রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সোনার তরী’
বিস্তারিত :
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘সোনার তরী’ কবিতা’টি রচিত হয় ১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দে। এখানে কবি তাঁর কল্পনায় সোনার তরী‘র কথা বলেছেন, যেখানে সোনার তরী কবির কাটা ধান তুলে নিয়ে কবিকে একলা তীরে রেখে চলে যায়।
সোনার তরী
গগনে গরজে মেঘ, ঘন বরষা।
কূলে একা বসে আছি, নাহি ভরসা।
রাশি রাশি ভারা ভারা
ধান-কাটা হল সারা,
ভরা নদী ক্ষুরধারা
খরপরশা–
কাটিতে কাটিতে ধান এল বরষা॥একখানি ছোটো খেত, আমি একেলা—
চারি দিকে বাঁকা জল করিছে খেলা।
পরপারে দেখি আঁকা
তরুছায়ামসী-মাখা
গ্রামখানি মেঘে ঢাকা
প্রভাতবেলা—
এপারেতে ছোটো খেত, আমি একেলা॥গান গেয়ে তরী বেয়ে কে আসে পারে!
দেখে যেন মনে হয়, চিনি উহারে।
ভরা পালে চলে যায়,
কোনো দিকে নাহি চায়,
ঢেউগুলি নিরুপায়
ভাঙে দু ধারে—
দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে॥ওগো, তুমি কোথা যাও কোন্ বিদেশে?
বারেক ভিড়াও তরী কূলেতে এসে।
যেয়ো যেথা যেতে চাও,
যারে খুশি তারে দাও—
শুধু তুমি নিয়ে যাও
ক্ষণিক হেসে
আমার সোনার ধান কূলেতে এসে॥যত চাও তত লও তরণী-পরে।
আর আছে?— আর নাই, দিয়েছি ভরে॥
এতকাল নদীকূলে
যাহা লয়ে ছিনু ভুলে
সকলি দিলাম তুলে
থরে বিথরে—
এখন আমারে লহো করুণা ক’রে॥ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই, ছোটো সে তরী
আমারি সোনার ধানে গিয়েছে ভরি।
শ্রাবণগগন ঘিরে
ঘন মেঘ ঘুরে ফিরে,
শূন্য নদীর তীরে
রহি নু পড়ি—
যাহা ছিল নিয়ে গেল সোনার তরী॥
‘Sonar Tori’ in English translation:
Sonar Tori (The Golden Boat)
The rain fell fast. The river rushed and hissed. It licked up and swallowed the island, while I waited alone on the lessening bank with my sheaves of corn in a heap.
From the shadows of the opposite shore the boat crosses with a woman at the helm.
I cry to her, ‘Come to my island coiled round with hungry water, and take away my year’s harvest.’She comes, and takes all that I have to the last grain; I ask her to take me.
But she says, ‘No’-the boat is laden with my gift and no room is left for me.– Rabindranath Tagore