গাছপালা, পশু-পাখি সব নিয়েই কিন্তু আমাদের এই পৃথিবী। কিন্তু মানব সমাজের উন্নতি ঘটাতে ঘটাতে আমরা অনেক সময়ই এই কথাটি ভুলে যায়, আমরা ভুলে যায় যে তারাও এই পৃথিবীরই বাসিন্দা, তাদেরও জীবন আছে। জীববৈচিত্র্যই পৃথিবীকে এতও সুন্দর করে তুলেছে, কিন্তু আধুনিক এবং বিজ্ঞানভিত্তিক উন্নত সমাজ গড়ে তুলতে গিয়ে আমরা ভুলে যেতে বসেছি একথা। প্রতিনিয়ত নির্বিচারে কেটে ফেলা হচ্ছে কত গাছ, পশুরা তো খাঁচায় বন্দী! অনেক নিপীড়ন সহ্য করেও কিন্তু চুপ থাকে তারা; বোবা তো, তাই কোনও প্রতিবাদ জানাতে পারেনা, কিন্তু চোখের কোনায় ফুটে ওঠে অশ্রুবিন্দু।
অনেক তো নিজেদের স্বার্থ দেখলাম। আসুন না একদিন ওদেরকেও একটু স্বাধীনভাবে বাঁচতে দিই। আপনি ওদেরকে যতটা ভালবাসবেন, তার চেয়েও তিনগুণ ভালোবাসা ওরা আপনাকে ফিরিয়ে দেবে; বিশ্বাস না হলে নিজেই মিলিয়ে দেখুন একবার। পশুরা বোবা হতে পারে, কিন্তু তাদের মতো করে ভালবাসতে ক’জন পারে? কেন জানেন? কারণ তারা এখনও মানুষ হয়ে ওঠেনি, স্বার্থ বুঝতে শেখেনি, জানতে পারেনি এই সুন্দর পৃথিবীর গভীরে আরও কত ছক সাজানো রয়েছে, তারা সরল, আর তাই তারা সুন্দর।
আজ যদি হঠাৎ এমন হয় যে আপনার কোনও প্রিয়জন একবার বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর ফিরলনা ঘরে, কেমন লাগবে আপনার? ওদের সাথে কিন্তু এমনটা প্রায়ই হয়ে থাকে, আর তার বেশীরভাগ ক্ষেত্রে দায়ী আমরা অর্থাৎ মানুষ, যারা নিজেদেরকে পৃথিবীর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ প্রাণী বলে মনে করে। প্রিয়জনকে হারানোর ব্যাথা ওদেরও কিন্তু হয়, কিন্তু ওরা বলবে কাকে? কোথায় চাইবে বিচার? বিচারক নিজেই যেখানে আসামী, সেখানে সমস্ত অন্যায়ই ওদেরকে চুপ করে মেনে নিতে হয়। হতেও তো পারে যে ঘরে ফেরার পথে হারিয়ে যাওয়া সেই জীবটিও একজন মা, নিজের সন্তানের জন্য খাবার জোগাড় করে নিয়ে যাচ্ছিল। আমরা এক বেলা না খেয়ে থাকলে মূর্ছা যায়, ওরা কিন্তু অভ্যস্ত; নিজের খুশীতে এ অভ্যাস হয়না, দিনের পর দিন না খেতে পেয়ে একপ্রকার বাধ্য হয়েই অভ্যস্ত হতে হয়।
উন্নতি ঠিকই হচ্ছে, তবে তা কেবল মানব সমাজের, গোটা পৃথিবীর নয়। গোটা পৃথিবীর জন্য ভাবতে হলে যে পৃথিবীর আর সকল বাসিন্দা’দের কথাও একবার ভেবে দেখতে হয়, কিন্তু তা করলে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ জীব মানুষের স্বার্থে ঘা লাগবে। সরকার অবশ্য নিয়মের পর নিয়ম বানিয়ে চলেছে, কিন্তু সব কিছুর মূলে সেই মানুষই তো তাদের অধিকর্তা; এমন নৃশংস ভক্ষকের কাছে রক্ষার আশা করা বৃথা, তা ওরাও এতদিনে বুঝে গেছে।
শেষ গাছটি যখন কেটে ফেলা হবে, শেষ মাছটি যখন খাওয়া হয়ে যাবে, শেষ প্রাণীটি যখন মারা পড়বে, হয়তো তখন কোনও এক মুহূর্তে সম্বিত ফিরবে মানুষের, দিকে দিকে বেজে উঠবে “পরিবেশ বাঁচাও”, “জীব বাঁচাও” সতর্কবাণী। কিন্তু ধ্বংসের স্রোত ততক্ষণে গলা অব্দি ডুবিয়ে দেবে, নিরুপায় হয়ে ভেসে যাওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় থাকবেনা। এভাবেই একদিন শেষ হয়ে যাবে সব!