বং দুনিয়া ওয়েব ডেস্ক: সারা বিশ্ব তাকিয়ে ছিল মহাকাশের দিকে । ইতিহাসের পথে একদম অন্তিম মুহূর্তে এসে থেমে গিয়েছিল চন্দ্রযান-২ এর 100% সাফল্য । চাঁদ থেকে ল্যান্ডার বিক্রম যখন মাত্র দু’কিলোমিটারের কিছু বেশি দূরে তখনই ল্যান্ডার বিক্রমের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বিজ্ঞানীদের । অনেক চেষ্টার পরেও যখন তার সঙ্গে যোগাযোগ করা গেল না, তখন হতাশ হয়ে পড়েন বিজ্ঞানীরা । সেখানে ভারতের ইতিহাস তৈরির পথে সাক্ষী থাকার জন্য নরেন্দ্র মোদী হাজির ছিলেন । প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার রাতেই ইসরোর কন্ট্রোল রুমে বিজ্ঞানীদের সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, বি কারেজিয়াস।
সারা দেশ জুড়ে একটা আবেগ মিশে গিয়েছিল এই অভিযানকে ঘিরে । এর আগেও তো মহাকাশ অভিযান হয়েছে । কিন্তু একসাথে এই আবেগ এতকাল চোখে পড়েনি । বিজ্ঞানীদের পাশাপাশি সাধারন মানুষ সামিল হয়েছিল একসাথে এই অভিযানের সাক্ষী থাকার জন্য ।রবিবারের দুপুরে ঘোষণা করেছিল ইসরো যে বিক্রম চাঁদ ছুঁয়েছে । অরবিটারের পাঠানো ছবি বলছে, প্রায় ঠিকঠাকই নেমে গিয়েছিল চন্দ্রযান ২-এর ল্যান্ডার বিক্রম ।
শুধু তা-ই নয়। ইসরোর একটি সূত্র দাবি করেছে, চাঁদের পিঠে যেখানে নামার কথা ছিল বিক্রমের, সেখান থেকে মাত্র আধ কিলোমিটার দূরের শেষ অবস্থান চিহ্নিত করা গিয়েছে বিক্রমের। বিক্রম কাত হয়ে পড়লেও, তার ভিতরে দিব্য রয়েছে রোভার প্রজ্ঞানও। কাজও করছে স্বাভাবিক ভাবে। অরবিটারের পাঠানো ছবি তা-ই বলছে। কিন্তু কোনও ভাবেই সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করা যাচ্ছে না ল্যান্ডার বিক্রমের সঙ্গে।
অরবিটারের সঙ্গে যে ক্যামেরাটি পাঠানো হয়েছে, তাতে রয়েছে অত্যন্ত হাই রেজোলিউশনের লেন্স। ফলে তার পাঠানো ছবিগুলি সারা বিশ্বের বিজ্ঞান মহলের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ,এ কথা আগেই জানিয়েছিল ইসরো। তাই তার পাঠানো ছবি এবং ডেটাইএখন বিস্তারিত ভাবে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
শুক্রবার গভীর রাতে চাঁদের পিঠে নামার সময়ে যখন বিক্রমের সঙ্গে ইসরোর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তখন বিজ্ঞানীরা আদৌ নিশ্চিত ছিলেন না, ল্যান্ডার বিক্রম আস্ত আছে কি না। আশঙ্কা করা হয়েছিল, কক্ষপথ ছেড়ে ছিটকে বেরিয়েও যেতে পারে ল্যান্ডার। অনেকেই ভেঙে পড়েছিলেন, চন্দ্রযান ২ ব্যর্থ হয়েছে ভেবে। কিন্তু অরবিটার ছবি পাঠাতে থাকে।
রবিবার সকালে সেই অরবিটারের ছবিতে আচমকাই ধরা পড়ে বিক্রমের ছবি । তবে ঠিক কী অবস্থায় আছে, তা বোঝা যায়নি গত কাল। কিন্তু সোমবার বিজ্ঞানীরা দাবি করলেন, অরবিটারের পাঠানো আরও নানা রকম ছবি বিশ্লেষণ করে শেষমেশ জানা গিয়েছে, আস্ত আছে বিক্রম, ভেঙে যায়নি । তবে সফট ল্যান্ডিং না করায় বিক্রম কিছুটা বেকায়দায় আছড়ে পড়েছে চাঁদের বুকে । তবে সবচেয়ে বেশি আশার কথা বিক্রমের কাঠামো এখনও সুরক্ষিত আছে ।
ইস রোর বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করছে বিক্রমের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া যোগাযোগ ফের চালু করার জন্য । বিজ্ঞানীদের সেই চেষ্টা সফল হলেই অনেকটাই কেটে যাবে দুশ্চিন্তা । পাশাপাশি চন্দ্রযান পাঠানোর উদ্দেশ্য সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে আরও ।
বিক্রমের ভিতরেই আছে প্রজ্ঞান । ঠিকঠাক মত বিক্রম ল্যান্ডিং করলে এই প্রজ্ঞান চাঁদের বুকে নেমে নানা নমুনা সং গ্রহ করবে এবং তা বিশ্লেষণ করবে । কিন্তু সফট ল্যান্ডিং না করার ফলে বিক্রম একদিকে হেলে পড়েছে বলে ইস রো জানাল । চন্দ্রযান ২-এর সঙ্গে জড়িত এক আধিকারিক বলেন, “যদি না ল্যান্ডার বিক্রমের সমস্তটা অক্ষত থাকে, তা হলে নতুন করে যোগাযোগ স্থাপন করা খুব কঠিন হবে । সুযোগ কমই আছে বলা যায়। সফ্ট ল্যান্ডিং ঠিকঠাক হলে বিক্রম অক্ষত থাকত। সেটা হয়নি বলেই দুশ্চিন্তা বেড়েছে। কিন্তু আজকের ছবি আবার অনেকটাই স্বস্তি দিয়েছে। বিক্রম গোটাই আছে, ভাঙেনি। এবার দেখা যাক, যোগাযোগ ফেরে কি না।”