বং দুনিয়া ওয়েব ডেস্কঃ দিনে দিনে বাড়ছে আতঙ্কের পরিমাণ । সাধারন মানুষ পাগলের মত আচরণ করে ফেলছেন অনেক সময় । এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত এমন সব পরামর্শ প্রকাশ পাচ্ছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন । এই মুহূর্তে গোটা বিশ্বে ভয়াবহ আঁকার ধারন করেছে করোনা পরিস্থিতি । পরিসংখ্যানে জানা যাচ্ছে প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং মৃতের সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার জন। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক যে সব ভিত্তিহীন পরামর্শ সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়াচ্ছে এবং যে পরামর্শগুলিতে কান দেবার কোন প্রয়োজন নেই সেই গুলি ।
সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু প্রকাশিত হলে অনেকেই সেই প্রকাশিত খবর বা পরামর্শ বিশ্বাস করেন এবং অনুসরণ করার চেষ্টা করেন । কিন্তু আদতে সেই পরামর্শগুলি মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করে । অথচ করোনা সংক্রমণ এমনই একটা ঈর্ষাকাতর বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, যে সামান্য ভুলেই ঘটে যেতে পারে মহা বিপদ । অথচ প্রাকাশিত এসব পরামর্শ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পরীক্ষিত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে দেয়া হচ্ছে না। বিবিসির অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বিভাগ ‘রিয়ালিটি চেক’ সংক্রমণ ঠেকানোর এরকম কয়েকটি দাবি পরীক্ষা করে দেখেছে। সেগুলি হল –
নিঃশ্বাস বন্ধ করে পরীক্ষাঃ
দাবি করা হচ্ছে আপনি যদি ১০ সেকেন্ড নিঃশ্বাস বন্ধ করে থাকেন এবং সেসময় যদি আপনি কোনো কষ্ট অনুভব না করেন, তাহলে বুঝতে হবে আপনার ফুসফুসে কোনো ফাইব্রোসিস নেই। অর্থাৎ আপনার ফুসফুসের টিস্যু বা কলায় কোনো ক্ষতি হয়নি, তা স্বাভাবিকের তুলনায় মোটা হয়ে যায়নি। সোজা কথায় আপনার ফুসফুসে সংক্রমণ নেই। অথচ এই পরামর্শ সঠিক নয় । কারণ ফুসফুসে ফাইব্রোসিস হয়েছে কি না তা নিঃশ্বাস বন্ধ করে পরীক্ষা করা যায় না। মাথায় রাখতে হবে, কোভিড-১৯ সংক্রমণের কোনো উপসর্গ নয়। করোনা সংক্রমণ হলে বা আক্রান্ত হলে তার প্রধান উপসর্গ হচ্ছে খুবই বেশি জ্বর এবং সঙ্গে একনাগাড়ে কাশি।
ঘরে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরির প্রণালীঃ
অনেকেই দাবী করছেন ঘরে বসেই বানানো যাচ্ছে স্যানিটাইজার । অথচ বাজারে অনেক সময়ই অমিল স্যানিটাইজার । হাত জীবাণুমুক্ত করার জন্য ঘরে বসেই স্যানিটাইজার তৈরির যেসব প্রণালী ইন্টারনেটে ছড়ানো হচ্ছে সেগুলো থেকে সাবধান। কোনো আসবাবপত্র বা টেবিল বা যেসব জিনিসে আপনি হাত দিচ্ছেন – সেগুলো জীবাণুমুক্ত করার জন্য মোছার যেসব বস্তু পাওয়া যায় সেগুলো আপনার ত্বকের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
জীবাণুনাশক ভডকা ভা অ্যালকোহলঃ
সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা যাচ্ছে যে, অনেকেই এমন দাবি করছেন যে মদ্যপানীয় ‘ভডকা’ জীবাণুনাশকের কাজ করবে। আদতেই তা নয়। ভডকা-তে যথেষ্ট পরিমাণ অ্যালকোহল নেই যা জীবাণু মারার জন্য প্রয়োজন।
কোন কোন ক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের আয়ু এক মাসঃ
অনলাইনে ছড়ানো খবরে দাবি করা হচ্ছে কোনো সারফেসের ওপর বা যেকোনো জায়গার ওপর ভাইরাস এক মাস পর্যন্ত বেঁচে থাকে। এটা প্রায় অসম্ভব। কারণ, সার্স বা মার্স-এর মতো করোনাভাইরাসে নিয়ে আগে যেসব গবেষণা হয়েছে তাতে দেখা গেছে, কঠিন কোনো জায়গার ওপর যেমন ধাতুর তৈরি, কাঁচ বা প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি কোনো সারফেসের ওপর করোনাভাইরাসের জীবাণু বেঁচে থাকে প্রায় দু ঘণ্টা থেকে সর্বোচ্চ নয় দিন। ব্রিটিশ বিজ্ঞানীদের গবেষণাকে উদ্ধৃত করে ব্রিটিশ সরকার বলেছে কোনো কঠিন বস্তু স্পর্শ করলে যেমন টেবিলের ওপর, হ্যান্ড রেলিং বা এধরনের অন্য কিছু, সেখান থেকে সংক্রমণের ঝুঁকি ৭২ ঘণ্টা পর ব্যাপকভাবে কমে যায়।
গোমূত্র পানঃ
ভারতে কিছু হিন্দু গোষ্ঠী মনে করে গোমূত্রের এমন কিছু চিকিৎসা বা ভেজস গুণ রয়েছে যা করোনাভাইরাস এবং অন্যান্য রোগ প্রতিরোধ করতে পারে। অথচ বিশেষজ্ঞরা বলছেন গোমূত্রের এমন কোনো গুণ নেই।তারা বলছেন, গোমূত্র যেমন ক্যানসার সারায় না, তেমনি গোমূত্র কোভিড-১৯ তথা করোনা ভাইরাসকে ঠেকাতে সক্ষম এমন কোনো তথ্যপ্রমাণ নেই।
মানুষ থেকে মানুষের দেহে এই ভাইরাস কীভাবে ছড়ায় সে বিষয়ে এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। এরই মধ্যে এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হাত ধোয়া বা পরস্পরের কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলার মত কিছু নির্দেশাবলী জারি করেছে। কাজেই সবচেয়ে ভালো পরামর্শ হলো: ভালো করে ঘন ঘন হাত ধোয়া, আর সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করা।
সুত্রঃ বিবিসি