বং দুনিয়া ওয়েব ডেস্ক: ছোট ছোট ছেলে মেয়ের কপালে জুটতো নুন ভাত । কপাল যদি খুব ভালো থাকতো তাহলে হয়তো আলু সিদ্ধ । এই ছিল মিড ডে মিলের মেনু । মিড ডে মিল এর মেনু তে কি কি থাকবে রাজ্য সরকার নির্দিষ্ট করে দেয় । কিন্তু তা সত্ত্বেও হুগলির জেলা সদর চুঁচুড়ার বাণীমন্দির প্রাথমিক স্কুলে মিড ডে মিলে এটাই মেনু হয়ে গিয়েছিল। খবর পেয়ে গত ১৯ তারিখ ওই স্কুলে ছুটে যান হুগলির বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। তারপর খবরটি সকলের গোচরে আসে । সোশ্যাল মিডিয়া, বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যম এবং সংবাদপত্রের মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যে সেই খবর সকলের কাছে চলে যায় । চারিদিকে হইচইপড়ে যায় ছোট ছোট বাচ্চাদের মিড ডে মিলের মেনু হিসেবে স্কুল কর্তৃপক্ষ এ কি খাওয়াচ্ছে ? সেখানে গিয়ে সাংবাদিকদের সামনে লকেট চট্টোপাধ্যায় মিড-ডে-মিল নিয়ে সরকারের গাফিলতির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানান ।
তারপরই টনক নড়ে নবান্নের। পার্থ চট্টোপাধ্যায় জরুরী ভিত্তিতে ঘটনাটি তদন্তের নির্দেশ দেন এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেন । আর তারপরই শুরু হয়ে গিয়েছে জেলায় জেলায় প্রতিযোগিতা। এই জেলা এক দিন ডিম এক দিন মাছ খাওয়ালে আর একটা জেলা বলছে তারা দু’দিন ডিম একদিন মাংস খাওয়াবে। সব দেখে অনেকেই বলছেন, ভাগ্যিস লকেট গিয়েছিলেন ! না হলে আজও হয়তো বাচ্চাগুলোকে নুন ভাত খেয়ে ক্লাস করতে হতো।
এমনিতে মিড ডে মিল নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ভুরি ভুরি।বাচ্চাদের মিড ডে মিল নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই । কোথাও মিড ডে মিলের চাল অন্য জায়গায় বিক্রি হচ্ছে, আবার কোথাও বাচ্চাদের খুবই নিম্নমানের খাবার খাওয়ানো হচ্ছে । কোথাও দেখা যায় গোটা ডিমের বদলে ছাত্রছাত্রীদের পাতে পড়ছে অর্ধেক ডিম। বাণী মন্দির স্কুলে গিয়ে লকেটও অভিযোগ তুলেছিলেন দুর্নীতির। বলেছিলেন, ট্রে ট্রে ডিম এবং বস্তা বস্তা চালের কোনও হদিশ নেই।
লকেটের নেতৃত্বে বাণীমন্দিরের ঘটনা সামনে আসার পরই রাজ্যের একাধিক জেলায় মিড ডে মিলের করুণ ছবি উঠে আসে। কিন্তু তারপর থেকেই ছাত্রছাত্রীদের পাত ভরিয়ে দিতে যেন প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গিয়েছে জেলায় জেলায়। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সপ্তাহে এক দিন ডিম আর এক দিন মাছ খাওয়ানোর নির্দেশ দিয়েছে স্কুল গুলিকে। আর হুগলি যেন আরও একধাপ এগিয়ে। এই জেলায় দু’দিন ডিম দেওয়া হবে। একদিন ডিমের ঝোল আর একদিন সবজি খিচুরির সঙ্গে সেদ্ধ ডিম। বুধবার বুধবার ছাত্রছত্রীদের লাঞ্চে দেওয়া হবে মুরগির মাংস। শুধু মাংস নয়। তাতে যেন আলুও থাকে তা-ও বলে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। ডিমের ক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নির্দেশিকা বুঝতে যাতে অসুবিধে না হয়, তাই প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্র্যাকেটে লিখে দেওয়া হয়েছে ‘গোটা।’
সব দেখে অভিনেত্রী সাংসদ বেশ খুশি। লকেট বলেন, “অন্যায় যেখানে হবে সেখানেই ছুটে যাব। রাজনীতি বাদ দিন। আগে তো আমি একজন মা। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা যদি নুন ভাত খায়, জ্বালা তো হবেই। আজকে যদি আমার জন্যই টনক নড়ে প্রশাসনের, আর বাচ্চাগুলো পেট ভরে খেতে পারে, এর চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে!”