বং দুনিয়া ওয়েব ডেস্কঃ বাজারে বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়াতে বেশ কিছু দিন ধরে যে রব উঠেছে এল আই সি (LICI) লোকসানে চলছে বা বন্ধ হয়ে যেতে পারে এধরনের খবর সে সম্পর্কে কিছু তথ্য জানালেন এল আই সি (LIC)-র এক কর্মকর্তা ।
এল আই সি (LIC)-র কিছু তথ্য উল্লেখ করা যেতে পারে । ভারতীয় জীবন বীমা নিগম ( Life Insurance Corporation of India সংক্ষেপে LIC) ভারতের মধ্যে সবচেয়ে বড় বীমা ও বিনিয়োগকারী সংস্থা। সম্পূর্ণ ভারত সরকার-এর অধীনস্থ ভারতীয় জীবন বীমা নিগম সরকারের খরচের প্রায় ২৪.৬% পুঁজির যোগান দেয়। বর্তমানে এই সংস্থার স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ১৩.২৫ ট্রিলিয়ন টাকা । ভারতীয় জীবন বীমা নিগমের স্থাপনা অধিমিয়মের দ্বারা হয়েছিল এবং একে ভারতের রাষ্ট্রপতি ১৮ জুন ১৯৫৬তে স্বীকৃতি প্রদান করেন। এই অধিনিয়ম ১ জুলাই ১৯৫৬ র থেকে লাগু করা হয় এবং ১লা সেপ্টেম্বর ১৯৫৬ তে ভারতীয় জীবন বীমা নিগমের কাজকর্ম আরম্ভ হয়। ২০১৯ সালের হিসাব অনুযায়ী এল আই সি (LIC)-র চালু পলিসির সংখ্যা ২৯.০৯ কোটি । পলিসি ও প্রিমিয়ামে মার্কেট শেয়ার যথাক্রমে ৭৪.৭১শতাংশ এবং প্রিমিয়ামে ৬৬.২৪ শতাংশ । এইরূপ অবস্থায় যদি এল আই সি (LIC)-র বন্ধ হবার কথা ওঠে তাহলে লাখ লাখ নয় বরং কোটি কোটি মানুষের হৃদ কম্প শুরু হবার কথা ।
এলাইসির সিউড়ি শাখার ডেভেলপমেন্ট অফিসার চন্দন রুদ্র এল আই সি (LIC)-র সম্পর্কে এমন কিছু মুল্যবান তথ্য দিলেন যা থেকে পরিষ্কার, বাজারে এল আই সি (LIC)-র সম্পর্কে যে খবর উঠে আসছে সেটা ভিত্তি হীন । তার কথায়, “ধান্দাবাজ রাজনীতিবিদ ও কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্রমাগত গুজব, অপপ্রচার ও কুৎসা রটাচ্ছে ভারতীয় জীবন বীমা নিগম (Life Insurance Corporation of India) নাকি লোকসানে চলছে, ৫৭০০০ কোটি টাকা ক্ষতি করেছে, ফলে পলিসি হোল্ডারদের টাকা ফেরত দিতে পারবে না। এই অপপ্রচারে জনসাধারণ কিছুটা বিভ্রান্তও হচ্ছেন। প্রথমেই বলে রাখি এই খবর সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মিথ্যা। ভারতীয় জীবনবীমা নিগম এদেশের নিরাপদতম অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান।
কিছু তথ্য দিলে বিষয়টা আপনাদের কাছে পরিস্কার হবে। ১৯৯১ সালে ভারতীয় বাজার খুলে যায় বিশ্বের কাছে। বিভিন্ন সেক্টরে নানা প্রাইভেট কোম্পানি আসে। ইনস্যুরেন্স মার্কেট খোলে ২০০০ সালে। বর্তমানে জীবন বীমা ক্ষেত্রে সরকারী এল আই সি ছাড়াও আরও ২৩টি প্রাইভেট কোম্পানি কাজ করছে। সময়ের সাথে সাথে, মূলত সরকারের ভুল আর্থিক নীতির জন্য, সরকারী সংস্থাগুলো প্রতিযোগীতায় পিছিয়ে গেছে। সরকারী ব্যাংক, বিএসএনএল, এয়ার ইন্ডিয়া তার জলন্ত উদাহরণ। ব্যতিক্রম ভারতীয় জীবন বীমা নিগম। ভারতীয় জীবন বীমা নিগম শুধু এদেশের নয় পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা বড়(পলিসি সংখ্যায়) জীবন বীমা প্রতিষ্ঠান। ৩১ শে মার্চ ২০১৯ এর হিসাব অনুযায়ী আমাদের চালু পলিসির সংখ্যা ২৯.