বং দুনিয়া ওয়েব ডেস্ক: শেষ মুহূর্তে এসে ব্যর্থ হল ISRO-র ‘চন্দ্রযান-২’! আর একারণে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে প্রথম দেশ হিসাবে ভারতের অবতরণ করার স্বপ্ন আপাতত স্বপ্নই থেকে গেলো।

বিগত ৪৭ দিন পূর্বে ভারতের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র ISRO থেকে ‘চন্দ্রযান-২’ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল পেরিয়ে চাঁদের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিয়েছিলো। কম খরচে এবং অল্প সময়ের মধ্যে চাঁদে মহাকাশযান প্রেরণ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ISRO।

‘চন্দ্রযান-২’ কে মহাকাশে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল ৪৪ মিটার লম্বা GSLV Mk3 রকেট, যা এখনও পর্যন্ত ভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী ও ক্ষমতাবান রকেট। এর মধ্যে একটি অর্বিটার, ‘বিক্রম’ ( যা ISRO-র প্রতিষ্ঠাতা বিজ্ঞানী বিক্রম সারাভাইয়ের নামে নামকরণ করা হয়েছে) নামক একটি ল্যান্ডার এবং ‘প্রজ্ঞান’ নামের একটি মুন রোভার ছিল।

গতকাল শুক্রবার গভীর রাতে চাঁদের মাটি ছোঁয়ার কথা ছিল চন্দ্রযান-২ এর একটি অংশ বিক্রম । ভারতের প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীসহ গোটা ভারতবাসী গর্বিত চোখে তাকিয়ে ছিল মহাকাশের দিকে । রাতেই বিক্রমের সফট ল্যান্ডিং করার কথা ছিল চাঁদের এমন একটা অংশে, যেখানে আগে পৃথিবীর কেউ পৌছাতে পারেনি ।কিন্তু সেই ইতিহাস সৃষ্টির  আগেই নিখোঁজ হয়ে গিয়েছে বিক্রম। বিজ্ঞানীদের স্বান্তনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, ভারত তার বিজ্ঞানীদের জন্য গর্বিত। এখন আমাদের সাহসী হতে হবে। আমরা অবশ্যই সাহসী হব। এরপর শনিবার আশার কথা শুনিয়েছেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। তাঁরা বলেন চন্দ্রযান-২ মিশনের আয়ু এক বছর। ততদিন চাঁদকে প্রদক্ষিণ করবে অরবিটার। দূর থেকে তা চাঁদকে পর্যবেক্ষণ করবে। অর্থাৎ চন্দ্রযান-২ এর মাত্র পাঁচ শতাংশ ব্যর্থ। কিন্তু ৯৫ শতাংশ এখনও কাজ করবে। অর্থাৎ চন্দ্রযান-২ এখনই শেষ হচ্ছে না। এখনও তার অনেক বাকি আছে।

ভারতের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র  ইসরো  থেকে বলা হয়েছে, চাঁদে সফট ল্যান্ডিং করার কথা ছিল ল্যান্ডার বিক্রমের। চাঁদ থেকে সে যখন মাত্র দু’কিলোমিটারের সামান্য বেশি দূরত্বে, তখন তার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কিন্তু ল্যান্ডার বিক্রম বা রোভার প্রজ্ঞা ছিল চন্দ্রযান-২ মিশনের মাত্র পাঁচ শতাংশ। বাকি ৯৫ শতাংশে আছে চন্দ্রযান-২ অরবিটার। তা সাফল্যের সঙ্গে চাঁদকে প্রদক্ষিণ করছে।

ইসরো পাশাপাশি আরও জানিয়েছে অরবিটার চাঁদের ছবি তুলবে আগামী একবছর। ইসরোকে পাঠাবে সেই ছবি।সেই সাথে অরবিটার খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করবে বিক্রমকেও। তার ভিতরে যে রোভারটি রয়েছে, তার আয়ু ১৪ দিন।সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয়টি হল এ পর্যন্ত যতগুলি চাঁদে অভিযান চালানো হয়েছে সেই তুলনায় চন্দ্রযান-২ মিশনে খরচ হয়েছে খুব কম। তাতে ৯৫ শতাংশ সফল হওয়াও কম কথা নয়।

এই অভিযান কতটা কঠিন ছিল, তার বর্ণনা দিতে গিয়ে ইস রোর  এক বিজ্ঞানী বলেছেন, এ যেন একটা চলন্ত ট্রেন থেকে আর একটা চলন্ত ট্রেনের মধ্যেকার কোনও বস্তুকে লক্ষ্য করে গুলি করা। দু’টি ট্রেনের মধ্যেকার দূরত্ব হাজার হাজার কিলোমিটার।

উল্লেখ করা যেতে পারে ভারতের এই  চন্দ্রযান-২ মিশনে খরচ হয়েছে ১৪ কোটি ডলার। আমেরিকা যখন চাঁদে অ্যাপোলো মিশন পাঠিয়েছিল, খরচ করেছিল ১০ হাজার কোটি ডলার। ভারতের চন্দ্রযান-২ আপাতত পাঁচ শতাংশ ব্যর্থ হলেও আগামী দিনের জন্য তা গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা রেখে গেল। ভবিষ্যতে কেবল চন্দ্রাভিযান নয়, মঙ্গল অভিযানেও সাহায্য করবে চন্দ্রযান-২ এর অভিজ্ঞতা।পাশিপাশি একটা বড় দৃষ্টান্ত তুলে ধরল সারা বিশ্বের কাছে । তাই সমস্ত ভারতবাসী এখন গর্ব করে বলতে পারবে এই সফল অভিযানের কথা ।

Kajal Paul is one of the Co-Founder and writer at BongDunia. He has previously worked with some publishers and also with some organizations. He has completed Graduation on Political Science from Calcutta University and also has experience in News Media Industry.

Leave A Reply