বং দুনিয়া ওয়েব ডেস্কঃ এরা কেউই জীবনের সোজা পথে হাঁটতে জানেননা, থুড়ি চাননি। চেয়েছেন জীবনের ছক ভেঙে এগোতে। ব্যার্থতার ভয়কে উপেক্ষা করে লোকসমাজকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বেছে নিয়েছেন একদম অন্য পথ। মনের জোর এবং অদম্য সাহসকে সঙ্গী করে পা বাড়িয়েছেন একেবারে অন্য জগতে। জীবনধারণের জন্য বেছে নিয়েছেন সম্পূর্ণ নতুন পথ, আর পেয়েছেন অনির্বচনীয় সাফল্য। বাংলাকে ইউটিউবের জগতে করেছেন পরিচিত এবং সম্যানীয়। এঁরা আর কেউ নন, এঁরা হলেন বাংলার দুজন সফল ইউটিউবার ” ওয়ান্ডার মুন্না” খ্যাত ইন্দ্রাণী বিশ্বাস এবং “দি বং গাই” খ্যাত কিরণ দত্ত।
প্রথমে আসা যাক ” ওয়ান্ডার মুন্না” খ্যাত ইন্দ্রাণী বিশ্বাসের কথায়। ছোটো খাটো মিষ্টি চেহারার এই মেয়েটি তাঁর স্নাতক কমপ্লিট করেন মাস কমিউনিকেসানে। তারপর আর পাঁচটা ইয়াং ইন্ডিপেন্ডেন্ট মেয়েদের মতো শুরু করতে চেয়েছিল তাঁর একটা কাজের জীবন। কিন্তু একটু অন্য কিছু করার চাহিদা এবং নিজের প্রতি বিশ্বাস তাঁকে টেনে নিয়ে গিয়েছিল ইউটিউবের দিকে। বাংলায় ইউটিউব তখনও সেভাবে প্রভাব ফেলতে পারেনি। কিন্তু সারা বিশ্বে এবং ভারতে তখন সফল ইউটিউবার সংখ্যা নেহাত কম নয়। এমত অবস্থায় একটু অন্য রকম কেরিয়ার গড়ার তাগিদে তিনি বেছে নেন এই ইউটিউবকে। তিনি বুঝতে পারেননি তাঁর মধ্যেকার একটি চঞ্চল, মিশুকে এবং হাস্যরসপূর্ণ মেয়ে কি ভাবে তাঁর কাজের মধ্যে দিয়ে ফুটে উঠেছে এবং সংযোগ স্থাপন করে নিয়েছে অসংখ্য সাধারণ মানুষের মনের সাথে। তাঁর বিষয় হল কমেডি। যেটা আসলে খুবই কঠিন একটা বিষয়। খুব কম মানুষ আছেন যারা সহজে মানুষের মনের সাথে যুক্ত হতে পারেন এবং মানুষকে হাসাতে পারেন। সেই কঠিন কাজটাই অত্যন্ত সহজভাবে করে আসছেন ” ওয়ান্ডার মুন্না” খ্যাত ইন্দ্রাণী বিশ্বাস। বর্তমানে তাঁর ফ্যান ফলোইং লাখের কাছাকাছি।তাঁর চ্যানেল এখন হিন্দি এবং বাংলা সিনেমার প্রমোশনের জায়গা। সফল পরিচালক এবং অভিনেতারা তাঁর চ্যানেলকে ব্যবহার করছেন নিজেদের সিনেমার জন্য। বড় বড় ব্র্যান্ড তাদের প্রোডাকটের বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন তাঁর চ্যানেলে,যা কিছুদিন আগে পর্যন্ত ভাবাই যেতনা। ২০১৭ সালের ২০ শে মে তিনি প্রথম যোগ দেন ইউটিউবে। এতো কম সময়ের মধ্যে তিনি নিজের যোগ্যতার জোরে জায়গা করে নিয়েছে সকলের মনে। তাঁর কথায় তাঁর সহপাঠীরা যখন পরা শেষ করে চাকরী করছেন এবং চাকরীর সন্ধান চালাচ্ছেন তখন তিনি নিজেকে নিয়ে মজার ভিডিওই বানাতে ব্যস্ত। আর পরে সাহস করে সেই হাসানোর ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি প্রথম ভিডিও আপলোড করেন চ্যানেলে সেটা হল ” কিভাবে বাঙালী মায়েরা পার্লারে গিয়ে আচরণ করেন।” প্রথম ভিডিওতেই তিনি মানুষকে হাসাতে সক্ষম হন এবং এরপর আর তাঁকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তাঁর ভিডিওর