বং দুনিয়া ওয়েব ডেস্কঃ সকলকে দুঃখের সাগরে ভাসিয়ে অনন্তের পথের পথিক হয়ে যাত্রা শুরু করলেন সাহিত্য একাডেমী এবং পদ্মশ্রী পুরস্কারসহ নানান সন্মানে ভূষিতা সাহিত্যিক নবনীতা দেব সেন । মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছরে ।
৮১ বছর বয়সে দীর্ঘ দিন মারণ ব্যাধি ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করতে করতে অবশেষে হার স্বীকার করে প্রয়াত হলেন সাহিত্যিক নবনীতা দেব সেন । গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হিন্দুস্থান পার্কে তাঁদের ‘ভালবাসা’ বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি । ১৯৩৮ সালের জানুয়ারি মাসে জন্ম গ্রহণ করেন কলকাতায় । বাবার নাম কবি নরেন্দ্র দেব এবং মা রাধারানী দেব । গত পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলা সাহিত্যেকে সাহিত্যের নানা মণিমাণিক্য দিয়ে সমৃদ্ধ করে গেছেন নবনীতা ।
পড়াশুনায় বরাবরের জন্য মেধাবী ছাত্রী ছিলেন নবনীতা দেব সেন । বাবা মায়ের সান্নিধ্যে সাহিত্যের পরিবেশের মধ্যে বড় হয়েছিলেন কলকাতার এই কৃতি সন্তান । স্কুলের পড়াশোনা শেষ করেন কলকাতার গোখেল মেমোরিয়াল স্কুল থেকে । এর পর প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করে যাদবপুর বিশ্ব বিদ্যালয়ে এম এ-তে ভর্তি হন । সেখান থেকে ১৯৫৮ সালে পাশ করে বেরিয়ে উচ্চতর পড়াশোনার জন্য পাড়ি দেন বিদেশে । হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিসটিংশন নিয়ে এমএ পাশ করেন । তারপর পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। পোস্ট ডক্টরেট করেন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যাল থেকে । সেখান থেকে আবার কলকাতায় ফিরে আসেন তিনি এবং শিক্ষকতাকে নিজের পেশা হিসাবে বেছে নেন । ১৯৭৫ থেকে ২০০২ পর্যন্ত দীর্ঘ সময় অধ্যাপনা করেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামুলক সাহিত্য বিভাগে। এছাড়াও বিদেশের বেশ কয়েকটি বিশ্ব বিদ্যালয়ে “ভিজিটিং” অধ্যাপক হিসাবে কাজ করেছেন ।
যাদবপুর বিশ্ব বিদ্যালয়ে পড়াশুনা চলাকালীন তিনি সাহিত্যের দিকে ঝুকে আসেন । ১৯৫৯ সালে প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘প্রথম প্রত্যয়‘ । প্রায় পাঁচ দশকেরও বেশী সময় ধরে তিনি করে গেছেন সাহিত্য সেবা । নবনীতা দেব সেনের লেখনী থেকে বেরিয়ে এসেছে একের পর এক সাহিত্যের মণি মানিক্য । কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস, রম্য রচনা, ভ্রমণ কাহিনী, জীবনী কি নেই তাঁর সাহিত্য সম্ভারে ! আত্মজীবনী মূলক রম্যরচনা ‘নটী নবনীতা‘ গ্রন্থের জন্যে ১৯৯৯ সালে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পান নবনীতা দেবসেন।
বর্তমানে এই মহান সাহিত্যিকের দুই মেয়ে । তারা একজন সাংবাদিক এবং অপর জন অভিনয়কে পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছেন । পরিবার সূত্র থেকে জানা গেছে, দীর্ঘ দিন মারণ ব্যাধি ক্যান্সারে ভুগছিলেন তিনি । কিন্তু তাঁর লেখনীকে থামাতে পারেনি দুরারোগ্য ব্যাধি ।