বং দুনিয়া ওয়েব ডেস্কঃ সারা বিশ্বে নতুন আতঙ্কের নাম করোনাভাইরাস । প্রথমে এই ভাইরাসের প্রভাব দেখা দেয় চিনের উহান প্রদেশে । প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হয়েছিল চিনের উহান প্রদেশের সি-ফুড বাজার থেকেই এই ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়েছে । বর্তমানে তাইল্যান্ড ও জাপান থেকেও এই ভাইরাস সংক্রমণের খবর মিলেছে। ভারতও যে এই সংক্রমণের তালিকা থেকে বাদ নয় সে সতর্কতাও জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এই ভাইরাসকে চিহ্নিত করেছিল 2019-nCoV নামে। ইতিমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ‘গ্লোবাল হেলথ ক্রাইসিস’ বলে অবিহিত করেছে । ভারতেও এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে সতর্কবার্তা জানানো হচ্ছে । ভারতে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হবার খবর এখনও সেভাবে আসেনি, তবে সেটি নিশ্চিতরূপে বলা সম্ভব নয় ।
করোনাভাইরাসকে এত সমীহ করার পিছনে যথেষ্ট কারন রয়েছে । দেখা গেছে করোনা ভাইরাসের আক্রমণ অনেকটা চুপু চুপি হয় । একবার মানব শরীরে প্রবেশ করলে সেখানেই তারা বৃদ্ধি পেতে থাকে । এরপর আচমকা প্রকাশ পায় এর সংক্রমণের প্রভাব । উপসর্গের প্রথমে দেখা দেয় সর্দি-কাশি. জ্বর । পাশাপাশি শ্বাসকষ্ট বাড়তে থাকে ধীরে ধীরে। শরীরে আস্তে আস্তে হানা দেয় নিউমোনিয়া। আবার এমনও দেখা গেছে, অনেকের দেখা দেয় সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম। এরপর ছড়িয়ে পড়ে গোটা শরীরে । একসাথে আক্রান্ত হয় শরীরের একাধিক অংশ । শরীরের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভেঙ্গে চুরমার করে দেয় । শরীরে রক্ত প্রবাহ কমতে থাকে। কাজ করার শক্তি হারিয়ে ফেলে ফুসফুস, কিডনি এবং সবশেষে মৃত্যু । আর এই ভাইরাস খুব দ্রুত এবং সহজে এক শরীর থেকে অন্য শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে ।
প্রাথমিকভাবে করোনাভাইরাসের লক্ষন বোঝা খুবই মুস্কিল । ২০০২ সাল থেকে চীনে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া সার্স (পুরো নাম সিভিয়ার এ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) নামের ভাইরাসের কথা অনেকরই মনে রয়েছে । সেই সময় সার্স ভাইরাসের কবলে পৃথিবীতে ৭৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল৷ উল্লেখযোগ্যভাবে সেই সার্স ভাইরাস ছিল এক ধরণের করোনাভাইরাস৷ দেখা গেছে, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ইনফ্লুয়েঞ্জার মতই উপসর্গ দেখা দেয় ৷ সবচেয়ে খারাপ বিষয়, এই উপসর্গগুলি ঋতু পরিবর্তনের সময় বিশেষ করে শীতকালে দেখা যায় । ফলে অনেকেই অবহেলা করে থাকেন । তবে করোনাভাইরাসের কবলে পড়লে, সর্দি কাশি,জ্বর দিয়ে ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়৷ তাপমাত্রা অনেক বেশি বেড়ে যায়৷ নাক দিয়ে জল পড়া৷ হাঁচি,গলা খুসখুস,মাথা ব্যথা৷ গা হাত পা ব্যথা৷ শুকনো কাশি দেখা দিতে পারে৷ প্রায় এক সপ্তাহ পরে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়৷ এখনও পর্যন্ত এই ভাইরাসের সঠিক গতি প্রকৃতি সম্পর্কে বিশেষ কিছু পাওয়া না যাওয়ায় প্রতিশেধক বের করা সম্ভব হচ্ছে না । ফলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে৷
প্রাথমিকভাবে কি করা উচিতঃ
এখনও উপযুক্ত প্রমান হাতে আসেনি যে ভারতে কেউ এই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে কি না ? তবে গতকাল রাজ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে । কারন এরই মধ্যে মৃত্যু হয়েছে থাইল্যান্ডের এক তরুণীর৷ তিনি বেলেঘাটায় অসুস্থ হয়ে ভর্তি ছিলেন । তবে করোনা ভাইরাসেই তার মৃত্যু কিনা সে বিষয়ে জানতে কিছুদিন সময় লাগবে । কারন মৃতার শরীরের নমুনা পরীক্ষা করা যাবে একমাত্র পুনের ল্যাবে । ভারতের অন্য রাজ্যে বা বাংলায় পরীক্ষা করার মত পরিকাঠামো এখনও পর্যন্ত নেই । এদিকে গবেষকরা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের কোন ওষুধ বা চিকিৎসা নেই ৷ তবে তাঁরা জানিয়েছেন প্রাথমিকভাবে কিছু কিছু সাবধানতা মেনে চলতে হবে ।
করোনাভাইরাসের প্রকৃতি দেখে যেটুকু জানা গেছে, তাতে দেখা গেছে এটি আসলে ফ্ল্যাবিও ভাইরাস, যা দ্রুত সংক্রামিত হয় । পশু পাখি কিম্বা গবাদি পশুর মল, লোম প্রভৃতি থেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হবার সম্ভবনা সব থেকে বেশী । তবে মানুষের শরীর থেকেও পশুর শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে এই প্রানঘাতী ভাইরাস । বিশেশজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন, ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধোওয়া এবং টিস্যু ব্যবহার করা৷ বাইরে বের হলে অবশ্যই মাস্ক পরে থাকা৷ আর সামান্য সর্দিকাশি বা শ্বাসকষ্টের মত সমস্যা দেখা দিলে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ।