বং দুনিয়া ওয়েব ডেস্কঃ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সব সময়ের জন্য পরামর্শ দেন শরীর সুস্থ রাখতে নিয়মিত হাঁটার কোন বিকল্প নেই । কারন হাঁটা এমনই একটি সহজ ব্যায়াম যা কিনা ছোটো-বড়ো যে কেউ নিয়মিত অভ্যাস করতে পারেন। তবে এ কথা ঠিক, বেশির ভাগ মানুষই বিশেষজ্ঞদের দেখানো নিয়ম অনুসরণ করে হাঁটেন না।
তবে নিয়মিত হাঁটলে কি কি উপকার হয় কম বেশী সকলেই আমরা জানি । বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই হাঁটার আছে অনেক উপকারিতা । এর ফলে পেশী সুগঠিত হয়, শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সুরক্ষিত থাকে ও মেরামত হয়, হজমে সাহায্য করে এবং মস্তিষ্ককেও সতেজ রেখে বার্ধক্য প্রতিরোধ করে। এমনকি হাঁটার সময় আপনি গভীর কোন চিন্তাও করতে পারেন ।
তবে ডাবলিনে ট্রিনিটি কলেজের স্নায়ুবিজ্ঞানী প্রফেসর শেন ওমারা হাঁটার জন্য বেশ কতকগুলি উপকারের কথা বলেছেন । হাঁটার ফলে যে উপকারগুলির কথা তিনি বলেছেন সেগুলি হল –
মস্তিস্ক সক্রিয় থাকাঃ প্রফেসর শেন ওমারার মতে হাঁটার সময়ে মানুষের মস্তিস্ক বেশী সক্রিয় হয় । আর মস্তিস্ক সক্রিয় থাকা মানেই সব কিছু ভাল ভাবে চিন্তা করা এবং শরীর সুস্থ থাকা । কিন্তু কেন হাঁটলে মস্তিস্ক সক্রিয় হয় ? এর কারন হিসাবে তিনি জানিয়েছেন, আমরা যখন হাঁটি তখন পেশীতে তৈরি হওয়া মলিকিউল বা অণু আমাদের মস্তিষ্ককে সচল রাখতে সাহায্য করে। এর মধ্যে একটি বিশেষ অণু মস্তিষ্কে রক্ত চলাচলে সাহায্য করে। এর ফলে আমাদের মস্তিষ্কের কোষগুলো বিকশিত হয়। ফলে হাঁটলে মস্তিষ্ক আরো শক্তিশালী হয়।
হৃদযন্ত্র বা হার্ট ভাল থাকেঃ নিয়মিত হাঁটলে মানুষের হার্টের পেশি আরও সবল হয় । প্রফেসর শেন ওমারা জানিয়েছেন হাঁটার ফলে হার্টে রক্ত সঞ্চালন ভাল হয় । উদাহরণ দিয়ে তিনি জানিয়েছেন, আমাদের পূর্বপুরুষরা, যারা শিকার করে জীবন ধারণ করতেন, তারা দিনে ১৫ থেকে ১৭ মাইল হাঁটতেন। শেন ওমারা বলেন, এখনকার মানুষের হার্টের তুলনায় তাদের হার্ট সত্যিই অনেক ভালো ছিল।
খাবার হজম করতে সাহায্যঃ প্রফেসর শেন ওমারা বলেছেন, নিয়মিত হাঁটলে আমরা যে খাবার গ্রহণ করি, তা হজমে সাহায্য করে। হাঁটা মানুষের পরিপাকতন্ত্রের জন্যও বন্ধুর মতো কাজ করে। তিনি আরও বলেন, মানুষ যখন অনেক হাঁটাচলা করে তখন তার খাবারও বেশি হজম হয়। তার পরামর্শ—কোষ্ঠকাঠিন্য কাটাতে ওষুধ না খেয়ে আপনি যদি হাঁটতে বের হন, সেটা অনেক ভালো। এর সাহায্যে আপনি খুব সহজেই হজমের সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন।
মানুষের সৃজনশীলতা বৃদ্ধিতে হাঁটাঃ প্রফেসর শেন ওমারা বলেছেন, হাঁটলে মানুষের সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পায়। হাঁটা যে আমাদের সৃজনশীলতা বৃদ্ধি করে সেটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। হাঁটার ফলে মানুষের চিন্তা শক্তি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায় । এর ফলে অনেক সমস্যা সমাধান করাও সহজ হয়। আপনি যখন কোনো কিছু নিয়ে চিন্তা করছেন তখন হতাশ হয়ে এক জায়গায় বসে না থেকে একটু হাঁটাহাঁটি করলে সেটা সমস্যা সমাধানে অনেক সহায়ক হবে ।
বিষন্নতা কাটাতে হাঁটাঃ বর্তমান যুগে বিষণ্ণতা একটা ভয়াবহ আকার নিয়েছে । এটি একটি মানসিক রোগ । বিষণ্ণতার ফলে মানুষ একসময় কাজের উৎসাহ হারিয়ে ফেলে এবং অনেক রোগে আক্রান্ত হয় । প্রফেসর শেন ওমারা জানিয়েছেন, হাঁটার একটি উপকারী দিক হলো এটি বিষণ্নতা কাটাতে সাহায্য করে। কারন, বিষণ্নতার সঙ্গে বসে থাকার সম্পর্কে রয়েছে। অন্যভাবে বললে নিয়মিত হাঁটাচলা করলে বিষণ্নতা কেটে যায়। তিনি বলেন, আপনি যদি প্রচুর হাঁটেন, রক্ত প্রবাহের ক্ষেত্রে সমস্যা থাকলে সেগুলো কমে যায়
অনিদ্রা দূর করেঃ নিয়মিত হাঁটার ফলে মানুষের পেশিতে রক্ত সঞ্চালন বেশী হয় । ফলে কোষের ভিতরে জমে থাকা ক্ষতিকর দ্রব্য বাইরে বেরিয়ে আসে । রক্তে অতিরিক্ত পরিমাণ অক্সিজেন সরবরাহ হয় । এই কারনে বিশেষজ্ঞরা রাতে খাবার পর হাঁটতে বলেন ।
তবে সকলের পক্ষে হাঁটার নিয়ম একই নয় । হাঁটার উপকারিতা সঠিকভাবে পেতে হলে সবার প্রথমে একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে চললে সবথেকে ভাল ।