বং দুনিয়া ওয়েব ডেস্কঃ সামনেই সরস্বতী পুজা । প্রতিটি শিক্ষার্থী বিদ্যালাভের জন্য বাগদেবীর আরাধনা করেন । কিন্তু হিন্দু শাস্ত্রমতে সঠিকভাবে পুজা বা আরাধনা না করলে না কি মোক্ষলাভ হয় না ! বাগদেবীর বা সরস্বতীর পুজা আমরা পুরোহিত দিয়ে করাই । তবে হ্যাঁ, পুজার দিন সবচেয়ে বড় ডিম্যান্ড থাকে পুরোহিত বা পূজারীদের । ভক্তদের মধ্যে রীতিমত টানাটানি করতে দেখা যায় । তবে ঠিকভাবে পুজা হচ্ছে কি না সেটি জানতে হলে আপনাকে অবশ্যই সরস্বতী পুজার পদ্ধতি এবং আচার জানতে হবে । দেখে নিন কিভাবে আচার মেনে সরস্বতী পুজা করা হয়ে থাকেঃ
সবার প্রথমে উপবেশন ও আসনঃ সকালে স্নান-আহ্নিক সেরে ইষ্টমন্ত্র জপ বা স্তব পাঠ করতে করতে পূজাস্থলে গিয়ে শুদ্ধাসনে পূর্বমুখে বা উত্তরমুখে বসবেন।
আচমনঃ গোকর্ণাকৃতি ডান হাতের বুড়ো আঙ্গুলের গোড়ায় মাষকলাই ডুবতে পারে এমন পরিমাণ জল নিয়ে ‘ওঁ বিষ্ণু’ মন্ত্রে তিনবার পান করে ডান অঙ্গুষ্ঠের মূল দেশ দিয়ে মিলিত ঠোঁটদুটি ডান থেকে বামে দু’বার মার্জনা করবে ও হাত ধুয়ে ফেলবে।
এবারে তর্জনী, মধ্যমা ও অনামিকার মিলিত অগ্রভাগ দ্বারা ওষ্ঠ ও অধর স্পর্শ করবে। এভাবে অঙ্গুষ্ঠ ও তর্জনীর মিলিত অগ্রভাগ দিয়ে ডান ও বাম নাসাপুট, অঙ্গুষ্ঠ ও অনামিকার মিলিত অগ্রভাগ দিয়ে প্রথমে ডান ও পরে বাম চোখ, তারপরে ডান ও বাম কান স্পর্শ করবে । তারপর অঙ্গুষ্ঠ ও কনিষ্ঠার অগ্রভাগ দিয়ে নাভি স্পর্শ করবে ও হাত ধুয়ে ফেলবে। অতঃপর করতল দিয়ে হৃদয়, সমস্ত আঙ্গুলের অগ্রভাগ দিয়ে মাথা এবং ডান ও বাম বাহুমূল স্পর্শ করবে ও হাত ধুয়ে হাত জোড় করে পাঠ করবেঃ
ওঁ তদ্বিষ্ণোঃ পরমং পদং সদা পশ্যন্তি সূরয়ঃ
দিবীব চক্ষুরাততম্।
ওঁ অপবিত্রঃ পবিত্রো বা সর্বাবস্থাং গতোহপি বা
যঃ স্মরেৎ পুণ্ডরীকাক্ষং স বাহ্যাভ্যন্তরঃ শুচিঃ।
আচমন হয়ে যাবার পর গন্ধাদির অর্চনা করতে হবে । এই অর্চনা করার সময় – ‘ওঁ এতেভ্যো গন্ধাদিভ্যো নমঃ’ -মন্ত্রে পুষ্পপাত্রে সাজানো গন্ধ ও পুষ্পাদিতে জলের দ্বারা তিনবার প্রোক্ষণ ( চিৎ হাতে জলের ছিটা ) করবে। পরে গন্ধপুষ্প নিয়ে ‘ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে এতেভ্যো গন্ধাদিভ্যো নমঃ’ বলে পুষ্পপাত্রে দিবে এবং হাতে এক একটি গন্ধপুষ্প নিয়ে নিচের মন্ত্র বলে বলে গন্ধপুষ্প তাম্রকুণ্ডে দিয়ে দিয়ে পূজা করবে। মন্ত্রটি হলঃ
