নিউজ ডেস্কঃ অবশেষে সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে পাশ হয়ে গেল নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল । গতকাল মঙ্গলবার ঘোষণা করা হয়েছিল কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেটের বৈঠক হবে । তখনই অনুমান করা গিয়েছিল নাগরিকত্ব বিল সংশোধন বিষয়ে । সেই মত আজ বুধবার কেন্দ্রে বিজেপি সরকার ভারতের সংবিধানের নাগরিকত্ব আইনের রদবদল ঘটাল ।
বিজেপি যে নির্বাচনী ইস্তেহার মেনে চলার জন্য নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ করাবে সে কথা সকলেই জানত । পূর্বেই অনুমান করা গিয়েছিল চলতি শীতকালীন অধিবেশনে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল আনতে পারে গেরুয়া শিবির । এবার এক নজরে দেখে নেওয়া যাক নতুন নতুন নাগরিকত্ব আইনে কি কি বিশেষত্ব থাকছে ।
আজ বুধবার ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে যে নতুন নাগরিকত্ব আইনের পরিবর্তন করা হল, সেই মতে, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান থেকে ভারতে আসা হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি এবং খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের ভারতীয় নাগরকিত্ব দেওয়ার জন্যই এই বিল। মোদ্দা কথা হল, ভারতের প্রতিবেশী মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলির সংখ্যালঘু নাগরিকদের সহজে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য এই বিলের অবতারণা। পাশাপাশি, ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনে ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য ১২ মাস টানা ভারতে থাকার নিয়মের সঙ্গে বিগত ১৪ বছরের মধ্যে ১১ বছর ভারতবাস জরুরি । এবারের সংশোধনীতে দ্বিতীয় অংশে পরিবর্তন ঘটানো হচ্ছে। উপরোক্ত দেশগুলি থেকে আসা ছ’টি ধর্মাবলম্বীদের জন্য এগার বছর সময়কালটিকে ছ’বছরে নামিয়ে আনা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।তবে, সংসদে বিল পেশ হলে তবেই সেটা স্পষ্ট হবে।
এই নতুন বিল পাশ করাকে বিজেপি একটি বড় সাফল্য হিসাবে দেখছে । এই নয়া আইনে, বর্তমান নাগরিকত্ব আইনের আওতায় ভারতে জন্ম নেওয়া কোনও ব্যক্তি অথবা যাঁর বাবা মা ভারতীয়, অথবা যিনি ভারতে একটি নির্দিষ্ট সময়কাল জুড়ে বাস করে এসেছেন, তিনি ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার যোগ্য। এছাড়া, বর্তমান আইনে কেউ যদি পাসপোর্ট বা ভিসা ছাড়া ভারতে প্রবেশ করেন অথবা বৈধ নথি নিয়ে প্রবেশ করার পরে নির্দিষ্ট সময়ের বেশি ভারতে বাস করেন, তাহলে তিনি অবৈধ অভিবাসী বলে গণ্য হবেন। উল্লেখ্য, ভারতের বিদেশি আইন ১৯৪৬ এবং পাসপোর্ট আইন ১৯২০ অনুসারে অবৈধ অভিবাসীকে জেলে পাঠানো বা প্রত্যর্পণ করা হয়ে থাকে। তবে, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে সরকার কিছু ছাড় দিয়েছে। ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর ও তার আগে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে ভারতে আগত হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি এবং খ্রিস্টানদের ছাড় দেওয়া হয়েছে।
নতুন নাগরিকত্ব আইনে বলা হচ্ছে, ওই নির্দিষ্ট গোষ্ঠীগুলির সদস্যরা বৈধ কাগজপত্র ছাড়া ভারতে বাস করলেও তাঁদের জেলে বা নিজেদের দেশে পাঠানো হবে না। এই নতুন বিলের উদ্দেশ্য হল, ২০১৬ সালের নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল সংসদে আনা হয়েছে যাতে ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব বিল সংশোধন করে এই ব্যক্তিদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া যায়।
তবে এই সংশোধনী বিল পাশ নিয়ে বিরোধী শিবিরে প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে । এই বিল নিয়ে বিরোধীদের প্রধান আপত্তির বিষয় হল এখানে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের টার্গেট করা হয়েছে। সংবিধানের ১৪ নং অনুচ্ছেদে যে সমতার অধিকার সুনিশ্চিত করা হয়েছে, এ বিল তার পরিপন্থী বলে দাবি সমালোচকদের।