বং দুনিয়া ওয়েব ডেস্কঃ কে না দেখেছে আমীর খানের ‘থ্রি ইডিয়টস’ সিনেমাটি । অনেকেই বেশ কয়েকবার দেখেছেন । সেখানে গল্পের মূল চরিত্র র্যাঞ্চোর ভূমিকায় অভিনয় করেন আমীর খান । তার চরিত্রের নাম ছিল ফুংসুখ ওয়াংড়ু। কিন্তু বাস্তবেও সেই লাদাখেই রয়েছেন ফুংসুখ ওয়াংড়ু ওরফে র্যাঞ্চো । বাস্তবে যাঁর নাম সোনম ওয়াংচুক।এবার সেই সোনম ওয়াংচুক ওরফে লাদাখের র্যাঞ্চো গেছিলেন বাংলাদেশের ঢাকায় একটি আর্ট সামিতের অনুষ্ঠানে যোগদান করার জন্য ।
সিনেমার গল্পে আমাদের সকলের প্রিয় র্যাঞ্চোর কর্মকাণ্ড আমাদের সকলের মনের মধ্যে গেঁথে আছে । কিন্তু বাস্তবের র্যাঞ্চো সোনম ওয়াংচুকও কোন অংশে কম নন । তিনিও লাদাখেই একটি স্কুল চালান অনেকটা সেই সিনেমার র্যাঞ্চোর স্কুলের মতই । চিন্তাভাবনা একেবারেই মিলে যায় সিনেমার নায়কের সাথে । স্কুল চালানোর পাশাপাশি সোনম ওয়াংচুক ওরফে লাদাখের র্যাঞ্চো একের পর এক বিল্পব ঘটিয়েছেন । শুকিয়ে যাওয়া মরুভূমিকে আবার সবুজ শস্যে মুড়ে দিতে অভিনব বিজ্ঞানের সাহায্য নিয়েছেন বিজ্ঞানী সোনম ওয়াংচুক। বিজ্ঞানের সফল প্রয়োগে তিনি একাধিক কৃত্রিম হিমবাহ তৈরি করেছেন । যার বরফগলা জল প্রখর গ্রীষ্মে লাদাখের মানুষকে খরার হাত থেকে বাঁচতে সাহায্য করে।
এর জন্য সর্ব প্রথম ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে প্রথম তুষারস্তূপটি তৈরি করেন সোনম ওয়াংচুক। মাত্র ২০ ফিট উচ্চতার সেই স্তূপ মে মাসে গলবে বলে মনে করা হলেও আরও ২০ দিন সময় নিয়েছিল। দ্বিতীয় বার ৫০০০ গাছের এক বনভূমির কাছে কৃত্রিম হিমবাহ তৈরি করেন ওয়াংচুক। সেবার গোটা গ্রীষ্ম ওই বনাঞ্চলে জল সিঞচন করতে সক্ষম হয় বরফগলা জলস্রোত। তাঁর এই অসামান্য কীর্তিকে ২০১৬ সালে স্বীকৃতি দিয়েছে রোলেক্স ইনোভেশন গ্র্যান্ট। এ সম্মান দেওয়া হয় সেই সব মানুষকেকে, যাঁদের প্রচেষ্টা থাকে পৃথিবীকে আরও একটু বাসোপযোগী করে তোলার। পুরস্কারের অর্থ কাজে লাগিয়ে এবার ১০০ ফিট উচ্চতার মোট ২০টি বরফস্তূপ তৈরির কাজে হাত দিয়েছেন বিজ্ঞানী।
সোনম ওয়াংচুকের ছোট বেলা অনেকটা র্যাঞ্চোর সাথে মিলে যায় । লাদাখের একটি ছোট্ট গ্রাম, উলেয় তোকপো-তে জন্ম সোনমের। সাড়ে ৮ বছর বয়স পর্যন্ত মায়ের কাছেই পড়াশোনা শেখা। তার পর স্কুলে ভর্তি হলেও, খুব অল্প দিনেই সেখান থেকে পালিয়ে দিল্লি চলে যান। পরবর্তীকালে, শ্রীনগরের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি’ থেকে মেক্যানিক্যাল ইঞ্জিনায়ারিং পাশ করেন ১৯৮৭ সালে। সেই বছরই লাদাখে ফিরে গিয়ে, সেখানকার শিশুদের জন্য তৈরি করেন নিজের মনের মতো স্কুল, ‘র্যাঞ্চো’র স্কুলের মতোই। শুধু তাই নয়, লাদাখে তাঁর উদ্যোগে চালু হতে চলেছে এক ‘বিকল্প বিশ্ববিদ্যালয়’, যেখানে প্রাকৃতিক উপাদানের সাহায্যে স্থানীয় পরিবেশ সহায়ক প্রকল্প গড়তে উত্সাহী হবেন পড়ুয়ারা।
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় এসে বাস্তবের র্যাঞ্চো বলেন, ‘বড় বড় শহরের মানুষের জীবনাচরণ বদলাতে হবে। গাড়ির বদলে সাইকেলে চড়া, বিমানের বদলে রেলগাড়ি এবং সবজিভোজী হলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। মুম্বই, নিউইয়র্ক, ঢাকার মতো বড় বড় শহরের লোকেরা সাধারণ জীবন যাপন করলে আমরা পর্বত ও সমুদ্রতীরের মানুষেরা ভালোভাবে বাঁচতে পারব।’ ‘স্টুডেন্টস এডুকেশন অ্যান্ড কালচারাল মুভমেন্ট অব লাদাখ’ নামের একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন সোনম ওয়াংচুক। পরিবেশের ক্ষতি হতে পারে, এমন কিছুই নেই সেই স্কুলে। অদ্ভুত সেই স্কুলে পড়ার যোগ্যতা ‘ম্যাট্রিক ফেল’।