বং দুনিয়া ওয়েব ডেস্কঃ NRC এবং নাগরিকত্ব সংশোধন আইন নিয়ে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের ন্যায় বাংলাতেও আছড়ে পড়ল সেই ঢেউ । গতকাল থেকেই বিরোধী দলগুলির পাশাপাশি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সাধারন মানুষ রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় । কলকাতা ছাড়াও রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে হিংসাত্মক ঘটনার খবর পেয়ে চিন্তিত মমতার প্রশাসন । প্রতিবাদ যাতে হিংসাত্মক ঘটনায় মোড় না নেয়, তার জন্য স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী শান্তির আবেদন জানিয়েছেন সকলের কাছে ।

লোকসভা এবং রাজ্যসভায় অনায়াসে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ করানোর পর,  রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ  নাগরিকত্ব সংশোধন বিলে শিলমোহর দেবার পর বিজেপির আইন প্রণয়নে আর দেরি করেনি । এই বিল প্রসঙ্গে,  অমিত শাহ যতই বলুক না কেন নতুন বিলে ভারতে বসবাসরত সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের কোন নাগরিকত্ব হারানোর কোন ভয় নেই । তবুও কে শোনে কার কথা । বিরোধী দল প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে পড়েছে ।গতকাল দুপুর থেকেই NRC এবং নয়া নাগরিকত্ব আইন পাশের প্রতিবাদে কলকাতার বেশ কিছু অঞ্চল স্তব্ধ হয়ে পড়েছিল । বেলা গড়াবার সাথে সাথে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের বিক্ষোভ আছড়ে পড়ে   কলকাতার বেশ গুরুত্বপূর্ণ স্থান পার্কসার্কাস সেভেন পয়েন্ট এলাকা । রাস্তার উপরে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করতে দেখা যায় ।

লোকসভা এবং রাজ্যসসভায় নাগরিকত্ব সংশোধন বিল ভোটাভুটির মাধ্যমে গেরুয়া শিবির অনায়াসে পাশ করিয়ে নিলেও, সারা দেশে বিরোধী দলগুলি মেনে নিতে পারছে না । ত্রিপুরা রাজ্যে বাম ছাত্র সংগঠনগুলি রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করেছে । সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি অসম রাজ্যে । সেখানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করতে রীতিমত রাস্তায় সেনা নামাতে হয়েছে । জায়গায় জায়গায় চলেছে কারফিউ । বিক্ষোভকারীদের মধ্যে মারা গেছে ৫ জন । উত্তেজনা দ্রুত যাতে ছড়াতে না পারে, সেজন্য ইন্টারনেট ও মোবাইল পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন ।

তবে NRC এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে বাংলায় চাপানউতর চললেও  এত দ্রুত প্রতিবাদের আঁচ ছড়িয়ে পড়বে তা ভাবা হয়নি । গতকাল থেকেই বিক্ষোভের আঁচ শুধু কলকাতা নয়, ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন  জেলাতেও । গতকাল,  মুর্শিদাবাদ, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, হাওড়া, দুই মেদিনীপুর-সহ একাধিক জেলায় তৈরি হল অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি। এর মধ্যেই আবার আগামী সোমবার থেকে লাগাতার কর্মসূচির ডাক দিয়েছে বাংলার শাসকদল। এর সাথে সাধারন সংখ্যালঘু মানুষ যদি রাস্তায় নেমে আসে, তাহলে   গোটা পরিস্থিতি কী হবে তা নিয়ে অনেকের মধ্যেই উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞ মহল মনে করছে, হিংসাত্মক ঘটনা ঘটা কোন অস্বাভাবিক ব্যাপার হবে না । প্রশাসনের পাশাপাশি উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাধারন মানুষের কাছে শান্তির আবেদন জানিয়েছেন।

গতকাল  হাওড়ার উলুবেড়িয়ার পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। রেললাইনের মাঝেই টায়ার জ্বালিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। ভাঙচুর চলে স্টেশনের কেবিনে। উলুবেড়িয়া স্টেশনে অবরোধের জন্য দাঁড়িয়ে পড়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেস, কাণ্ডারি এক্সপ্রেস। এছাড়াও ওই শাখার বিভিন্ন স্টেশনে দাঁড়িয়ে পড়ে । বহু লোকাল ট্রেন আটকে পড়ায় হাজার হাজার মানুষ অফিস ফেরত বাড়ি ফিরতে অসুবিধার মধ্যে পড়ে নাকাল হন । তবে, গতকাল নাগরিকত্ব বিল এবং NRC র প্রতিবাদের সামিল হতে রাস্তায় নামার ডাক দিয়েছিলেন ।  বলেছিলেন, গণ জাগরণ হোক। কিন্তু তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কলকাতা-সহ একাধিক জেলায় যে ঘটনা ঘটতে শুরু করে তাতে উদ্বিগ্ন সকলে । মুখ্যমন্ত্রী আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, “প্রতিবাদ অবশ্যই হোক। তবে সেটা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে। কেউ আইন নিজের হাতে নেবেন না।”

Kajal Paul is one of the Co-Founder and writer at BongDunia. He has previously worked with some publishers and also with some organizations. He has completed Graduation on Political Science from Calcutta University and also has experience in News Media Industry.

Leave A Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.