বিশেষত্ব হল প্রতিটি চরিত্র তিনি নিজেই উপস্থাপন করেন। প্রায় অনেক গুলো চরিত্রই তিনি উপস্থাপন করেন এবং প্রতিটাই নিজে অভিনয় করেন। তাঁর কাছে অনুপ্রেরণা হল আরও দুজন বিখ্যাত ইউটিউবার ভুবন বাম এবং সুপার ওম্যান খাত লিলি সিং। বর্তমানে তিনি সব জায়গায় চর্চার কেন্দ্র বিন্দুতে এবং বাংলার স্বনামধন্য নিউজ চ্যানেল ২৪ ঘণ্টায় সাক্ষাৎকারই শুধু দিচ্ছেন না তাঁকে নিয়ে আলোচনা সভাও হচ্ছে। এটা যেন তাঁর কাছে অনেকটা বড় পাওনা। দর্শককে আরও নতুন নতুন চমক তাঁর ভিডিওর মাধ্যমে উপহার দেবার জন্য তিনি একেবারে তৈরি।
এর পর আসা যাক তথাকথিত টিন এজার থেকে একটু আলাদা পথের পথিক বাংলার একজন সফল ইউটিউবার কিরণ দত্ত। যিনি সবার কাছে বেশী পরিচিত ” দি বং গাই” হিসেবে। এই মহাশয়ের গল্পতো আরও চমকপ্রদ। তিনি আদতে একজন ইঞ্জিনিয়ার। তবে আর ৫ জন ইঞ্জিনিয়ারের মত গতানুগতিক পথে না হেঁটে একটু আলাদা পথে হাঁটার চেষ্টায় তিনি বেছে নেন ইউটিউব। তাঁর ইউটিউবের জার্নি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন যে এটা নাকি খুব সহজ ভাবেই এসেছে তাঁর জীবনে। তিনি বরাবরই ভালোবাসতেন হাসতে এবং হাসাতে। এই ভালোবাসা থেকেই তাঁর এই চ্যানেলের জন্ম। এই চ্যানেলে মূলত তিনি হাসির ভিডিও ছাড়াও করেন বিভিন্ন সিনেমার হাস্যসকর রিভিউ। তিনি ২০১৫ সালে ইউটিউবে ডেবিউ করেন এবং তারপর থেকে খুবই তাড়াতাড়ি তাঁর চ্যানেল বেড়ে ওঠে। বর্তমানে তাঁর দেড় লাখের বেশী অনুরাগী এবং ভক্তের সংখ্যাতো আগুনতি। এছাড়াও তিনি একজন খুব ভালো গায়ক। কিছুদিন আগেই প্রকাশ্যে এসেছে তাঁর মিউজিক ভিডিও। আর এর সাথে তিনি গেমিং এও পটু। আলাদা চ্যানেলও তিনি লঞ্চ করেছেন এই গেমিং এর। সব মিলিয়ে তাঁর জীবন এখন অনেকটা পরিপূর্ণ। হয়ত ইঞ্জিনিয়ার তকমা নিয়ে কোনও তথাকথিত চাকরী বেছে নিলে জীবনটা এই দিকে মোড় নিতনা। তিনি অত্যন্ত সহজ একটি মানুষ এবং আদ্যপান্ত একজন বাঙালী। তবে নিজের কাজ এবং ভক্তদের প্রতি দায়িত্ববান।
এই দুইজন ভিন্ন চরিত্রের মানুষ হয়েও একজায়গায় যেন দুজনেই যুক্ত। সেটা হল ক্রিয়েটিভিটি। দুজনেই তাদের প্রমিসিং কেরিয়ার ছেড়ে জীবনে রিস্ক নিয়েছে এবং তাতে ভীষণ ভাবে সফলও হয়েছে। সমাজকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সফলতার সাথে এগিয়ে গিয়েছে নিজের প্যাশানকে অনুসরণ করে। সাধারণ বাঙালী ছেলেমেয়েদের চিন্তা ভাবনাকে চ্যালেঞ্জ করেছে প্রতি পদে এবং বার বার প্রমাণ করেছে যারা নিয়ম ভাঙ্গতে পারে তারাই একমাত্র টিকে থাকতে পারে এই সমাজে এবং এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে সমাজকে। আজ লাখ লাখ মানুষ এই দুজনের ভক্ত। সেটা এমনিতে হয়নি বা একবারে হয়নি। তাতে লেগেছে সময়, ধৈর্য এবং পরিশ্রম। আশা করা যায় আগামী দিনে এঁরা আরও অসংখ্য যুবাকে অনুপ্রেরণা দেবে নিজের ভালোবাসার কেরিয়ার গড়ার এবং বাংলাকে পৌঁছে দেবে বিশ্বের দরবারে।