সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার জেমস কুক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ‘কম্বাইন্ড ইফেক্টস অব ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড সি-লেভেল রাইজ প্রজেক্ট ড্রামাটিক হেবিটেট লস অব দ্য গ্লোবালি এনডেঞ্জার্ড বেঙ্গল টাইগার ইন দ্য বাংলাদেশ সুন্দরবনস’ শীর্ষক একটি গবেষণা হয় যেটির পরিচালনা করেছেন বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন বিজ্ঞানীরা। গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন বাংলাদেশের ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়‘এর অধ্যাপক ড. শরীফ মুকুল। গবেষণার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে বিজ্ঞান সাময়িকী ‘সায়েন্স অব দ্য টোটাল এনভায়রনমেন্ট’।
উক্ত গবেষণা’য় এ’কথা বলা হয় যে আগামী ৫০ বছর অর্থাৎ ২০৭০ সালের মধ্যে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে সুন্দরবনের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার।
জেমস কুক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিল লরেন্স এ প্রসঙ্গে বলেন, “বর্তমানে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা ৪০০০ এরও কম, যা অত্যন্ত কম। এক সময় বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে এই বাঘের বিচরণ থাকলেও বর্তমানে ভারত ও বাংলাদেশের একটি ছোট অঞ্চলে এগুলোর বিচরণ সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে”।
ভারত ও বাংলাদেশ মিলিয়ে মোট ১০,০০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ম্যানগ্রোভ অরণ্য সুন্দরবন। সুন্দরবনের চারপাশে শিল্প কারখানা গড়ে ওঠার কারনে মানুষের চাপ বাড়ছে। সুতরাং মূল অরণ্য অঞ্চলের বিস্তৃতি’র ওপর তার প্রভাব পড়ছে। ফলে বন্য পশু’দের বসবাসের অসুবিধা দেখা দিচ্ছে। এছাড়া, চোরা শিকারি’দের কারনে তাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়াই আশঙ্কাজনক হয়ে পড়ছে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার এর ভবিষ্যৎ।
এছাড়াও যেটি এই মুহূর্তে বড়ো রকমের সমস্যার উদ্রেগ করছে, তা হল সুন্দরবনের জলবায়ু। গবেষণায় দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দিন দিন সুন্দরবনের নিচু এলাকাগুলো সম্পূর্ণরূপে ডুবে যেতে থাকছে। কিন্তু, এই নিচু এলাকাগুলিতেই বাঘের বিচরণ বেশি। এই মুহূর্তে সরকার’ও এটি নিয়ে বেশ চিন্তিত, এবং ব্যাঘ্র রক্ষা প্রকল্পে দ্রুত সরকারি পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাবস্থা চলছে।
এই প্রসঙ্গে ড. শরীফ মুকুল বলেন, “যদি আমরা যথাযথভাবে সুন্দরবনের বাঘ রক্ষায় এখন থেকেই পদক্ষেপ নেওয়া না শুরু করি তাহলে এর ফলাফল কি হতে পারে, সেটাই আমাদের গবেষণায় দেখানো হয়েছে”।
অধ্যাপক বিল লরেন্স বলেছেন, “সুন্দরবনের মত বন পৃথিবীর আর কোথাও নেই। এখানকার বিরল প্রজাতির এই বাঘকে রক্ষা করতে হলে সুন্দরবনের অন্য বাস্তু ব্যবস্থাকে রক্ষা করা ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই”।