০৯ কোটি, মোট সম্পত্তি ৩১ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি। পলিসি ও প্রিমিয়ামে আমাদের মার্কেট শেয়ার যথাক্রমে ৭৪.৭১শতাংশ এবং প্রিমিয়ামে ৬৬.২৪ শতাংশ। ভারতীয় অর্থনীতি যখন খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তখনও এই অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে আমাদের প্রিমিয়াম ইনকাম গ্রোথ অবিশ্বাস্য ৪৬.৫২ শতাংশ। শুধু তাই নয়, প্রিমিয়াম ইনকামের মার্কেট শেয়ার গতবারের থেকে ৭% বেড়ে ৭৩.০৬ শতাংশ। অর্থাৎ বাকি ২৩ টি প্রাইভেট কোম্পানির সম্মিলিত মার্কেট শেয়ার মাত্র ২৬.৯৪ শতাংশ।
পাঠক, আগেই বলেছি ৫৭০০০ কোটি টাকার ক্ষতির যে অপপ্রচার বাজারে চলছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কুতর্কের খাতিরে সেটাকে সত্যি বলেও যদি ধরা হয় তাহলে দেখবেন তা এল আই সির মোট সম্পত্তির ২ শতাংশেরও কম। শুধুমাত্র ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সমস্ত পাওনা মেটানোর পরও উদ্বৃত্ত বিনিয়োগযোগ্য অর্থের পরিমাণ প্রায় ৩.৫ লক্ষ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৫৭০০০ কোটি নিয়ে যে অপপ্রচার চলছে সেটাও গতবারের উদ্বৃত্ত অর্থের মাত্র ১৬ শতাংশ।
ভারতীয় জীবন বীমা নিগম একটি জনকল্যাণকামী সংস্থা তাই সাধারণ মানুষের উন্নয়নের স্বার্থে এই সংস্থার অধিকাংশ অর্থ মূলত দেশের পরিকাঠামো উন্নয়নে ব্যবহৃত হয়, যার পরিমাণ ইতিমধ্যে ২২ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। আমরা কিছু টাকা শেয়ার মার্কেটেও ইনভেস্ট করি। শেয়ার মার্কেট সর্বদা পরিবর্তনশীল হওয়ায় আপনার আমানতও পরিবর্তিত হয়। একটা সহজ উদাহরণ নেওয়া যাক। ধরা যাক, আপনি ২ বছর আগে ১০০ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। ৩ মাস আগে আপনার ১০০ টাকা বেড়ে হয়েছিল ১৩০ টাকা। বর্তমানে সেটা কমে হয়েছে ১২০ টাকা। এখন প্রশ্ন হল, আপনি উপরের উদাহরণ থেকে কি বলবেন যে আপনার ১০ টাকার ক্ষতি হয়েছে? নিশ্চয় নয়। আপনি বরং বলতে পারেন আপাতত ভাবে আপনার লাভ ৩০ টাকা থেকে কমে ২০টাকা হয়েছে। আপনি তো শেয়ারটা বিক্রি করেননি তাহলে লাভ-ক্ষতির হিসেব কোথা থেকে আসবে? শেয়ার মার্কেট চাঙ্গা হলে আবার ওই ২০ টাকার লাভটা বেড়ে আবার ৪০ টাকা হতে পারে। ৫৭০০০ কোটি টাকা ক্ষতির অপপ্রচারটাও ঠিক এমনই। ভারতীয় জীবন বীমা নিগম বিগত চার বছরে শেয়ার মার্কেট থেকে যথাক্রমে ১১০০০ কোটি টাকা,১৯০০০ কোটি টাকা,২৫০০০ কোটি টাকা ও ২১০০০ কোটি টাকা লাভ করেছে। সাধারণ মানুষের কাছে আমাদের আবেদন, কোনো অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবেন না। সত্যিটা জানুন,মিথ্যাকে পরিত্যাগ করুন।”
(তথ্য সুত্রঃ ফেসবুক; https://www.facebook.com/chandan.rudra.90/posts/1414750812013333)