বং দুনিয়া ওয়েব ডেস্ক: চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে প্রথম অবতরণের স্বপ্ন পূর্ণ হয়েছে ভারতের, সম্প্রতি নিজেদের প্রতিবেদনে এমনটাই ঘোষণা করল ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ISRO। কিন্তু, ঠিক যেভাবে অবতরণ করার কথা ছিল চন্দ্রযানের, তাতে কিছু ব্যতিক্রম ঘটেছে।

প্রায় দেড় মাস পূর্বে ভারতের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র ISRO থেকে ‘চন্দ্রযান-২’ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল পেরিয়ে চাঁদের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিয়েছিলো, লক্ষ্য ছিল চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে প্রথম অবতরণ। অতি অল্প সময়ের মধ্যে তুলনামুলক চাঁদে মহাকাশযান প্রেরণ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ISRO।

‘চন্দ্রযান-২’ কে মহাকাশে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল ৪৪ মিটার লম্বা GSLV Mk3 রকেট, যা এখনও পর্যন্ত ভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী ও ক্ষমতাবান রকেট। এর মধ্যে একটি অর্বিটার, ‘বিক্রম’ ( যা ISRO-র প্রতিষ্ঠাতা বিজ্ঞানী বিক্রম সারাভাইয়ের নামে নামকরণ করা হয়েছে) নামক একটি ল্যান্ডার এবং ‘প্রজ্ঞান’ নামের একটি মুন রোভার ছিল।

অভিযানের সমস্ত পর্যায় সফলভাবে পেরোনর পর ৭ই সেপ্টেম্বর ভোর রাতে চাঁদের মাটিতে নামবার জন্য প্রস্তুত ছিল ‘চন্দ্রযান-২’ এর ল্যান্ডার। কথা ছিল, চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে ভোর হওয়ার আগেই খুলে ‘বিক্রম’ এর র‌্যাম্প, তার ওপর দিয়ে গড়িয়ে নামবে প্রজ্ঞান। কিন্তু চাঁদের মাটি থেকে ২.১ কিমি উচ্চতাতেই ISRO-র বিজ্ঞানীদের সাথে ‘বিক্রম’ এর যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। সফলতার অনেক নিকটে পৌঁছেও ব্যর্থ হয়ে যায় ‘চন্দ্রযান-২’। চন্দ্রযানের ব্যর্থতার কারণ হিসাবে বিজ্ঞানীরা অনুমান করেছিলেন, নিরধারিত গতিবেগের তুলনায় অনেক বেশী বেগে চাঁদের মাটিতে আছড়ে পড়েছে ‘চন্দ্রযান-২’, আর সেকারণেই তা বিনষ্ট হয়ে গেছে।

কিন্তু এর কয়েকদিনের মধ্যেই সুখবর দেওয়া হয় ISRO-র পক্ষ থেকে। ISRO-র চেয়ারম্যান কে. শিবান সংবাদ মাধ্যমে জানান, চাঁদের মাটিতে শনাক্ত করা গেছে ‘চন্দ্রযান-২’ এর ল্যান্ডার ‘বিক্রম’কে। সম্প্রতি চাঁদের কক্ষপথ থেকে সেটির থারমাল ছবি তুলে বিজ্ঞানীদের কাছে পাঠিয়েছে ‘চন্দ্রযান-২’ এর অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন অরবিটার। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ‘বিক্রম’ এর সিগন্যাল খুঁজে যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। ISRO সূত্রে খবর, বর্তমানে বেঙ্গালুরুর গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে ‘বিক্রম’ এর সাথে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা চালাচ্ছে বিজ্ঞানীরা।

এরপর বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরিক্ষা’র পর বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করেন, ধ্বংস হয়ে যায়নি ভারতের ‘চন্দ্রযান-২’। তবে ধ্বংস না হলেও, ‘বিক্রম’ যে সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় আছে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না বিজ্ঞানীরা। তাঁদের দাবি, পালকের মতো অবতরণ বা সফ্ট‌ ল্যান্ডিংয়ের জন্য তৈরি করা হয়েছিল ‘বিক্রম’ কে। ফলে বেশি গতিবেগ নিয়ে নামলে, অর্থাৎ হার্ড ল্যান্ডিংয়ে তার ক্ষতি হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া সে যেখানে অবতরণ করেছে, সেখানকার ভূমিরূপ সম্পর্কে‌ও ধারণা নেই বিজ্ঞানীদের, ফলে তাতেও ক্ষতি হতে পারে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, দুই কিলোমিটার ওপর থেকে আছড়ে পড়লে ‘বিক্রম’ এর যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আর তা যদি ঘটে থাকে, তাহলে কাজ করা বন্ধ করে দেবে ‘বিক্রম’। বর্তমানে বিজ্ঞানীরা পূর্ণ মাত্রায় চেষ্টা করছেন ‘বিক্রম’ এর সাথে পুনরায় যোগাযোগ স্থাপন করার।

Atanu Chakraborty is a content and news writer at BongDunia. He has completed his Bachelor Degree on Mass Communication from Rabindra Bharati University. He has worked with mainstream media, in the capacity of a reporter and copywriter.

Leave A Reply