‘ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে এতদধিপতয়ে দেবায় শ্রীবিষ্ণবে নমঃ’;
‘ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে এতৎসম্প্রদানেভ্যঃ পূজনীয়দেবতাভ্যো নমঃ’;
‘ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে শ্রীগুরবে নমঃ’;
‘ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে গণেশাদিপঞ্চদেবতাভ্যো নমঃ’;
‘ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে নমো নারায়ণায় নমঃ’;
‘ওঁ এতে গন্ধপুষ্পে ব্রাহ্মণেভ্যো নমঃ’।
এর পর সূর্যদেবকে অর্ঘ্য দিতে হবে । সূর্যার্ঘ্য দেবার নিয়ম – কুশীতে জল, রক্তপুষ্প, রক্তচন্দন, আতপ চাল, যব, তিল, সরিষা, কুশের অগ্র ও দুর্বা নিয়ে এই মন্ত্র উচ্চারন করতে হবে –
‘ওঁ নমো বিবস্বতে ব্রহ্মন্ ভাস্বতে বিষ্ণুতেজসে।
জগৎসবিত্রে শুচয়ে সবিত্রে কর্মদায়িনে।
এষোহর্ঘ্যঃ শ্রীসূর্যায় নমঃ’- মন্ত্রে সন্মুখস্থ বাণেশ্বরাদি যন্ত্রের উপর দিবে ও নিচের মন্ত্রে প্রণাম করবে-
ওঁ জবাকুসুমসঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিম্ ।
ধ্বান্তারিং সর্বপাপঘ্নং প্রণতোহস্মি দিবাকরম্।
[ জ্ঞাতব্যঃ রক্তপুষ্প, রক্তচন্দন, আতপ চাল, যব, তিল, সরিষা, কুশের অগ্র ও দুর্বা সকল দেবতা বিষয়ক অর্ঘ্যেই প্রদান করা যায়।
অন্যান্য দ্রব্যের অভাব হলে শুধু আতপ চাল ও দুর্বা দ্বারা প্রদান করা যায়। ]
এরপর স্বস্তিবাচন করতে হবে । করার সময়, –
‘ওঁ কর্তব্যেহস্মিন্ লক্ষ্ম্যাদি দেবতা সহিত সরস্বতীপূজাকর্মণি ওঁ পুণ্যাহং ভবন্তো ব্রুবন্তু’। পরে ‘ওঁ পুণ্যাহং’ তিনবার বলতে বলতে ঘণ্টাবাদনপূর্বক আতপ চাল ছড়াবে।
‘ওঁ কর্তব্যেহস্মিন্ লক্ষ্ম্যাদি দেবতা সহিত সরস্বতীপূজাকর্মণি ওঁ স্বস্তি ভবন্তো ব্রুবন্তু’। পরে ‘ওঁ স্বস্তি’ তিনবার বলতে বলতে ঘণ্টাবাদনপূর্বক আতপ চাল ছড়াবে।
‘ওঁ কর্তব্যেহস্মিন্ লক্ষ্ম্যাদি দেবতা সহিত সরস্বতীপূজাকর্মণি ওঁ ঋদ্ধিং ভবন্তো ব্রুবন্তু’। পরে ‘ওঁ ঋদ্ধ্যতাম্’ তিনবার বলতে বলতে
ঘণ্টাবাদনপূর্বক আতপ চাল ছড়াবে।
পরে নিম্নোক্ত মন্ত্রপাঠ ও ঘণ্টাবাদনসহ আতপ চাল ছড়াবেঃ
ওঁ স্বন্তি ন ইন্দ্রো বৃদ্ধশ্রবাঃ স্বস্তি নঃ পূষা বিশ্ববেদাঃ ।
স্বস্তি নস্তার্ক্ষো অরিষ্টনেমিঃ স্বস্তি নো বৃহস্পতির্দধাতু।
ওঁ স্বস্তি ওঁ স্বস্তি ওঁ স্বস্তি।
