বং দুনিয়া ওয়েব ডেস্ক: বাংলাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ যাকে না দেখেই একটি বই উৎসর্গ করেন, তিনি আর কেউ নন বাংলাদেশের জনপ্রিয় ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। সাকিব আল হাসানকে তিনি ফাউন্টেন পেন এর সাথে তুলনা করেন। তিনি বলেন ‘সাধারণ বলপয়েন্ট কলমের কালি শেষ হয়ে গেলে আর লেখা যায় না। কিন্তু ফাউন্টেনপেন কালি শেষ হলে আবার কালি ভরে লেখা যায়। সাকিব হচ্ছে আমাদের ফাউন্টেনপেন। সবাই থেমে গেলেও সাকিব থেমে যায় না। ছেলেটা অদম্য, অফুরন্ত।’ সেই অফুরন্ত সাকিব আল হাসানের উপর আইসিসির নিষেধাজ্ঞা যেন সমস্ত বাংলাদেশীর পাশাপাশি বাংলাভাষাভাষি সকলের জন্য একটি ধাক্কা।
ক্রিকেট সাধারণত ধনীদের খেলা সেখানে বাংলাদেশী কয়েকজনের হাতে ব্যাট বল দেখলে লাগান ছবির কথা মনে হয়। অপরাধ দূনীর্তি সর্বত্রই শাস্তি হওয়া উচিত। আসলে কি তা হচ্ছে। বাজিকর তার পেশাগত কারণে সকল খেলোয়াড়ের পিছনে লেগে থাকে। কেউ ধরা দেয় কেউ দেয় না। যে দেয় না তার তথ্য প্রকাশ করা উচিত প্রকাশ করলে কি হবে? বাজিকরের শাস্তি কি হবে? আইসিসি কি বাজিকরকে শাস্তি দিতে পারবে? আমার মনে হয় না। সে শক্তি আইসিসির হবে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেট কি ইচ্ছা করে ধ্বংস করা হল? যখন সমস্ত বিশ্বের ধনী ক্রিকেটাররা ভয় পেতে শুরু করেছে কাদা মাখা কয়েকটি ছেলেকে। যারা হয়ত ঠিক কথা বলতে পারে না। আবার ঠিকমত দাড়িয়ে সাক্ষাতকার দিতে পারে না।
ভারতীয় জুয়াড়ি দীপক আগরওয়ালের সাথে কথোপকতনে সাকিব ও বাংলাদেশের ক্রিকেট হয়ত হারিয়ে যেতে পারে। আইসিসির এই কালো তালিকাভুক্ত জুয়াড়িকে গ্রেফতার করা হলেও দেখা যাক আসলে কি হয়? তবে আশার বানি জানিয়েছেন ভারতের সাবেক তারকা বর্তমান বিসিসিআইয়ের সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলি। তিনি বিশ্বাস করেন সাকিবকে ছাড়াই মানিয়ে নিতে পারবে বাংলাদেশ দল। মানিয়ে নিতে হবে, আর সেভাবে গরীব ছেলেগুলি ঐ ধনীদের দেখিয়ে দিতে চায় আমরা হারার পাত্র নয়। বাংলাদেশ দল ক্রিকেট খেলতে গিয়ে বিভিন্ন সময় রেফারি সহ বিভিন্ন সমস্যায় পড়লেও এতবড় দুর্যোগ আসে নি।
আমরা হয়ত দু:খ ক্ষোভে পথে দাড়াচ্ছি ব্যানার নিয়ে কিন্তু ক্রিকেট ধারাভাষ্যকার হর্য ভোগলে, সাকিবকে ‘ভাগ্যবান’ উল্লেখ করে হর্ষ অনুরোধ করেন কোনো ষড়যন্ত্র না খুঁজতে, ‘আমি মনে করি সাকিব খুব ভাগ্যবান যে শুধু নিষেধাজ্ঞা পেয়েছে। এক বছর পরই সে ফিরতে পারবে। সে সত্যিই ভাগ্যবান। আমি মনে করি না এ ঘটনায় ষড়যন্ত্র তত্ত্ব খোঁজা উচিত। কেন আমাদের খেলোয়াড়, অন্য দেশের কেন না? স্মিথ-ওয়ার্নারকে তো আইসিসি নিষিদ্ধ করেনি; ওদের বোর্ডই করেছিল। তারা আবার দুর্দান্ত রূপে ফিরে এসেছে। বল টেম্পারিংয়ের চেয়ে জুয়াড়ির প্রস্তাব না জানানো অনেক অনেক বড় অপরাধ। আমি আশা করি, সাকিবও স্মিথ-ওয়ার্নারদের মতো ভয়ংকর রূপে ফিরে আসবে। সাকিব বিশ্বকাপে কী করেছে তা সবাই দেখেছে। দলের শুধু সেরা ব্যাটসম্যান না সেরা বোলারও বটে। এমন খেলোয়াড় খুব বিরল। ‘
প্রত্যেকটি মানুষের খুব কাছের মানুষ সাকিব তাই বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতও চুপ করে নেই। সোস্যাল মিডিয়ায় বাংলাদেশের অন্যতম নায়িকা মৌসুমী লেখেন, ‘আসসালামু আলাইকুম। আমি মৌসুমী। একটা পদ্মাসেতু তৈরি যতটা সম্ভব বা সহজ, একজন সাকিব আল হাসানকে তৈরি করা ততটা সম্ভব না।আমাদের মাঝে আমরা সেই সাকিব আল হাসানকে পেয়েছি। সাকিব আল হাসান আমাদের অহংকার, আমাদের দেশরত্ন।আমাদের দেশের অহংকার, আমাদের দেশের সম্পদ। সেই সাকিব আল হাসান আমাদের ভালোবাসা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, ক্রিকেট থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। আমি একজন ভক্তহিসেবে সাকিবের এই কষ্টটা মেনে নিতে পারছি না বলেই প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সাকিব আল হাসান ফিরে আসো আমাদের মাঝে। সাকিব, কেউ না থাকুক আমি তোমার সাথে আছি।আমি চাই তোমাকে নিয়ে আমাদের দেশ আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবে।
