বং দুনিয়া ওয়েব ডেস্ক: যে কোন প্রাণীর বেঁচে থাকতে গেলে দরকার অক্সিজেন । অক্সিজেন ছাড়া শুধুমাত্র মানুষ কেন, কোন প্রাণী বাঁচতে পারবে না । আর এই অক্সিজেনের যোগান দেয় সবুজ গাছপালা । পরিসংখ্যান বলছে পৃথিবীর কুড়ি শতাংশ অক্সিজেনের যোগান আসে ব্রাজিলের সুবিশাল অ্যামাজন জঙ্গল থেকে । দক্ষিণ আমেরিকায়, আমাজন নদীর অববাহিকায় প্রায় ৫৫ লক্ষ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত আমাজন রেনফরেস্ট ।ন’টি দেশ– ব্রাজিল, পেরু, কলম্বিয়া, ভেনেজুয়েলা, ইকুয়েডর, বলিভিয়া, গায়ানা, সুরিনাম ও ফরাসি গায়ানা জুড়ে ছড়িয়ে এই বনভূমি। যার কারণে এক অর্থে অ্যামাজন কে পৃথিবীর ফুসফুস বলা হয় ।
ভয়াবহ দাবানল লেগেছে অ্যামাজনের জঙ্গলে । খুব দ্রুত হারে আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার মাইল বনভূমি । সবুজ গাছপালার পাশাপাশি সেখানকার জীবজন্তু মারা পড়ছে ।তৈরি হচ্ছে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস । এমন ভাবে চলতে থাকলে আগামী দিনে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হতে বাধ্য । সপ্তাহ তিনেক হতে চলছে এই অবস্থার। সারা বিশ্ব জুড়ে এ নিয়ে আলোচনা হলেও, আগুন নেভানোর ব্যবস্থা করা যায়নি কোনও ভাবেই। এই কাজে এই প্রথম এগিয়ে এল বলিভিয়া।
বলিভিয়ার রাষ্ট্রপতি ইভো মোরালেস আগেই সাহায্যের কথা বলেছিল ব্রাজিলকে। কিন্তু তখনও সে ভাবে নড়ে বসেনি ব্রাজিলের সরকার। এবার দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। তাই দাবানলের এই ছড়িয়ে পড়া রুখতে সুপার ট্যাঙ্কার বোয়িং বিমান ৭৪৭ ভাড়া করার কথা ঘোষণা করেন ইভো। শুক্রবার থেকেই আগুন আয়ত্বে আনতে আকাশ পথে ওই ট্যাঙ্কার নিয়ে অভিযান শুরু হয়েছে।
নির্দিষ্ট ওই জলবাহী ‘সুপার ট্যাঙ্কার’টি-তে সব চেয়ে বেশি জল ধরে। ১১৫ হাজার লিটার জল নিয়ে উড়তে পারে সেটি। আগুনে পুড়তে থাকা আমাজন জঙ্গলের উপরে ওই বিমান থেকেই জল ঢালা হবে। ট্যাঙ্কারটি ওড়ার আগে একটি বায়ুসেনার বিমান উড়ে গিয়ে চিহ্নিত করে নেয় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলি। তার পরে সেই অঞ্চল দিয়ে জল ঢালতে ঢালতে উড়ে যায় ‘সুপার ট্যাঙ্কার’। এই ট্যাঙ্কারের সঙ্গে আছে তিনটি অতিরিক্ত হেলিকপ্টার। আছেন ৫০০ জন ফায়ার ফাইটার সেনা, যাঁরা প্রয়োজনে জঙ্গলে নেমে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে।
সারা পৃথিবীকে অক্সিজেনের জোগান দেওয়া ছাড়াও গ্রিনহাউস গ্যাস নিয়ন্ত্রণে রাখে এই অরণ্য। এখন এই দাবানলের ফলে সেখান থেকেই বিপুল পরিমাণে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গত হচ্ছে। বিষিয়ে যাচ্ছে পরিবেশ। সেই সঙ্গে ভেঙে পড়ছে অরণ্যের বাস্তুতন্ত্রও। পৃথিবীর সব চেয়ে জীব বৈচিত্র্যে ভরপুর এই অরণ্যে ২৫ লক্ষের বেশি পতঙ্গের প্রজাতি, ৪০ হাজারের বেশি গাছের প্রজাতি, দু’হাজার পাখি ও স্তন্যপায়ী প্রজাতি এবং ২,২০০ প্রজাতির মাছের বাস এই আমাজনে। আগুনে পুড়ে যাচ্ছে তারাও।