা ব্র্যান্ডের নানান ব্লিচিং বা ফেডিং ক্রিম পাওয়া যায়। মূলত ত্বক ফর্সা করতে এই ক্রিমের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। নিয়মিত এই ক্রিম ব্যবহারে মেছতার দাগ ধীরে ধীরে হালকা হতে থাকে। তবে এই ক্রিম ব্যবহারের পর রোদে যাওয়া যাবে না । তাতে ত্বক পুড়ে যাওয়ার স্মভাবনা থাকে।

২) ক্রায়োসার্জারি: বাংলায় মেছতা প্রতিরোধের উপায়

মেছতা কমানোর উপায়
মেছতা কমানোর উপায়

তরল নাইট্রোজেন দিয়ে ছোটোখাটো সার্জারিকে বলা হয় ক্রায়োসার্জারি। তবে এতে মেছতার দাগ পুরোপুরি দূর হয় না।

৩) লেজার ট্রিটমেন্ট:  বাংলায় মেছতা প্রতিরোধের উপায়

লেজার ট্রিটমেন্টও ক্রায়োসার্জারির  মতোই সহজ এবং নিরাপদ।এতে মেছতার দাগ যায় সম্পূর্ণ ভাবে। আবার এই ঝঞ্জাটহীন প্রক্রিয়ার দ্বারা ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাও থাকে না।এটি একটি সহজ উপায়। আমাদের দেশে এখন এই প্রক্রিয়া খুবই সহজলভ্য এবং সকলের সাধ্যের মধ্যে।

৪) ফটোফেসিয়াল:  বাংলায় মেছতা প্রতিরোধের উপায় (মেছতা কমানোর উপায়) 

ফটোফেসিয়ালও লেজার ট্রিটমেন্টের মতোই নিরাপদ। কিন্তু আমাদের দেশে এখনো এই পদ্ধতির প্রচলন হয়নি।

৫) ফেসিয়াল:  বাংলায় মেছতা প্রতিরোধের উপায়

বিভিন্ন পার্লারে স্পা- তে ফেসিয়ালের ব্যবস্থা থাকে। সেখানে নিয়মিত ফেসিয়াল করলে মেছতার দাগ হালকা হয়।

 

Kajal Paul is one of the Co-Founder and writer at BongDunia. He has previously worked with some publishers and also with some organizations. He has completed Graduation on Political Science from Calcutta University and also has experience in News Media Industry.

Leave A Reply