সাকিব আল হাসানের ইস্যুতে বাংলাদেশের ক্রিকেটাঙ্গন এখন গরম। অন্যান্য সকল ইস্যুই চাপা পড়ে গেছে সাকিবের নামের কারণে। ভক্তদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ। সাকিব আল হাসানকে বিসিবি সভাপতি ফাঁসিয়েছেন বলেই অভিযোগ তুলছে সাকিব ও টাইগার ক্রিকেটের ভক্তরা।নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে সাকিব আল হাসান আইসিসিকে বলেন, ‘আমার ভালোবাসার এই খেলা থেকে বিরত থাকতে হবে, এটি নিঃসন্দেহে চূড়ান্ত দুঃখজনক। তবে আমাকে যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, সে বিষয়ে আইসিসিকে না জানানোর কারণে আমি সম্পূর্ণভাবে এই নিষেধাজ্ঞা স্বীকার করে নিচ্ছি। আইসিসি’র দুর্নীতি তদন্ত কমিশন দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে খেলোয়াড়দের ওপরই নির্ভর করে থাকে। এ ক্ষেত্রে আমি আমার দায়িত্বটি পালন করতে পারিনি।’আইসিসি’র জেনারেল ম্যানেজার (ইন্টেগ্রিটি) অ্যালেক্স মার্শাল বলেন, ‘সাকিব আল হাসান একজন অভিজ্ঞ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। তিনি আইসিসি’র বিভিন্ন সেশনে অংশ নিয়েছেন এবং দুর্নীতিবিরোধী যে কোড রয়েছে, তিনি সেসব দায়িত্ব সম্পর্কেও অবগত। তাকে যেসব প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল (জুয়াড়ির প্রস্তাব), সে সম্পর্কে তার আইসিসিকে জানানো উচিৎ ছিল। সাকিব তার ভুল স্বীকার করে নিয়েছেন এবং তদন্তের সময় সম্পূর্ণ সহযোগিতা করেছেন। তরুণ ক্রিকেটাররা যেন তার ভুল থেকে শিখতে পারেন, ভবিষ্যতে সে বিষয়েও তিনি ইন্টেগ্রিটি ইউনিটকে শিক্ষামূলক সেশনগুলোতে সহযোগিতা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তার এই প্রস্তাবকে আমি স্বাগত জানাই।
ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম খেলোয়াড় রাহুল দ্রাবিড় মনে করেন, সাকিবের শাস্তি কিছুটা কঠোর হয়ে গেছে। তিনি টুইটে লিখেছেন- “অবিশ্বাস্য! সাকিবের শা’স্তিটা কি কঠিন হয়ে গেল না? সে কি ফিক্সিংয়ে জড়িত ছিল? আমি মনে করি, তার একটাই ভুল সে আইসিসি ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাবটি জানায়নি। এ জন্য দুই বছরের শাস্তি অনেকটা কঠোর। আমি আশা করি, আইসিসি এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে।”
বাংলাদেশের আপামর জনতার মত দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও রয়েছে সাকিবের পাশে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সহ সকলের এই সহযোগিতা কাজে না লাগলেও প্রধানমন্ত্রীর সহানুভুতি সাকিবকে আবার ঘুড়ে দাড়ানোর মনোবল দেবে বলে আশা করা যায়। গত মঙ্গলবার আইসিসির তরফে এই সিদ্ধান্তের পর বুধবার শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, “এটা পরিষ্কার যে সাকিব ভুল করেছেন। কিন্তু উনি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছেন। আইসিসির এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে বিশেষ কিছু বলার নেই সরকারের। কিন্তু এই সময় শাকিবের পাশে রয়েছি আমরা। আশা করি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও দেশের অধিনায়কের পাশে থাকবে। প্রসঙ্গত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর এই বিবৃতির পর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড বিবৃতি দেয়।
সাকিব আল হাসানের নিষেধাজ্ঞার কারণগুলো একটি ফিরে দেখার চেষ্টা করি। তিনটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় আইসিসি। সাকিবের বিরুদ্ধে আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী ২.৪.৪ ধারা ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছে। ২০১৮ সালে তিনি তিনবার ক্রিকেট ম্যাচে দুর্নীতির প্রস্তাব পেয়েছিলেন, যেসবের তথ্য তিনি আইসিসিকে জানাননি।
১. ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা-জিম্বাবুয়ের ত্রিদেশীয় সিরিজ কিংবা ২০১৮ সালের আইপিএলে সাকিবকে জুয়াড়িরা দুর্নীতির প্রস্তাব করেছিলেন। সে বিষয়ে আইসিসিকে জানাননি সাকিব।
২. ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা-জিম্বাবুয়ের ত্রিদেশীয় সিরিজেই আরও একবার দুর্নীতির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল সাকিবকে। সাকিব সে বিষয়টিও আইসিসিকে জানাননি।
৩. ২০১৮ সালের ২৬ এপ্রিল আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দারাবাদ ও কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের মধ্যে অনুষ্ঠিত ম্যাচে জুয়ার প্রস্তাব পেয়েছিলেন সাকিব। সে বিষয়ে আইসিসিকে না জানিয়ে তিনি ২.৪.৪ ধারা ভঙ্গ করেছেন।