রামপুরহাট ঃ মাঝে মাঝে শোনা যায় অস্ত্রোপচার করে পেটের ভিতর টিউমার, ছুরি,  কাঁচি,  পাথর,  এমন কি গজ  তুলো পাওয়া যায় । এইসব ব্যাপার চিকিৎসকদের একটা  গা সওয়া  হয়ে গিয়েছে । কিন্তু এবার অপারেশন করতে গিয়ে চিকিৎসকরা রীতিমতো ভিরমি খেয়ে গেলেন । অবশ্য   ভিরমি খাওয়ার কথা । বছর ছাব্বিশে তরুণী রুমি খাতুন এর পেট থেকে বেরোল সোনার চেন,  সোনার নাকের নথ,  কানের দুল,  হাতের বালা,  পায়ের নুপুর,   ঘড়ি 5/10 টাকার প্রায় 90 টি কয়েন ।

এই অবাক করার ঘটনাটি ঘটেছে রামপুরহাট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে । বুধবার দুপুরে রামপুরহাট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের  চিকিৎসকরা অপারেশন করে তরুণীর  থেকে পেট থেকে এইগুলি বের করেছেন ।  চিকিৎসকরা জানিয়েছেন রুমি খাতুন এর বর্তমান শারীরিক অবস্থা এখন স্থিতিশীল । আপাতত বিপদের কোন আশঙ্কা নেই তার ।

স্থানীয় সূত্র থেকে খবর পাওয়া গেছে,  বীরভূমের মারগ্রাম থানার অনন্তপুর গ্রামের বাড়ি রুমি খাতুন এর । রুমি খাতুনরা তিন ভাই বোন । একমাত্র ছোট বোন তিনি । প্রকৃতপক্ষে রুবি খাতুন অনেকটা মানসিক ভারসাম্যহীন । যার কারনে তার পরিবার তাকে বিয়ে দিতে পারেনি । তার পরিবার থেকে জানা গেছে,  গত দুমাস ধরে তরুনীর  স্বাস্থ্য ধীরে ধীরে অবনতি হতে থাকে । তার শরীর শুকিয়ে আসতে থাকে । এমনকি রুমি যা খেত,  তাই বমি করে দিত । রামপুরহাটের বেশ কয়েকজন প্রাইভেট চিকিৎসককে তারা দেখান । পরবর্তীকালে আলট্রাসনোগ্রাফি করে দেখা যায় একটি সুতোর মতো কিছু রয়েছে রুমির পেটে ।  কিন্তু কোনভাবেই সেটি বের করা না যাওয়ায় দিন সাতেক আগে ওই তরুণী টির শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হওয়ার কারণে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজে দেখানো হয় । সেখানে এক্সরে করে দেখা যায়,  পেটের মধ্যে ধাতু জাতীয় কিছু রয়েছে ।

ওই দিনই রুমিকে ভর্তি করা হয় সার্জারি বিভাগে । গতকাল অস্ত্রোপচার করার সময় অপারেশন টেবিলে  চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গেল চিকিৎসকদের । কারণ রুমির পাকস্থলীতে আটকে রয়েছে গয়না ও পয়সা । পরে ওজন করে দেখা যায় সেগুলি 1 কেজি 680 গ্রাম এর মত .

রুমির অস্ত্রোপচার করেন রামপুরহাট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সার্জারি বিভাগের প্রধান প্রফেসর সিদ্ধার্থ বিশ্বাস .  সিদ্ধার্থ বাবুর সঙ্গে চিকিৎসায় সহযোগিতা করেন সহকারী সার্জন সুমন দে,  সুপ্রিয় ভট্টাচার্য এবং অরূপ ঘোষ ।  প্রায় দেড় ঘন্টা ধরে অপারেশন চলে ।

তরুনীর মা  জানিয়েছে,  “আমার মেয়ে মানসিক রোগী । বহু চিকিৎসা করিও লাভ হয়নি । ফলে বাড়িতে চোখে চোখে রাখতাম । তার মধ্যেই নজর এড়িয়ে এই সব খেয়ে ফেলেছে ও । ছোট ছেলের ইমিটেশনের গয়না দোকান আছে । সেখান থেকে কয়েন খেয়েছে । মাঝেমধ্যে চোখের সামনে থেকে গয়না উধাও হয়ে যেত ।  মেয়েকে ধরলে কাঁদতে শুরু করত,  ফলে আর কিছু বলতেও পারতাম না । মাস দুয়েক থেকে মেয়ের শরীর খারাপ হতে শুরু করে । ইদানিং যা খেত বমি করে দিত ।  দুমাস ধরে ওষুধ খাইয়েও কোন লাভ হয়নি ।  শেষে হাসপাতাল এ দেখাই । তারপরেই এই অবস্থা ।”

Kajal Paul is one of the Co-Founder and writer at BongDunia. He has previously worked with some publishers and also with some organizations. He has completed Graduation on Political Science from Calcutta University and also has experience in News Media Industry.

Leave A Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.