তারপর করজোড়ে পাঠ করবে-
ওঁ সূর্যঃ সোমো যমঃ কালঃ সন্ধ্যে ভূতান্যহঃ ক্ষপা।
পবনো দিকপতির্ভূমিরাকাশং খচরামরাঃ।
ব্রাহ্ম্যং শাসনমাস্থায় কল্পধ্বমিহ সন্নিধিম্।
ওঁ তৎসৎ অয়মারম্ভঃ শুভায় ভবতু।
এরপর রয়েছে সঙ্কল্পঃ সঙ্কল্প করার সময় – তাম্রপাত্রে ( কুশীতে ) মূল ও অগ্রভাগের সহিত তিনটি কুশ, তিল, তুলসী, হরিতকী, গন্ধ, পুষ্প, আতপ চাল ও জল নিয়ে বীরাসনে (দক্ষিণ জানু পেতে ) পূর্বমুখী ( বা উত্তরমুখী ) বসবে। বাম করতলে কুশী স্থাপন করে দক্ষিণ করতল দ্বারা আচ্ছাদনপূর্বক পাঠ করবেঃ
বিষ্ণুরোম্ তৎসদদ্য মাঘে মাসি মকর রাশিস্থে ভাস্করে শুক্লে পক্ষে পঞ্চম্যান্তিথৌ (অমুক) গোত্রঃ শ্রী(অমুক) দেবশর্মা
(যজমানের গোত্র ও নাম) । সরস্বতী প্রীতিকামনায়া গণপত্যাদি নানাদেবতাপূজাপূর্বক-লক্ষ্মী-মস্যাধার-লেখনী-সহিত সরস্বতী পূজাকর্ম অহং করিষ্যে ।
পরে হাতের পাত্রটি ঈশান কোণে উপুড় করে রেখে তার উপর নিম্নোক্ত মন্ত্রে আতপ চাল ছড়াবে এবং ঘণ্টা বাজাবে-
ওঁ যজ্জাগ্রতো দূরমুদৈতি দৈবং তদু সুপ্তস্য তথৈবৈতি।
দূরঙ্গমং জ্যোতিষাং জ্যোতিরেকং তন্মে মনঃ শিবসঙ্কল্পমস্তু।
অতঃপর করজোড়ে পাঠ করবে-
ওঁ সঙ্কল্পিতার্থাঃ সিধ্যন্তু সিদ্ধাঃ সন্তু মনোরথাঃ।
ভক্তিজ্ঞানোদয়ায় অয়মারম্ভঃ শুভায় ভবতু।
হরিঃ ওঁ তৎসৎ।
এরপর ঘটস্থাপন । অতঃপর নিম্নোক্ত রীতিতে সংক্ষেপে ঘটস্থাপন করা যেতে পারে। ভূমিতে সর্বতোভদ্রমণ্ডল অথবা ভূপুরমধ্যগত অষ্টদল পদ্ম এঁকে অঞ্জলি পরিমান শুক্ল্যধান্যের ওপর ঘট বসাবে। ঘট মধ্যে জল, সোনা ও ঘটোপরি আম্রপল্লব বসিয়ে তদুপরি একটি সশীষ ডাব অথবা কলা বা হরীতকী স্থাপন করবে। সম্ভব হলে ফলটি বস্ত্রখণ্ডে আচ্ছাদিত করে তদুপরি একটি অর্ঘ্য (বিল্বপত্র, গন্ধপুষ্প, দুর্বা ও আতপ চাল) সাজিয়ে দিবে। ঘটগাত্রে সিন্দুর দিয়ে একটি স্বস্তিক বা পুত্তলিকা অঙ্কন করবে। অনন্তর করজোড়ে পাঠ করবে-
ওঁ সর্বতীর্থোদ্ভবং বারি সর্বদেবসমন্বিতম।
ইমং ঘটং সমারুহ্য তিষ্ঠ দেবি গণৈঃ সহ।
ঘটস্পর্শ করে পাঠ করবে- ওঁ স্থাং স্থীং স্থিরো ভব।
এই মন্ত্রও ঘট স্পর্শ করে তিনবার পাঠ করবে।
এবার দেবীর আবাহন করতে হবে । (এখানে অপ্রতিষ্ঠিত মূর্তি বা পট হলে সেই মূর্তিতে বা পটে এবং ঘটে পূজা হলে ঘটে আবাহন করতে হবে।) দেবীর আবাহন হয়ে গেলে পুষ্পাঞ্জলী মন্ত্র (৩ বার পাঠসহ) প্রনাম মন্ত্র এবং স্তব পাঠ করতে হবে ।