বং দুনিয়া ওয়েব ডেস্কঃ দেশ জুড়ে করোনা পরিস্থিতি সামাল দেবার জন্য টানা লকডাউন আর করোনা সংক্রমণের ভয়ে ভারতীয় অর্থনীতিতে এক অদ্ভুত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে । ব্যাঙ্কের আয়ের প্রধান উৎস ঋণ দেওয়া । প্রচুর পরিমাণে টাকার যোগান থাকলেও এই মুহূর্তে ঋণ নেবার মত গ্রাহক খুঁজে পাচ্ছে না ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ । ফলে কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে ভারতীয় অর্থনীতিতে।
ব্যাঙ্ক ঋণের জন্য হা পিত্যেশ করে বসে থাকতে হত । কিন্তু করোনার কারনে একেবারে উল্টোপুরান ! এবার ব্যাঙ্ক প্রচুর পরিমাণে টাকা নিয়ে বসে আছে, অথচ ঋণের আবেদন জমা পড়ছে না । করোনা পরিস্থিতি এমন এক সংকটময় অবস্থা সৃষ্টি করেছে, যার দিশা খুঁজে পাচ্ছে না শিল্প-মহলও। এই মুহূর্তে বাজার চলছে কঠিন অনিশ্চয়তার মধ্যে দিয়ে । সাধারন মানুষের হাতে নগদ টাকার যোগান অনেকটাই কম । নতুন করে ঝুঁকি নিতে ভয় পাচ্ছে বেশিরভাগ ব্যবসায়ী এবং শিল্পপতি ।
এদিকে ব্যাঙ্কে টাকা এসে জমা পড়ছে নিয়মিত । সেই টাকা ব্যাঙ্ক বিনিয়োগ না করতে পেরে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আরও ফুলে ফেঁপে উঠছে । বিনিয়গের রাস্তা না থাকায় নিরুপায় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সেই টাকা সরকারকেই বেশি-বেশি করে ঋণ দিয়ে চলেছে । চলতি অর্থ বর্ষে মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত এ দেশের শিল্পক্ষেত্রে মোট ব্যাঙ্ক-ঋণের পরিমাণ কমেছে ১.৫ শতাংশ। আরবিআই-এর তথ্যে দেখা যাচ্ছে, সার শিল্পে মোট ব্যাঙ্ক-ঋণের পরিমাণ কমেছে ২৯ শতাংশ, রাসায়নিক ও রাসায়নিক পণ্য তৈরির শিল্পে মোট ঋণ কমেছে মাইনাস ১০ শতাংশ, কাচ ও কাচের জিনিসপত্র তৈরির শিল্পে মোট ঋণ কমেছে ৭ শতাংশ। একই ভাবে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ কমেছে নির্মাণ শিল্পে ৩.৭ শতাংশ, রত্ন ও অলঙ্কার শিল্পেও ৩.৭ শতাংশ এবং চর্মশিল্পে ৪.৪ শতাংশ।
কেন গ্রাহকরা ঋণ নিচ্ছে না ? এ প্রসঙ্গে অ্যাসোচ্যাম-এর সেক্রেটারি জেনারেল দীপক সুদ জানিয়েছেন, ‘ঋণ পাওয়া নয়, আজকের দিনে মূল সমস্যা হল ধার শোধ করা। দেশের বিপুল সংখ্যক শিল্পের যত উত্পাদন-ক্ষমতা, বাস্তবে কাজে লাগানো হচ্ছে তার অর্ধেকেরও কম। এর পরেও যদি তাদের ব্যালান্স শিটে চাপ পড়ে, তা হলে তার পরিণাম হবে খুবই খারাপ।’
আর্থিক বাজারে যেটা সমস্যা তৈরি করছে, তা হল রিভার্স রেপো রেট। রিভার্স রেপো রেটে সুদের যে-হার, সেই হারেই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে টাকা জমা রাখে ব্যাঙ্কগুলি। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মানিটরি কমিটি যদি তাদের বৈঠকে সরকারের বাড়তি ঋণের চাহিদা জোগান দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নেয়, তা হলেও ব্যাঙ্ক-ব্যবস্থায় থেকে যাবে নগদের স্রোত, যা ধার নেওয়ার লোক বাজারে নেই। এই পরিস্থিতিতে বণিক সভার আশা, নিশ্চয়ই এই কঠিন অবস্থা থেকে বেরোনোর রাস্তা দেখাবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।